আমার দেখা একজন হোমিও ডাক্তার- জীবন ও জীবিকা
আমার দেখা একজন হোমিও ডাক্তার-
জীবন ও জীবিকা
(৫০০/- টাকা দিয়ে ৬০০ পৃষ্ঠার একটি বই পড়া অনেকের পক্ষে সম্ভব না ফলে সংক্ষেপে কিছু কথা তুলে ধরা হলো। মূল বই অর্গানন অব মেডিসিন বঙ্গানুবাদ ডা. রেজাউল করিম।)
ডা. আওলাদ হোসেন
যারা হোমিওপ্যার্থি জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছেন তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, বিদ্যার দৌড়, কর্মক্ষেত্রে সফলতা, দক্ষতা, সৎ, বিনয়ী, ভদ্রতা, মার্জিত স্বভাব আমাদের মত দরিদ্র ও অশিক্ষিতদের দেশে জেলা শহরে দু’এক জন পাওয়া গেলেও অর্গানন পড়ার মতো ডাক্তার নেই। আমি অনেক কষ্ট করে ডা. রেজাউল করিমের নিকট ১০ বৎসর ধরে শুধু অর্গানন বইটিই পড়ছি এবং সমশিক্ষার্থী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি। অর্গাননের ছাত্র পাওয়া যায় না। শিরোনাম নিজেই ব্যাখ্যার জন্য যথেষ্ট যে, জীবন ও জীবিকা বলতে কি বুঝিয়েছি। চার পাশে যারা আছেন তারা অর্গানন বাদ দিয়ে চিকিৎসা দেন। ফলে অনেক জ্ঞান ছাড়ায় ঔষধ বিক্রেতা হিসেবে জীবিকা অর্জন ভালই হয়ে থাকে। গরীবের সংসার, রোজগার দিয়ে সংসার চলে না, কিন্তু সমাজ বিত্তশালীর কদর করে, রাজনীতি, অর্থনীতি, ধর্মনীতি দ্রুত বদলে যাচ্ছে, সৎভাবে জীবন যাপন কোথাও নেই। মিথ্যা কথা, ধোকাবাজী, জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসা, জা নিজেই আক্রান্ত, টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারে না। অথচ, সৎ উকিলের বাজারের ব্যাগ খালি থাকে। অথচ মক্কেলের কোন দোষই নেই। উকিল ছাড়াই নির্দিষ্ট সময় পড়ে বানের জলের মতো ভেসে যাবে বঙ্গোপ সাগরে। প্যাটারিং কতক্ষণ।
সূত্র-১৫৩, সদৃশভাবে সুনির্দিষ্ট ঔষধের জন্য এই অনুসন্ধানে অর্থাৎ পরীক্ষিত ঔষধগুলোর লক্ষণসমূহের তালিকার সাথে প্রাকৃতিক ব্যাধির সমষ্টিবাচক লক্ষণসমূহের এ তুলনায়, কৃত্রিম রোগ উৎপাদক শক্তির মধ্য হতে আরোগ্য-অভীষ্ট ব্যাধির সদৃশ ঔষধ পাওয়ার লক্ষে খুব আকর্ষণীয়, অসাধারণ, বিরল এবং বৈশিষ্ট্যপূর্ণ (চরিত্রের পরিচয়বাহী) নিদর্শন এবং রোগলক্ষণসমূহ সবার উপরে এবং সর্বাধিক গুরুতেরসাথে বিবেচিত হয়; কারণ এগুলো অধিকতর বিশিষ্টভাবে এমন যে নির্বাচিত ঔষধের লক্ষণ তালিকায়তাদের খুব সদৃশ লক্ষণ থাকতে হবে, আরোগ্য কার্যকর করার জন্য একে সর্বাধিক উপযোগী করার উদ্দেশ্যে। খুব সাধারণ এবং অনিরুপিত লক্ষণসমূহ: ক্ষুধামান্দ্য, মাথাব্যাথা, দুর্বলতা, অস্থির নিদ্রা, অস্বস্তি, এবং অনুরুপ লক্ষণসমূহ খুব কমই মনোযোগ আকর্ষণ করে যখন তা অস্পষ্ট ও অনিরুপিত প্রকৃতির হয়,যদি তাদেরকে খুব যথাযথভাবে বর্ণনা করা না যায়,যেহেতু এমন সাধারণ প্রকৃতির লক্ষণপ্রায় প্রত্যেক রোগেই দৃষ্টিগোচর হয় এবং প্রায় প্রত্যেক ঔষধেই উৎপন্ন হয়।
ব্যাখ্যাঃ- সদৃশভাবে সুনির্বাচিত, ঔষধ অনুসন্ধানের জন্য স্বভাবতই প্রথমে রোগের লক্ষণগুচ্ছ স্থির করতে হবে। সদৃশ লক্ষণ খুঁজতে হবে জ্ঞাত ঔষধের লক্ষণ তালিকা। এইরুপ অনুসন্ধানে সম্ভাব্য ঔষধের মধ্যে তুলনামূলকভাবে বিচার করে অধিকতর সদৃশ ঔষধটি নির্বাচন করতে হবে। রোগের লক্ষণগুচ্ছ সম্ভাব্য ঔষধের লক্ষণ তালিকায় খুঁজে পেতে হলে কিছু শৈল্পিক কৌশল অবলম্বন করতে হয়। কারণ রোগের লক্ষণগুচ্ছের কিছু লক্ষণ পৃথকভাবে অনেক ঔষধে আছে। কিন্তু রোগীকে একসাথে অনেক ঔষধ দেয়া যাবে না। রোগীর জন্য মাত্র একটি ঔষধ নির্বাচন করতে হবে। যে ঔষধের লক্ষণ তালিকায় রোগের লক্ষণগুচ্ছের সর্বাধিক সংখ্যক গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ পাওয়া যাবে তা হবে তার জন্য সুনির্দিষ্ট ঔষধ। অতএব বিভিন্ন ঔষধের মধ্যে তুলনা করে একটি যথার্থ সদৃশ ঔষধ নির্বাচন করতে হয়। এইরুপ তুলনার জন্য হোমিওপ্যাথিতে একটি বিশেষ পদ্ধতি আছে। এ-পদ্ধতি অনুসারে রোগের লক্ষণগুচ্ছের সবগুলো লক্ষণ পৃথকভাবে ব্যাখ্যা করে সুনিরুপিতভাবে কাগজের বাম পাশে গুরুত্ব অনুসারে সাজিয়ে লিখতে হবে। তারপর উক্ত সুনিরুপিত লক্ষণ শিরোনামের ডান পাশে এসব ঔষধের নাম লিখতে হবে যা উক্ত লক্ষণ উৎপাদন করে। অর্থাৎ সাদৃশ্যের ভিত্তিতে লক্ষণের পাশে ঔষধের নাম লিখতেহবে। প্রত্যেক লক্ষণের সাথে প্রত্যেক ঔষধ সদৃশ হতে পারে না। ফলে বিসদৃশ ঔষধগুলো অনেক লক্ষণশিরোনাম থেকে বাদ পড়ে যায়। অর্থাৎ বৈসাদৃশ্যের কারণে রোগের লক্ষণের সাথে সাদৃশ্যের প্রতিযোগিতায় অনেক ঔষধ হেরে যায়। রোগের লক্ষণের সাথে সাদৃশ্যের প্রতিযোগিতায় একটি ঔষধসর্বোচ্চ স্থান অধিকার করে। তালিকার সবগুলো লক্ষণের পাশে সদৃশ ঔষধের নাম লেখা শেষ হলে পুরা তালিকা পরীক্ষা করতে হবে। দেখতে হবে কোন ঔষধ সাদৃশ্যের প্রতিযোগিতায় শেষ পর্যন্ত টিকে আছে এবং সর্বোচ্চ স্থান অধিকার করেছে। সর্বাধিক লক্ষণে সদৃশ ঔষধটি রোগীর জন্য সুনির্দিষ্ট ঔষধ। এইরুপ তুলনার মাধ্যমে রোগীর জন্য ঔষধ নির্বাচন করাই হোমিওপ্যাথির মূল বিধান। তবে এ-কাজটি নির্ভূলভাবে করতে হলে সর্বপ্রথম নির্ভূল একটি রোগীলিপি আবশ্যক। বিশ পৃষ্ঠাব্যাপী রোগীলিপি লিখলেই রোগীলিপি হয় না যদি তাতে রোগের আসল চিত্র খুঁজে পাওয়া না যায়। রোগীলিপি মানে রোগীর বর্ণিত রোগযন্ত্রণা এবং চিকিৎসকের পরীক্ষালব্ধ রোগচিত্রের বিবরণ। কিন্তু এরুপ বিবরণে যদি রোগের প্রকৃত চিত্রটি প্রকাশিত না হয় তাহলে তাকে
রোগীলিপি বলা যাবে না। কারণ রোগীলিপির মূল লক্ষই রোগের আসল রুপ চিত্রিত করা। এইরুপ একটি রোগীলিপি কিভাবে প্রস্তুত করতে হয় তার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ১৫৩ নম্বর সূত্রে। এ-সূত্রে বলা হয়েছে যে রোগের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয় রোগের অধিকতর আকর্ষণীয়(Striking), অসাধারণ (Singular), বিরল (Uncommon) এবং বৈশিষ্ট্যপূর্ণ(Peculiar) লক্ষনসমূহের মাধ্যমে। কাজেই রোগের আকর্ষণীয়,অসাধারণ, বিরল এবং বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণ রোগীলিপিতে থাকতেই হবে এবং এলক্ষণগুলো খুবই স্বচ্ছ, সুস্পষ্ট এবং রোগীর নিকট প্রবলভাবে অনুভূত হতে হবে। অন্যথা রোগীলিপিশুধুমাত্র একটি গল্পে পরিণত হবে। তা রোগীলিপি হবে না এবং ঔষধ নির্বাচনে কোন কাজে আসবে না । অতএব রোগের আসল চরিত্রের পরিচয়বাহী (Characteristic) লক্ষণগুলো কেমন এবং কিভাবে তা বেছে নিতে হয় সে সম্পর্কে আলোচনা আবশ্যক। অত্র সূত্রে রোগের যথার্থ পরিচয়বাহী লক্ষণগুলোকে ৪টি গুণবাচক শব্দ দ্বারা বিভক্ত করা হয়েছে। মুলত তারা সকলেই প্রায় সমার্থবাচক। তথাপি যতটুকু সম্ভব আমরা অত্র সূত্র অনুসারে তাদের সংজ্ঞা পৃথকভাবে নিরুপণ করবঃ-
১. অধিকতর আকর্ষণীয় লক্ষণ (More Striking Symptom)ঃ যেসব লক্ষণ বিশেষভাবে চিকিৎসকের মনোযোগ আকর্ষণ করে তাদেরকে আকর্ষণীয় লক্ষণ বলা হয়। রোগের অদ্ভুত, বিস্ময়কর আশ্চর্যজনক লক্ষণগুলো সব সময় চিকিৎসকের বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করে। রোগের সাধারণ লক্ষণগুলো চিকিৎসকের মনে কোন প্রকার বিস্ময় সৃষ্টি করে না। যেমন- জ্বরে উচ্চ তাপের সময় জল পিপাসা খুব স্বাভাবিকভাবেই একটু বেশি হতে পারে। তাই তাপের সাথে জলপিপাসা রোগের সাধারণ লক্ষণ। চৈত্রের দুপুরে জল পিপাসা খুব সাধারণ বিষয়। এমনকি পিপাসাহীন ব্যক্তি এ-সময় জল পিপাসা অনুভব করে। তাই রোগের সাধারণ লক্ষণ চিকিৎসকের মনোযোগ আকর্ষণ করে না। কিন্তু যে লক্ষণ কোন রোগে অকস্মাৎ পাওয়া যায় তা অবশ্যই চিকিৎসকের মনোযোগ আকর্ষণ করে। কারণ এসব লক্ষণের মধ্যে বিস্ময় লুকিয়ে থাকে। দূর্লভ জিনিসের প্রতি আকর্ষণ চিরাচরিত বিষয়। যেমন- জ্বরে শীত অবস্থায়,ভীষণ’পিপাসা’ একটি আশ্চর্যজনক লক্ষণ। জ্বালাপোড়া গরমে উপশম একটি আশ্চর্য লক্ষণ। কারণ জ্বালাপোড়ায় সাধারণত ঠান্ডা ভাল লাগে। অতএব রোগে যে লক্ষণটি আশ্চর্য,অদ্ভূত এবং বিম্ময়কর এবং যার উৎপত্তি সম্পর্কে কোন কারণ দর্শানো যায় না তা নিঃ সন্দেহে খুব আকর্ষণীয় লক্ষণ। রোগে যে কোন আকর্ষণীয় লক্ষণ রোগের আসল চিত্র প্রকাশ করে। তাই এ-সূত্রে অধিকতর আকর্ষণীয় লক্ষণ অনুসন্ধান করতে বলা হয়েছে। হোমিও ঔষধও একটি। কারণ যে রোগ হয় সেই রোগের সদৃশ ঔষধই দেয়া হয় শুধু ভিন্ন প্রকৃতিতে…….. ২. অসাধারণ লক্ষণ(ঝরহমঁষধৎ ঝুসঢ়ঃড়স)ঃ রোগের যেসব লক্ষণ যথার্থভাবে বিশেষিত এবং সুনিরুপিতরুপে প্রকাশিত হয় তাদেরকে অসাধারণ লক্ষণ বলা হয়।রোগীলিপিতে যে লক্ষণটি সাধারণ লক্ষণের শামিল হয় না এবং বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে সেইরুপ লক্ষণকে অসাধারণ লক্ষণ হিসাবে গণ্য করা হয়। রোগীর লক্ষণ বিচার খুব আপেক্ষিক বিষয়। এক রোগীতে যা রোগের সাধারণ লক্ষণ অন্য রোগীতে তা রোগের অসাধারণ লক্ষণ হতে পারে। প্রত্যেক রোগীর সামগ্রিক অবস্থার মধ্যে যে লক্ষণটি অনন্যসুলভ, সেই লক্ষণটি রোগের ব্যক্তিগত বিশেষত্বের সাথে সম্পর্কিত। তাই তা উক্ত রোগে একটি অসাধারণ লক্ষণরুপে গণ্য হয়। যেমন- জ্বরে তাপ অবস্থায় জলপিপাসা একটি সাধারণ লক্ষণ। কারণ এ-অবস্থায় পিপাসা থাকা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু জ্বরে শীত অবস্থায় জলপিপাসা একটি অসাধারণ লক্ষণ।
কারণ লক্ষণটি ব্যক্তিবিশেষে পরিলক্ষিত হয়। অনেক সাধারণ লক্ষণ রোগীর লক্ষণগুচ্ছে সুনিরুপিত অবস্থায় অসাধারণ রুপ লাভ করে। যেমন- দুর্বলতা একটি সাধারণ লক্ষণ। কিন্তু বিশেষ অবস্থায় দুর্বলতা,যেমন- শয়নের পর’দুর্বলতা অনুভব’ একটি অসাধারণ লক্ষণ। কারণ লক্ষণটি একজন ব্যক্তির নিজস্ব বৈশিষ্ট প্রকাশ করে। অরুচি একটি সাধারণ লক্ষণ। কিন্তু তা যদি কোনভাবে বিশেষিত হয় তাহলে অসাধারণ লক্ষণ হিসাবে তা গুরুত্ব লাভ করে। যেমন- পেটে ক্ষুধা মুখে অরুচি একটি অসাধারণ লক্ষণ। বিশেষ কোন খাদ্যের প্রতি ঝোঁক অথবা অরুচি একটি অসাধারণ লক্ষণ। মাথাব্যথা একটি সাধরণ লক্ষণ।
কিন্তু মাথাব্যথা সকাল ১০টায় বৃদ্ধি এবং প্রসাবে উপশমÑএ দুটি অবস্থা মাথাব্যথাকে বিশেষিত এবং সুনিরুপিতভাবে প্রকাশ করে। এবং এ-দুটি লক্ষণ বা অবস্থা দ্বারা মাথাব্যথারোগ অন্য সকর মাথাব্যথারোগ থেকে আলাদা হয়ে যায়। তাই এমতাবস্থায় উক্ত রোগীর মাথাব্যথার হ্রাস- বৃদ্ধি অসাধারণ লক্ষণ। অস্থির নিদ্রা সাধারণ লক্ষণ। কিন্তু রাত ৩ টার পর অস্থির নিদ্রা অসাধারণ লক্ষণ। ঋতুস্রাবের আগে-পরে অস্থির নিদ্রা অসাধারণ লক্ষণ। বামপাশে শয়নে অস্থির নিদ্রা একটি অসাধারণ লক্ষণ। মোট কথা রোগের সকল প্রকার কারণ, হ্রাস-বৃদ্ধি, স্রাবের আকৃতি,প্রকৃতি এবং সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম অবস্থা রোগের অসাধারণত্ব প্রকাশ করে এবং যেসব লক্ষণ রোগের অসাধারণত্ব প্রকাশ করে তা রোগের অসাধারণলক্ষণ।
৩.বিরল লক্ষণ (Uncommon Symptom)ঃ কোন ব্যাধির সাথে যে লক্ষণটি কদাচিৎ পাওয়া যায়তাকে বিরল লক্ষণ (টহপড়সসড়হ ঝুসঢ়ঃড়হ) বলা হয়। যেমন- কোষ্ঠবদ্ধতায় শক্ত মলে অজীর্ণখাদ্য থাকা একটি বিরল লক্ষণ। কারণ কোষ্ঠবদ্ধ রোগীরা প্রায়ই প্রতিদিন বাহ্য করে না। এত দীর্ঘ সময় খাদ্যবস্তু পেটে অজীর্ণ থাকা একটি অস্বাভাবিক ঘটনা। পাতলা বাহ্যে মলের সাথে শক্ত গুটি থাকা একটি বিরল লক্ষণ। কারণ এত পাতলা বাহ্যের মধ্যে শক্ত গুটি তৈরী হওয়া একটি অসম্ভব ঘটনা অথচ বাস্তব।
কোষ্ঠবদ্ধতায় মার্বেল আকারের গুটি মল একটি বিরল লক্ষণ। কারণ মলাশয়ে মার্বেল প্রস্তুতের কারখানা নেই। তাই এইরুপ মার্বেল তৈরীর বিষয়টি খুব রহস্যপূর্ণ এবং একটি অদ্ভুত লক্ষণ। উদরাময়ে জলের মতো পাতলা মলের বর্ণ ’হলুদ’ হওয়া একটি বিরল লক্ষণ। কারণ স্বাভাবিক ও সুস্থ অবস্থায় মলের বর্ণহলুদ হয়। নিউমোনিয়ায় ’আক্রান্ত পাশে শয়ন’ একটি অদ্ভুত লক্ষণ। ’জল পিপাসা জলপানে মিটে না’গরম জলের পিপাসা ইত্যাদি অদ্ভুত প্রকৃতির লক্ষণগুলো রোগে খুব কম পাওয়া যায় বলেই তাদেরকেবিরল লক্ষণ বলা হয়। রোগীলিপিতে বিরল লক্ষণ বেছে নিতে হলে আমাদের মনে রাখতে হবে যে, রোগীর লক্ষণগুচ্ছে অসংগত এবং অসামঞ্জস্যপূর্ণ লক্ষণ সর্বদা বিরল লক্ষণ হিসাবে গণ্য হয়। এইরুপদূর্লভ এবং বিরল লক্ষণের মধ্যে ব্যাধির প্রকৃত পরিচয় নিহিত থাকে । কারণ ব্যাধির সাধারণ লক্ষণগুলো সচরাচর সকল রোগীতেই পাওয়া যায় এবং ব্যাধির সাধারণ লক্ষণের মাধ্যমে ব্যাধির শ্রেণিগত রুপপ্রকাশিত হয়। ব্যাধির অসাধারণ এবং বিরল লক্ষণের মাধ্যমে ব্যাধির স্বতন্ত্র রুপ প্রকাশিত হয়। কারণ ব্যাধির অসাধারণ এবং বিরল লক্ষণগুলো ব্যক্তিবিশেষে উৎপন্ন হয়। তাই তারা পীড়িত ব্যক্তির ধাতবিশিষ্ট হয়। এই কারণে সদৃশচিকিৎসাবিধানে ঔষধ নির্বাচন করার জন্য রোগীর মধ্যে সর্বাগ্রে রোগের অসাধারণ এবং বিরল লক্ষণগুলো খুঁজে বের করতে হয়। ডা. হেরিং “Guiding Symptoms”এর ”Preface” এ বলেছেন যে, “Three points of rest, according to mathematics, being enough to support any object, we may assume that three characteristics should be sufficient to make a cure very probable.” অর্থাৎ, ”একটি আসনের তিনটি পায়া, গণিতশাস্ত্র অনুসারে, যেকোন বস্তুর ভার বহন করার জন্য যথেষ্ট হয়। আমরা ধরে নেই যে, আরোগ্যকে খুব সম্ভাবনীয়।