মোঃ সাইফুল ইসলাম এর গল্প- বদলে যাওয়া
বদলে যাওয়া
————- মোঃ সাইফুল ইসলাম
মিতুর বাড়ীটা ছিল ভোলা জেলার মনপুরায়। পাঠশালায় তেমন যেতে না পারলেও নিজের ইচ্ছাতে বইপত্র সংগ্রহ করে অনকেটা পথ পাড়ি দিয়েছিল। অনকে বড় বিদ্ধান হতে চেয়েছিল মিতু, তবে সেটা সম্ভব হয়নি র্চালস মোদিবার জন্য।
মনপুরা ভ্রমনে যাওয়া র্চালস মোদিবা ছিল লন্ডনের বিখ্যাত মোদিবা পরিবারের একজন। মনপুরায় যেয়ে র্চালস মোদিবার বুকে অসহ্য এক ব্যাথা অনুভব হয়। কাছাকাছি হাসপাতাল না থাকায় খড়কুটো দ্বারা আবৃত কুড়ে ঘরে সেবা শ্রুশা করে সুস্থ করে তুললো মিতু। যে কিনা র্চালস মোদিবার ভাষ্যমতে বিশ্বখ্যাত সুন্দরী। মা মারা যাওয়ায় একা থাকতে হয় অধিকাংশ সময়। বাবা দূর দুরন্তে কামলা খঁেটে কখনো বাড়ি যায়, কখনো যায়না। একা একাই একুশটি বসন্ত পার করে দিল মেয়েটি। দারিদ্রতার পোশাক গায়ে জড়িয়ে থাকায় ছেলেদের নজর এড়িয়ে যাওয়াটা এমন ডিজিটাল যুগে অস্বাভাবকি কিছু নয়। র্চালস মোদিবার চোখ এড়াতে পারেনি এমন গুণসম্পন্ন মেয়ের দিক থেকে।
দারিদ্রতা তাদের গ্রাস করেছে বলেই হয়তো প্রস্তাব আর ফেলে দিতে পারেনি মিতুর বাবা। মিতুর এখনো কতো কাজ বাকি, এ বছর ফলনটা ভাল হয়েছে কদিন পরেই ধান কাটার মৌসুম, বাবা একা পারবেনা। আমি না থাকলে কে কাজ করে দিবে? কে বা ধান মাড়াই করবে? কে করবে হাসি খুশি(ছাগল)দুটোকে লালন পালন? কয়েকটা লাউ ধরেছে রান্নাঘরের চালে। এখন এ ভাঙ্গা ঘরটা কে আগলে রাখবে? এতসত ভাবতে গেলে দারদ্রিতার মাঝে সারা জীবন কাটাতে হবে। তার চেয়ে বরং যাওয়াটাই শ্রেয়। কিছুদিন পর বাবাকেও নিতে পারবো। তাছাড়া বাবা তো বাড়িতেই থাকবে, এতোগুলো টাকা দিয়ে যাচ্ছে, যা কিনা বাবার জীবদ্দশায় দেখেনি। মিতুর ভাবনায় ছেদ পড়লো যখন র্চালস মোদিবা বলে উঠলো, এখনি আমি মিতুকে নিয়ে যেতে চাই। মিতুকে রওনা দিতে হল ঢাকার উদ্দশ্যেে, ঢাকা কিছুদিন থাকতে হল, পাসর্পোট ও অন্যান্য কাগজপত্ররে অপেক্ষায়।
লন্ডন শহর বড়ই চমৎকার, সবখানে কেমন যেন বিস্ময়। শত ব্যস্ততার মাঝেও পঞ্চাশ পার করা র্চালস মোদিবার সাথে মিতুর বিয়ে হলো খ্রিস্টার্ন র্ধম অনুযায়ী, মিতুকেও র্ধম পাল্টাতে হলো। মিতু এখন জ্যাকলিনা।এতো ঐর্শ্বয আর ভালোবাসার মাঝেও কিসের যেন একটা অভাব রয়ে গেল জ্যাকলিনার। যেমনটি কোন র্উবর জমরি চারা গাছটি বাড়ন্ত সময় র্পযন্ত জলের আশায় কৃষক পানে চেয়ে থাকে।
বছর যেতে না যেতেইে লন্ডন শহরের অনেক কিছুই সে চিনলো, অনেকের সাথে পরিচয়ও হলো, বিভিন্ন র্পাটিতে যাওয়া শুরু করলো, বেশ স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে শুরু করলো। মোদিবা পরিবারে রান্নাবান্নার বালাই ছিলোনা। সবাই অনেক ব্যস্ত, তাছাড়া নিজেদের রেস্টুরেন্ট থাকায় খাবারের কোন কমতি ছিলোনা। প্রতি বেলায় খাবার আসতো রেস্টুরেন্ট থেকে। খাবার সরবরাহের জন্য অন্তরা দেবি নামে একজন হিন্দু যুবতি ছিল, যে ছিল ইন্ডিয়ার শিলিগুড়ির বাসিন্দা। পড়াশুনার জন্য লন্ডনে এসেছিল, র্পাট টাইম মোদিবা পরিবারের রেস্টুরেন্টে কাজ করে। বেশ সখ্যতা গড়ে উঠলো জ্যাকলিনা আর অন্তরা দেবির মধ্যে। দুজনইে বেশ সুন্দরী, সখ্যতার এক র্পযায়ে একান্ত ব্যক্তিগত কথাও বলতে শুরু করলো জ্যাকলিনা। অন্তরা দেবি জানতে পারলো তার লন্ডন আসার গল্পটা, সে তার নিজেরে সর্ম্পকেও অনেক কিছু বললো জ্যাকলিনাকে। সব কথার মাঝে একটি কথাই বুকে বাধলো জ্যাকলিনার, র্চালস মোদিবার কাছ থকেে আমিও রেহাই পাইনি। পরিবারের ঐতিহ্য আর মধুর ব্যবহারটাই পেয়েছে, ভেতেরটা এখনো প্রকাশ পায়নি। আরো বছরখানেক গেলে হয়তো তোমাকেও আমার মতো মোদিবা পরিবারের কোন একটা কাজে নামতে হবে। স্কলারশিপ পেয়ে পড়াশুনার উদ্দশ্যেে এসেছিলাম ঠিকই কিন্তু আমার রূপ, আমার অভাব,সবমিলিয়ে এই পচা সমাজ আমাকে ভাল থাকতে দেয়নি। টাকার কাছে বিক্রি হওয়াটা এ শহরে অস্বাভাবিক কিছুই নয়। তাছাড়া তেইশ বছররে যুবতী আমি, আমার শরীর বলেতো কিছু একটা আছে। এ ধরনের অনেক কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো অন্তরা দেবি। জ্যাকলিনা অনেক চিন্তা করে কঠিন সিদ্ধান্তে পৌঁছে অবশেষে অন্তরা দেবির হাত ধরে শিলিগুড়ি চলে গলে।
অন্তরা দেবি ও জ্যাকলিনা একটা রেস্টুরেন্ট দিলো। বেশ ভালই চলে যাচ্ছিলো দুজনের, হঠাৎই জ্যাকলিনা জানতে পারলো কে বা কারা তার বাবাকে মেরে ফেলেছে। অসহায়ত্বের যন্ত্রণায় ভুগতে ভুগতে নিজেকে শেষ করে দিতে প্রস্তুত, এমন সময় অন্তরা দেবির বড় ভাই কৃষ্ণকান্ত জ্যাকলিনাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতেই সে অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে স্বপ্নের হাসি হাসলো।