একজন রাজীব এর জীবনী (১)
একজন রাজীব এর জীবনী (১)
দেবী গাফফার
শ্রদ্ধেয় অভিনেতা রাজীব
ঈদের দিন ভোর, অন্য রকম এক ভোর বিষন্ন সকাল।
আচ্ছা কালকে যে রাজীব সাহেব এর জানাজা হলো? বাবার নাম কি কাসেম বলা হয়েছে? না জাব্বার?
নিশ্চয়ই কাসেম বলা হয়েছে। আপন বাবার নাম নাম ছাড়া জানাজা হবে তো?
১৯৫০ সালের কোন এক শীতের সন্ধ্যা, সরু মাটির রাস্তা, দুই ধারে চাটাই বন।
অন্ধকার প্রায় ঘনিয়ে আসছে, দুই একটা শিয়াল এর ডাক। আশেপাশে শিয়াল এর ডাক বাড়তে থাকে,অন্ধকার ও বাড়ে।
একদিকে শিয়াল এর ডাক সাথে বাচ্চাটার কাঁন্নার আওয়াজ।
নীরব রাস্তা, কোথাও কেও নেই।
বাচ্চার কাঁন্না শীতের কাঁপুনি স্বয়ং বিধাতাকে নাড়িয়ে দিচ্ছে।
এক মহিলা এই সুন সান রাস্তা দিয়েই স্বশুর বাড়ি যাওয়ার সময় শুনতে পান খালি গায়ের এক শিশুর কাঁন্না। বয়স হয়ত এক বছর,দুটো দাঁত।
মহিলাও ভয়ে ভয়ে কাছে এসে দেখেন বাচ্চাটা শীতে দাঁতে দাঁত লেগে যাওয়ার মত অবস্থা।
এখন? এটা কার বাচ্চা? আশেপাশে কোন জন মানুষ এর দেখা নেই।
একা ফেলে গেলে শিয়াল খেয়ে ফেলবে। ( পটুয়া খালি দুমকি, শ্রিরামপুর এর নির্জন রাস্তা)
হঠাৎ মনে পড়লো মহিলার কাসেম ভাই এর তো কোন বাচ্চা নেই,বাচ্চা বাঁচে না।
এই বাচ্চাটা কাসেম ভাই এর জন্য নিয়ে যাওয়া যায়।হালিমা ভাবি ও খুশি হবেন।
বাচ্চার ঠিকানা হলো কাসেম সাহেব এর বাড়ি। সাধারণ কৃষক, এক বিঘা জমিতে যতটুকু ধান হয় কোনমতে চলে।রাতে এক বেলা ভাত দুপুরে চাল ভাজা খেয়ে দিন কাটে।
বাচ্চার নাম রাখা হলো বারেক।
আব্দুল বারেক হাওলাদার।
বারেক এর নতুন বাবা মা হলো, দুমকি প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি করা হলো।
ক্লাস এর বাচ্চাদের সাথে বন্ধুত্ব হয়।
কিন্তু? কিছুদিন গেলেই বন্ধু বলে, তোমার সাথে মেলামেশা করা বারন।
বারেক অবাক হয়, চোখে পানি চলে আসে।জিজ্ঞেস করে,কেনো বন্ধু? বন্ধু বলে মা বাবা বলেছে তুমি কাসেম এর পালক পোলা, পালক পোলার সাথে মিশলে ইজ্জত থাকবে না আড়ি।
এসব কি বলে?ছোট্ট কলিজার ভিতর মুচড়ায় যেনো।
বাসায় গিয়ে নাওয়া খাওয়া বন্ধ, দু-চোখ এর পানিতে উঠানের নদীর পানিও যেনো থমকে যায়।
মনে মনে ভাবতে থাকে আমি কে? আমি বিশ্বাস করি না উনারা আমার বাবা মা না।
“আপনারা চাইলে চলবে”