সেলিনা জাহান প্রিয়া’র গল্প- জরিনার ফ্রি চানাচুর
জরিনার ফ্রি চানাচুর
———-সেলিনা জাহান প্রিয়া
মুখ থেকে পানের পিক ফেলে জরিনা হাতের আঙুলের চুন মুখে দিয়ে রেল গাড়িতে উঠে বসল। রেলের দরজায় বসা মজনু আড় চোখে জরিনা কে দেখে মাথার চুল গুলোতে হাত বিলায়। জরিনা সবার দিকে দেখে একটু হাসি দেয়। সবাই তার হাসি দেখে খুব মজা পায়। জরিনা সাজ আড় কাপড় পড়া যাত্রার মেয়ে চেয়ে কিছুতেই কম না। রাতের রেল গাড়ি ঢাকা থেকে সিলেট যাবে। মেইল ট্রেন। অল্প সময়ে মধ্যে রেল গাড়িতে সবার সাথে খুব খাতির জমায়। সখ করে রেলের কামরায় জরিনার কাছে সবাই পান চেয়ে নেয়। এক কোনা থেকে মফিজ বলে যে মজার পান খাওলাইন দিলটা শীতল হয়ে গেছে। কমলাপুর থেকে রেল গাড়ি ছারে। টঙ্গি রেল ষ্টেশনে আসা পর্যন্ত জরিনা সবার সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সবার সাথে খুব ভাব জমিয়ে যাচ্ছে। একজন বলল ম্যাডাম শুধুই রসের পান খাওয়ালাইন। জরিনা পান মুখে এক গাল হেসে বলে আমি একজন করে কিছু খাওয়াই না। যদি সবাই খেতে চান তবে খাওয়াব। এই কথা শুনে দু এক জন বলল – আপা আপনি এত মিষ্টি। আপনার কথা এত মিষ্টি। আর এত মিষ্টি করে বললে কি না খেয়ে পাড়ি। জরিনা হেসে বলল সবাই খাবেন আমার জন্য দোয়া করবেন। কিন্তু আপনাদের খাওয়াইতে ভয় লাগে। যদি ফ্রি খেয়ে পেট খারাপ করে তবে সব দোষ হবে আমার। অন্য জন বলল মন পরিষ্কার করে খাওয়াইলে কারো কিছু হবে না।
রেলের কামরায় বসা দু তিন জন বলে মহিলার কিছু টাকা খরচ করাই। বেশি ফর ফর করে। মনে মনে রেল গাড়িতে বসে থাকে বিশ বাইশ জন জরিনা কে বোকা বানিয়ে খাইতে চাচ্ছে। জরিনা সাদা মনে বলল- দেখুন কয় দিন বাঁচব। আমি ঢাকার সিনেমায় কাজ করি। সব সময় নায়িকা দের সাথে থাকি। আর একটু লেখা পড়া থাকলে নায়িকা হইতে পারতাম। রেল গাড়ি ততক্ষণে নরসিংদী চলে এসেছে। সবাই জরিনা সাথে খুব মজা করছে। জরিনা ও বোকার মত তাদের কথার উত্তর দিয়ে যাচ্ছে। দু একজন হালকা পাতলা রঙ তামসা করছে। জরিনা খুব সুন্দর করে পান বানিয়ে মুখে দিচ্ছে আর রঙ ঢং করে কথা বলছে। নরসিংদী থামতেই জরিনা বলল আপনারদের খাওয়াইতে পারলে নিজের কাছে খুব ভাল লাগত। এমন সময় একজন চানাচুর ওলা উঠল। আর বলতে লাগলো। নবাবের চানাচুর। বাদশা খাইলে ফকির হয়। ফকির খাইলে বাদশা হয়। গরম চানাচুর রাতে খাইলে দিনেও মনে থাকবে।
এখন রাত ২ টা আমার চানাচুর খাওয়ার পড়ে মনে হবে দিন ২ টা। সবাই তার কথা শুনে হে হে করে হাসছে। একজন বলল জরিনা আপা চানাচুর খাবেন।
জরিনা বলল সবাই খেলে খাব। একা খাওয়ার মধ্যে কোন মজা নাই।
একজন আমি আপনাকে খাওয়াতে চাই।
জরিনা বলল- না একা আমাকে কেন খাওয়ালে সবারে খাওয়ান। অন্য জন বলল জরিনা আপা আপনি খাওয়ালেই আমরা সবাই খাব। লোকটা অন্য জন কে বলে দাঁড়াও টাকা কিছু খরচ করাই। কারন তারা একসাথে সাত জন উঠেছে।
জরিনা পানি দিয়ে কুলি করে বলল- এই বেটা চানাচুর সবাই কে দে।
চানাচুর ওলা বলল কত করে দিব। একজন বলল আগে দশ টাকার করে দাও। রেলের কামরার সবাই মজা করে চানাচুর খাচ্ছে। একজন খাবে না। সবার কথায় সে চানাচুর খেল। জরিনা দুবার খেল। রেল গাড়ি যাচ্ছে। সবাই তাদের মধ্যে কথা শেষ করে ঘুমেয়ে পড়লো। রেল গাড়ি আখাউরা এলো। সবাই গভির ঘুমে। ভোর ৫ টায় একজন একজন করে ঘুম ভাঙল। সবাই চেয়ে দেখে তাদের পড়নে জামা নাই। পায়ের জুতা নাই। সবার কাপড়ের ব্যাগ নাই। কামরার সকল লোকের একেই অবস্তা কিন্তু জরিনা নাই। সবাই বুঝতে পারলো চানাচুরে কিছু ছিল। সবাই একজন আর একজন কে দোষ দিচ্ছে। কারো কাছে কোন টাকা নাই। মানি ব্যাগ। হাতের ঘড়ি এমন কি একজনের হাতের সোনার আংটি পর্যন্ত নাই।
জরিনা আখাউরা রেলস্টেশন থেকে সবার সব কিছু বস্তায় ভরে। পড়নের কাপড় টা বদলায়ে মাথার চুল গুলো ছেড়ে দিতে নাকে নথ পড়ে পায়ে স্যান্ডেল পড়ে একদম কাজের মেয়ে মত হয়ে গেল। এই জরিনা কে আর কেউ চিনবে না। চানাচুর ওয়ালা কে নিয়ে ঢাকার ফিরতি গাড়িতে উঠল। চানাচুর ওলা বলে আজ তো বাম্পার ডাকাতি করলা। এত মানুষ কি ভাবে বোকামি করে জরিনা আপু। জরিনা একটা ধমক দিয়ে বলল আমার নাম জরিনা না। সখিনা বানু। আর শুন সব পুরুষ মানুষ সুন্দরী মেয়ে দেখলে তাদের ভবিষ্যৎ ভুলে যায়। পুরুষের এই জ্ঞান থাকলে কি পাবনা পাগল থাকত।।