বনানীর এফ আর টাওয়ারের ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে নিহতদের একজন পাবনার আমির হোসেন রাব্বি
সৈয়দ আকতারুজ্জামান রুমী, পাবনা প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
বনানীর এফ আর টাওয়ারের ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে নিহতদের একজন পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার আর আতাইকুলা ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের আমির হোসেন রাব্বির মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে পুরো গ্রাম জুড়ে। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে দিশেহারা পিতামাতা: স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে গ্রাম জুড়ে: শোকাহত পরিবারের পাশে ছুটে গেছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ সকল শ্রেনীর মানুষ। এদিকে শোকাহত পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান প্রদান সহ নিহত পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার বাদ জুম্মা নিহতের নামাজে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে লাশ দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানাযায়, নিহতের নাম আমির হোসেন রাব্বি। পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার আর আতাইকুলা ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের কৃষিজীবি আইয়ুব আলীর একমাত্র ছেলে। তিন ভাইবোনের মধ্যে সে ছিলো সকলের বড়। পাবনার শহীদ বুলবুল কলেজ থেকে এইচ এস সি ও এডওয়ার্ড কলেজ থেকে এম এ পাশ করে চাকরিতে যোগ দেন ঢাকা বনানীর এফ আর টাওয়ারের ১১ তলার ইকো লাইন বিডি লিমিটেড নামের একটি কোম্পানীতে। গেলো মাসে পাবনাতে এসে পিতামাতার সাথে সময় কাটিয়ে গেছে রাব্বি। বাড়ির কাজে হাত দিয়ে বিয়ের পিড়িতে বসবেন বলে বেশ কিছু ইটও কিনে বাড়ির পাশে রেখে পিতামাতার দোয়া নিয়ে চলে যান ঢাকায়। আবারও তার বাড়িতে আসবার কথা ছিলো এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে।
কিন্তু ২৮ মার্চে বনানীতে তার চাকরিস্থল এফ আর টাওয়ারের ভযাবহ অগ্নিকান্ডে অকালে সে চলে যায় না ফেরার দেশে। তার দীর্ঘদিনের রুমমেট আরেক বন্ধুর ফোনের মাধ্যমে আগুনের ঘটনা জেনে খোঁজ করে খুঁজে পাননি রাব্বিকে। পরে ঐদিন রাত সাড়ে এগারোটায় হাসপাতালে রাব্বির মরদেহ দেখে সনাক্ত করে বাড়িতে খবর দেয়।
শুক্রবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌছালে এক হৃদয় বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ভালোবাসার মানুষদের ভীড়ে তার বাড়ির আঙিনা হয়ে পড়ে যেন শোকাহত মানুষের মিলিত কান্নার ঢেউয়ে। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী, বিনয়ী ও সদালাপী হিসেবে গ্রামের মানুষের কাছে অনেক আদরের ছিলো রাব্বি। আর একারনেই তার এমন অনাকাংখিত মৃত্যু যেন নাড়া দিয়েছে তার পুরো গ্রামের মানুষকে। খবর জেনে বাড়িতে ছুটে গেছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা সহ নানা শ্রেনীর অসংখ্য মানুষ। একমাত্র সন্তানের এমন মৃত্যুতে রাব্বির পিতা আইয়ুব আলী ও রহিমা খাতুনের চোখে মুখে তাকানোরা উপায় নেই। তারা ভেঙে পড়েছেন কান্নায়।
সাথিঁয়া উপজেলা, নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত পরিবারের কাছে ২০ হাজার টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।
নিহত রাব্বির পিতা আইয়ুব আলী বলেন, তার ছেলের স্বপ্ন ছিলো ছুটিতে বাড়ি ফিরে সে পাকা ঘর তৈরি করবে। তার জন্য ইট সহ দেড় লাখ টাকার মালামাল ও কিনে রেখেছিলো সে। বাড়ি তৈরি করে সে বসবে বিয়ের পিড়িতে। সে স্বপ্ন পুরণ আর হলো না।
আব্দুর রশিদ (রাব্বির চাচা) জানান, তার ভাতিজা যে ভবনে থাকে সেখানে অগ্নিকান্ডের খবর জেনে ঢাকা ছুটে যান রাব্বির চাচা আব্দুর রশিদ। তিনি রাব্বির বন্ধুকে সাথে নিয়ে লাশ গ্রহন করেন।
মাসুদ রানা রতন রাব্বির বন্ধু বলেন, পাশের গ্রামের ছোটবেলার বন্ধু, দীর্ঘদিনের রুমমেট অগ্নিকান্ডের খবর জেনে প্রিয় বন্ধু রাব্বিকে খুঁজতে খুঁজতে হয়রান হয়ে যান, কোথায়ও খুঁজে পাননি প্রিয় বন্ধুকে। খুঁজতে খুঁজতে পরে রাত সাড়ে এগারোটায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে বন্ধু রাব্বির মরদেহ দেখতে পান তিনি।
এদিকে নিহতের পরিবারের পাশে দাড়িয়েছে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তৎক্ষনাত নিহতের পরিবারকে বিশ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি সার্বক্ষনিক তারা রয়েছেন শোকাহত পরিবারের পাশে। এমন অনাকাংখিত মৃত্যু দেখতে আর চাই না কেউ।