কাহিনী দিয়ে ঘেরা যে জীবন

কাহিনী দিয়ে ঘেরা যে জীবন
আওলাদ হোসেন, (পূর্ব আদালত পাড়া, টাঙ্গাইল)

আল্লাহ্ পাক আল কুরআনে মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য কিছু উদাহরণ সৃষ্টি করে রেখেছেন। কিন্তু আল-কুরআনকে রপ্ত করা অত্যন্ত কঠিন কাজ, বাস্তবায়ন আরো কঠিন কাজ। প্রথমেই নবীদের দিয়ে হেদায়েত এর কাজটি করিয়েছেন সমগ্রজাতি অস্বীকার করেছেন অবাধ্য হয়েছেন, বিরুদ্ধাচরণ করেছে পরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ দিয়ে সমগ্র জাতিকে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে। অনেকেই ইচ্ছে করলে আল-কুরআন থেকে এইসব কাহিনী জ্ঞান সাধনার জন্য অবসর সময়ে পড়ে দেখতে পারেন। এতে আল-কুরআন পড়ার প্রতি নিজেকে অভ্যস্ত করে তুলতে পারবেন। আমাদেরকে ছোট বেলায়ই এই সমস্ত কাহিনী শুনানো হয়ে থাকে। বড় হয়ে তা ভুলে যাই কিন্তু মনের ভিতর দাগ কেটে থাকে। যখনই পরিপক্ক জীবনে মনের অজান্তে যে কোন সময়ে আল-কুরআনের কাহিনী পড়বেন তখনই দেখতে পাবেন সেখানে লেখা আছে এই কাহিনী আপনি আগেই জানতেন না আমি ওহীর মাধ্যমে তা জানিয়ে দিয়েছি। এই বার এই বয়সে আপনার নিশ্চই মনে হবে রাসূল (দ:) তবে ইহা লেখেননি, এটা আল্লাহর বাণী। সূরা কাসাস সূরা ইউসুফ্ সূরা কাহফ ইত্যাদি। মূসা (আ:) কে দিয়ে কয়েকটি উদাহরণ টানা হয়েছে (১) মূসা নবী এক জ্ঞানী ব্যক্তির সন্ধানে সমুদ্রের পারে উপনীত হলেন এবং দেখা হোল জ্ঞান লাভের উদ্দেশ্যে। শর্ত হোল আপনি আমার কোন কাজে প্রশ্ন করতে পারবেন না আপনি অজানা জিনিসের প্রতি দৈর্ঘ্য ধারণ করতে পারবেন না। মূসা (আ:) তার শর্তে রাজী হলেন। যাত্রাপথে ৩টি ঘটনার সম্মুখীন হলেন এবং দৈর্ঘ ধারণ করতে ব্যর্থ হলেন। এখানে শিক্ষনীয় হোল কোন কাজই বিশেষ উদ্দেশ্য ছাড়া হয়না এবং তার পেছনে কারণ থাকে যা মানুষ জানে না বুঝতে পারে না। বিজ্ঞ লোকাটি নিজ থেকে কিছু করেন নি। এখানে বুঝানো হয়েছে যে ঘটনা পৃথিবীতে ঘটে থাকে তার পেছনে সষ্টার হাত থাকে বিশেষ উদ্দেশ্য থাকে এবং সকল মঙ্গল তাঁরই হাতে। জগতে রাজ্য জয়, শক্তির হাত বদল, সকল উত্থান, পতন জুলুম নির্যাতন টার্মস এ্যপইন্টেড, অন্যথায় সংগে সংগে অন্যায়ের প্রতিকার নেমে আসতো। মানুষ যদি জানতো। এই কাহিনী স্মরণ করিয়ে দেয় ঘাট অঘাট হতে এবং অঘাট ঘাট হতে সময় লাগেনা। সব কিছুর নিয়ন্ত্রা আল্লাহ পাক এবং সীমালংঘনকারীকে পছন্দ করেন না। কেন একজন রাস্তায় পড়ে মরলো, কেন একজন পানিতে ডুবলো, কেন কল কারখানা পুঁড়ে ছাই হলো, কেন এক রাজ্য অপর রাজ্যকে গ্রাস করলো, কেন মানুষ অসহায় অবস্থায় মারা যায়, মজলুম কেন সাহায্য পায় বা পায়না, সুন্দরীদের পালায় পড়ে কেন সর্বস্ব হারায়, কেন একজন অপরজনকে নির্যাতন নিষ্পেষন করে, অন্যাভাবে এক জন অপরজনের উপর জুলুম করে ইত্যাদি হাজারো ঘটনা যদি আমরা নিরপেক্ষ দৃষ্টি নিয়ে দেখি তাহলে আধুনিকতা, বৈজ্ঞানিকের অবদান, ধন ঐশ্বর্য ইত্যাদি একটার পেছনে অপরটি লেগেই আছে পত্র-পত্রিকা খুললেই সব পরিস্কার। মানুষকে অন্যয়ভাবে হত্যা করা যাবেনা। এজন্যে জাহান্নাম ও জান্নাত সৃষ্টি করা হয়েছে। রাজা-প্রজাদের যৌন উম্মাদনা, মাদকাসক্ততা, জুলুম অত্যাচার কোন দিনই স্রষ্টার সৃষ্টিকে ব্যর্থ করে দিতে পারেনি। কেন কি ঘটলো তার উত্তর প্রথম পাঠে অবশ্য পাওয়া যাবে ১০০/২০০ বৎসর পর ফল পাওয়া যাবে যা পরিস্কার পরবর্তী প্রজন্ম দেখে যেতে পারবে না। কারণ কি? বুঝতে হবে পিতা-মাতাকে তাদের কাজ ফুরিয়ে গেলে কেন দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নেয় হয়? এই কাহিনীতে আর একটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে, যার যার মৃত্যু তার তার কাছে অর্থাৎ সে জানতেও পারলো না কেন একে মৃত্যুবরণ করতে হবে। অবশ্য পরকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ইহকালেই ্যদি প্রতিশোধনা নিতে পারি তাহলে পরকাল দিয়ে কি হবে? হায় যদি তারা জানতো আমাদেরকে সম্মাণিত করা হয়েছে অথবা তাদের কথায় দু:খ পাবেন না, তারা যা প্রকাশ করে বা গোপন রাখে আমি সবাই জানি। কিন্তু বাস্তব বড় কঠিন। ৪ খলিফার কিছুই পালন করিনা কিন্তু বড় বেহেস্তটি আমাকে দিতেই হবে আর “হুরুম মাকসুরাতেম ফিল খিয়াম।” আশ্চর্য আমাদের ধর্ম জ্ঞান মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় ট্রাজেডি হচ্ছে সে তার স্রষ্টাকে দেখতে পায়না আর সহজেই অতীতকে ভুলে যায় যেমন পলাশীর কথা ভুলেই গেছি। স্রষ্টাকে কাছে না পেয়ে মুসা (আ:) কে তার অনুসারীরা বলেছিল আমাদের মুর্তি বানিয়ে দাও? অথচ অল্প আগে তারা এক আল্লাহর অনুসারী ছিল। দুর্বল চিত্তের অধিকারী মানুষ সব কিছু মানতে রাজী শুধু স্রষ্টাকে অস্বীকার করাই বীরত্ব মনে করে। যেমন মুসা (আ:) যখন ফিরাউন এর কাছে গেল এবং বলল এক আল্লাহর উপর ইমান আন। ফিরাউন অস্বীকার করলো এবং দরিয়ায় ডুবে মরলো। এটাকে বলা হয় ফেরাউনী ঈমান। অর্থাৎ নাক ডুবার আগেও সে আল্লাহকে অস্বীকার করেছিল এ পর্বে আমাদের জন্য এটাই শিক্ষনীয় বিষয় যে, আমাদের ঈমান কোন পর্যায়ে অবস্থান করছে। দরিয়া পাড়ি দেয়ার সময় ফিরাউন দেখল পানি ভাগ হয়ে গেছে, সেও দলবল নিয়ে কোন জ্ঞানে পানিতে ঝাঁপ দিল আর দেখতে পেল সেখানে কোন রাস্তা নেই। আজ থেকে ৫০০০ বছর পূর্বে যা ঘটেছিল তা বিভিন্ন ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে দেয় হয়েছে। এখানেও ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া কথাটির উপর ঈমান আনার জন্য বলা হয়েছে। আমরা প্রায়ই মৃত্যুর পূর্বে ঈমান এনে থাকি এবং কালেমা পড়ি। তবে বাঙালিকে নিয়ে বুঝা যায় না কে কখন ঈমান আনে, দাড়ি টুপি পড়ে বিগত যৌবনের উচ্ছাসকে জলাঞ্জলি দিয়ে পাক্কা পরহেজগার হয়ে যান। এখানেই নিরপেক্ষরা হোঁচট খায়। গালমন্দ করে কিন্তু তাদেরকে আর কাছে পায় না। জীবনের একটা সময় আল্লাহ পাককে স্মরণ করে চোখ বুজে আর আত্মীয় স্বজন সৎকার করে, এতিম মিসকিনকে ডেকে এনে বিরানী খাইয়ে দেয়, কিছুদান খয়রাত করেন। এতে দোষের কিছু নেই। ভাল, খুবই ভাল। অনেকে আগেই নামাজ রোজা করেন অবসরের পরের দিন থেকে তাবলীগ ও অন্যদের হেদায়েত করতে থাকেন। এখন অবশ্য কেউ এতে আপত্তি করেন না। তবে যারা ভুলে রাজনীতিতে যান তাদের কপালে দূর্ভোগ, কেন যেন পরের উপকার করতে গিয়ে নিজের জীবনটা হারায়-কার উপকার কে করে-জীবনে এক কিল দেনও নাই খানও নাই এখন আপনার কি প্রয়োজন ২০/২৫ বৎসরের যুবকদের হাতে হেনস্তা হওয়া। বিদেশীদের হাত আছে আরও মারাত্মক অবস্থা, এ অবস্থায় দেশের চিন্তা করে যে সমস্ত বিদগ্ধজন এ পর্যন্ত শিক্ষা পেয়েছেন আর যারা পাওয়ার আশা রাখেন তারা রাজনীতি অর্থনীতি, ভূ-নীতি, ব্যবসা বাণিজ্য, নীতিকথা, হিতোপদেশ, দান-খয়রাত বাদ দেন, যে কয়দিন বেঁচে থাকেন তাই লাভ, কার উপকার করবেন, আল্লাহর উপর ছেড়ে দিন-সূরা ইয়াসীন পড়–ন দেখবেন কাটায় কাটায় মিলে যাচ্ছে-বাংলায় পড়–ন জ্ঞান হবে, আত্মা শান্তি পাবে তবে আল্লাহ কে দেখতে পাবেন না। মুসা (আ:) আল্লাহকে দেখতে চেয়ে বসলেন। এটা এই কাহিনীর তৃতীয় পর্ব। তাতো হবে না মূসা। তবে যদি ঐ পাহাড়কে স্থির দেখতে পাও তবেই আমাকে দেখতে পাবে। নূরের তাজাল্লিতে পাহাড়বিদ্ধস্ত হয়ে গেল মূসা অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন এবং ঈমানের দৃঢ়তা বেড়ে গেল। অতএব জীবন ভর আল্লাহকে দেখার যে স্বাদ বা ইচ্ছা তা মিটে গেল। কেন দেখাহোল না। মিরাজেও বিভিন্ন উপমা দেয়া আছে। কেন দেখা যায় না এর পার্থক্য হচ্ছে সৃস্টি বস্তুকে এই পরিবেশে স্রষ্টাকে দেখার যোগ্যতা রাখে না। অর্থাৎ যা দেখা যায় তাই সৃষ্ট, স্রষ্টার সমকক্ষ নয়। এখন একটু ভাবুন। নিজের দেহের ভিতরে যে আত্মা আছে তাও দেখা যায় না। এটাকেই নিজেকে চেনা বলে। অবশ্য আল-কুরআনের অনেক স্থানেই বলা হয়েছে তোমাদেরকে অল্পই জ্ঞান দেয়া হয়েছে। বর্তমান যুগে আমরা যে বিজ্ঞানের গর্ব করি ৫০০০ বৎসর পরে এই জ্ঞান কোন কাজে লাগবে না। হতে পারে অনেক উন্নত জ্ঞান স্থান নিবে অথবা পরমানুযুদ্ধের ফলে হাতে হারিকেন অথবা মোমবাতির আলোটুকও খুঁজে পাওয়া যাবে না। কোন যুগ যে শুরু হবে তা আল্লাহই ভাল জানেন। কারণ যে সমস্ত যুগ এসে গেছে তা আর রিপিট নাও হতে পারে তবে যুদ্ধ অনিবার্য। এক দেশ অপর দেশকে ভয় দেখায় এই যুদ্ধ দিয়ে এবং আদিম কাল থেকে এটা চলে আসছে। এর মধ্যে যদি আল্লাহর যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় তাহলে পৃথিবী ভীষণ কম্পনে প্রকম্পিত হবে। পৃথিবী তার বোঝা বের করে দেবে। কেয়ামত সংঘটিত হবে। চক্ষু বিস্ফোরিত হবে। চন্দ্র জ্যোতিহীন হবে, সূর্য ও চন্দ্রকে একত্র করা হবে। নক্ষত্র সমূহ জ্যোতিহীন হয়ে পড়বে, আকাশ বিদীর্ণ হবে, পর্বত সমূহ ধলার ন্যায় উড়ে বেড়াবে। মানুষের দু:খ ভোগ তখন শুরু হবে। তার পর অনন্ত সুখ অথবা অনন্ত দু:খের ফয়সালা হয়ে যাবে। কিভাবে হবে? প্রথম বার যেভাবে হয়েছে ঠিক সেভাবেই হবে। হা অবশ্যই আমি একত্র করব। কেননা আমি তার অঙ্গলির অগ্রভাগ পর্যন্ত যথাযথভাবে ঠিক করে দিতে সক্ষম। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে সৃষ্টির যে ব্যাপকতা, কত রকমের প্রাণী, অনু পরমানু পৃথিবী জোড়া ছড়িয় আছে এসবই সৃষ্ট কুন, ফাইয়াকুন’ ফলে দৃষ্ট এবং মানুষের জন্য সৃষ্টি। এরা ফলদায়ক বৃক্ষ। নদ-নদী পাহাড় পর্বত এদেরকে যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি কোন কিছুর অধীন নন, একক সত্ত্বা। পৃথিবীর সব কিছু সৃষ্ট এবং পরকালের নমুনা স্বরূপ। এদের অনন্তরূপ যা সৃষ্টির অপর একটি মহাসৃষ্টি মহিমাময় আল্লাহ খোলস ভেঙ্গে দিয়ে নতুন সৃষ্টির অস্তিত্ব আনয়ন যা অবিশ্বাস করার কোন জ্ঞান মানুষের থাকবে না, অপরূপ রূপের মহিমা।
পৃথিবীতে কেন এসেছিলাম, কিভাবে এসেছিলাম কোথায় যাব, কিভাবে যাব তার উত্তর পেয় গেলেন তখন স্রষ্টাকে সাক্ষাতের পূর্ণাঙ্গতা এনে দেবে অনন্তকাল, যার আর পর নেই। সৃষ্টির এটাই পূর্নাঙ্গতা যা অজানা।


প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। কাগজ২৪-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য কাগজ২৪ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।


  • কাগজটুয়েন্টিফোর বিডি ডটকম এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!