করোনা ভাইরাস, কোয়ারেন্টিন ও আমরা
করোনা ভাইরাস, কোয়ারেন্টিন ও আমরা
– নাহিদ হাসান
প্রানঘাতি করোনা ভাইরাস ইতোমধ্যে সারা দুনিয়াকে এলোমেলো, বিচ্ছিন্ন ও আতংকিত করেছে। এ অবস্থায় এ রোগের ভয়াল থাবা থেকে নিস্তারের আপাতত একমাত্র উপায় জনবিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা বা রাখা। পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ তাই থাকছে বা বাধ্য হচ্ছে। এখন পর্যন্ত যে অবস্থা তাতে নিজেকে নিজে, পরিবারকে পরিবার, সমাজকে সমাজ, দেশকে দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখতে হচ্ছে। যেহেতু পৃথিবীর সমস্ত অঞ্চল একই সাথে একই মাত্রায় আক্রান্ত হয় নি তাই এখনো নানা পন্হায় মানুষের চলাচল আছে। আর এ চলাচলই এখন এ রোগ ছড়ানোর ব্যাপারে ভূমিকা রাখছে তা স্পষ্ট। কিন্তু যদি এ যাতায়াত পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া যেতো হয়তো রোগের বিস্তার বন্ধ করা যেতো।
যাহোক, যতোই বলি একেবারে যাতায়াত, চলাফেরা শুণ্যের কোটায় আনা সম্ভব নয়। তাইতো আক্রান্ত অঞ্চল থেকে নানা কারণে, নানা হিসাব করে মানুষ যাতায়াত করছে। বিশেষত আমাদের প্রবাসী মানুষগুলো যারা আক্রান্ত দেশগুলোতে ছিল তাদের কিছু মানুষ দেশে ফিরেছেন, ফিরছেন। অনুমান সত্যি করে তাদের মাধ্যমেই যে আমাদের দেশে ভাইরাস এসেছে তা ইতোমধ্যে প্রমানিত। তাইতো দেশের মানুষ, সরকার প্রবাসীদের যথাসম্ভব দেশে না ফেরার আর্জি জানাচ্ছে।
এ পর্যন্ত সব ঠিক আছে। এর পরেও যারা এসেছে বা আসছে আসবে তাদের নিয়মানুযায়ী কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে বা রাখতে হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের এখানে যা হচ্ছে তা গা শিউরে উঠার মতো অবস্থা। যেহেতু প্রবাসীরা আসবে এটা অনুমেয়, জানা কথা, আবার জনবিচ্ছিন্ন করে রাখতে বা থাকতে হবে এটাও জানা তাহলে এ অব্যাবস্হাপনা কেন?। জনবিচ্ছিন্ন বা কোয়ারেন্টেনে থাকতে হবে বলেই কি একজন মানুষ যেখানে সেখানে যে কোনো অবস্থায় থাকতে পারে! এতো দিন সময় পেয়েও আমরা মাত্র কয়েকশো মানুষকে সহনীয় অবস্হায় রাখতে পারলাম না। যতই বলি এটা আমাদের ব্যার্থতা সেটা আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে তা ভবিষ্যতই বোঝাবে। গত কয়দিন বিমানবন্দর, আশকোনা হজ্বক্যাম্প, গাজীপুর হোটেল অথবা জেলায় জেলায় কোয়ারেন্টেনের নামে যা হচ্ছে তা একেবারেই অগ্রহনযোগ্য। প্রবাসীরা যেমন নবাবজাদা নয়, আইনের উর্ধ্বে নয় আবার তারা কোন অপাংতেয়, অবহেলিত বা অনাহুত নয়। অনেকেই উপায়হীন হয়ে এসেছে, অনেকেই বিপদের সময় আপনজনের সান্নিধ্যে এসেছে এটা তার অধিকার কেননা এই আপনজনকে তারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সুখে রাখতে চেষ্টা করে। আর বাস্তবিক যারা জানে তারা স্বীকার করবে প্রবাসীদের দেশের প্রতি কত ভূমিকা। তাদের জনবিচ্ছিন্ন যেমন রাখতে হবে তেমনি যথাযত পরিবেশ দিয়েই রাখতে হবে, এটাই স্বাভাবিক, এটাই কর্তব্য। আবার আইনের কঠোর প্রয়োগ করে হলেও অন্য মানুষকে নিরাপদে রাখতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে এটাই স্বাভাবিক। কোন অবস্থাতেই ব্যার্থ হলে চলবে না। আমাদের সবাইকে এ বিপদের সময় যথাযত আচরণ করতে হবে, যথাযত ভূমিকা পালন করতে হবে। ভবিষ্যতে কোন অবস্থায় পৃথিবী যাবে তা ভবিষ্যতই বলে দিতে পারবে। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।।