ডিমলায় বানর যখন ডাক্তার!
সনৎ কুমার রায়, নীলফামারী প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
অবুঝ পশু বানর যখন ডাক্তার; তখন রোগ নির্ণয় কতটুকু সঠিক ? তা আর কেউ না জানলেও জানে ডাক্তার বানরের মালিক নিজেই। সুযোগ বুঝে ডাক্তার বানরের মালিক সরল মহিলা ও শিশুদের নিকট থেকে ব্যবস্থাপত্র দেয়াসহ তাবিজ-কবজ দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয় বিজ্ঞানের যুগে এখনও মানুষকে কিভাবে ঠকাবে প্রতারক চক্র তা বুঝে উঠা দায়।
বানরের মালিককে প্রশ্ন করে জানা যায়- তোমার বানর খেলা দেখাবে বুঝি ? না স্যার। সে রোগ নির্ণয় করে। বিনিময়ে ১০ টাকা করে নেয়। যদি সে রোগ নির্ণয় করতে রাজি থাকে তবেই টাকা ধরে; অন্যথায় ধরে না। আচ্ছা!
তোমার বানর কোন মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করেছে? তা ডাক্তারি যখন পাশ করেছে তখন রাস্তায় কেন ? সরকারি চাকরি কিংবা ক্লিনিক খুলে বসে থাকলে তো বহু টাকা রোজগার হত? স্যার লজ্জা দেবেন না।
বানর পশু হলেও সে সব কিছু বোঝে। আসুন স্যার দেখুন! সে যার চিকিৎসা করে টাকা নিতে চাইবে; আমি কেবল তারই টাকা ধরি। অন্যথায় টাকা ধরিনা। আর তার (বানরের) ইচ্ছার বিরুদ্ধে টাকা ধরলে বানর আমাকে কামড়ে দেবে। আমার জামা কাপড় ছিড়ে দেবে।
শহরের ইউনিয়নের পচারহাট গ্রামে ডাক্তার বানর ও তার মালিক প্রশান্ত নামের একজন১০ টাকা নিয়ে বানরের সামনে ধরল। বানর টাকা নেবেনা বলে জানালো। বানরের মালিক বলে উঠল দেখুন স্যার, আমার বানর টাকা নেবে না। তবে তার রোগ বলে দেবে। শুরু হলো বানরের রোগ নির্ণয় ও পরামর্শ দেয়া। মালিক বানরকে বলল- এর চিকিৎসা করবে ? বানর হাত উঁচালো। হ্যাঁ! বানর তোমার চিকিৎসা করবে। বাবা তোমার হাত মাটিতে রাখ। বানরকে উদ্দেশ্য করে মালিক বলল- হাত দেখ। বল এর কি রোগ আছে? বানর দেখালো মাথায়। বানর মালিক বলল- তোমার মাথা ঘোরে? প্রশান্ত বলল হ্যাঁ। এর চিকিৎসা দিতে পারবে? বানরের ইশারা- না। কি করতে হবে? বড় ডাক্তার দেখাতে হবে। হ্যাঁ স্যার বড় ডাক্তার দেখাতে হবে।
এরপর এক নারী বানরের সামনে ১০ টাকা ধরল। এবারও বানর টাকা নিল না। আবারো বলে উঠল- না স্যার আমার বানর সবার কাছ থেকে টাকা নেয় না। সে ধনীদের নিকট থেকে টাকা নেয়। গরীবদের নিকট থেকে টাকা নেয় না। তাদের দোয়া আমার বানরের জন্য যথেষ্ট। বানর মালিক তার অভিভাবকদের ডাকতে বলল। নারীর শ্বশরী আসলে বাননের মালিক তার চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে নিল। আবার বানর রোগ নির্ণয় শুরু করল। বানরের ইশারায় পাতলা ছিপছিপে নারীকে বড় ডাক্তারের কাছে নিতে হবে, বানর আরও জানালো তার মা-বাবাকে মেয়ের জন্য দোয়া করতে হবে।
পরে স্থানীয় বউ- জানালেন, আগের দিন রোগ দেখার নামে ১০ টাকা করে ফিস নেয়াসহ কি কি রোগ হয়েছে আর তা সারাতে বানরের মালিক বউ-ঝিদের নিকট থেকে এক’শ থেকে পাঁচ’শ টাকা পর্যন্ত নিয়েছে। বউ-ঝিদের দিয়ে গেছে কিছু তাবিজ-কবজ। বিশ্বাস করে ওই তাবিজ-কবজ কেউ হাতে, কেউ গলায় আর কেউ কোমরে ঝুলিয়েছেন।
বানরের মালিক জানালো প্রাইমারীর গন্ডি পেরোবার পর আর লেখাপড়া করা সম্ভব হয়নি। বাপ-দাদারা এ পেশায় নিয়োজিত ছিল। সে নিজেও ১৭/১৮ বছর ধরে এই বানর নিয়ে মানুষের রোগ নির্ণয় ও রোগ সারাতে তাবিজ-কবজ দিয়ে রোজগার করে। তার বানরের বয়স কত জিজ্ঞাসা করলে সে জানায়- বাবার আমলের বানর। তাই তার অভিজ্ঞতা অনেক।
- কাগজ টুয়েন্টিফোর বিডি ডটকম এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।