সেলিনা জাহান প্রিয়ার অনু গল্প-একটি চিঠি ও কানিজ নিগার

 

অনু গল্প-একটি চিঠি ও কানিজ নিগার
—————————————-সেলিনা জাহান প্রিয়া

 

মেয়েটি অনেক সুন্দরী। আর মেয়ে মানুষ যদি একটু গায়ের রং ফর্সা হয় । নাকটা একটু লম্বা হয় । চোখ গুলো একটু মায়াবী হয় । মাথার চুল যদি বনলতার হয় তাহলে যে কেউ এই মেয়ের প্রেমে পড়বে । এমনি এক মেয়ে নাম কানিজ নিগার । কানিজ নিগার মানে সবাই এক নামে চিনে । তার বাবা আবার এলাকায় খুব নাম ডাক । তাই কানিজ নিগার কে সহজে কেউ প্রেমের অফার দিতে পাড়ে না। এবার কানিজ এস এস সি দিবে তাঁকে দুই জন স্যার পড়ায় । তারা দুই জনেই মনে মনে পছন্দ করে ।
কানিজ নিগার এখন বুঝতে শিখেছে যে সে সুন্দর তাই তার মধ্যে আলাদা একটা ভাব চলে এসেছে । আজ কাল চোখে কাজল পড়ে । একটু ডান বাম তাকায় । কানিজ নিগারের বাসার সামনে আজ কাল ছেলেদের আড্ডা হয় ।। মাঝে মাঝে ছাদে উঠে বিকালে । কানিজ নিগারের মহল্লায় সব চেয়ে ভাল ছেলে সাকিল । সে কোন মেয়েদের দিকে তাকায় না। একটা কলেজে পড়ে । একেই মহল্লায় থাকে তবে সাকিল তার মামার বাসায় থাকে । সাকিলের বাবা মা গ্রামে থাকে । সাকিল লিখা পড়ায় ভাল বলে মামা তাঁকে শহরে নিজের কাছে নিয়ে এসেছে । সাইন্সে পড়ে । ভাল ছাত্র । একই এলাকায় সুমন নামের আর এক ছেলে আছে । সুমনের সাথে সাকিলের খুব ভাব । ভাল সম্পর্ক । কানিজের কোচিং এর সময় হলে সুমন তার পিছে পিছে যাবে ।
কানিজ দেখেও না দেখার ভান করে । আর যদি দেখা হয় কানিজ খুব মিষ্টি হেসে বলে সুমন ভাই ভাল আছেন । একেই মহল্লা তাই সবার সাথে সবার কথা কম বেশি হয় ।
সুমন বুঝতে পারলো কানিজ নিগারের বাসার স্যার তার জন্য সমস্যা । কিন্তু দুই স্যার কে কি করে কালার খাওয়াবে চিন্তায় পড়ে যায় । কানিজের প্রেমে পড়ে সুমনের লিখা পড়া খুব খারাপ হচ্ছে । কানিজের বাবা কে দেখে একদিন সুমন বলল – আঙ্কেল কেমন আছেন ।
—–ভাল সুমন । তুমি কেমন আছে ?
—– ভাল আছি কিন্তু একটা কথা আপনাকে না বললে চলে না ?
—– কি কথা সুমন ?
—– আপনি এবার অ্যান্টি কে বইলেন না ? তাহলে ঝগড়া লাগব ।
—– আচ্ছা বলব না। তুমি বল ?
—— আপনার বাসায় দুই জন স্যার আপনার মেয়ে কে পড়ায় কিন্ত একদিন আমি হোটেলে চা খাচ্ছি দুই স্যারের পিছনে ছিলাম এমন এক কথা শুনেছি ।
—– কি কথা সুমন ?
—– দুই জন বাজি লাগছে যে আপনার মেয়ের সাথে … আগে প্রেম করবে !!
—–তার পড় সুমন ?
—– না শুনে খুব খারাপ লাগলো । অ্যান্টি শুনলে তো দুই স্যার কে খুব ধুলাই দিবে তাই আপনাকে বললাম। মাস্টার মানুষের রুচি এমন খারাপ । ছাত্রী নিয়ে কেউ এমন বাজি ধরে । কানিজ কত ছোট মানুষ । সামনে কত সুন্দর ফিউচার ।
কানিজের বাবা বাসায় এসেই দুই স্যার কে বাদ দিয়ে দিল । নতুন একজন বয়স্ক ভাল স্যার রাখলো । দুই টিচার কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না।সুমন তো মহা খুশি । যাই হউক দারুন কাজ হয়েছে । সুমন কে এমন বুদ্ধি দিয়েছে সাকিল । তাই সাকিল কে সে মিষ্টি খাওয়াতে নিয়ে গেল ।
সন্ধ্যায় সাকিল খুব পড়ায় ব্যস্ত । সামনে সে মেডিক্যাল বা বুয়েটে ভর্তি হবার জন্য খুব প্রস্তুতি নিচ্ছে । সুমন সমাজ কল্যাণে অনার্স এ ভর্তি হয়েছে । কানিজের পরীক্ষা শেষ । সুমন কিছুইতেই কানিজ নিগার কে বলতে পারছে না তার মনের কথা । সাকিল কোন দিন কানিজ নিগার নিয়ে চিন্তা করে নাই ।
সুমনের খালাত বোন কে সুমন অনেক কষ্ট করে ম্যানেজ করেছে যে সে একটা চিঠি কানিজ কে দিতে চায় । যাই হউক । সাকিলের হাতের লিখা ভাল । তাই সুমন সাকিলের কাছে এসে বলল তাঁকে যেন ভাল করে একটা চিঠি লিখে দেয় ।
তখন বিচিত্রা পত্রিকায় প্রেমের চিঠি ছাপাতো । সাকিল সেই বিচিত্রা পত্রিকা আট নয়টা চিঠি দেখে একটা সুন্দর করে প্রেমের চিঠি লিখলো । সুমন তো চিঠি পড়ে মহা খুশি । এমন চিঠি যেই মেয়ে পড়বে তাঁকে প্রেমে পড়তে হবেই ।
সুমন সুন্দর একটা গোলাপি খামে তার জীবনের প্রথম প্রেমের চিঠি খালাত বোনের হাতে কানিজ নিগারের কাছে পাঠাইলো । তখন সকাল ১১ টা বাজে ।
সাকিলের মন খুব ভাল এক সাথে মেডিক্যাল আর বুয়েটে চাঞ্জ পেয়েছে । আর মনটা একটু খারাপ কারন অনেক টাকা লাগবে । মামার পক্ষে এত টাকা দেয়া সম্ভব না । এমনেই মামী তাঁকে বেশি পছন্দ করে না। মামীর ধারনা গরীব মানুষের ছেলে এত লিখা পড়া করে কি হবে ? স্বামীর বোনের ছেলে ডাক্তার হ্ল্র তার কি? স্বামীর তো টাকা নষ্ট । সাকিল খুব মন খারাপ করে বসে আছে । বিকাল পাঁচটা সুমনের মাকে কানিজ নিগারের বাবা ডেকে নিয়ে গেল সাথে সুমন । কানিজের নিগারের বাবা সুমন কে বলল তোমার কত সাহস আমার মেয়ে কে চিঠি লিখ । আর আপা আপনি তো আপনার ছেলে কে একটু শাসন করতে পারেন । কানিজ বলল আপনার ছেলে নাকি রাস্তায় দেখা হলেই আমার মেয়ের সাথে ইচ্ছা করে কথা বলে, এটা তো ঠিক না।সুমনের মা খুব লজ্জা পেয়ে সুমনকে এক চর দিল । সুমন চর খেয়ে বলল এই চিঠি কি আমার লিখা নাকি ? আমি তো এই চিঠি দেই নাই ।
—— কানিজের বাবা তাহলে কে দিয়েছে ?
—— আমার বন্ধু সাকিল । হাজী সাহেবের ভাড়াটিয়া ।
—— ঠিক আছে দেখিছি ঐ ছেলের কত সাহস । কানিজের মা তুমি নুরু হাজী সাহেব কে তার ভাড়াটিয়া ছেলে কে নিয়ে এখনি আসতে বল ?
সুমনের মা বলল আমি বলেছি আমার ছেলে এমন কাজ করতে পাড়ে না। বন্ধুর জন্য এই কাজ করেছে । কানিজ পাশের ঘরে থেকে সব শুনছে আর হাসছে । সুমন কে সে এক চোখে দেখতে পাড়ে না। নুরু হাজী সাকিল আর তার মামা কে নিয়ে কানিজের বাসায় আসে । কানিজের বাবা তাদের বসতে দেয় । খুব রাগের চোখে সাকিলের দিকে তাকায় । হাজী সাব বলে কি ব্যাপার হটাত ডাকলেন কোন সমস্যা । কানিজ নিগারের
বাপ বলে তুমি কি কর শুনি ?
সাকিল কিছু বলার আগেই সাকিলের মামা বলল ভাই জান । আমার বোনের ছেলে । আমার বাসায় থেকে পড়ে এবার সে মেডিক্যাল আর বুয়েটে চান্স পেয়েছে এখন যে কোন একটাতে পড়বে । গরীব ঘরের ছেলে কিন্তু ছাত্র হিসাবে সে খুবই চমৎকার । ক্লাস ফাইফে , ক্লাস এইট বৃত্তি পেয়েছে । এস এস সি তেঁ ঢাকা বোর্ডে মেধা তালিকায় নাম আছে । এইচ এস সি তেঁ সে ফাস্ট হয়েছে । খুবই ভাল ছেলে । কোন দিন কারো সাথে কন রকম বেয়াদবি করে নাই ।
কানিজ নিগারের বাবা তো ছেলের কোয়ালিটি শুনে খুবই অবাক । এক মুহূর্তে কানিজ নিগারের বাপের মাথা থেকে রাগ নেমে গেল । ছেলে কে মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখল এখন সে নিজে থেকেই বলল – হাজী সাহেব আপনি তো জানেন আমার একটি মাত্র মেয়ে। দেখতে আল্লাহর রহমতে আমার মায়ের মত হয়েছে । আজ থেকে আমি সাকিলের সব দায়িত্ব নিলাম । তার সকল খরচ আমার । যদি বিদেশে যেতে চায় আমি পাঠাব । আমি তো এক কথার মানুষ আপনে জানেন । সাকিলের মামা বলল আপনি এই এলাকার সম্মানী ব্যাক্তি এটা আমারা সবাই জানি ।
কানিজ নিগারের বাবা বলল এই ছেলে আমি নিলাম আপনাদের কোন আপত্তি আছে । হাজী সাহেব আর সাকিলের মামা বলল এটা তো আমাদের জন্য সাকিলের জন্য আল্লাহর রহমত । কানিজের নিগারের মা কে ডেকে বলল আরে তুমি কোথায় গেলে যাও মিষ্টি নিয়ে এসো । সাকিলের ভর্তি কবে । সাকিলের মামা বলল আগামী কাল ।
—- আচ্ছা বাবা সাকিল এখন সব চিন্তা আমার । সবাই রাতে খেয়ে যাবেন । সাকিলের মামী কে ডেকে আনা হল । সাকিলের মামী বলতে লাগলো আমি নিজের ছেলের মতো করে ওকে রেখেছি । সাকিলের সাথে কানিজ নিগারের বিয়ের তারিখ ঠিক হয়ে যায় ।
সাকিল কানিজ নিগারের বাপের গাড়িতে কানিজ নিগার কে নিয়ে কলেজে নামিয়ে সে তার মেডিক্যাল কলেজে যায় । কানিজ নিগার বলে আচ্ছা সাকিল আমি তোমাকে কোন দিন রাস্তায় তোমাকে দেখি নাই । কিন্তু তুমি আমার জন্য এত সুন্দর চিঠি কি করে লিখলে ? আমি তোমার চিঠি পড়ে প্রথমে ভুল বুঝে ছিলাম । ভাবছিলাম এটা শয়তান সুমনের চিঠি । সাকিল একটু হেসে বলে এমন কিছু শয়তান সুমন আছে বলেই আমার মত সাকিল রা রাজ্য রাজ কন্যা এক সাথে পায় । কানিজ একটু হেসে বলে তোমার মধ্যে রাজ্য  দখলের ক্ষমতা আছে বলেই তো রাজ্য কন্যা তোমার ।
সুমন মাঝে মাঝে এখন ওদের চেয়ে দেখে আর মনে মনে বলে কেন যে আমি সাকিলের নাম নিলাম । শ্যালা সাকিল আসলেই একটা জিনিয়াস । কানিজ নিগারের বাপ জিয়াস কি জিনিস ঠিকই চিনে । একেই বলে ব্যবসায়ীর চোখ ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!