প্রিয় গ্রাম ভূলবাড়িয়া
প্রিয় গ্রাম ভূলবাড়িয়া
রণেশ মৈত্র (সাংবাদিকতায় একুশে পদকপ্রাপ্ত)
সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ
কী করে ভূলবাড়ীয়া আমার পৈতৃক গ্রমা। অষ্ট্রেলিয়া থেকে ফিরেছি ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সহধর্মিনী পূরবী মৈত্র সহ। ফিরে আসার কথা ছিল ২০১৯ জানুয়ারীতে কিন্তু মেয়ে মালবিকা কুমকুমের গুরুতর অসুস্থতার কারণে উদ্বিগ্ন চিত্তে আগেই ফিরে আসতে হলো। মেয়েটি এখনও ২৪ ঘন্টা শয্যাশায়ী তবে বাসায়। মাস তিনেক হলো বাসায় আনা হয়েছে। কিন্তু তার সংসারে আমাদের জমাতা গৌতম আর ১০/১২ বছরের শিশু কন্যা জয়িতা। আমার স্ত্রীকেই সংসারের সব দেখশুনা করতে হচ্ছিল।
এর মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়লাম আমি। হার্টের। তৎক্ষণাতৎ ভর্তি করা হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে। চিকিৎসাধীন থাকলাম প্রফেসর ড. সজল ব্যানার্জি ও তাঁর সহকারী সহযোগি অধ্যাপক ড. দীপক কৃষ্ণ অধিকারী। থাকেত হলো সি.সি.ইউ.তে (কার্ডিয়াক কেয়ার ইউনিটে) প্রায় দু’সাপ্তাহ। দিবারাত্র মনিটরিং, ওষুধপত্র সেবা শশ্রুষা চললো আন্তরিকতার সাথে কি ডাক্তারদের কি নার্সদের। অত:পর ছাড়া পেয়ে বাসায় আসলাম। এখন পূরবীকে একজনের বদলে মেয়ে ও আমার সেবা শশ্রুষা করতে হচ্ছে সংসারের যাবতীয় কাজ তাঁকেই করতে হচ্ছে।
একজন সার্বক্ষণিক এবং সাংসারিক সকল কাজে পারদর্শী, সৎ ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন মহিলা প্রয়োজন। উপযুক্ত বেতনের গ্যারান্টি দিয়ে নানা অঞ্চলে পরিচিতদেরকে খবর পাঠাচ্ছি অনুরোধ জানাচ্ছি। কিন্তু কেউ পারছেন না সংগ্রহ করে দিতে।
এতক্ষণ গেল নিতান্তই ব্যক্তিগত বা সাংসারিক প্যাচাল। তবে এর সাথে শিরোনামটি অপ্রাসঙ্গিক কিছু নয় বরং খুবই প্রাসঙ্গিক কারণ এই সমস্যাগুলির জণ্যেই বিলম্ব ঘটে যাচ্ছে গ্রামে ফিরতে। লেখালেখি যা করছি তাও ঢাকায় মেয়ের বাসায় বসে। শুরু করি নানা প্রতিকূলতার মধ্যে হাসপাতাল থেকেই।
সেই ১৯৪৭ সাল থেকে মা-ভাইদের নিয়ে বাস করেছি পাবনা শহরে। তখন আমি হাই স্কুলের ছাত্র পাবনায় প্রখ্যাত গোপাল চন্দ্র ইনস্টিটিশনের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। কিন্তু বছরের শুরুতে ভর্তি হতে পারি নি হয়েছি ফেব্রুয়ারী (আজকের এস.এস.সি.) পাশ করে সংসারিক কারণে একটু বেসরকারি ওষুদ কারখানায় চাকুরী নিতে হয় ১৯৫০ সালেই।
কিন্তু তখন তো পাবনা শহরে এসে গেছি সবাই মিলে। তার আগ পর্যন্ত ছিলাম তৎকালীন বর্ধিষ্ণু গ্রাম ভূলবাড়িয়াতে। গ্রামটির উত্তর দক্ষিণ দিক পূর্ব দিকে দিয়ে ইছামতি নদী প্রবাহিত ছিল। এমন স্তিমিত। নদীর পশ্চিম পাড়ের গ্রামটিই হলো ভূলবাড়িয়া। সাঁথিয়া থানার ভূলবাড়িয়ার ইউনিয়নের অন্তর্গত এই গ্রামটি নদী পারাপারের জন্য গ্রীষ্মকালে বাঁশের অস্থায়ী সাঁকো তৈরী করা হতো। ওপারে হাটবাড়ীয়া নামক গ্রাম। পাশেই ছিল ভিন্ন গ্রাম। ঐ গ্রামের ঘোষদের বাড়ীর একটি ছেলে ছিল আমর সহপাঠি। সহপাঠি বন্ধুর অনুরোধে অনেকদিন থেকেই তাদের বাড়ীতে।
ভুলবাড়ীয়া একটি গ্রাম নয় শুধু ইউনিয়নও কিন্তু তখন ইউনিয়ন হেডকোয়ার্টার ভুলবাড়িয়ার চেয়াম্যান আবদুর রহমান মল্লিকের বাড়ীতে। তেবাড়িয়া গ্রামে। ওনার বাড়ি ছিল তেবাড়িয়া গ্রামেই। গ্রামের বাড়ীতেই ছিল দুটি অফিস সম্ভবত: একই ঘরে। একটি হলো ইউনিয়ন পরিষদ অফিস অপরটি হলো পোষ্ট অফিস। তখন এই দুটি অফিসই ছিল মানুষের দৈনন্দিন জীবন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইউনিয়ন পরিষদ এখনও গুরুত্বপূর্ণ তবে অনেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বারদের বিরুদ্ধেই দুনীতির অভিযোগ পাওয়া যায়। অথচ ভোট তো তাঁরা পান ভাল এবং সৎ মানুষ হিসেবেই। তবে চেয়ারম্যান আবদুর রহমান মল্লিককে একজন শতভাগ সৎ এবং অত্যন্ত ভদ্র মানুষ হিসেবে দেখেছি।
ইউনিয়ন পরিষদের হেড কোয়ার্টার অর্থাৎ ইউনিয়ন হেড কোয়ার্টারেই থাকা উচিত এমন মত অনেকেরই ছিল। কিন্তু তখন সরকার সম্ভত অফিস বাবদ টাকা পয়সা না দেওয়াতে অনেক ক্ষেত্রেই ব্যবস্থাটি এমনই ছিল। আবদুর রহমান মল্লিকের মৃত্যুর পর কে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন তা কিছুতেই স্মরণে আনতে পারলাম না। তেমনি পোষ্ট অফিসটি তেবাড়িয়া থেকে অন্য কারও বাড়ীতে স্থানান্তর হয়েছে বেশ অনেক দিন হলো কিন্তু তাঁর নামটি বা গ্রামটির কথাও মনে পড়ছে না। বস্তুত: তখন পোষ্ট মাষ্টারদের নাকি কোন বেতন ছিল না তবে আয়ের কিছু পেতেন। অর্থাৎ আয়ের ভিত্তিতে পোষ্ট অফিসের স্তর নির্ধারিত হতো। এভাবে তিন ধরণের পোষ্ট অফিস ছিল যার সর্বনিম্ন ছিল আমি যেটার কথা উল্লেখ করলাম সেইটি।
কিন্তু ভুলবাড়িয়াতে তখন ছিল মস্ত বড় একটা বাজার ইছামতি নদীর কুলঘেঁষা। নদীটি বছরে ৭/৮ মাস প্রবহমান থাকতো। ছোট একটা লঞ্চ চলতো বেড়া থেকে পাবনা পর্য্যন্ত থামতো প্যাসেঞ্জার উঠানো নামানোর জন্য। ভুলবাড়িয়া ঘাটেও এমন একটা ষ্টপেজ ছিল যেখান থেকে বছরে অন্তত: ২/১ বার পাবনা শহরে যেতাম। সে শহরও আজকের চাইতে বহুলাংশে ভিন্ন। আজকের মত তখন এত দালানকোঠা ছিল না বহুতল বিশিষ্ট দালানের তো প্রশ্নই ওঠে না। মূল যানবাহন ছিল টমটম। রিকসার প্রচলন তখনও শুরু হয় নি। তবে বাইসাইকেলের প্রচলন ছিল ব্যাপক তা থেকেই ধীরে ধীরে রিকসার প্রচলন হতে শুরু করে।
ইছামতি নদী দিয়ে শুধুমাত্র ছোট ছোট লঞ্চ বা ষ্টীমার চলতো তাই না। গহনার নৌকাও একটি বা দু’টি করে দৈনিক বেড়া থেকে পাবনা অবধি চলাচল করতো। ৪/৫ মাস যখন নদীর জল শুকিয়ে যেত তখন জাল দিয়ে নদী ঘিরে ‘কাঠা’ বসানো হতো অনেকগুলি। জেলেরা এই কাঠা বসাতেন চৈত্র বা বৈশাখ মাসে যখন নদী প্রায় শুকিয়ে আসতো তখন ঐ কাঠা সংকুচিত করে এনে মাছ ধরা হতো। বিশাল বিশাল নানা জাতীয় তরতাজা মাছ। রুই, কাতলা, বোয়াল, চিতল, সরপুটি, ভ্যাদা (নয়না), রায়েক প্রভৃতি। ওখান থেকেই বেপারীরা নগদ দামে মাছ কিনে নিয়ে পাবনার আড়দদারদের কাছে বিক্রী করতো।
অপূর্ব সুস্বাদু ছিল সেই মাছগুলি। কিন্তু মাছের সেই স্বাদ কোথায় যে হারিয়ে গেল তা ভাবতে অবাক লাগে। বিদেশী মাছ চাষ করাতে এমনটি ঘটে এ কথা অনেকেই বলেন। সেটি একটি কারণ হলেও একমাত্র কারণ বলে মনে হয় না। মাটিতে ছেটানো কেমিক্যাল সার নদীর জল শুকিয়ে, মাছকে মোটাতাজা করার কৃত্রিম চেষ্টা মাছকে বড় হতে না দিয়ে অত্যন্ত ছোট থাকতেই সেগুলি ধরে বাজারস্থ করা, ফরমালিন প্রয়োগ প্রভৃতি মিলেই সম্ভবত: এমটি হয়েছে। একমাত্র নদ-নদী-খাল জলাশয়গুলো অতীতের মত চওড়া এবং বাড়ীর করা এবং বড় নদীগুলির সাথে ছোটগুলির উপযুক্ত সংযোগ ঘটাতে পারলে সম্ভবত: আমরা সেই স্বাদ আবার অনেকটা ফিরে পাব। সাথে কেমিক্যাল জমিতে দেওয়া বন্ধ করা, মাছের ভাল খাদ্যও ব্যবস্থা করা এবং ছোট অবস্থায় মাছ আদৌ না ধরা-এগুলিও করতে হবে।
ভুলবাড়িয়াতে বাজার বসতো রোজ বিকেলে শেষ হতো সন্ধ্যার অনেক পরে। মাছ, দুধ, মিষ্টান্ন ছাড়াও সকল ধরণের টাটকা তরী-তরকারী স্থায়ী কাপড়ের দোকান ও মুদিখানা দোকন প্রভৃতি ছিল যথেষ্ট। ঐ বাজার তার বিশালত্ব নিয়ে আজ আর বেঁচে নেই যদিও বাজারটি ক্ষুদ্রাকার রোজই বসে। বাজারের বিশাল এলাকা এখন বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হয়।
ভুলবাড়িয়াতে একটি সরকারী ফ্রি প্রাইমারী স্কুল ছিল। দোচালা টিনের ছাদের বিশাল লম্বা একটি কাঁচা ঘর। মেঝে মাটির। ঐ বড় একটি রুমেই নানা স্থানে নানা ক্লাসের ছেলেমেয়েদের বইপত্র পাশে রেখে বেঞ্চে রেখে বসতে হতো। স্কুলটির প্রতিষ্ঠার সাল এই মুহুর্তে মনে করতে পারছি না। তাবে এটিই ছিল বৃটিশ সরকারের প্রথম প্রাইমারী স্কুল অভিভক্ত বাংলায়। আমার বাবা প্রয়াত রমেশ চন্দ্র মৈত্র আজীবন ঐ স্কুলে সহকারী শিক্ষক পদে শিক্ষকতা করেছেন। আমিও চতুর্থ শ্রেণী পর্য্যন্ত ওখানেই পড়ি। তখন প্রাইমারী ছিল চতুর্থ শ্রেণী পর্য্যন্তই। অনেক পরে পঞ্চম শ্রেণী পর্য্যন্ত ইদানীং চেষ্টা চলছে অষ্টম শ্রেণী পর্য্যন্ত পড়ছেন প্রাইমারী পরীক্ষা ( জে.এস.সি) পাশ করলে প্রাইমারী পাশ ধরা হবে। স্কুলটির তদানীন্তন প্রদান শিক্ষক ছিলেন নায়েব আলী মন্ডল। আমি ছিলাম তাঁর অন্যতম প্রিয় ছাত্র।
স্কুলটি এখন আর দোচালা টিনের ঘরে নেই। সরে এসেছে পূবে। উত্তর দুয়ারী দোতালা দালানে। সরকারীভাবে নির্মিত। কিন্তু আরও রুমের দরকার।
পাশেই একটি হাই স্কুল। মুক্তিযুদ্ধের প্রয়াত আবদুল হালি (তদানীন্তন সাঁথিয়া থানা ন্যাপ সম্পাদক) আবদুল বাসেত, সদর আলীর সাথে আমি যুক্ত হয়ে ভুলবাড়িয়া হাইস্কুলটি প্রতিষ্ঠা করি। ইতিহাসটি হারিয়ে যাওয়ার পথে। ম্যানেজিং কমিটি ভাল করবেন যদি প্রতিষ্ঠাতাদের স্মরণে স্কুল ও তার হল ও লাইব্রেরীর নামকরণ করেন। স্কুলটি এখন বেসরকারী। তাই এ কাজ করতে চাইলে করা সহজেই সম্ভব। হালিম ব্যতীত বাকী তিন জন আজও জীবিত। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পরে জেলা প্রশাসক এ ব্যাপারে ম্যানেজিং কমিটির সাথে সহযোগিতা করে কাজটি সম্ভব করে তুলতে পারেন। তবে ম্যানেজিং কমিটিকে দলীয় রাজনৈতিক চিন্তার ঊর্ধে উঠে আন্তরিকতা নিয়ে এগুতে হবে। মনে রাখতে হবে ইতিহাস ইতিহাসই।
ভুলবাড়িয়া হাইস্কুলের উত্তরে নির্মিত হয়েছে দ্বিতল বিশিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ কার্য্যালয়। চেয়ারম্যান ও সদস্যরা সেখানে সভা-সমিতি ও দাফতরিক কাজকর্ম পরিচালনা করে থাকেন। তবে তাঁদেরকে যেমন গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তেমনভাবে সেই দায়িত্ব পালনর ব্যাপারে কোন কার্য্যকর জবাবদিহিতা নেই-নেই উপযুক্ত পরিমাণ ভাতাও। কিন্তু তারই ফলে ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে যতই দালান কোঠা বা আসবাবপত্র নির্মাণ করা হোক উপযুক্ত সেবা জনগণ ঠিকমত কদাপি পাবে না। কম্পিটউটার দেওয়া হলেও কম্পিউটার পরিচালনায় প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত লোক না দেওয়ায় সেগুলি বহু ইউনিয়ন পরিষদে মরিচা পড়ে নষ্ট হচ্ছে তেমনি হাই স্কুলগুলোতেও কম্পিউটার দেওয়া হলেও তাতে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষক বা কর্মচারী না দেওয়ায় সেগুলিতেও প্রায় একই অবস্থা। দিনমান অব্যাহতাভাবে বিদ্যুত সরবরাহের অভাবের কথা নাই বা তুললাম। অবশ্য তার তুলনামূলক উন্নতি যথেষ্ট ঘটেছে।
প্রাইমারী স্কুল, হাইস্কুল, ইউপি অফিস ছাড়া বাদ বাকী সবটাই বাজার। বিকেলে রোজ বসে বাজারটা মাছের আমদানী কমেছে মারাত্মকভাবে। স্থায়ী কাপড় চোপড়ের দোকানও নেই স্থায়ী মুদীখানা দোকানও। বাজারটা বড় করার উদ্যোগও কম।
ইছামতী নদীর তীরেই বাজার, প্রাইমারী ও হাইস্কুল এবং ইউপি অফিস। নদীতীরে ছিল একটি কালী মন্দির। তার চিহ্ন মাত্র নেই। বর্তমান প্রজন্ম জানেও না ও কালী মন্দিরের কথা। মন্দিরটা থাকলেই বা কি হতো? পূজোর আয়োজন করার মত ধনী হিন্দু একঘরও নেই। যে কয়টি গরীব হিন্দু পরিবার আছে কোনক্রমে তারা বছরে দুটি অস্থায়ী মন্দিরে দুর্গোৎসবের আয়োজন করে থাকে। অর্থাৎ দেশত্যাগ করতে করতে হিন্দুদের সংখ্যা যেমন ভয়াবহভাবে কমেছে তেমনই তাদের ধর্মীয় উৎসব ও তেমন আর নেই।
বরাবরই ভুলবাড়ীয়া মুসলিম প্রধান গ্রাম। ২০% এর কম ছিল হিন্দু জনসংখ্যা। কিন্তু শিক্ষা দীক্ষায়, পোষাকে-আশাকে, সামাজিক মর্য্যাদা এবং সামাজিক নেতৃত্বও ছিল হিন্দুদের হাতে।
অপর পক্ষে হিন্দুদের ব্যাপক দেশত্যাগের ফলে সৃষ্ট শূন্যতা আজও পূরণ হতে না দেখে বিস্মিত হই। তখন হাইস্কুল ছিল না তিন মাইলজুরে আতাইকুলা গিয়ে আমাদের হাইস্কুলে পড়তে হতো। এখন আতাইকুলাতে ডিগ্রী কলেজও হয়েছে। সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষা-শিক্ষিকার সংখ্যাও বেড়েছে বহুগুন। কিন্তু সম্ভবত: শিক্ষার গুনগত উন্নয়ন না হওয়াতে এলাকাজুড়ে ডাক্তার, ভাল শিক্ষক, খুবভাল রেজাল্ট করা ছাত্র-ছাত্রী, ইঞ্জিনিয়ার প্রবৃতি ঐ এলাকা থেকে বের হচ্ছে না। সমাজেও সমাজকল্যাণকামী সক্রিয়া নেতা কর্মীরও সৃষ্টি হচ্ছে না। শূণ্যতা যেন বেড়েই চলেছে যুগের বিবেচনায়।
আমাদের বাড়ীটি ছিল বাজার থেকে উত্তর দিকে পাঁচ মিনিটের হাঁটা পথ। ছোটবেলায় দেখেছি দুই একর জমির উপর আমাদের বাড়ী তার পূর্বে সবজীর বাগান তার দক্ষিণ পাশে বিশাল দালান (তেতলা) যার দুই পাশে দুটি বিশাল বটগাছ ও কদমফুলের গাছ। ওখানে বাৎসরিক রাসযাত্রা হতো। উত্তরে ছিল নানা জাতের সুস্বাদু ফলের বাগান।
বাবার সুসজ্জিত বৈঠকখানা ঘরে ছিল চেয়ার টেবিল, আলমারী টানা পাখা ইত্যাদি। ফাঁকা পেলে ঐ ঘরে বসেই পড়াশুনা করতাম। বৈঠকখানার সামনে ছিল বিশাল মাঠ। সেখানে কীর্তন, কবিগানের আসর এবং নানা উৎসবের নানা আয়োজন ঘটতো।
১৯৪৭ এ বাবার সাথে সপরিবারে পাবনা শহরে এসে বসবাস শুরু ভাড়া বাড়ীতে। ১৯৫৪ সালের ৪ ফ্রেব্রুয়ারী বাবা মারা গেলেন। পাবনা জেলা ছাত্র ইউনিয়নের তখন আমি সভাপতি যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে ছাত্রকর্মী শিবিরের একটি নাম নিয়ে আমি সুজানগর থাকায় সাথে সাথে খবরও পাই নি বহুপরে একটি চিঠি পেলাম “জরুরী ভিত্তি আপনাকে পাবনাতে দরকার”। দ্রুততার সাথে ফিরে এসে জানলাম, বাবা নেই, দাহও শেষ। দায়িত্ব পড়লো সংসারের জ্যেষ্ঠতম সন্তান হিসেবে। রাজনীতির কারণে সাংসারিক দায়িত্বও পালন তেমন একটা করতে পারি নি। জেল খাটতে হয়েছে প্রায় ১৫ বছর বিনাবিচারে। এখন সাংবাদিকতাই একমাত্র পেশা।
ভুলবাড়িয়া হাইস্কুলের সন্নিকটে একটি ব্রিজ বা সেতুর দরকার। বাজারটা বড় করার জন্য প্রয়োজন জমি অধিগ্রহণ করা প্রয়োজন। ইছামতী নদী সি.এস. খতিয়ান অনুযায়ী চওড়াও যথেষ্ট পানীর করে খনন করাও প্রয়োজন।
যুবকদের কর্ম সংস্তান ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। গ্রামটিতে বেকারের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। তার রেশ টেনে ধরতে হলে একটা টেক্সটাইল মিল স্থাপন করা প্রয়োজন। গ্রামটিকে তার পূর্ব মর্য্যাদায় ফিরিয়ে আনতে হবে। এমন ভাবনা যদি ভাবি। বিকল্প চিন্তা ভাবনাও করা প্রয়োজন।
অবকাঠামোগত সামান্য উন্নয়ন হয়েছে। মাধপুর থেকে নদী তীর দিয়ে পাকা রাস্তা ভুলবাড়িয়ার স্কুলের পাশ দিয়ে চলে গেছে। এটাকে আরও চওড়া করতে হবে। গ্রামে বিদ্যুত সংযোগ কয়েক বছর আগেই স্থাপন করা হয়েছে। তার এলাকা সম্প্রসারণ প্রয়োজন।
অপরদিকে ভুলবাড়িয়া হাইস্কুলের নামকরণ ছাড়াও আরও একটি কাজের প্রস্তাব রাখছি। স্কুলটিকে কলেজে উন্নীত করে “ভুলবাড়িয়া স্কুল এন্ড কলেজ” করে দক্ষ শিক্ষকদের দিয়ে চালানোর ব্যবসন্থা করা প্রয়োজন।
ইত্যাদি কার্য্যাদির মাধ্যমেই গ্রামটি আমার ধীরে ধীরে ছোট ছোট শহরে উন্নীত হতে পারে জনগণ পেতে পারেন শহরের সুবিধাও।
শেষ কথা, আমার গ্রাম ভুলবাড়িয়াকে ভুলিনি-ভুলবোও না।