এবার উত্তরসহ প্রশ্নফাঁস!
অনলাইন ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
ধারাবাহিক প্রশ্ন ফাঁসের মহোৎসবের মধ্যে এবার ফাঁস হলো উত্তরসহ প্রশ্নপত্র। এর মধ্যদিয়ে চলমান এসএসসির এ পর্যন্ত হওয়া ১০টি পরীক্ষারই প্রশ্নফাঁস হলো। গতকাল বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়ের প্রশ্ন উত্তরসহ পরীক্ষার সোয়া এক ঘণ্টা আগেই পাওয়া যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। প্রশ্নের সঙ্গে ৩০ নম্বরের বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেয় ফাঁসকারীরা। গতকাল পর্যন্ত হওয়া সবগুলো পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত প্রশ্ন
ফাঁসের অভিযোগ সংক্রান্ত তথ্য যাচাই বাছাই কমিটি। এসব পরীক্ষা বাতিল করে নতুন করে নিলে প্রশ্নফাঁস হবে না সে নিশ্চয়তাও দিতে পারছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এ বাস্তবতায় পরীক্ষা বাতিল করার সুপারিশ করবে না কমিটি। বরং তারা আগামীতে প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে একটি প্রস্তাব দেবে। প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে পুরস্কার ঘোষণাসহ কোনো উদ্যোগ ফাঁসকারীদের থামাতে পারছে না। বরং এবার নির্বিঘ্নে উত্তরসহ পুরো প্রশ্ন প্রকাশ করে তারা অনেকটা চ্যালেঞ্জই ছুড়ে দিয়েছে। গতকালের প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমার সাংবাদিকদের বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে আমরা নতুন নতুন পথ খোঁজার চেষ্টায় আছি। মন্ত্রণালয় কাজ করছে। এদিকে এ ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে গত বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের এক অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইন বলেন, বিদ্যমান পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকানো সম্ভব নয়। গতকাল বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচিতি পরীক্ষা শুরুর প্রায় সোয়া ঘণ্টা আগে পরীক্ষার প্রশ্ন ও এর উত্তর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসতে থাকে। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে হাতে হাতে। পরীক্ষা শেষে ওই প্রশ্নের সঙ্গে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়া যায়। ১লা ফেব্রুয়ারি বাংলা প্রথমপত্রের বহুনির্বাচনি অভীক্ষার ‘খ’ সেট পরীক্ষার প্রশ্ন ও ফেসবুকে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের হুবহু মিল ছিল। পরীক্ষা শুরুর একঘণ্টা আগেই তা ফেসবুকে পাওয়া যায়। ৩রা ফেব্রুয়ারি সকালে পরীক্ষা শুরুর প্রায় ঘণ্টাখানেক আগে বাংলা দ্বিতীয় পত্রের নৈর্ব্যক্তিক (বহুনির্বাচনি) অভীক্ষার ‘খ’ সেটের উত্তরসহ প্রশ্নপত্র পাওয়া যায় ফেসবুকে। যার সঙ্গে অনুষ্ঠিত হওয়া প্রশ্নপত্রের হুবহু মিল পাওয়া যায়। ৫ই ফেব্রুয়ারি পরীক্ষা শুরুর অন্তত দুই ঘণ্টা আগে সকাল ৮টা ৪ মিনিটে ইংরেজি প্রথম পত্রের ‘ক’ সেটের প্রশ্ন ফাঁস হয়। এর সঙ্গে অনুষ্ঠিত হওয়া প্রশ্নপত্রের হুবহু মিল পাওয়া যায়। প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগের মুখে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীরকে আহ্বায়ক করে ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির একাধিক সদস্য বলেন, প্রশ্নফাঁস হচ্ছে, এটি সত্য। তবে পরীক্ষা বাতিল করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। পুনরায় পরীক্ষা নেয়ার সময় প্রশ্নফাঁস হবে না, এ নিশ্চয়তা বর্তমান পরিস্থিতিতে দেয়া সম্ভব নয় বলে মনে করেন তারা। বরং ফাঁস রোধে প্রশ্ন প্রণয়ন পদ্ধতির আধুনিকায়ন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরালো করার পক্ষে এ কমিটি।
পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলছে, প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে খোদ শিক্ষা বোর্ডেরই একটি সিন্ডিকেট জড়িত। তারা বছরের পর বছর বোর্ডে ঘাপটি মেরে থেকে প্রশ্ন ফাঁসে সহায়তা করে অর্থ কামাচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একটি সিন্ডিকেট বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ভালো ফল করিয়ে দেয়ার সহায়তা করতে গিয়ে এ ধরনের অনৈতিক কাজে জড়িয়ে গেছে। পুলিশের হাতে আটক হওয়া ব্যক্তিদের তথ্যের ভিত্তিতে এই হোতাদের ধরার কাজও চলছে বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ‘প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ সংক্রান্ত তথ্য যাচাই বাছাই’ কমিটির এক সদস্য বলেন, গতকাল পর্যন্ত এসএসসির ১০টি বিষয়ে পরীক্ষা হয়েছে। সবগুলো পরীক্ষারই প্রশ্নফাঁস হওয়ার অভিযোগ আমাদের কাছে আছে। নতুন করে এতগুলো বিষয়ের পরীক্ষা নেয়া কঠিন। তাছাড়া ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পেয়েছে সামান্য সংখ্যক পরীক্ষার্থী। তাদের কারণে পরীক্ষা বাতিল করলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পরীক্ষা বাতিল হলে অভিভাবকরাও মেনে নেবেন না। সূত্র-মানব জমিন।