বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে গোলাগুলি, বিএসএফ জওয়ান ‘নিহত’
অনলাইন ডেক্স । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
রাজশাহীর পদ্মা নদীর বাংলাদেশ সীমান্তের মধ্যে এসে ইলিশ ধরার সময় ভারতীয় জেলেকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। জেলেকে আটকে রাখাকে কেন্দ্র করে বিজিবি ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায় বড়াল নদীর পদ্মার মোহনায় এ ঘটনা ঘটে।
ওই গোলাগুলিতে এক বিএসএফ জওয়ান নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে একাধিক বিদেশি গণমাধ্যম। তবে রাজশাহী জেলা বিজিবির কমান্ডিং অফিসার লেফটেনেন্ট কর্নেল ফেরদৌস মাহমুদ বিবিসিকে জানান, বিএসএফ’র সৈন্য নিহত হওয়ার কোনো তথ্য-প্রমাণ পায়নি বিজিবি।
বিবিসি, এনডিটিভি, জিনিউজ ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, মুর্শিদাবাদের জলঙ্গির চর পাইকমারির জিরো পয়েন্টে বিএসএফ-বিজিবি’র মধ্যে গোলাগুলি হয়। গুলিতে নিহত হন বিএসএফ জওয়ান বিজয় ভান। এ ঘটনায় আহত জওয়ানের নাম রাজবীর সিং। তিনি বিএসএফ’র হেড কনস্টেবল। বর্তমানে মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি।
বিএসএফ’র বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলা জানায়, আজ মুর্শিদাবাদ জেলার সীমান্তে পদ্মা নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া কয়েকজন ভারতীয় মৎসজীবীকে বিজিবি আটকে রেখেছে, এই অভিযোগ পেয়ে তারা যখন পতাকা বৈঠক করতে বিজিবি’র চৌকিতে গিয়েছিল, তারপরেই ঘটনা নাটকীয় মোড় নেয়।
এর আগে আজ বিকেল ৩টার দিকে বিজিবির রাজশাহীর-১ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পরিচালক মেজর আসিফ বুলবুল সাংবাদিকদের জানান, ভারতীয় একজন জেলে তাদের কাছে আটক রয়েছে। বিকেল ৪টার দিকে বিজিবি ও বিএফএফ কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক ডাকা হয়েছে। তার পরই বিস্তারিত বলা যাবে। তারপর থেকে বিজিবির কোনো কর্মকর্তা ফোন ধরেননি।
এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে চারঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সমিত কুমার জানান, বিকেল ৪টার বৈঠক এক ঘণ্টা বিএসএফ পিছিয়ে দিয়েছে। বিএসএফের একজন জওয়ান মারা গেছে বলে তারা এই বৈঠক পিছিয়ে দেয়। তবে তারা ৫টা ৪০ মিনিটে পতাকা বৈঠকে উপস্থিত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
পদ্মায় মাছ ধরা প্রতিরোধ অভিযানে থাকা চারঘাট উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, প্রজনন মৌসুমের জন্য এখন নদীতে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ অবস্থায় জেলেরা যেন নদীতে ইলিশ শিকার করতে না পারে সে জন্য বিজিবি সদস্যদের নিয়ে আজ সকালে নদীতে অভিযানে যায়। তারা দেখেন, পদ্মা-বড়ালের মোহনায় বাংলাদেশের সীমানার ভেতর একটি নৌকায় করে তিনজন ভারতীয় জেলে ইলিশ শিকার করছেন।
আরিফুল ইসলাম বলেন, তারা গিয়ে ভারতীয় জেলেদের আটকের চেষ্টা করেন। এ সময় দুজন পালিয়ে যান। আরেকজনকে আটক করা সম্ভব হয়। এ সময় পালিয়ে যাওয়া জেলেরা গিয়ে বিএসএফকে বিষয়টি অবহিত করে। বিএসএফ সদস্যরা এসেই গালাগাল শুরু করে দেয়। পরে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে তারা বিজিবি সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। বিজিবিও এর প্রতিবাদ জানিয়ে গুলি ছোড়ে। উভয় পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েক রাউন্ড গোলাগুলি হয়। একপর্যায়ে বিএসএফ সদস্যরা পিছু হটে।
আরিফুল ইসলাম আরও বলেন, এ ঘটনার পর প্রনব মণ্ডল নামের একজন ভারতীয় জেলেকে আটক করে বিজিবির চারঘাট করিডর সীমান্ত ফাঁড়িতে আনা হয়। জব্দ করা হয়েছে তার ইলিশ শিকারের জালও।
বিএসএফ’র দক্ষিণবঙ্গ সীমান্ত অঞ্চলের ডিআইজি এসএস গুলেরিয়া বিবিসিকে বলেন, ‘আজ সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ বাহিনীর পাঁচ সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে পোস্ট কমান্ডার বিজিবি’র সঙ্গে পতাকা বৈঠক করতে যান। বৈঠকের পরও আটক ভারতীয় মৎসজীবিকে ছাড়তে তারা রাজি হয়নি এবং বিএসএফ’র সদস্যদের ঘিরে ফেলতে শুরু করে বিজিবি সদস্যরা।’
এসএস গুলেরিয়া আরও বলেন, ‘পরিস্থিতি অন্য দিকে মোড় নিচ্ছে দেখে বিএসএফ দল যখন স্পীডবোটে ফিরে আসছিল, তখন হঠাৎই বিজিবি সদস্যরা গুলি চালায়।’