গণসংহতি আন্দোলনের সংবাদ সম্মলন অনুষ্ঠিত

সংবাদ সম্মেলন
৭ জুলাই ২০১৮
জেলা দপ্তর, পাবনা

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সকল নাগরিকের সংগঠন করার অধিকার স্বীকৃত। আবার ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সকল নাগরিকের নির্বাচিত হবার অধিকার রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের কাজ এই অংশগ্রহণ যাতে বিনা বাধায় ও বৈষম্যহীনভাবে হতে পারে তার ব্যবস্থা করা। কিন্তু আমরা দেখছি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন আইনে শর্তগুলো এমনভাবে ঠিক করা হয়েছে যাতে করে মনে হতে পারে সকল নাগরিকের রাজনীতি করার ও দল গঠন করার সাংবিধানিক অধিকারকে বাস্তবায়ন নয় বরং তাতে নানা বাধা-বিপত্তি তৈরিই এই বিধিমালার উদ্দেশ্য। কিন্তু দেশের বিদ্যমান আইনের ভেতরে থেকেই তার অপর্যাপ্ততা ও অগণতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে গণসংহতি আন্দোলন তার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।

এর ধারাবাহিকতাতেই, নির্বাচন কমিশনের গত ৩০ অক্টোবর ২০১৭ তারিখের গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী গত ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে বিধি অনুযায়ী শর্ত পূরণ সাপেক্ষে গণসংহতি আন্দোলন রাজনৈতিক দল হিসাবে নিবন্ধনের আবেদন করে। পরবর্তীতে গত ৮ এপ্রিল তারিখে পত্র মারফত নির্বাচন কমিশন তার পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী যে ঘাটতি বা সম্পূরক শর্তাদি পালনের শর্ত দেয় তাও গণসংহতি আন্দোলনের পক্ষ থেকে যথাযথভাবে পূরণ করা হয়। উল্লেখ্য ইসির এই চিঠি ছিল দলিলপত্রে কোন ঘাটতি থাকলে তা পূরণ করতে ১৫ দিন সময় দেবার বিধান অনুযায়ী।

সেখানে ইসির চিঠিতে দলের গঠনতন্ত্রে অঙ্গ সংগঠন না রাখার বিধান যুক্ত করা এবং বিভিন্ন নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া বিস্তারিত করার কথা বলা হয়। যার অর্থ নির্বাচন কমিশন এই দুই ক্ষেত্র ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে কোন ঘাটতি নেই বলে স্বীকৃতি দেয়। কাজেই তাদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী গণসংহতি আন্দোলন এই দুইটি বিষয়ই গঠনতন্ত্রে পরিষ্কারভাবে যুক্ত করে তার অনুলিপি নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়। অর্থাৎ নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী
দলিলাদি বিষয়ে গণসংহতি আন্দোলন সকল শর্ত পূরণ করে।

নির্বাচন কমিশনের বিধি ৭ এর উপবিধি ৫(গ) অনুযায়ী, ‘দরখাস্তকারী দলকে অনুর্ধ্ব পনের দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় দলিলাদি সরবারহসহ অন্যান্য ত্রুটি সংশোধনের সুযোগ প্রদান করিয়া পত্র প্রদান করিবে।’ কিন্তু উপবিধি ৬ এ বলা হচ্ছে, ‘উপ-বিধি (৫) এ উল্লিখিত পত্র প্রাপ্তির পর দরখাস্তকারী দল প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করিলে কমিশন উপ-বিধি (২), (৩), ও (৪) এ বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ করিয়া দরখাস্তটি মঞ্জুর বা না-মঞ্জুর করিতে পারিবেন।’ এই উপবিধি ২, ৩ ও ৪ এ বলা হয়েছে নির্বাচন কমিশন উক্ত দল বিষয়ে কারও কোন আপত্তি থাকলে দুইটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি মারফত শুনানির ব্যবস্থা করবেন এবং আপত্তি না পাওয়া গেলে তার আবেদন গ্রহণ করবেন। এখন প্রশ্ন হলো দরখাস্তকারী চাহিদা পূরণ করলে এবং কোন আপত্তি বিষয়ক শুনানি না হলে নির্বাচন কমিশন দরখাস্তকারীর দরখাস্তটি না-
মঞ্জুর করে কিভাবে? এই এখতিয়ার কি তার আছে বা থাকা উচিত? এটা কি গণতান্ত্রিক অধিকার, ন্যায়নীতি ও আইনের লঙ্ঘন এবং স্বেচ্ছাচার নয়?

দলিলপত্রের চাহিদা পূরণের পর কোনো ঘাটতি থাকলে তা মাঠ জরিপের মাধ্যমে উঠে আসার কথা। কিন্তু আমরা দেখতে পেলাম নির্বাচন কমিশন মাঠ জরিপের আগেই ৭৫টি আবেদনকারী দলের ভেতর ৭৩টি শর্ত পূরণ করেনি বলে তাদের আবেদন জরিপের জন্য বিবেচনায় নেয়া হয়নি এমন ঘোষণা দিয়েছে। যা আমাদের জানতে হয়েছে গণমাধ্যম সূত্রে। আবেদনকারী দলসমূহকে এর কোন কারণ ব্যাখ্যা করা হয়নি।

তেমনি ভাবে যে দলগুলোকে তারা জরিপের জন্য বিবেচনা করেছেন তাদের কিসের ভিত্তিতে যোগ্য বিবেচনা করা হয়েছে সেটিও অজানা। এটা একটা অগণতান্ত্রিক, অস্বচ্ছ প্রক্রিয়া। আমরা এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের নানা অগণতান্ত্রিক বিধিমালা ও নতুন দলের প্রতি প্রতি নিয়মকানুন সত্ত্বেও গণসংহতি আন্দোলন বিদ্যমান আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে কমিশনের বিধি মোতাবেকই নিবন্ধনের আবেদন করে। গণসংহতি আন্দোলন একটি সক্রিয় রাজনৈতিক দল এবং মুক্তিযুদ্ধের আকাক্সক্ষায় জনগণের গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় নিয়মিত ও ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় গণসংহতি আন্দোলনের ভূমিকা রাজনৈতিক সচেতন মহলে জ্ঞাত ও পরিচিত। শুধু সক্রিয়তার বিবেচনাতেই নয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কাজের বিস্তারের বিবেচনাতেও আমরা নিবন্ধনের দাবিদার। গণসংহতি আন্দোলন নির্বাচন কমিশনে যে কাগজপত্র দাখিল করে তাতে ১০৯টি অধিক থানায় কার্যালয় ও কমিটি থাকা, ২০০ এর অধিক ভোটার সদস্য থাকা, ২৮টি জেলায় জেলা কমিটি ও কার্যালয় থাকার প্রমাণপত্র দাখিল করা হয়। অর্থাৎ নতুন দল নিবন্ধন বিধি ৬ এর (ঞ) উপবিধির (ই) ধারা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের সকল শর্ত গণসংহতি আন্দোলন যথাযথভাবে পূরণ করেছে।

আমাদের জেলায় গণসংহতি আন্দোলনের ৯ সদস্য বিশিষ্ট জেলা কমিটি, ৩ টি থানা কমিটি, সদর থানায় ২২৩ জন সদস্য, বেড়া থানায় ২০৩ জন সদস্য এবং সাঁথিয়া থানায় ২৩০ জন সদস্যের তালিকা আমরা নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছি। এর বাইরেও অনেকে আমাদের সদস্য আছেন, যারা নির্বাচন কমিশনের উক্ত এলাকার ভোটার সদস্য হবার শর্ত পূরণ করেন না বলে আমরা নির্বাচন কমিশনে জমা দেইনি।

কাজেই সমস্ত বিচারেই আমরা নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের প্রকৃত দাবিদার বলে নিজেদের মনে করি। আমরা আশা করি নির্বাচন কমিশন তার সিদ্ধান্ত পূণঃবিবেচনা করে গণসংহতি আন্দোলনসহ অন্যায্যভাবে বাদ দেয়া সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর আবেদন মাঠ পর্যায়ে জরিপের জন্য প্রেরণ করবে এবং নিবন্ধন বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্তে উপনীত হবে।

কর্মসূচিসমূহ-
১. ২১ জুলাই ২০১৮, শনিবার কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে পাবনা প্রেসক্লাবের সামনে দলের নিবন্ধন পুনঃনিরীক্ষার দাবিতে মানববন্ধন।
২. কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক থানায় থানায় কর্মসূচি গ্রহণ

শুভেচ্ছাসহ
আসলাম উদ্দিন
সদস্য, পাবনা জেলা কমিটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!