আসামে এনআরসি থেকে বাদপড়া হিন্দুদের বাংলাদেশে পুনর্বাসনের দাবী
অনলাইন ডেক্স । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
আসামের নাগরিকপঞ্জি তথা এনআরসি থেকে ১৯ লাখেরও বেশি মানুষ বাদ পড়েছেন। বিপুল সংখ্যক মানুষকে আসাম তথা ভারতের নাগরিক তালিকা থেকে বাদ দেয়ায় উদ্বিগ্ন বিভিন্ন মহল। এ নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদক করেছে আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের প্রভাবশালী বাংলা দৈনিক যুগশঙ্খ। বাংলাদেশের জাতীয় হিন্দু মহাজোট মহাসচিব অ্যাডভোকেট গোবিন্দচন্দ্র প্রামাণিক ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাসের সাথে কথা বলে ‘এনআরসি-ছুট হিন্দুদের বাংলাদেশেই ফেরত পাঠানো হোক’ শিরোনামে দৈনিক যুগশঙ্খের প্রথম পাতায় একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
শুক্রবার দৈনিক যুগশঙ্খে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি হুবহু দেয়া হলো-
দেশভাগের অভিশাপ সবচেয়ে বেশি বইতে হয়েছে বাঙালি হিন্দুকে। এমনকী স্বাধীনতার বাহাত্তর বছর পরও ফের রাষ্ট্রহীন হওয়ার আতঙ্কে তারা। বাঙালি হিন্দুকে নিয়ে ঘৃণ্য রাজনীতিও নতুন নয়। এ বার বাংলাদেশের হিন্দু সংগঠনগুলোও কি ঢাকার ওপর চাপ সৃষ্টির চিরাচরিত রাজনীতি করতে অসমের সেই বাঙালি হিন্দুদেরই নতুন করে দাবার ঘুঁটি করতে চাইছে? বাংলাদেশের হিন্দু ও সংখ্যালঘুদের স্বার্থে সোচ্চার সংগঠনগুলোর বক্তব্য থেকে এমন প্রশ্ন ওঠা অবান্তর নয় মোটেও।
নাগরিকপঞ্জি থেকে যেসব হিন্দু বাঙালির নাম বাদ পড়েছে, তাঁদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হোক। এমনটাই প্রস্তাব গোবিন্দচন্দ্র প্রামাণিকের। বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিবের যুক্তি, এর ফলে তাঁদের দেশে হিন্দুর সংখ্যা বাড়বে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত অসমের এনআরসিকে ‘নিরপেক্ষ দলিল’বলে অভিহিত করে বলেন, যেসব হিন্দু বাঙালি রাষ্ট্রহীন হয়েছেন, আন্তর্জতিক বিধি ও আইন মেনে তাদের স্থিতি ঠিক করা হোক। তবে, দিল্লির এটা বুঝে রাখা উচিত যে, পড়শি রাষ্ট্র বাংলাদেশ যদি সিরিয়ার মত মৌলবাদীদের আখড়া হয়ে ওঠে তাহলে এর আঁচ ভারতের ওপরও পড়বে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে যুগশঙ্খের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে গোবিন্দবাবু বলেন, এনআরসি থেকে যেসব বাঙালি হিন্দুর নাম বাদ পড়েছে, তাঁদের বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার সম্ভাবনাই প্রচুর। মুসলিম মৌলবাদীদের লাগাতার নির্যাতনের ও সরকারের নির্লিপ্তির জেরে বাংলাদেশ থেকে হিন্দুরা পালাচ্ছেন, এটা নির্মম সত্য। প্রশ্ন ওঠে, অসমে বাঙালি বিদ্বেষের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের হিন্দুরা অসমে পালিয়ে আসবেন কেন? এ প্রশ্নের সরাসরি উত্তর এড়িয়ে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বাংলাদেশ শাখার সভাপতি গোবিন্দচন্দ্র বলেন, এ দেশের মধ্যবিত্ত হিন্দুরা কলকাতায় বাড়ি কিনে রাখেন। কুড়িগ্রাম, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লার হিন্দুরা অসমে এসে আশ্রয় নিচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে। প্রতিদিন গড়ে ৬৩২ জন করে হিন্দু বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আশ্রয় নিচ্ছেন। এঁরা শখ করে নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে আসেননি, এসেছেন মুসলিমদের নির্যাতনের শিকার হয়ে। সব নির্যাতন যে সবসময় শারীরিক হয়, তা-ও নয়, হিন্দুরা বাংলাদেশে নিরন্তর মানসিক নির্যাতনের শিকার। ফলে প্রব্রজনমুখি মানসিকতা রয়েছে তাঁদের মধ্যে। কিন্তু এর ফলে বাংলাদেশ হিন্দুশূন্য হয়ে পড়ছে। ‘বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি, আমি এ দেশ ছেড়ে যেতে চাই না। তাই এনআরসি-তে যাঁদের নাম বাদ পড়েছে, তাঁদের যদি বাংলাদেশে পুনর্বাসন দেওয়া হয়, তাহলে আমাদেরও সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটবে।’