খানসামায় অদম্য মেধাবী নিরতার মেডিকেলে অর্থাভাবে ভর্তি ও পড়াশুনা অনিশ্চিত
ভূপেন্দ্র নাথ রায়, খানসামা(দিনাজপুর) প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
দিনাজপুরের খানসামার অদম্য মেধাবী নিরতা রায়। দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহন করে দারিদ্রতাকে জয় করে পিতা-মাতা এবং এলাকায় উজ্জলতার স্বাক্ষর বহন করছে এই মেধাবী শিক্ষার্থী। পরিবারের অসীম অভাব অনটনে থেকেও কখনো লেখাপড়ায় পিছুপা হয়নি সে। নিরতা রানী রায় ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে মেরিট স্কোর-২৭০.৭৫ ও মেরিট পজিশন-২৬৪৫ অবস্থান থেকে নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। সে উপজেলার গোয়ালডিহি ইউনিয়নের নলবাড়ি গ্রামের ভূমিহীন ধীরেন্দ্র নাথ রায়ের মেয়ে। দুই ছেলে-মেয়ের মধ্যে নিরতা বড়। ছোট ভাই মাইকেল ৬ষ্ট শ্রেণীতে পড়ে। বাবা-মা দরিদ্র হলেও উভয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ। বাবা ধীরেন্দ্র নাথ ডিগ্রি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়েছিলো কিন্তু অভাবের পরিবারে অকৃতকার্য হয়ে পরবর্তীতে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পায়নি। তাদের মনে লালিত স্বপ্নটা পূরণ করে চলেছে তাদের মেয়ে নিরতা রায়। নিরতার বাবা ধীরেন্দ্র নাথের সাথে কথা হলে সে জানায়, ‘আমার দুই শতক ভিটেবাড়ী এবং মাত্র ছয় শতক আবাদি জমি আছে। শিক্ষিত হওয়ার কারনে মানুষের বাড়ীতে দিনমজুর হিসেবে কাজ করতে পারিনা। এ কারনে সিজনাল ছোট-খাটো ব্যবসা করি। আমার মেয়ে মেডিকেলে চান্স পেয়ে আমি খুব আনন্দিত।’
নিরতা উপজেলার নলবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে পাশ করে সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পায়। এরপর নলবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণীতে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে ট্যালেন্টপুলে স্কলারশিপ অর্জন করে। একই বিদ্যালয় থেকে ২০১৫ সালে এস,এস,সি’তে জিপিএ-৫ (গোল্ডেন) পায়। ভালো রেজাল্ট করার সুবাদে সে ডাচ বাংলা ব্যাংক থেকে মাসিক মেধাবৃত্তি লাভ করে। যা দিয়ে বেগম রোকেয়া সরকারী কলেজ থেকে পড়াশুনা করে এইচ,এস,সি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে সাফল্যের সহিত উত্তীর্ণ হয়। নিরতা সকালের সময়’কে জানায়, ‘এবার এমবিবিএস পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেয়ে আমি অনেক গর্বিত। কিন্তু আমার পিতা দরিদ্র হওয়ার কারণে আমি খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করেছি। আপনারা সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, আমি যেন ভালভাবে মেডিকেলে লেখাপড়া করে মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকতে পারি।’ এখন নিরতার ভর্তি এবং মেডিকেল সরঞ্জামাদি কিনতে তার পিতা চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে। এদিকে উপজেলা থেকে পপি ও শাকিলা নামে দু’জন দরিদ্র মেধাবী ছাত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে। এর মধ্যে ভাবকি ইউপি’র গুলিয়ারা সর্দার পাড়ার গরীব বর্গাচাষী রনজিৎ রায়ের মেয়ে পপি রানি এইচএসসিতে জিপিএ ৪.৭৫ পেয়েও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ লাভ করে এলাকায় সাড়া জাগিয়েছে। খানসামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাজেবুর রহমান খবর পেয়ে বিত্তবানদের সহযোগীতায় নিরতাকে ২০ হাজার ৭০০ টাকা এবং অপর দুজনকে ৫ হাজার টাকা করে প্রদান করেন। তিনি বলেন, সমাজের বিত্তবানরা দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের সহযোগীতায় এগিয়ে আসলে মেধাবীরা দেশ সেবায় উজ্জ্বল স্বাক্ষর রাখতে পারবে।
- কাগজ টুয়েন্টিফোর বিডি ডটকম এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।