তারুণ্যের প্রাধান্য বিএনপি’তে

বিশেষ প্রতিবেদন  কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

 

ষষ্ঠ কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে গঠিত বিএনপির নির্বাহী কমিটিতে তারুণ্যের প্রাধান্য থাকায় আগামী নির্বাচন নিয়েও তরুণ, নতুন ও ক্লিন ইমেজের প্রার্থীরা আশায় বুক বেঁধেছেন। বিএনপির হাইকমান্ডও প্রবীন নেতৃত্বের পাশাপাশি তরুণদের ওপর অনেকটাই আস্থাশীল বলে জানা গেছে।

ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক ও বর্তমান নেতাদের পাশাপাশি বিএনপির কেন্দ্র, জেলা ও মহানগরে পদধারী শতাধিক তরুণ ও নতুন মুখ মনোনয়নের প্রত্যাশায় মাঠে রয়েছেন। মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রে দলের প্রভাবশালী নেতাদের সাথে যেমন তারা সম্পর্ক বাড়িয়েছেন, তেমনি নিজ নিজ এলাকায় দলীয় কর্মসূচির মধ্য দিয়ে চালাচ্ছেন গণসংযোগ। বর্তমানে দলের সদস্য সংগ্রহ অভিযান চলমান থাকায় মনোনয়নপ্রত্যাশারী এ কর্মসূচি লুফে নিয়েছেন। ইতোমধ্যে ৫০ লাখেরও বেশি সদস্য ফরম বিক্রি করেছে বিএনপি।

বিএনপি নেতারা বলছেন, মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে মেধাবী ও উদ্যমী তরুণরা এগিয়ে থাকবেন। কারণ বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে এরাই ছিলেন সক্রিয়। ক্ষমতায় থাকাকালে অনেকে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করলেও দুর্দিনে তারা কেটে পড়েছেন। সম্পদ ও পরিবার রক্ষায় ছিলেন ব্যস্ত। এসব সুবিধাবাদী সাবেক এমপি-মন্ত্রীদের এবার দল নেতিবাচক চোখেই দেখছে।

তরুণ প্রার্থীদের মধ্যে খুলনা বিভাগে বিএনপির তথ্য সম্পাদক ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলাল খুলনা-৪ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমাকে খুলনার পরিবর্তে ঢাকা-১৮ তে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। এবার তাকে কেন্দ্র থেকে খুলনা-৪ আসনে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।

ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি রকিবুল ইসলাম বকুল খুলনা-৩, ঝিনাইদহ-১ আসনে জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, বিএনপির সহ তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা আমীরুজ্জামান খান শিমুল এবং বিএনপি নেতা ও জাসাসের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনির খান ঝিনাইদহ-৩, স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা সাইফুল ইসলাম ফিরোজ ঝিনাইদহ-৪ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ফিরোজ বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছি। দল যদি আমাকে যোগ্য মনে করে তাহলে অবশ্যই আমি এ আসনে নির্বাচন করব।

চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় উপ-কোষাধ্যক্ষ মাহমুদ হাসান বাবু এবং কুষ্টিয়া-৪ আসনে কুমারখালী থানা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি নূরুল ইসলাম আনসার নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন।

বরিশাল বিভাগে পটুয়াখালী-৩ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক ছাত্রনেতা হাসান মামুন। তিনি বলেন, এলাকার মানুষের পাশে সবসময় আছি। মনোনয়ন পেলে এলাকার উন্নয়নে কাজ করতে চাই।

ঝালকাঠি-২ আসনে বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নু, নির্বাহী কমিটির সদস্য হায়দার আলী লেনিন ভোলা-১, ছাত্রদলের বর্তমান সভাপতি রাজিব আহসান বরিশাল-৪, মেজর (অব:) ব্যারিস্টার এম সরোয়ার হোসেন পিরোজপুর-১ আসনে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা নুরুল ইসলাম নয়ন ভোলা-৪ (চরফ্যাশন-মনপুরা) আসনে নির্বাচন করতে চান। তিনি বলেন, এ অঞ্চলের মানুষের সাথে আমার রয়েছে নাড়ির সম্পর্ক। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে আমি সেটিকে এলাকার সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর একটি বড় সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে চাই। ইতোমধ্যে আমি নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছি। বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক ছাত্রনেতা দুলাল হোসেন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি করার সময় থেকেই এলাকার মানুষের সাথে সংযোগ অব্যাহত রয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন পর্যায়ে গণসংযোগ শুরু করেছি।

ফরিদপুর বিভাগে বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম গোপালগঞ্জ-১, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী গোপালগঞ্জ-৩, মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক হেলেন জেরিন খান মাদারীপুর সদরে, ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন মাদারীপুর-৩, সাবেক ছাত্রনেতা মিয়া নুরুদ্দিন অপু শরীয়তপুর-৩ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ফরিদপুর-২ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। একই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা শহীদুল ইসলাম বাবুল।

ফরিদপুর সদর আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন যুবদল নেতা মাহববুল হাসান পিঙ্কু। তিনি বলেন, বিগত ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এলাকার মানুষের সুখ-দুঃখের সাথে আছি। আগামীতেও থাকব। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে আমি আমার যোগ্যতার পরিচয় দিতে সক্ষম হব। রাজবাড়ী সদর আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আসলাম মিয়া।

ঢাকা বিভাগে মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা কামরুজ্জামান রতন মুন্সীগঞ্জ-৩, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা সুলতান সালাউদ্দিন টুকু টাঙ্গাইল-২, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল নরসিংদী-৪, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা আলী রেজাউর রহমান রিপন নরসিংদী-৫, ছাত্রদলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান নরসিংদী-৩, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক ছাত্রনেতা ওমর ফারুক সাফিন গাজীপুর-৫ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

ময়মনসিংহ বিভাগে বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল নেত্রকোনা-১ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও মহিলা দল নেত্রী ড. আরিফা জেসমিন নাহিন ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ডা: দেলোয়ার হোসেন টিটু নেত্রকোনা-২ আসনে নির্বাচন করতে চান।

ড. আরিফা জেসমিন নাহিন বলেন, পাঁচবার জেল খেটেছি। রাজপথের আন্দোলনে সবসময়ই ছিলাম। আশা করছি দল আমার অবদান মূল্যায়ন করবে।

বিএনপির সহকৃষি সম্পাদক চৌধুরী আব্দুল্লাহ ফারুক নেত্রকোনা-৪, সাবেক ছাত্রনেতা শহিদুল্লাহ ইমরান নেত্রকোনা-৫, তরুণ ব্যবসায়ী শফিকুল আলম রাজন কিশোরগঞ্জ-৫ এবং ময়মনসিংহ-১০ আসনে আক্তারুজ্জামান বাচ্চু নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

কুমিল্লা বিভাগে তরুণ প্রার্থীদের মধ্যে বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আ: আউয়াল খান কুমিল্লা-৪, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিক শিকদার ও বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবী মো: জিয়াউদ্দিন জিয়া ব্রাহ্মণবাড়ীয়া-৬, নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন ভূঁইয়া শিশির ব্রাহ্মণবাড়ীয়া-৫, যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোরতাজুল করিম বাদরু কুমিল্লা-৮, ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মোস্তফা খান সফরী চাঁদপুর-৩, সাবেক ছাত্রনেতা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু চাঁদপুর-৫ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

রাজশাহী বিভাগে সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক আমীরুল ইসলাম খান আলীম নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। একই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি রাকিবুল করিম খাঁন পাপ্পু। স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি গোলাম সরোয়ার সিরাজগঞ্জ-৬, বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু নাটোর-১, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল মতিন নওগাঁ-৪ এবং নওগাঁ-৬ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন সাবেক এমপি মোতাহার হোসেন চৌধুরীর ছেলে সাবেক ছাত্রনেতা সাংবাদিক মামুন চৌধুরী (স্টালিন)। মামুন চৌধুরী বলেন, বাবার হাত ধরে জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে এসেছি। এলাকার মানুষের জন্য কিছু করার মানসিকতা নিয়েই নির্বাচনের মাঠে নেমেছি।

রংপুর বিভাগে পঞ্চগড়-২ আসনে মনোনয়নের প্রত্যাশায় গণসংযোগ করছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরহাদ হোসেন আজাদ।

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুল লতিফ জনি ফেনী-৩ এবং চট্টগ্রাম-২ আসনে সাংবাদিক নেতা বিএনপির সহ তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করছেন। এলাকায় নিয়মিতই গণসংযোগ করছেন তারা। লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি বলেন, দীর্ঘ দিন ধরেই এলাকার নেতাকর্মীদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। তৃণমূল নেতাকর্মীরা আগামী নির্বাচনে আমাকে প্রার্থী হিসেবে চাচ্ছে।

ঢাকা মহানগরেও তরুণ ও নতুন মুখের ছড়াছড়ি। যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরব ঢাকা-১২, যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান ঢাকা-১৪,তরুণ ব্যবসায়ী নেতা মো: বাহাউদ্দিন সাদী ঢাকা-১৮, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর আহমেদ রবিন ঢাকা-৪, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক শেখ রবিউল আলম রবি ঢাকা- ১০ এবং ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সভাপতি এম এ কাইয়ুমের পাশাপাশি মহানগর উত্তরের কোষাধ্যক্ষ মো: আতাউর রহমান চেয়ারম্যান ঢাকা- ১১ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। ঢাকা-১৬ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী উত্তর বিএনপির সহ-সভাপতি এ কে এম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এলাকার বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত আছি। দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রয়েছে। দল আমাকে মনোয়ন দিলে পল্লবীর এ আসনটি আমি উপহার দিতে পারব।

ঢাকা-১৩ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী বিশিষ্ট আইনজীবী সাবেক ছাত্রনেতা অ্যাডভোকেট খন্দকার জিল্লুর রহমান বলেন, দল আমাকে সুযোগ দিলে আমি দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে বেগম খালেদা জিয়া ঘোষিত ভিশন-২০৩০ বাস্তবায়নে কাজ করব।

তরুণ নেতাদের মধ্যে বিএনপির সহ-যুব সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ ঢাকা-৭, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম-সম্পাদক আ ন ম সাইফুল ইসলাম ঢাকা-৪, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহ-সাধারণ সম্পাদক হাজী মো: লিটন ঢাকা-৬ ও ছাত্রদল নেতা আহমেদ সাইমুম গাজীপুর-৫ আসনে আলোচনায় রয়েছেন।

বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিএনপি দলের পাশাপাশি মনোনয়নের ক্ষেত্রেও অতীতে তরুণদের স্থান দিয়েছে। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকেই তরুণদের প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৫ জনের মতো তরুণ নেতাকে মনোনয়ন দেয়া হয়। এর মধ্যে ১৭ জন এমপির পাশাপাশি কয়েকজন মন্ত্রীও হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনেও এ ধারা অব্যাহত ছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!