বাংলাদেশে নির্বাচনী সুনামীতে বিরোধীরা ধরাশায়ী।
ইন্দোনেশিয়ায় ভয়াবহ সুনামীতে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় প্রায় এক মিটার উচ্চ জলস্রোত সুন্দা স্ট্রেইট উপকূল ভাসিয়ে নিয়ে যায়। সুনামী একটি ভীতিকর উচ্চারণ। ঘটনার বর্ণনা দেয়া হচ্ছে এভাবে যে, রকশিল্পীরা দর্শকভর্তি হলে সঙ্গীত পরিবেশন করছিলেন, হটাৎ জলরাশি হুড়মুড় করে সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়! আমরা ব্যথিত, দু:খিত।
ঠিক প্রায় একইভাবে বাংলাদেশে নির্বাচনী সুনামীতে বিরোধীরা ভেসে যাচ্ছেন। ইসি-সিইসি ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়লেও নির্বাচনী মাঠ স্পষ্টত: সরকারি দলের দখলে। বিরোধীরা কোনঠাসা। প্রচারণা বন্ধ করেছেন। সেনাবাহিনী মাঠে নেমেছে। দর্শক হিসাবে। সেনা নামলে জনগণ মাঠে নামবে বলে বিরোধীদের আশা-ভরসা ভঙ্গ হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ ভ্রমণে সতর্কতা জারী করেছে। পর্যবেক্ষকদের ভিসা দিতে গড়িমসি করায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত উষ্মা প্রকাশ করেছেন। এগুলো রুটীন। তবে প্রধানমন্ত্রী পুলিশ হত্যার চক্রান্ত হচ্ছে বলে যে অভিযোগ তুলেছেন, তা প্রণিধানযোগ্য। ঢাকায় বিদেশী রাষ্ট্রদূতগণ সক্রিয় আছেন? ভারত লো-প্রোফাইল মেনটেন করছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে খেলছে।
ইউরোপ সচরাচর মার্কিন লাইনে খেলে। এবার নির্বাচনে অন্যতম প্লেয়ার চীন? আইএসআই সুবিধা করতে পারছে না, তাই ‘বড়ভাই চীন’ মাঠে নেমেছে? ভারত-চীন-মার্কিনরা একই লাইনে খেলছেন না! এতে সুবিধা হচ্ছে সরকারী দলের। মাঠের বেষ্ট প্লেয়ার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নিয়ন্ত্রণে সবকিছু আছে। নিয়ন্ত্রণ ছুটে যাবার মত কোন কারণ নেই?
ঐক্যফ্রন্টকে যাঁরা ‘আশা-ভরসা’ দিয়েছিলো তাঁরা দেখছেন, শেখ হাসিনা কাউকেই পাত্তা দিচ্ছেন না? এতে তাদের গোস্বা আছে, কিন্তু করণীয় কিছু নেই? সাউথ ব্লকের আশীর্ব্বাদ এখনো সরকারী দলের ওপর আছে। নির্বাচনটি ২০১৪’র মত একতরফা হচ্ছে, এটা ভাবার কোন কারণ নেই? এতে সবার অংশগ্রহণ থাকছে। যদিও এ মুহূর্তে কিছুটা সংশয় দেখে যাচ্ছে?
বড় বড় নেতারা অনেকেই জিতে আসবেন। নির্বাচনের পর নুতন রাজনৈতিক পলারাইজেশন হতে পারে? ম্যাডাম খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্যে স্থায়ীভাবে বিদেশ যাবেন। দেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এবং উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে যাবে। ‘ট্যাকের জোর থাকলে অনেক কিছুই সম্ভব’- বাংলাদেশ এখন শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে, বিদেশীরাও সময় মত লাইনে আসবেন, এটা সরকারি দলের আশা।
এটি এবারকার নির্বাচনী চিত্র। যাঁরা ‘অলীক স্বপ্নে’ বিভোর, তাঁরা মোহভঙ্গ হবেন। সিলেটের ইনাম চৌধুরীর মোহভঙ্গ হয়েছে। তিনি এখন নুতন আশার আলো দেখছেন। মৌলবাদী হেফাজতের আশাও ভঙ্গ হবে? দেশ একাত্তরের চেতনায় চলুক। ২০২১-এ বাংলাদেশের স্বর্ণজয়ন্তী মহাধুমধামে পালিত হউক। সদ্য অতীতের ভুলভ্রান্তি শুধরে দেশ সঠিক ট্র্যাকে চলতে শুরু করুক। করা উচিত।
কেমন হচ্ছে, ২০১৯’র পার্লামেন্ট? অভিযোগ ছিলো, ঐক্যফ্রন্ট তাদের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থীর নাম বলছেন না? বলার দরকার নেই তাই তারা বলেননি, কারণ তারা জানেন ওই পদটি তাদের জন্যে নয়? তবে সংসদে বিরোধী দল হবার সম্ভবনা তাদের আছে? এরশাদ চাচার মতিগতি’র ঠিক নেই? বলা চলে, চাচার বুড়ো বয়সে ‘ভীমরতি’ ধরেছে? অথবা তাকে ‘সুখে থাকতে ভুতে কিলাইছে’?
২০১৮’র নির্বাচন রাজনীতিতে একটি গুনগত পরিবর্তন আনবে? আগামী পাঁচ বছর রাজনৈতিক দৃশ্যপট পাল্টে যাবে। অনেক পুরানো চেহারা হারিয়ে যাবে। স্বাধীনতার স্বপক্ষের নুতন ধারা জন্ম নেবে বা নেয়ার সম্ভবনা থাকবে। বিএনপি-জাপা-জামাত ‘মুসলিম লীগ’-এ পরিণত হতে পারে? ধর্মভিত্তিক রাজনীতির দিন শেষ হবে? অবশ্য পুরোপুরি উল্টো একটি দৃশ্যপটও আছে?
সবকিছু ঠিকঠাক চললে ২০২৪ সালের পার্লামেন্টে শুধু স্বাধীনতার সপক্ষরাই থাকবেন। ২০১৯-এ এর কিছুটা আলামত দেখা যেতে পারে। ৩০শে ডিসেম্বর নির্বাচন। নির্বাচনটি হচ্ছে। মানুষ ভোট দেবে। নির্বাচনের আগে-পরে দেশব্যাপী কোন সংঘাতের আশঙ্কা নেই? সময় এসেছে, এখন নির্বাচনের পরের অবস্থা নিয়ে ভাবার। জয়বাংলা হোক এই ভাবনার ভিত্তি। সবাইকে ‘শুভ বড়দিন’।
শিতাংশু গুহ, কলাম লেখক।