সেলিনা জাহান প্রিয়ার গল্প- ‘অ-মানব’- (২২তম পর্ব)
‘অ-মানব’- (২২তম পর্ব)
—————————সেলিনা জাহান প্রিয়া
সকাল বেলা পাগল মানুষ টা সুন্দরজামা কাপড় পড়ে বাসার সামনের রাস্তা ঝাড়ু দিচ্ছে । সে তাঁর বাড়ির সীমানা মেপে রাস্তা ঝাড়ু দিচ্ছে । এবং বাড়ির সীমানা সাথে যে ড্রেন আছে তাও সুন্দর করে ময়লা গুলো তুলে একটা জায়গায় রাখল । পাশের বাসার ভদ্রলোক পাগল কর দেখে বলল- তুমি শিক্ষিত মানুষ তোমাকে কি সুপারের কাজে মানায় । পাগল হেসে বলল- না স্যার শিক্ষিত মানুষ ফাইল ঠেকিয়ে ঘুষ খাওয়া মানায় । সুইপার তো রাস্তার ময়লা পরিষ্কার করে কিন্তু রাস্তা যারা নোংরা করে তারা কিন্তু সভ্য । আচ্ছা স্যার বলুন তো দেখি যারা ময়লা করে তারা বেশি ভাল নাকি যারা ময়লা পরিষ্কার করে তারা বেশি ভাল । ভদ্রলোক পাগলের সাথে কথা বলে একটু বিপদে পড়ে গেছে । এখন সে যেতে চাচ্ছে । পাগল বলল আপনার বাসারসামনে এত ময়লা যে মনে হয় একটা জৈব সারের কারখানা । ভদ্রলোক কোন কথা না বলে বাসায় গিয়ে তাঁর স্ত্রী কে বলে বাড়ির সামনের রাস্তাটা এত ময়লা । মানুষ যা তা বলে । মহিলা স্বামী কে বলে তুমি তো পুরুষ মানুষ এই কাজটা তুমিও পার ।তোমার দেখা দেখি যদি সবার বাড়ির সামনের ময়লা পরিষ্কার হয় । তাহলে তো মানুষ আমাদের ভাল বলে ।পাগলের কাজ দেখে সবাই বলে খুব ভাল । নাদিয়া বলল— ভাইয়া তুমি কেন এ কাজ করছ ।পাগল বলল- আজ আমি করছি কালথেকে তোমরা করবে । পুকুরের কাজ তো শেষ হলে আমি মহা খুশি ।কারণপুকুরে আমি এমন কিছু রাখব যা দেখতে মানুষ আসবে । আর পুকুরের নামসারা দেশের মানুষ জানবে ।— তোমার কাজ আর তুমি দুই জন যেন আলাদা মানুষ । তোমাকেদেখে মনে হয় তুমিতুমি একটা ভাবুক মানুষ । কিন্তু তোমার কথা প্রথমে শুনলে মনে হয় পাগলামি ।তোমার আচরণে মনে হয় তুমি মানুষ কে জাদু করতে পার । তোমাকে আপু ডাকছেতোমার জন্য একটা ভাল খবর আছে ।— আমার জন্য সব খবর ভাল । নাদিয়া তুমি নাজের সাথে কোচিং এ যাবে । আরআজ তুমি তোমার সকল কাগজ পত্র রেডি করবে । তোমার জন্য একটা কাজ ।আমি আশা করব তুমি আমার কথা শুনবে ।— ভাইয়া আমি তোমার সব কথাই শুনব । আজ তোমার বাসার সামনে রাস্তাঝাড়ু দেয়া । ড্রেন পরিষ্কার করা । আমাকে আরও মুগ্ধ করেছে । দুলা ভাইবলছে বিদেশে নাকি তারা তাদের কাজ নিজেরাই করে । এক জন অন্য জনেরনাগরিক সুবিধা চিন্তা করে তোমার মত করে ।— পাগল বলে যে মানুষ নিজে পড়বে অন্য কে পড়াবে ।এবং তাদের অভিজ্ঞতালিপিবদ্ধ করবে সেই জাতি সামনে দিকে এগিয়ে যাবে ।সেবিকা দিলরুবা ডাক্তার জীবনের রুমে প্রবেশ করে বলছে। কি আমার লিখারজবাব নাই কেন । তুমি চাকুরি ছেরে দিয়ে পালাবে কিন্তু আমি তোমার এই পালাবারপথ বন্ধ করে দিয়েছি ।ডাঃ জীবন দিলরুবা কে বলে আমার পারিবারিক বিয়ে আমি না করে দিয়েছি । যা হবার তাই হবে আমি তোমার কাছে এক বছর সময় চাই । আমি চাই না আমাদের এইবিষয় নিয়ে হাসপাতাল জানুক । আর তোমাকে আমাকে নিয়ে কোনবাজে গল্প মানুষ বলুক এটা চাই না । দিলরুবা বলে- আমার নোট পড়ে কই ভয় পেয়েছ ।— না ভয় পাই নাই । তবে একজন নারী যে কোন সময় যে কিছু করে ফেলতে পারে ।আবেগ বলে কথা । তবে তোমার সাহস হটাৎ করে বেড়ে গেছে ।— সাহস না বলে বল দুঃসাহস ।— দিলরুবা চল বিকেলে একটু টিলা ঘর থেকে ঘুরে আসি ।— ঠিক আছে ।বিকেল এ ডাক্তার জীবন ভুঁইয়া টিলা ঘরে আসে । দিলরুবা কে বলে আগামি সপ্তাহে আমার ছুটি । চল তিন দিন ঢাকা থেকে বেরিয়ে আসি । তাঁর পর তুমি চলে আসো । আমি বাড়ি থেকে বেড়িয়ে কাজে যোগদান করব । দিলরুবা বলে আমি রাতে তোমাকে জানাব । দেখি ছুটি নিতে পারি কি না। ডাক্তার জীবন চিন্তা করে ঢাকা নিয়ে তাঁকে চরম শিক্ষা দিবে । তাঁর পর ও বিয়ের নাম ভুলে যাবে । ডাক্তার তাঁর তিন বন্ধুর সাথে আলাপ করে রাখে । দরকার হলে আশুলিয়া নিয়ে ওকে মেরে নদীতে ফেলে দিবে । সামান্য একটা নার্স । আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় ।। আমি একজন ডাক্তার আমারজিবনে কত মেয়ে আসবে আর যাবে । দিলরুবা আগে এমন কত মেয়েআসলো আর গেল । দুই টাকার মেয়ে আমাকে দিল্লি দেখায় ।দিলরুবা অবাক হয় পাগল তো ঠিকেই বলেছে যে তাঁকে নিয়ে ঘুরতে যেতে চাবে ।রাতে বিছানায় শুয়ে পাগল কে ফোন দেয় ।— ভাইয়া আমি দিলরুবা— যাওয়ার জন্য রেডি হও । আর আমি তোমাকে বলছি । যেই হোটেলে উঠবে । আমাকে এস এম এস দিয়ে জানাবে । হোটেলে উঠার মধেই জানাবে । কোন অবস্তায় দেরী করবে না। হোটেলেখাতায় ভুল নাম লিখবে না। সম্পর্কের জায়গায় স্বামী স্ত্রী লিখবে ।। ডাক্তার যেন কোন ভুল নাম যেন না লিখে ।। আর জাবার সময় তোমার বাসার টেবিলে ড্রয়ার এ একটা নোট লিখে যাবে যাতে তুমি ডাক্তারের সাথে যাচ্ছ ।তোমার ফোনের আর এস এম এস এর অপেক্ষায় রইলাম ।দিলরুবা ডাক্তার কে বলে ছুটি হয়ে যাবে সে যেন যাওয়ার ব্যবস্থা করে । ডাক্তার মনে মনে খুশি । যাই হউক এবার তাঁকে শিক্ষা দেয়া যাবে ।শিলার বাবা পাগলের কাছে এসে বলে ভাই তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিলআমার জিবনের অনেক বিশ্বাসের উত্তর পেয়েছি । যেমন এই পুকুর সেচা যাবেনা । কিন্তু সেচা গেল । মানুষ মারা যাওয়া । আমার মায়ের রাতে পুকুররে নেমে হাটা ডুব দেয়া । কিন্তু আমার চাচা কেন মারা গেল ফাসি নিয়ে আমার খুব জানতে ইচ্ছা করেপাগল বলল এখন অনেক রাত ঘুমিয়ে পরেন । কাল আমি বলব । নাজু তার পাড়ায় খুব মন দিয়েছে । শিলা কে বারান দায় একটা সুন্দর দুলনা বেঁধে দিয়েছে । শিলা খুব খুশি দুলনায় দুল খায় আর খুব সুন্দর করে গান গায় । পাগল জানালা দিয়ে চেয়ে চেয়ে দেখে । অনেক রাত পাগল পুকুরে নামে পুকুরের চার পাসে একা একা কিছু সময় হাঁটল । ঠিক পুকুরে মাঝ খানে জেয়ে ধ্যানে বসল । তার অনেক পরে আকাশের দিকে চাইল । একা একা কিছু সময় হাসল । পুকুর থেকে উঠার সময় দেখে নাদিয়া জানালা দিয়ে দেখছে । পাগল নাদিয়া কে , না দেখার ভান করে । পাগল নিজের রুমে চলে যায় । পাগল ঘুম থেকে উঠে আজোও ঝাড়ু নিয়ে রাস্তায় যায় ।কিন্তু দেখে রাস্তা একদম পরিষ্কার ড্রেন পরিষ্কার । পাগল অবাক হ্যে দেখে পাশের বাসার সামনের বাসার সবাই যে যার অংশ পরিষ্কার করছে । পাগল তাদের কাছে যায় । বলেআমাকেদেন সাহায্য করি ।ভদ্র লোক বলে বাবা লজ্জা দিও না। আমাদের পরিবর্তন মন থেকে হতে হবে । তুমি পুকুরটা যা সুন্দর করেছ । মনে হয় বিকেলে মাঝে মাঝে এখন বসার একটা জায়গা হবে । পাগল বলে তাহলে ভাল হবে মাঝে মাঝে মাছ গুলো আপনাদের সাথে চা বিস্কুট খেতে পারবে । সবাই আক সাথে হেসে উঠে ।নাদিয়া কে ডেকে পাগল বলে কাগজ রেডি করেছ ।— হা ভাইয়া , কিন্তু কেন ।— চল আমার সাথে । আর কিছু টাকা নাজু আপার কাছ থেকে নিয়ে নাও ।— ঠিক আছে ।নাদিয়া কে নিয়ে চলে যায় যায় একটা কোচিং । এখান থেকে প্রাইভেট বি এ পরীক্ষাদিবে । নাদিয়া কে বলে – আমি বিশ্বাস করি মানুষেই পারেঘুরে দাড়াতে । তুমি মনে কর যে তুমি পরে গেছ নদীতে একটামাত্র কুরিপানা তে তুমি ভাসছ । তোমার আর কিছুই নেই । চেষ্টা কর একদিন তুমি নদী বাঁধ দিতে পারবে । বি,এ পাশ করে ল , তে ভর্তি হবে । এটাই আমার আশা ।— নাদিয়া অবাক হয় । ভাবতেই পারে না। নাদিয়া বলে আমি পারব তো ।— হা পারবে । চল বই আর গাইট কিনে দেই । দুই বোন এক সাথে আসবে আরযাবে । জিবনে বিশ্বাস কর জ্ঞান অর্জন করে । নাদিয়ার মোবাইল এ ফোন আসে ।দিলরুবা জানায় সে ডাক্তার জিবন কে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা হয়েছে ।পাগল বলে তোমার ফোনের দিকে খেয়াল রেখ একটা এস এম এস আসবে আমাকে জানিও ।বাসায় এসে পাগল মানুষটা পুকুর পারে দাড়িয়ে শিলার বাবা কে ডাক দেয় । শিলার বাবা পুকুর পারে আসে । শিলার বাবা জানতে চায় । ভাই আসলে কি হয়েছিল এর কোন ব্যখ্যা আছে । পাগল বলে আমাকে আবার ভুল বুঝবেন না তো ।— না ভাই তোমাকে ভুল বুঝব না । আমি জানতে চাই ।— পাগল বলে আপনাদের বাড়িতে একটা মেয়ে কাজ করত মিনা তার কথামনে আছে ।— হ্যা আমরা ফুফু বলে ডাকতাম ।— মেয়েটি কোথায়— জানি না । তখন আমি বিদেশে চলে যাই । কিন্তু চাচী বলেছে- চলে গেছে না বলে ।— একটা মেয়ে আপনার দাদী পেলে বড় করল । আর মেয়েটা চলে গেল ।তার তিন দিন পড়ে আপনার চাচা ফাসি নিল ।আপনার চাচী তার পর পাগল হয়ে কিছু দিন পর মারা গেল । কিন্তু কেন আপনারচাচা মারা গেল তাও কেউ জানতে চাইল না। আপনার মা পর্যন্ত না।তাহালে কি এর পিছনে রহস্য নাই । — কি রহস্য— মিনা এক রহস্য
চলমান——-