কুষ্টিয়ায় শিশু সৈকত ইসলাম সকাল হত্যার দ্রুত বিচার চেয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল
অনলাইন ডেক্স । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
পরিবারের অভিযোগ মামলার তদন্ত ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য কাজ করছে প্রভাবশালী মহল
স্টাফ রিপোর্টার : কুষ্টিয়ায় শিশু সৈকত ইসলাম সকাল হত্যার দ্রুত বিচার চেয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে এলাকাবাসী। রবিবার সকালে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার জিয়ারখি ইউনিয়নের বংশীতলা মোড়ে এলাকার নারী-পুরুষের অংশ গ্রহনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, শিশু সৈকত ইসলাম সকালকে পরিকল্পীত ভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনায় হত্যা মামলার প্রধান আসামী মোকিমকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও বাকি আসামীদের গ্রেফতারে গড়িমোসি করছে। যে কারনে হত্যার ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা চালাছে একটি প্রভাবশালী মহল। মানববন্ধন থেকে এলাকাবাসী শিশু সৈকত ইসলাম সকাল হত্যার সাথে জড়িত সকল আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের মাধ্যমে ফাঁসির দাবিও জানান। পরে বংশীতলা মোড় থেকে শিশু সৈকতের বাড়ী পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করে তারা।
মানববন্ধন শেষে নিহত শিশু সৈকত ইসলাম সকালের মা মনোয়ারা খাতুন জানান, তার ছেলে মোকিম ও জব্বারের ছেলের সাথে খেলা করতে গিয়ে মোকিমের ছেলের গায়ে কাদা দিয়ে ছিলো। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে মোকিম তার ছেলে সকালকে জব্বারের ঘরে নিয়ে গিয়ে মারধর করে। এক পর্যায়ে সকালের মৃত্যু হলে মোকিম ও জব্বার মিলে সকালের লাশ পাশের একটি পুকুরে ফেলে আসে। তিনি বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার শিশু সন্তান সৈকত ইসলাম সকাল হত্যার বিচার চাই।
নিহত শিশুর বাবা জহুরুল ইসলাম বলেন, আমার শিশু সন্তানকে হত্যা করা হয়েছে। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী এই হত্যার সঠিক বিচার চাই এবং সকলের কাছে আমার দাবি যাতে কোন প্রভাবশালী মহলের দারা হত্যার তদন্ত ভিন্নখাতে প্রবাহিত না করা হয়।
নিহত শিশুর বোন বর্ষা বলেন, আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। কি অপরাধ ছিলো আমার ভাইয়ের, যে তাকে এই ভাবে হত্যা করা হলো। আমি আমার ভাই হত্যার ন্যয়বিচার চাই।
নিহত শিশুর চাচাতো বোন আলেয়া বলেন, আমার ভাই খেলা করতে ছিলো। মোকিম আমার ভাইকে তেড়ে জব্বারের বাসায় নিয়ে গিয়ে হত্যা করে খাটের নিচে লুকিয়ে রাখে। পরে রাতের আধারে পুকুরে ফেলে দেয়। আমরা এর সুষ্ঠ বিচার চাই। খুনিদের ফাঁসি চাই।
নিহত শিশুর চাচাতো ভাই সুজন বলেন, জব্বারের বাড়ীতে সকালকে হত্যা করে বস্তায় ভরে খাটের নিচে লুকিয়ে রাখে মোকিম ও জব্বার। পরে বাড়ীর পাশে একটি পুকুরের মধ্যে তার লাশ ফেলে দেয়।
নিহত শিশুর চাচা তোফাজ্জেল বলেন, মোকিম ও জব্বার মিলে জব্বারের বাড়ীতে সকালকে হত্যার পর বস্তা বন্দী করে প্রথমে খাটের নিচে এবং পরে একটি (গরু খাওয়ানোর) চাড়ির মধ্যে লুকিয়ে রাখে। পরর্বীতে জব্বারের বাড়ীর পিছনে একটি পুকুরে ফেলে দেয় তারা।
স্থানীয় মাতব্বর আলতাফ মোল্লা বলেন, প্রথমে মনে হয়েছিল যে পানিতে ডুবে মারা গেছে। কিন্ত পরে জানতে পারলাম এটা পরিকল্পীত হত্যা। এই শিশু সকালকে হত্যার পরে পানিতে ফেলে রাখা হয়েছে। নিখোঁজ হওয়ার পর যখন সবাই খোজাখুজি করছিল, তখন মোকিম ওই পুকুরের যেই স্থানটি দেখিয়ে দেয় সেই যায়গা থেকেই সকালের লাশ উদ্ধার করা হয়। এই হত্যাকারিরা সু-কৌশলে হত্যা করে পানিতে ফেলে দেয়। এখন তারা বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের মাধ্যমে হত্যার বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
প্রতিবেশী হারেজ আলী বলেন, সকাল থেকে আলতাফ মোল্লার পুকুর পাড়ে মোকিম ও জব্বারের ছেলের সাথে খেলা করছিল নিহত শিশু। এসময় মোকিম ছেলে খুঁজতে গিয়ে সকালকে একটা চরমারে। এরপর সকাল দৌড়তে দৌড়তে গিয়ে জব্বারের বাড়ীর ভিতরে ডুকে পরে। পরে মোকিম সকালকে চর মারে এবং জব্বার লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দিলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে সকাল। তখন জব্বারের মা সকালের মাথায় পানি ঢালেতে ঢালতে বলে কি করলিরে ছেলেটাকি মেরে ফেলবি। সেই সময় জব্বার গিয়ে ঘাড় ধরে মোচর দিয়ে ভেঙ্গে ফেলে। পরে মোকিম, জব্বার, রতন, করিম এরা সবাই এক সাথে হয়ে বস্তায় ভরে ঘরের চকির নিচে লুকিয়ে রাখে। পরে গোয়ালের চাড়ির মধ্যে ঢেকে রাখে এবং রাতে বাড়ীর পিছনের পুকুরের ফেলে দেয়।
প্রতিবেশী শাওন বলেন, সকাল হত্যার প্রধান আসামী মোকিম চায়না নামের স্থানীয় এক নেত্রীর চাচা হওয়ায় তিনি বিভিন্ন ভাবে এই হত্যা মামলা ধামা চাপা দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
এদিকে জানাযায়, মৃত সকালের মেরুদন্ডের ২,৩ ও ৪ নাম্বার হাড় ভাঙ্গা ও ডিসপ্লেস ছিলো এবং পানিতে ডুবার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে মৃত সকালের ফুসফুসে পানির উপস্থিতি ছিলোনা। এদিকে মাথার চামড়ার নিচে ফ্লুইড জমা ছিলো। মৃত শিশুটির পরিবারের অভিযোগ তার ঘার মোটকে দেয়ার কারনে মেরুদন্ড ভেঙ্গে যায় এবং পরে তাকে মাটিতে ফেলে দেয়ার কারনে মাথায় আঘাতটি লাগে। মাটিতে পরার কারনে মাথার বাইরে কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এছাড়াও মুখের ডান দিকে চোখের পাশে আঁচরের একটি দাগ পাওয়া যায়। পরিবারের অভিযোগ ঘাড় মটকানোর সময় সেখানে নখের আঁচর লাগে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি তদন্ত নিশিকান্ত সরকার জানান, ময়না তদন্ত প্রতিবেদন আমরা হাতে পেয়েছি। সেখানে মৃত্যুর কারণ হিসেবে এ্যাক্সিডেন্টাল ডেথ উল্লেখ করা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ডাক্তার যেভাবে প্রতিবেদন দিয়েছে, সেই ভাবেই তদন্ত এগোবে।
শিশুটিকে ঘাড় মোটকে হত্যা করা হয়েছে বলে পরিবারের অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবিষয়ে আমার কোন বক্তব্য নেই, কারণ পুলিশ ডাক্তার না।
এবিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাব্বিরুল আলম জানান, নিহত শিশু সৈকত ইসলাম সকাল হত্যার ঘটনায় মোকিম নামে এক জন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং এই হত্যার সাথে আরো কেউ জড়িত আছে কিনা তদন্ত করে পরর্বীত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
উল্লেখ্য, গত মে মাসের ২৭ তারিখে শিশু সৈকত ইসলাম সকালের ঘার ভাঙ্গা লাশ পাশের বাড়ীর একটি পুকুর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।