বাংলাদেশের নদীসমূহ আশির্বাদ নয় অভিশাপ

বাংলাদেশের নদীসমূহ আশির্বাদ নয় অভিশাপ
-মেহেদী হাসান
(বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস, তৃতীয় বর্ষ, বিষয়- ডেভেলপমেন্ট
স্টাডিজ)।

আমার ছোট বেলার স্মৃতি বিজোড়িত টাঙ্গাইল সদর উপজেলার হুগড়া ইউনিয়নের চকগোপাল গ্রাম। যে গ্রামটি সম্পূর্ণ রুপে যমুনায় বিলিন হয়ে গেছে।

নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। এ দেশের নদীসমূহ এখন আর আশির্বাদ নয় বরং অভিশাপ। প্রতি বছর বর্ষাকালে প্রতিনিয়ত পেপার পত্রিকা, টিভি খবর, ফেসবুক, ইউটিউবসহ সকল প্রকার মিডিয়ায় নদী ভাঙ্গনের চিত্র ফলাও করে দেখানো হয়। যা দেখে আমরা সাময়িক ব্যথিত হই। সরকারও সাধ্যমত নদী ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু এই সমাধান দীর্ঘস্থায়ী নয়। আমরা চাই স্থায়ী সমাধান।

বাংলাদেশের নদীসমূহ এখন কেন অভিশাপ?
বাংলাদেশের নদীসমূহ অগভীর হওয়ায় প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে নদী ভরে যায় এবং এর দুই পাড়ে ভাঙ্গন শুরু হয়। এই ভাঙ্গনের ফলে নদীগুলোর দুই পাড়ের ফসলী জমি এবং গ্রামের পর গ্রাম নদী ভাঙ্গনে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। এমনকি নদীর কূল ছাপিয়ে ইরি ফসলের জমি বালু পড়েও চাষ অযোগ্য হয়ে পড়ছে। আবার গ্রীষ্মকালে এই নদীসমূহ শুকিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে প্রতি বছর কৃষি জমি কমে যাচ্ছে অপর দিকে লাখ লাখ মানুষ ভিটে মাটি ছাড়া হয়ে দারিদ্রতার নিম্নস্তরে পৌছে যাচ্ছে। এভাবে যদি প্রতি বছর হাজার হাজার একর ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলিন হয় এবং পরিনামে বালুচর পাওয়া যায়, উপরন্তু লাখ লাখ মানুষ বেকার হয়ে পড়ে, তাহলে আগামীতে কোন একসময় এ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হতে আবার অনুন্নতশীল দেশে পরিনত হবে।

আমাদেরকে দ্রুত এর স্থায়ী সমাধান খুজে বের করতে হবে এবং নদীসমূহকে অভিশাপ থেকে আশির্বাদে পরিনত করতে হবে।

সুপারিশ:
১। আমাদের অগভীর নদীসমূহ সমতল ভুমি হতে ৩০ থেকে ৪০ ফুট গভীর করে খনন করা যেতে পারে। নদীর গতি পথ সোজা করে খনন করা যেতে পারে এবং পাড় যাতে না ভাঙ্গে এবং স্থায়ী হয় এ জন্য দুই পাড়ে ব্লক বা পাথর ফেলা যেতে পারে।
২। নদী খননের মাটিসমূহ দুই পাড়ে তুলে দেয়া যেতে পারে। এতে লাখ লাখ একর ফসলী জমি তৈরী হবে। গ্রীষ্মকালে গভীর নদীর পানি Low lift pump (LLP) এর মাধ্যমে সেচ কাজে ব্যবহার করা যাবে। গভীর বা অগভীর নলকুপের প্রয়োজন হবে না। এতে জ্বালানী সাশ্রয় হবে এবং অধিক জমি সেচ দেয়া সম্ভব হবে। ফলে বাংলাদেশের খাদ্য ঘাটতি থাকবে না বরং উদ্বৃত্ত হবে।
৩। গভীর নদীতে সারা বছর শীপের মাধ্যমে দেশে এমনকি দেশের বাইরেও ভারী মালামাল (রড, সিমেন্ট, পাথর ইত্যাদি) পরিবহন করা সম্ভব হবে। এতে পরিবহন খরচ অনেকাংশে কমে যাবে। অন্যদিকে সড়ক পথের সেতু, কালভার্ট এর স্থায়ীত্ব অনেকাংশে বেড়ে যাবে।
৪। নদী খনন প্রকল্পটি বাংলাদেশের বড় বড় প্রকল্পগুলোর মত আকারে অনেক বড় হবে। যেমন- যমুনা নদীর কথাই
যদি বলা হয়, তাহলে- যমুনার প্রবেশ পথ কুড়িগ্রাম জেলা হতে গাইবন্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, টাঙ্গাইল,
মানিকগঞ্জ ও পাবনা জেলা পর্যন্ত খনন কার্যবিস্তৃত হবে।
৫। নদী খনন প্রকল্পটি গ্রহণের বিষয়ে এবং কারিগরি সহায়তার প্রয়োজন হলে পার্শবর্তী দেশ ভারত, চীন ও বিশেষ করে জাপানের সহায়তা নেয়া যেতে পারে। এছাড়াও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ নদী খননের মাধ্যমে বিশেষভাবে উপকৃত হয়েছে বা কিভাবে তাদের নদীসমূহ সম্পদে পরিনত করতে সক্ষম হয়েছে ইত্যাদি বিষয়ে তাদের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে।
৬। বাংলাদেশের বড় ৩টি নদীতে ৩টি সেতু নির্মিত হয়েছে। এখন নদী খনন প্রকল্প হাতে নেয়ার সময় এসেছে। এই প্রকল্পটি হবে বাংলাদেশের জন্য বিশ্বের কাছে আরেকটি মাইল ফলক। এ নিমিত্তে নদী ভাঙ্গন এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যেতে পারে।
নদী ভাঙ্গা মানুষের জীবন চিত্র দেখলে স্থির থাকা যায় না। আগুনে বাড়ী একবার বা একাধিকবার পুড়লেও সহসা ঘুরে
দাঁড়ানো সম্ভব হয় যদি জমিজমা থাকে। কিন্তু নদীতে বসত বাড়ী, জমাজমি ভেঙ্গে গেলে একজনমে আর ঘুরে দাঁড়ানো
সম্ভব হয় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!