রণেশ মৈত্র এর কবিতা-কেউ কি বলতে পারো ?
কেউ কি বলতে পারো ?
-রণেশ মৈত্র (সাংবাদিকতায় একুশে পদক প্রাপ্ত)
কেউ কি বলতে পারো
কখন নামে সন্ধ্যা ?
রাতের অন্ধকার ?
যখন সবাই হয়ে উঠি ঘরমুখী ?
বাইরের ব্যস্ততার শেষে ?
বলতো কখন নামে সন্ধ্যা ?
যখন ভয় ভয় লাগে ?
গাছি মছিম করে ?
এখন তো সদাই তাহলে সন্ধ্যা
কিংবা রাত্রি ।
ঘুটঘুটি অন্ধকার।
খবর এলো মৃত্যুর খবর
নিকট জনের বিদায়ের খবর
ছুটবো কি শেষ দেখাটি দেখতে ?
না , যাওয়া গেলনা
ভীতি বাদ সাধলো
আতংক ঘিরে ধরলো ।
একটি ঘৃণ্য কাপুরুষ যেন ।
কবরস্থানের খবর কি ?
অনেক অনেক কবর ?
তার আগে জানাযা ?
না , জন-মানব শূণ্য জানাযা
দেখি, শুধুই প্রিয়জনেরাই দাঁড়িয়ে
অসহ্য এক দৃশ্য
কোনদিন দেখিনি তো ।
কাঁধে নয়-এম্বুলেন্স নিয়ে গেল দেহ
সমাধিস্থ হলো কি ?
না , তা জানবার অবকাশ নেই
তাই শুধাইনা কাউকেই ;
হয় , আবার হয়ওনা
নিজে দিব্যি থেকেছি নিজ ঘরে ।
তবে কি আমি স্বার্থপর ?
হয়তো বা তাই ।
কাঁধে শব নিয়ে স্মশান যাত্রা
কীর্ত্তন আর হরিবোল !
না , কোনটাইনা-সব ফাঁকা
স্মশান বন্ধু ?
না। এলেন না কেউ
খবর পেয়েও এলেন না
আবারও সেই এমবুলেন্স-নিয়ে গেল দেহ
অত:পর ?
না , কিছুই জানা গেলনা ।
শ্রাদ্ধ ? না , তাও হবেনা ।
মৎস্যমুখী ? তা-ওনা ।
আচ্ছা , কবে আসবে সেদিন ?
যেদিন আমরা কবরস্থানে-স্মশানে দলে বলে যাব
যেদিন সূর্য্য উঠবে
ফুল ফুটবে
পাখীর কলকাকলিতে মুখরিত হবে
আমাদের ভালবাসার এই পৃথিবীটা ?
আসবে , আসছে সেদিন
আলোকোজ্জ্বল চারদিক
দু’চোখ ভরে দেখব
দেখব সবাই মিলে ।
এসো স্বাগত জানাই
অনাগত সেই সুদিনটিকে ।
বরণ করি অগ্রিম
বরণ ডালা দিয়ে ।
সেদিন আমরা দল বেঁধে পার্কে যাব
সিনেমা দেখব
বাজারে গিয়ে সবজীটা মাছটা কিনব
সভা-সমাবেশে যাব
ছবি দেখবো গান গাইবো সমবেত কণ্ঠে ?
বক্তৃতা-ভাষণ ? তাও দেব
সেটি হবে নতুন বাংলাদেশ
যার জন্যে লড়েছি একাত্তরে ।