নাহিন শিল্পীর “অনামিকার দিনগুলো – ১”
অনামিকার দিনগুলো – ১
-নাহিন শিল্পী
একদিন মুখোমুখী বসেছিলাম অনামিকার। অদ্ভূত ভাবে দেখেছিলাম সেই নারীকে যেনো আমারই প্রেতাত্মা। আগ্রহ নিয়ে জানতে চেয়েছিলাম কি এমন কথা যা আমাকেই বলতে হবে।
মাথা নেড়ে বলেছিলো, বিশ্বাসের আবরণে সেজে থাকলেই সবাই বিশ্বস্ত হয় না। আমি নাকি সেই বিশ্বস্ত যাকে সব বলা যায়। হৃদয় বাড়িয়ে শুনতে থাকলাম অনামিকার কথা। কথা তো নয় যেনো বুক ছিড়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে জলন্ত অগ্নেয়গিরির সমস্ত লাভা।
জানিস্ সুজয়া আমি চিরকাল বোকাই রইলাম। জীবন চলার যে ব্যাকরণ রয়েছে সেটা এখনো মাথায় ঢুকে না। সহজে বিশ্বাস করি মানুষকে আবার বড় বেশী ভয়ও পাই আমি এই মানুষকেই । অথচ মানুষ ছাড়া থাকতেও পারি না। আবার যেনো ভাবিস্ না এই মানুষ সেই মানুষ। এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে গেলো অনামিকা। তার সারা চোখে মুখে যেনো বলতে পারার এক অনিমেষ তৃপ্তির ছটা । সুজয়া ওর মুখের দিকে তাকিয়ে হাসি কান্নার সন্ধিক্ষণে পরে যায়। কাঁধে হাত রেখে বলে, ভূমিকা বাদ দিয়ে আসল কথাগুলো বলে ফেল্। বিশ্বস্ততার সাথে তোর সব কথা আমি শুনবো এবং রাখবো।
অনামিকা দৃঢ়তার সাথে বলে চলে —-নিঃসঙ্গতা ঘুছাতে একটা প্রিয় মানুষ খুঁজছিলাম। কতো শত মানুষের সাথে যে এই জীবনে পরিচয় হলো। কিন্তু নাহ্ বিশ্বস্ত, নির্ভরযোগ্য, রুচিবোধ সম্পন্ন তেমন কাউকে নিজের সাথে মিলাতে পারি না। তখনি একদিন মনে পড়লো এক অচেনা বন্ধুর কথা। যাকে চিনবো দুরের কথা কোনদিন দেখিও নি।
আমার তখন এনড্রয়েড ফোন ছিলো না। যার ফলে ফেসবুকও নেই। হঠাৎ একদিন একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন এলো। রিসিভ করার সাথে সাথেই ওপ্রান্ত হতে এক বিনয়ী পুরুষ কণ্ঠে সালাম শুনতে পেলাম। জবাব দেবার পর ভদ্রলোক জানতে চাইলো আমি অনামিকা বলছি কি না?
— জ্বী আমি অনামিকা। আপনি কে বলবেন প্লিজ
— আমি নিবাস, পুরো নাম নির্মল নিবাস। সাথে পেশা এবং কর্স্থলের পরিচয় দিতেও বাকী রাখলো না
— তা আমার কাছে কি চান
— আপনাকে, আমাকে না চিনলেও আমি আপনাকে চিনি। এবং ভালোবাসি
— এইসব কি বলছেন! আমার নাম্বার পেলেন কোথায়! ভীষণ কৌতুহলী প্রশ্ন অনামিকার । উত্তর অসমাপ্ত রেখেই লাইনটা কেটে গেলো।
হাজারো প্রশ্ন আর কৌতুহল অনামিকার চোখে মুখে। ফোনটা পাশে রেখেই কাজে মন দিলো সে। কিছুক্ষণ পর মেসেজ টিউন বেজে উঠলো। মেসেজে ক্লিক করতেই স্ক্রিণে ভেসে উঠলো ইংরেজিতে লেখা “আইলাভইউ”।
এভাবেই আসতে থাকলো প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা নিয়ম করে অসংখ্য “আইলাভইউ” মেসেজ।
অনামিকার একটা প্রেমছিলো। এভাবে আর এত শতবার আইলাভইউ বহু বছরের প্রেমের সময়েও সেই পুরোনো প্রেমিক তাকে বলেনি। সবকিছু কেমন অদ্ভূত আর ভীতিকর লাগছে। ফোন করে সব পরিচয় বলে দিচ্ছে অথচ অনামিকা তার কিছুই জানে না।
বিশাল সাগরের উন্মত্ত জলরাশিতে অনামিকার অতীত আর বর্তমান যেনো হাবুডুবু খাচ্ছিলো।
বছর খানেক পর এক ঈদে ফোন করলো নিবাস। সে অনামিকার সাথে দেখা করতে তারই শহরে আসছে। যে করেই হোক একবার তাকে দেখা চাই। একের পর এক ফোন। অনামিকা তখন তার আত্মীয়ের বাসায়। সে বুঝতে পারছিলো না, এই মুহূর্তে নিবাস কোথা থেকে কি করে আসবে। কারণ সে তো শতশত মাইল দুরে থাকে। আবার ফোন,
–হ্যালো অনামিকা
— জ্বী বলছি
— তুমি বের হও, আমি আধঘণ্টার মধ্যে আসছি তোমার কাছে। বলেই ফোনটা কেটে দিলো।
এবার যেনো অনামিকার হার্টবিট ছাপ্পান্নতে এসে পৌছেছে । খুব দ্রুত মনে মনে একটা লোকেশন ঠিক করে নিলো সে। কারণ তাকে এত জানা মানুষটাকে যে একবার দেখতেই হয়। এবার নিজেই ফোন করে বলে দিলো কাছেই একটা পার্কে আসতে।
অবশেষে আধঘণ্টা পেরিয়ে এলো সেই প্রথম দেখার ক্ষণ —
চলবে —