সেলিনা জাহান প্রিয়ার গল্প: ‘অ-মানব’- (২১তম পর্ব)
‘অ-মানব’- (২১তম পর্ব)
————————–সেলিনা জাহান প্রিয়া
নাদিয়া কে বলল আপনার ভাই কোথায় উনার তো আসার কথা ছিল । বাহিরে দারিয়ে আছে । আপনার সাথে ফোনে কথা সেরে নিবে । নাদিয়া হাসপাতালের সামনে এসে দেখে অনেক মানুষের ভীর । নাদিয়া ভাবল তার ভাইয়ার সাথে কিছু হয়েছে । না একজন মানুষ কে মারছে কিন্তু ভাইয়া কোথায় । পিছন থেকে নাদিয়া কে বলল চা খাচ্ছি ।
ও ভাইয়া ! আমি ভাবলাম তোমার জন্য বুঝি এই ভীর । চল বাসায় । এই নাও টাকা । দোকান দার কে দাও । দোকান দার এক গাল হেসে বলল আমাকে লজ্জা দিয়েন না মা জননী । পাগল বলল টাকা নিবে না নাদিয়া । ভীরের মধ্য প্রবেশ করে যেই লোকটাকে মানুষ মারছিল । তাঁকে ফিরালো । রাত বলে লোকটা মার কম খেল । পাগল বলল- যারা মেরেছেন এই লোকটাকে তাদের ধন্যবাদ । ওকে এখন ছেরে দেই । জীবনের শিক্ষা হবে কি বলেন । লোকটাকে ছেরে দিয়ে নাদিয়ার সাথে রিক্সায় ওঠে বসল ।
— ভাইয়া ঘটনা কি ?
— পকেট মেরেছে । চায়ের দোকানের সামনে থেকে । গ্রাম থেকে আসা
মানুষ । কেউ হয়ত হাসপাতালে ভর্তি আছে । লোকটা চা খাচ্ছিল । আমি
হাতে নাতে ধরলাম । মানুষ যখন মানুষ কে মারে তখন একটা বিষয় আমি
উপ ভোগ করি ।
— মানুষ কে মানুষ মারলে তুমি উপভোগ ভাইয়া ।
— আসলে তা না । এই দেশে পকেট মারের খুব কঠিন বিচার হয় । আর
তোমারা যাকে ভোট দাও । সে কোটি কোটি টাকা দেশ নামের এই মায়ের
কাপড় খুলে নিয়ে যায় । আমরা তাদের ফুলের মালা দেই । আমি এই জন্য
উপভোগ করি এটা একটা আজব দেশ । একটা মানুষ অভাবে চুরি করে ।
আর একটা মানুষ স্বভাব দোষে চুরি করে । অভাবের চোরের বিচার হয় ।
স্বভাবের চোর নেতা হয় । হা হা হা।
— আমি কি একটা কথা বলতে পারি ভাইয়া ।
— সব মানুষ একটা কথা বলে কিন্তু একটা কথা এত লম্বা হয় বলা চলে গীতাঞ্জলী ।
— ভাইয়া আমি কিন্তু ফান করছি না
— আমি জানি তুমি ফান করছ না। তুমি শিমুল গাছটা বাচবে কি মরবে জানতে
চাচ্ছ । সময় হউক দেখবে ।
— আচ্ছা ভাইয়া নাজ যে ছেলেটা কে পছন্দ করে ঐ ছেলে কে নাজ কে বিয়ে করবে ।
— নাদিয়া অল্প বয়সের প্রেম গুলো একটা বাংলা সিনেমার মত । এই কাহিনী ভাষা
রাগ অনুরাগ । সব বাংলা ছবির মত । সব নায়ক বড় হয়ে পিতা হত্যার বিচার ।
বা প্রেমের জন্য বাপ মা কে অস্বীকার করা । আসলে আমাদের সন্তানদের নষ্ট
করার জন্য এরাই দায়ি । কারণ এরা যারা সিনেমা বানায় তারা সিনেমা কি জানে
না।
— ভাইয়া আমি নাজের কথা বলছি ।
— নাজ কে যদি না বল তখন সে বেশি জড়াবে । আবার যদি হ্যা বল তাহলে লাজ
শরম সব নষ্ট করবে ।
— তাহলে কি করব ।
— নাজ কে বল তোমাকে বিয়ে দিব । ছেলে কে বাসায় ডাকাও । ছেলে কে ডেকে
বল আজকেই বিয়ে করতে হবে । পঞ্চাশ লাখ টাকার কাবিন । যদি নাজ কে
ভাল বাসে তবে ছেলে বিয়ে করতে রাজি হবে । আর যদি অন্য মতলব থাকে
তবে বলবে , মা বাবা কে রাজি করিয়ে । না হয় পরীক্ষা আছে । বা বলবে
একদিন সময় দিন । যদি একদিন সময় চায় । তবে পালাবে । মা বাবার রাজির
কথা বললে মুলা ঝুলাবে । এতে মেয়ের চরিত্র নষ্ট হতে পারে । তোমরা তো
আর বিয়ে দিবা না এখন । যদি এখন রাজি হয় । তখন সর্ত আরেপ হবে ।
শুধু কাবিন হবে । তবে বিয়ে হবে না। পরীক্ষার পর বিয়ে হবে । বা রাজি
হলে তাদের অভিবাবক কে ডাকা যেতে পারে ।।
— আচ্ছা দুলা ভাই এর বাড়ি ভাগ হয়ে যাবে কেন ।
— এটা গোপন কথা তোমার না জানাই ভাল । তবে যদি তোমার দুলা ভাই জানতে
চায় তবে বলব । কারণ তার চাচা কেন মারা গেল এটা কি তার তিন সন্তানের
জন্য না অন্য করন এটা তোমার দুলা ভাই , মানে শিলার বাবা জানতে চাইলে
বলব ।
— ঠিক আছে । আমাকে নিয়ে কিছু বলুন ।
— নাদিয়া তুমি আসলে কোন কারনে মানসিক কষ্টে আছ । তোমাকে দেখে
বুঝা যায় না। ভাবছ বোনের বাড়িতে আছ । তোমার বিয়ে হলে এত খরচ
আর না হলে বোন জামাই এর বোঝা তাই না ।
— হ্যা ভাইয়া । তুমি তো আই এ পাস তাই না।
— হ্যা
— কাল সকালে মনে করে আমাকে বলবে । যে তুমি আই এ পাস । ওকে ।
আমার তখন মনে হবে তোমার জন্য কি করা যায় ।
— জী ভাইয়া ।
পাগল আর নাদিয়া বাসায় এসে দেখে শিলা কাদছে । পাগল কাছে গিয়ে বলে
কান্না করা ভাল । তবে নকল কান্না করলে মাথার চুল পেকে যায় । শিলা মাথায়
হাত দিয়ে বলে । আমার চুল পাকলে মামা তুমি খুশি হও ।
— না খুশি হব না।
— কিন্তু তুমি কান্না করছ কেন ।
— তোমরা বাসা থেকে যাওয়ার পর মা ছোট খালা মনি কে অনেক মেরেছে ।
— ইস তাই কান্না করছ ।
— হ্যা মামা ।
— আচ্ছা মা মনি অনেক ভাল কান্না কর ।
— নাদিয়া বলল ভাইয়া দেখলেন ।
— আপা ঠিক করেছে । রাতে ওকে ঘরে তালা দিয়ে রাখ ।
সকালে মাথার ভুত নামিয়ে দিব ।
রাত তিনটা নাদিয়ার ঘুম । নাজ কে তালা দেয় নাই । নাজ তার কাপড় নিয়ে খুব
গোপনে ঘর হতে বের হবে এমন সময় দেখে গেইটের সামনে পাগল দাঁড়ানো । গেইটের বাহিরে দু জন অচেনা মানুষ । অনেক দূরে একটা লাইটাস মাইক্রো । পাগল যেন না দেখে তাই চুপ করে গাছে উঠে দেয়াল দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে নাজ । দেয়ালে উঠা মাত্র পাগল নাজের পায়ে শক্ত করে ধরে বলে উঠে আপা চোর চোর । নাদিয়া নাজু দুলা ভাই ঘুম থেকে উঠে গেইটের সামনে এসে দেখে নাজ কে ধরে রেখেছে ।
–নাদিয়া বলে ভাই ও তো নাজ ।
— হ্যা আমি জানি নাজ । দুলা ভাই ওকে আপনি নামান । আমি আসছি বলে গেইটের বাহিরে গিয়ে দু জন কে সার্টের কলার ধরে গেইটের ভিতরে নিয়ে আসে ।
নাদিয়া আর নাজু মিলে নাজ কে আবার চর ও থাপ্পড় দিয়ে ঘরে নেয় । ছেলে কে নাদিয়া দেখে অবাক হয়ে বলে দুলা ভাই এটা মাঝি বাড়ির ছেলে ।
— পাগল বলে পাগল বলে মাঝি বাড়ি মানে ।
— নাদিয়া বলে ওদের সাথে আমাদের অনেক পুরবের শত্রুতা ।
নাজু আপু বলতে লাগলো । আমার বোন তো ছোট ও জানে না। এই ছেলের চাচার কাছে আমার ফুফু বিয়ে ঠিক হয় । আমার ফুফু ঐ কোন এক কারনে ঐ ছেলে কে বিয়ে না করে আমার খালার বাসায় যায় । পড়ে ঐ খানে আমার খালার দেবরের ছেলে কাছে বিয়ে হয় সেই ফুফুর । আমার ফুফু কে নিতে না পেরে তারা অনেক বিচার শালিস বসায় । আমাদের পরিবারের সাথে ঐ পরিবারের আর কোন সম্পর্ক নাই । তারা ওয়াদা করে আমাদের পরিবারের যে কোন মেয়ে কে তারা নিয়ে বিয়ে করে ছেরে দিবে ।
শিলার বাবা ওদের মারতে গেলে পাগল বলে ওদের মারার দরকার নাই । পুলিশ ডেকে দিয়ে দিন রাতে চুরি করতে বাসায় আসছিল বলে । অন্যের মেয়ে কে যারা প্রেম ভালবাসার কথা বলে ঘর থেকে নিয়ে যায় আসলেই এরা চোর ডাকাত । আর সব কিছু জানার পড় নাজ কে বলুন ওদের সাথে যাবে কি না।
আমি তিনটা কথা বলব তার পড় নাজ সিদান্ত নিবে। নাদিয়া নাজ কে সামনে আনে
পাগল বলে
— তুমি কাকে পছন্দ কর এই দুজন থেকে ।
— নাদিয়া মাঝির ছেলে কে দেখায় ।
— তুমি কি জান এদের সাথে আগের কি কি ঘটনা ।
— না , জানি না,
— এখন তুমি বল । তোমার যদি একটা নিজের পেটের মেয়ে থাকত । আর তুমি
মা হতে তাহলে কি তোমার মেয়ে কে যেতে দিতে ?
— না ।
— এখন কি তুমি যেতে চাও ওদের সাথে
— না ।
— আর কোন দিন যাবে
— না।
— আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যাও ।
— দুলা ভাই । ওদের অভিবাবক কে খবর দিন ।
ভোর চারটায় ওদের অভিবাবক রা আসে । এই বিষয় টার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ।
পাগল বলে দেখুন বাচ্চাদের প্রতিহিংসা পরায়ণ না করে । নিজেদের ভুল গুলো তাদের
সামনে তুলে ধরুন । আপনাদের মাঝি পরিবারে নাদিয়ার ফুফু এমন কিছু দেখে ছিল
যার জন্য সে বিয়ে করতে চায় নাই । আজ আবার আপনাদের সন্তান রা সে রকম ভুল
করছে । পাগল বলল দুলা ভাই মেয়ে আমাদের তাই লজ্জাও আমাদের । আমাদের সমাজে শুধু নারীর ভুল গুলো নিয়ে ওয়াজ হয় । নারী কেন টিপ পড়ে । নেল পলিস পড়ে । কিন্তু নারী দের এ সব পড়তে কিন্তু পুরুষরাই শিখিয়েছে । তাই বলি কি ওদের
ছেরে দেন । ওরা যদি মনে করে আমাদের সাথে সব ভুলে আত্মীয়তা করবে । তাহলে আমাদের মামা রইস মিয়ার সাথে আগে হউক । সবাই বলল সুন্দর কথা । এটা নিয়ে আমরা পড়ে বসব । নাদিয়া সবাইকে চা করে দিল । একজন বলল মা এই চায়ের সাধ টা একটু ভিন্ন । নাদিয়া হাসিয়া বলিল – এটা সিলেটের চা না । এটা দার্জিলিং এর চা ।
নাজু পাগল কে বলিল আল্লাহ কাছে আমার মা বাবা কোন নেক করেছিল যে ভাই আজ বাসায় ছিল । না হয় কাল থেকে মরা ছারা কোন গতি ছিল না।
সবাই কে বিদায় দিয়ে নাজু কে পাগল বলল – বোন আমার জীবন থেকে পালিয়ে
বাচা যায় কিন্তু সমাজ থেকে না। তাই আমাদের উচিৎ আমাদের সমাজ কে সম্মান করা । মাথায় হাত দিয়ে বলে যদি তারা রইস মামার কাছে তাদের বোন বিয়ে দেয় তাহলে আমরা আমাদের বোন কে তাদের ছেলের কাছে বিয়ে দিব । নাজ পাগলকে জরিয়ে ধরে কান্না করে বলে ভাইয়া আমাকে মাপ করে দাও । আমি তোমাদের কথার
বাহিরে কিছুই আর করব না। পাগল বলে এই বিশ্বাস আমার আমাদের বোনের প্রতি আছে ।
সকালে ঝলমলে রোদ । পুকুর পারে লেবার রা কাজ করছে । রইস মিয়া এসে
পাগল কে বলে – রাইত কিছু ঝামেলা হয়েছিল । জামাই বেটা বলল ।
— হ্যা মামা আপনার জন্য পাত্রি দেখছি ।
— আমি তো নির্বাচনের পাশ করা ছারা বিয়ে করব না।
— মামা মাঝির গোষ্ঠটি ভোট দিলে পাশ করবেন ।
— তারা দিলে আর কারো ভোট লাগে না। কিন্তু তারার সাথে আমাদের লাইগ ।
— আচ্ছা মামা এবার মীমাংসা হবে ।
নাদিয়া এসে বলে ভাইয়া আপনার ফোন –
— হ্যালো দিলরুবা
— সালাম ভাইয়া
— সকালে আমি ওকে অফিসে সার্ট ছিরে ফিলেছি । তখন রুমে কেউ ছিল না।
আমাকে বলল শান্ত হতে । আমি বলেছি তুমি অন্য মেয়ে কে বিয়ে করলে
তোমাকে আর ঐ মেয়ে কে মেরে আমি নিজে মারা যাব ।
— গুড ।
—- আর কাগজটা লিখে ওর হাতে দিয়েছি ।
— গুড কি হল বিকালে জানাও ।
চলমান——————