চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিন যাবে ক্রুজশিপ বে-ওয়ান
বিলাসবহুল ক্রুজশিপ এমভি বে-ওয়ান সেপ্টেম্বরে আমদানির পর সেটাকে কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন রুটে চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছিল জাহাজটির পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স। কিন্তু পর্যটকদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে এবার জাহাজটিকে চট্টগ্রাম থেকে পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
আগামী বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিন রুটে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে বিলাসবহুল জাহাজটি। সোমবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে নগরের পতেঙ্গায় ওয়াটার বাস টার্মিনালে নোঙর করা এমভি বে-ওয়ান জাহাজে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বক্তব্য রাখেন কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ রশিদ।
তিনি বলেন, শুরুতে জাহাজটিকে কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন রুটে চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। সেই লক্ষ্যে কক্সবাজারের দরিয়ানগরে একটি জেটিঘাটও নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু তারপরও যাত্রীদের সরাসরি জাহাজে তোলা যাচ্ছে না। অপরদিকে জাহাজটি মূল সেন্টমার্টিন দ্বীপেও নোঙর করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই যাত্রীদের সুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে এমভি বে-ওয়ান চট্টগ্রাম থেকে পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এম এ রশিদ বলেন, পতেঙ্গায় ওয়াটার বাস টার্মিনাল থেকে প্রতি বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার রাত ১১টায় ছেড়ে যাবে জাহাজটি। সেন্টমার্টিন পৌঁছাবে সকাল ৭টায়। শুক্র, শনি ও রোববার দুপুর ১টায় ফিরতি যাত্রী নিয়ে সেন্টমার্টিন থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসবে বে-ওয়ান; সন্ধ্যা ৭টায় চট্টগ্রাম পৌঁছাবে। শাহ আমানত বিমানবন্দর একেবারে দুয়ারে হওয়ায় সারাদেশ থেকে বিমানযাত্রীরা সহজেই জাহাজে আসতে পারবেন, একইভাবে ফিরতেও পারবেন।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চালানো যাবে, এটা কেউ কোনো দিন ভাবেনি। আমরা খুব ভালো একটি জাহাজ জাপান থেকে এনেছি। এটা দুই হাজার যাত্রী নিয়ে সৌদি আরব যেতে সক্ষম। ঝড়-তুফানেও জাহাজে কোনো সমস্যা হবে না। এর দুই পাশে দুটি পাখা আছে। তিন-চার পর্যন্ত বা এর বেশি সিগন্যাল থাকলেও এর কোনো সমস্যা হবে না।
ক্রুজশিপ বে-ওয়ানের নাবিক ক্যাপ্টেন আলমগীর কবির জানান, জাহাজটির দৈর্ঘ্য ৪৫০ ফুট, প্রস্থ ৫৫ ফুট। এটি ঘণ্টায় ২৪ নটিক্যাল মাইল বেগে চলবে। এতে আছে প্রেসিডেন্ট স্যুট, বাংকার বেড কেবিন, টুইন-বেড কেবিন, আরামদায়ক চেয়ারসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির আসন। এছাড়া একটি অভিজাত রেস্তোরাঁ, স্বয়ংক্রিয় ভেন্ডিং মেশিন এবং কয়েন পরিচালিত ঝর্ণাও আছে। যাত্রীদের সেবায় এই জাহাজে থাকবেন মোট ১৬৭ জন ক্রু, যার মধ্যে ১৭ জন জাহাজটি মূলত পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন। উত্তাল সমুদ্র মোকাবিলায় জাহাজটিতে ফিন স্ট্যাবিলাইজার সংযুক্ত আছে।
কর্ণফুলী শিপবিল্ডার্সের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ (অ্যাডমিন) কামাল উদ্দিন চৌধুরী জানান, পতেঙ্গা ওয়াটার বাস টার্মিনাল থেকে সেন্টমার্টিনের সর্বনিম্ন ভাড়া (আসা-যাওয়া) হবে তিন হাজার টাকা। সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা ভাড়ায় (আসা-যাওয়া) এই প্রমোদতরীতে ভ্রমণ করা যাবে। ফিরতি ভাড়া ও রাত্রিযাপনসহ ভিভিআইপি প্যাকেজের আওতায় দুজনের কেবিনের ভাড়া পড়বে ৫০ হাজার টাকা, ফ্যামিলি প্যাকেজের আওতায় চার জনের স্পেশাল ক্লাশ বাংকারের ভাড়া পড়বে ৫০ হাজার টাকা, রয়েল প্যাকেজের আওতায় দুজনের রয়েল স্যুটের ভাড়া পড়বে ৪৫ হাজার টাকা, প্রেসিডেন্সিয়াল প্যাকেজের আওতায় দুজনের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটের ভাড়া পড়বে ৩০ হাজার টাকা এবং বাংকার বেড প্যাকেজের আওতায় একজনের বাংকার বেডের ভাড়া পড়বে ১০ হাজার টাকা।
এছাড়া ইকোনমি প্যাকেজের আওতায় ইকোনমি সিটের ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৩ হাজার টাকা। অন্যদিকে, বিজনেস ক্লাস সিটের জন্য জনপ্রতি ৪ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হবে। তবে, একমুখী ভাড়া ও রাত্রিযাপনসহ ভিভিআইপি কেবিনে ২ জনের ভাড়া পড়বে ২৫ হাজার টাকা। ফ্যামিলি প্যাকেজে একমুখী স্পেশাল ফার্স্ট ক্লাস বাঙ্কার বেডের ভাড়া হবে ২৫ হাজার টাকা। একমুখী অন্য প্যাকেজগুলোর মধ্যে রয়্যাল প্যাকেজে ২ জনের রয়্যাল স্যুটের ভাড়া পড়বে ২০ হাজার টাকা, প্রেসিডেন্সিয়াল প্যাকেজের আওতায় ২ জনের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটের ভাড়া পড়বে ১৫ হাজার টাকা, ১ জনের সিঙ্গেল বাঙ্কার বেডের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ হাজার টাকা। এছাড়াও শুধু যাওয়া বা আসার জন্য বিজনেস ক্লাসে সিট ভাড়া আড়াই হাজার টাকা ও ইকোনমি ক্লাসে সিট ভাড়া ২ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছে কর্তৃপক্ষ।
কামাল উদ্দিন বলেন, পর্যটকদের আন্তর্জাতিক মানের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা দিতে জাপান থেকে বিলাসবহুল এই ক্রুজশিপটি কেনা হয়েছে। জাহাজটির আগের নাম সালভিয়া মারু হলেও বাংলাদেশে নিয়ে এসে এটিকে এমভি ওয়ান-বে নামকরণ করা হয়েছে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছায়। আনুষঙ্গিক মেরামতের মাধ্যমে জাহাজটিকে নতুন করে বিলাসবহুল রূপ দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে পতেঙ্গা থেকে সেন্টমার্টিন রুটে পরীক্ষামূলকভাবে জাহাজটি চালানো হয়েছে।
ক্রুজশিপ বে-ওয়ানের নাবিক ক্যাপ্টেন আলমগীর কবির বলেন, চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিনের দূরত্ব ২৫ নটিক্যাল মাইল। এটা যেতে আমাদের সর্বোচ্চ সময় লাগবে ৭ ঘণ্টা; আবার আসতেও ঠিক একই সময় লাগবে। আর সার্ভাইভালের কথা যদি বলেন, তাহলে জাহাজটা একসময় টোকিও থেকে ওশিমা-তোশিমা-নিজিমা-শিকিনিজিমা-কোজুশিমা রুটে চলাচল করেতো। আপনারা জানেন প্রশান্ত সাগরের এই রুটটি খুব বিপজ্জনক। এই জাহাজের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট হলো জাহাজে দুটি ফিন বা পাখা আছে। যে কোনো দুর্যোগে যদি জাহাজটির পাখা দুটি বের করে দেয়া হয়, তাহলে সেটি স্থির হয়ে যাবে।
চট্টগ্রাম-সেন্টমার্টিন রুটে বে-ওয়ান নিয়ে নিজের আশার কথা জানিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ রশিদ বলেন, দুই হাজার যাত্রী পরিবহনে সক্ষম এই জাহাজটিতে প্রাথমিকভাবে ৫০০ থেকে এক হাজার যাত্রী প্রত্যাশা করছি। আশা করছি পর্যায়ক্রমে যাত্রী বাড়বে। এখন সপ্তাহে তিন দিন চলাচল করলেও সপ্তাহে সাত দিনই চলাচলের পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মৌসুম শেষে জাহাজটি অলস বসে থাকবে না। আমরা চেষ্টা করব কলকাতা-আন্দামান রুটে চালানোর জন্য। এ জন্য সরকারের কাছে অনুমতি চাইব। হজের যাত্রী পরিবহনের যদি অনুমতি সরকার দেয়, তাহলে আমরা এর সঙ্গে আরও ৩-৪টা জাহাজ নিয়ে আসব।