সেলিনা জাহান প্রিয়ার অনু গল্প —একটি চিঠি

 

অনু গল্প —একটি চিঠি
——————- সেলিনা জাহান প্রিয়া

 

হালিমা ঘুম থেকেই উঠে মেজাজ, খুব খারাপ করে এক মাত্র কাজের মেয়ে হিমু কে ইচ্ছামত বকাঝকা করলো। নাদু তাঁর একমাত্র মেয়ে মায়ের মেজাজ দেখে বাবা কে ফোন করে বলল
— আব্বু ঘটনা কি মা তো আগুন।
— একটা কাজ কর মা। তোমার মাকে যেয়ে বল নানু আজ আসবে। আমি আসার
সময় নিয়ে আসব। আর তুমি বলবে আমি আনতে গেছি।
— ঠিক আছে আব্বু আমি ফোন রাখি।
হালিমা বেগম নাদু কে ডেকে বলল- নবাব জাতি হিমু কোথায় ওকে চা আনতে
বল। হিমু এত বকা খাওয়া পর চা নিয়ে হালিমা বেগমের সামনে গেল। হালিমা বেগম হিমুর দিকে তাকিয়ে রাগের চোখে বলল বেলা ৯ টা বাজে নাদু কি কলেজে গেছে।
— জী না। যাই নাই।
— কেন যায় নাই।
— আজ নানু আসবে।
— কি?
— নাদু আপু তো তাই বলল।
— হালিমা বেগম এবার বলল- নে হিমু এই চা আর বিস্কুট তুই খেয়ে নে। গায়ের
জামাটা বদলা মানুষ দেখলে তো তোকে কাজের মেয়ে বলবে।
— আমি তো কাজের মেয়েই। না হলে সকাল থেকে কোন কারন ছাড়াই তো
বকতাছেন।
— তরে কারন ছাড়া বকতাছি?
— কারন ছাড়াই তো?
— নাদু চিঠিটা নিয়ে আয় তো। নাদু কাপতে কাপতে চিঠি নিয়ে এলো।
— হারামজাদি বড় হয়ে গেছিস। এখনি বাতার প্রেমিক খুঁজিস। তো সাথে যদি
কোন পরিচয় না থাকবে তাহালে ঐ দোকানদার পোলা সাত সকালে গোসল খানায়
ইটের ফাকে কার জন্য চিঠি রাখে। আর তুই বার বার দোকানে যাস কেন। তুই মনে করছ আমি বাতাসে বড় হইছি। কিছু বুঝি না। আমার ঘরে আমার কোন ছেলে মেয়ে কারো সাথে প্রেম প্রীতি করতে পারবে না। আর যদি ঐ ছেরাকে দেখি তাহলে তো ওকে সকালে মাত্র দুইটা চর দিসি। পড়ে ওর আমি হাত ভাঙব। নাদু তোমাকেও সাবধান করছি। হিমুর প্রথম অপরাধ ওকে আজ মাপ করলাম। তুমিও সাবধান হও। আর হিমু আজ থেকে দোকানে যাবে না। ঐ গফুরের বাচ্চারে পাঠাবে। মনে থাকে যেন। আর হিমু আমার বাসায় কোন কাজের মানুষ লাগবে না। যদি মেয়ের মত থাকতে পার থাক। না হয় তোমার মাকে এসে বল নিয়ে যেতে। হিমু আর কোন কথা বলে না। হিমু জানে বকা দিলে কি হবে হালিমা বেগম তাকে মায়ের চেয়ে বেশী আদর করে। নিজের হাতে মাথায় তেল দিয়ে দিবে। মেয়ের সাথে একই বিছানায় শুইতে দেয়। মেয়ের মত নতুন কাপড় কিনে দেয়। কিন্তু আজ বকা খেল নাদু আপুর জন্য। ঐ চিঠি ছিল নাদু আপুর। দোকানের পোলা দিয়ে আরমান পাঠাইছে। ভয়ে হয়ত তাঁর নাম নাদু বলেছে। থাক নাদু আপা মাইর থেকে বাচল। নাদু কলেজে গেলে গফুর মিয়া সাথে নিয়া যায়। আবার নিয়ে আসে। গফুর মিয়া কে এলাকার সবাই ভয় পায় কারন সে জোড়া খুনের আসামী। খান সাব তাকে জামিনে এনে বাসার কাজে রাখছে। করিম গঞ্জ থানার জাফরবাদ গ্রামে ডাকাত গফুর কে সাবাই চিনে। খান সাব উকিল মানুষ। হালিমা বেগমের বাড়ি গফুরের এলাকায়।

হালিমা বেগম আবার ডাকলও কি রে হিমু তুই কই? নাদু কলেজে গেছে।
— হ্যা আম্মা গফুর ভাই নিয়ে গেছে।
— শুন হিমু।
— জী আম্মা।
— সাত সকালে তরে বকলাম। মন খারাপ করিস না। আসলে নাদুর সামনে পরীক্ষা। আমি জানি দোকানদার হারামজাদাকে দিয়ে এই চিঠি আরমান পাঠাইছে।
আর তোর কোন দোষ নাই। তরে বকলাম এতেই ধর নাদুর কাজ হবে। হিমু হে হে করে হেসে দিল। হালিমা বেগম বলল – আসলেই তুই আমার লক্ষ্মী মেয়ে। যা আর একটু চা গরম কর, দুই কাপে নিয়ে আয় একসাথে খাই।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!