বোদায় আ.লীগ নেতার কোটি টাকার তদন্তে দুদক
নাজমুস সাকিব মুন, পঞ্চগড় প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম সাবুল। বর্তমানে তিনি বোদা পাইলট বালিকা
বিদ্যালয় ও কলেজের প্রধান শিক্ষক। অভিযোগ রয়েছে শূন্য থেকে শুরু করে রবিউল আলম সাবুল এখন কোটিপতি। দুর্নীতি দমন কমিশনের চিঠির প্রেক্ষিতে জেলা শিক্ষা অফিসার তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের
তদন্ত শুরু করেছেন।
বোদা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. মকলেছার রহমান জিল্লু দুর্নীতি দমন কমিশনের লিখিত অভিযোগে বলেন, রবিউল আলম সাবুল ২০১০ সালে মে মাসে বোদা পাইলট বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে কয়েক
বছরের মধ্যে দুর্নীতির মাধ্যমে শূন্য থেকে কোটিপতি হয়েছেন। প্রধান শিক্ষক হওয়ার পর তিনি স্কুল ও কলেজে ৪৪ এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু করে পাঁচ শিক্ষক ও এক পিয়ন নিয়োগ দিয়েছেন। এ সব শিক্ষকের কাছ থেকে পাঁচ থেকে সাত
লাখ টাকা নিয়েছেন। অথচ বিদ্যালয়ের তহবিলে কোনো টাকা জমা দেননি।
অভিযোগে আরো বলা হয়, রবিউল আলম সাবুল জাল নিবন্ধনকারী শিক্ষকদেরও নিয়োগ দিয়েছেন। বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ আয়ের টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে ব্যক্তিগত কাজে খরচ করেন। ছাত্রীদের সেশন ও ভর্তি ফি ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা আদায়
করেন। কিন্তু রশিদ দেন মাত্র ৫০০ টাকার। প্রতি বছর ১৮০ টাকায় সোয়েটার দিয়ে ৫০০ টাকা আদায় করেন। অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন ও ছবি তোলার জন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে আদায় করেন। পরীক্ষার ফি ও ফরম পূরণের বোর্ড ফি বাদে অতিরিক্ত টাকা বিদ্যালয়ের হিসেবে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেন।
এই আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ, শিক্ষার্থীদের প্রশংসাপত্র ও মূল সনদ নিতে ৫০০ টাকা আদায় করেন তিনি। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মা সমাবেশে কোনো খরচ করেন না। বিদ্যালয়ের পাঁচ/সাতটি মেহগনি গাছ কেটে ব্যক্তিগত কাজে
ব্যবহার করেছেন। বিদ্যালয়ের সোফাসেট নিজের বাড়িতে রেখে বাড়ির পুরাতনটি বিদ্যালয়ে দিয়েছেন। অন্য ছয়/সাতটি বিদ্যালয়ের সভাপতি হয়ে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে বাণিজ্য করেছেন। একবার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে তাকে কেন্দ্র সচিব থেকে
অব্যাহতি দেন জেলা প্রশাসন। নয় বিঘা পরিমাণ রাজার দিঘিটি এক লাখ ৬০ হাজার টাকায় ইজারা হতো। কিন্তু এখন সেটা কত টাকায় কার কাছে ইজারা দেওয়া হচ্ছে কেউ জানতে পারছেন না।
ভাইস চেয়ারম্যান মো. মকলেছার রহমান আরো অভিযোগ করেন, ‘বিদ্যালয়ের পাঁচ/ছয় বিঘা জমির বাৎসরিক আয় জমা হতো বিদ্যালয়ের হিসাবে। কিন্তু এখন সেটা হচ্ছে না। এমপিওভুক্ত হওয়ার প্রথম ৭৫/৭৭ হাজার টাকা উত্তোলন করেন তিনি। যা
ফেরতযোগ্য। বেশির ভাগ নিয়োগ জাল স্বাক্ষরে দেওয়া হয়েছে। সামান্য বেতনের এই শিক্ষক দুই সন্তানকে অনেক টাকা খরচ করে বেসরকারি বিশ্বদ্যিালয়ে পড়িয়েছেন। আয়ূবগঞ্জ মৌজায় ৫১ লাখ টাকায় ১০/১২ বিঘা জমি কিনেছেন। পাঁচতলা মার্কেট, বাজার মসজিদ সংলগ্ন গোডাউন ঘর, ব্যাংক ও বাড়িতে লাখ লাখ টাকা ও প্রচুর গহনা মানুষের মনে আলাউদ্দিনের চেরাগ বলে মনে হয়েছে।’
জেলা শিক্ষা অফিসার মো. শাহীন আকতার বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের চিঠির প্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু করেছি। আরো সময় লাগবে।
বোদা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বোদা পাইলট বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের প্রধান শিক্ষক রবিউল আলম সাবুল তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সংবাদ সম্মেলন করে সব অভিযোগের ব্যাখ্যা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি।