কাল ছিলো ওপেনিং ডে, তোমার ফিতা কাটার দিন।
নেমন্তন্ন পেয়েও আজকাল সায় দিতে চায়না মন পার্টি পার্টি খেলায়। যেতে মন চায়না ঘোরোয়া বৈঠকে, সুগন্ধি আতপের গরম সাদা ভাতে মৌরালা মাছের ঝোল, আমাকে আর নাড়া দেয়না।
আমার রুটি রুজিতেও আজকাল উদাসীন লাগে। জীবনটা যখন এতটাই নিয়তিনির্ভর। ভাবি আমরা থাকি অট্টালিকার পড়ে তোমরা থাকো রোদ বৃষ্টি ঝড়ে।
মাহিবুর তোমার পাঠানো ছবি গুলো দেখে আমার রাতে ঘুম হতে চায়না। জায়নামাজে বসে বিলাপ করি বিধাতার দৃষ্টি আকর্ষনে। আমার ক্ষুদ্র চেস্টা আজ গ্রাম থেকে গ্রামান্তর। জসীমউদ্দিনের ছোট গ্রাম আর পল্লিপাড়ায়। আমার ক্ষুদ্র সামর্থে পেরেছি দিতে টিনের ছোট্ট একটি ছাউনি মাত্র, বড় কোনো অট্টালিকা নয়।
বলেছিলে, আপা আমাদের পাড়াটা নেহায়েতই দরিদ্র। প্রতিবন্ধী রয়েছে অনেক।
বলেছি বেসতো শুরু করো ওদের নিয়ে “আর্ন এন্ড লিভ”। ওদেরকে অন্ধকার থেকে জিবনের পথে হাটতে শেখাও। ওরা একদিন সপ্নের মায়াবৃক্ষে তৃপ্তিকর ফলের গুচ্ছ দেখে নিজেরাই শিহরে উঠবে।
পারবে তুমি ?
মাহিবুর তুমি একটি একটি করে কচি মুখের ছবি পাঠাচ্ছো, যারা বাক প্রতিবন্ধী। যাদের ঠোটের বর্নমালাগুলি সোনার শিকলে বাধা। যাদের সুরগুলি প্রফুল্লতায় নয় বিষণ্ণতায় ভরা।
কাল ছিলো ওপেনিং ডে, তোমার ফিতা কাটার দিন। আমার পাঠানো অল্প টাকায় সেলায় মেশিন কিনেছো দুটি, ব্যানার বানিয়েছো, মাটিতে বিছাতে কিনেছো শিতল পাটি।
মাহিবুর তোমার হাতে যে অবশিষ্ট কিছু নেই এ কথা লজ্জায় বলোনি আমাকে। তুমি তোমার ফিতা কাটার আয়োজনে স্বনামধন্য ব্যাক্তি বর্গ, অধ্যাপক, কবি, দার্শনিক, শিল্পি, রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ত কাউকে ডাকতে পারোনি, এত বিশাল আয়োজনের সামর্থ তোমার হাতে নেই বলে। তুমি ডেকেছো রাবারের স্যান্ডেল আর লুংগি পরিহিত আমাদের বয়োজ্যেষ্ঠদের। আমাদের অগ্রজদের।
তোমাকে কুর্নিশ। তোমার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। এই সন্মানিত মানুষ গুলিকে সন্মান দেয়ার জন্যে।
আমি প্রান ভরে দেখছি আমাদের বয়োজ্যেষ্ঠদেরকে আমাদের অগ্রজদেরকে। এদের মধ্যেই রয়েছে আমার পিতামহ। আমার বাবা, আমার দাদাজী। আমার নানাজী।
মাহিবুর হয়তো তুমি এই শ্রদ্ধেয়জনদের জন্যে এক গ্লাস ঠান্ডা পানির সাথে ঝাল মুড়ির ব্যাবস্থা করেছিলে।
তুমি বলোনি কেনো আমাকে?
আমি তোমাকে বলতাম উনাদেরকে এক দামি রেস্তোরায় বসিয়ে মুরগির কোরমা, রুইমাছের মুড়িঘন্টো, খাশির রেজালা আর ইলেশের দুপেয়াজা দিয়ে তৃপ্তিকর ভোজনের পর তারপর বাড়ি পৌছে দিও।
যানোইতো এই বয়সে ওরা একটু হয় রসনাবিলাসি।
বিলেতের কোনো নির্জন কক্ষে আরাম কেদারায় বসে ভাবছি, তোমার পাঠানো ছবির কথা, তোমার ফিতা কাটার দৃশ্যের কথা। আমি জানি একদিন এই টিনের ঘর, একদিন বড় দালানের স্কুল হবে, মান্যগণ্য সুধিজনেরা এসে ফিতা কাটবে। তুমি হবে সে স্কুলের হেড মাস্টার। বিশ্বাস করো আসবে সেদিন। ইনশাআল্লাহ।
কিন্তু সেদিন আমাদের এই উগ্রজ রা, প্রিয়জনেরা থাকবেননা, মাহিবুর তাদের মনের দেয়ালে এই দিনটির কথা লিখে দাও। তাদের দিতে হবেনা গুরুদক্ষিণা তাদের জন্য কর একটু রসনাবিলাসের আয়োজন। কতদিন জেনো তারা খায়না ঘিয়ে মৌ মৌ করা বিরুন চালের ভাতের সাথে রুই মাছের কালিয়া।
বি:দ্র: আমার বিলেত, আমেরিকা, কানাডা ও দামি দেশ গুলির বন্ধুরা ও দেশের মাটিতে বসবাসরত দামি বন্ধুরা তোমাদের জন্যে দু ধরনের দুটি ফর্ম পোস্ট করলাম এক পলক দেখে নিও।
লেখক- ফারিদা ইয়াসমিন জেসি (Farida Yeasmin Jessi)