বাঙালি শব্দটি জাতীয় ঐক্যের স্মারক-১

 

সিডনীর কথামালা-৪১

রণেশ মৈত্র (সিডনী থেকে)
সভাপতি মন্ডলীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ
E-mail:raneshmaitra@hmail.com

আত্মপরিচয়ের সংকট বাঙালিদের জীবনে কবে কাটবে বিশেষ করে জানি না তবে এটুকু জানি যে আজ পর্য্যন্ত তা কাটেনি। এটা কাটানোর জন্যে অপরিহার্য্য যে সংগ্রাম তা তেমন একটা জোরদার নয় বাংলাদেশে। সংকটটা তাই আরও জটিল হয়ে উঠছে দিনে দিনে। কিন্তু যতই জাটিল হোক সংকটটাকে আর জীইয়ে রাখা যাবে না রাখলে সেটা হবে আত্মঘাতি। এটাকে এড়িয়ে চলারও কোন পথ নেই।
আঘাতটা আসছে কোন প্রান্ত থেকে? সংকটটার সৃষ্টি ওঠা দুস্কর। এর সমাধান খুঁজতে হবে ইতিহাসের নিরীখে। যে ইতিহাস বাঙালি জাতিকে ১৯৭১ এ অস্ত্র তুলে নিতে অনুপ্রাণিত করেছিল শত-শহ¯্র ধারাবাহিক সংগ্রামের সফল পরিসমাপ্তি টানার জন্যে। সেগুলি বাঙালির জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের গৌরবময় স্মারক বলে ইতিহাসে বিবেচিত হলেও অর্ধ শতাব্দী যেতে না যেতেই যেন নিকট অতীতেরই সেই ইতিহাসগুলি সেই রক্তরঞ্জিত ঘটনাগুলি আজ বস্তুত:ই অনেকটা যেন ঝাপসা হয়ে আসছে।
আর একটু পেছনর দিকে তাকাই। ১৯৪৭ সাল। তারও বহু আগে থেকেঅবিভক্ত ভারতবর্ষ বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের দখলে চলে যায় পরিণত হয় একটি উপনিবেশে । সেই বিদেশী শাসক গোষ্ঠির নির্য্যাতন নিপীড়ন যেমন বাড়তে থাকে, মানুষের চোখও তেমনই খুলতে থাকে। শুরু হতে থাকে ইংরেজ শাসকদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রাম। এরও অবশ্য নানা শুর ছিল স্বাধীনতা সংগ্রাম দিনে দিনে যতই তীব্র হতে থাকে ততই একদিকে যেমন ইংরেজদের অত্যাচার তীব্র হতে থাকে ততই আন্দোলনকারী দলগুলির দাবী-দাওয়া আপোষ হীন রুপ পেতে থাকে। এই সংগ্রামের নেতৃত্বে তখন ছিল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। যার প্রধান প্রধান নেতা ছিলেন মোহন দাস, করম চাঁদ গান্ধী, জওয়াহের লাল নেহরু, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ বিশ্বখ্যাত নেতৃবৃন্দ।
আন্দোলনকারী দলগুলির মধ্যে আরও ছিল ভারতের কমিউনিষ্ট পার্টি এবং নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর ফরওয়ার্ড ব্লক ও কতিপয় ছোট ছোট দল। আর মূলত: সাম্প্রদায়িক জিগি তুলে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ গঠন মুসলিম লীগ। অনেক পথ পেরিয়ে ১৯৪০ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত সম্মেলন মুসলিম লীগ মুসলমাদের জন্য পাকিস্তান নামে এক পৃথক রাষ্ট্র তৈরীর প্রস্তাব গ্রহণ করে। ঐ প্রস্তাবে ভারতের কোন কোন অঞ্চল নিয়ে পাকিস্তান গঠিত হবে তাও নির্দিষ্ট করে তুলে ধরা হয়। এই দাবীর নেপথ্যে ছিল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সাথে ইংরেজ শাসকদের গোপন আঁতাত। তবে সম্মেলনে প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছিলেন বাঙালি জননেতা শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক।
এই দাবীর প্রতি সহানুভূতিশীল মনোভাব থাকায় মুসলিম লীগের পক্ষে দাবীটিকে আপোষহীনতার দিকে নিয়ে যাওয়া সহজ হয় বাকী দলগুলি সাম্প্রদায়িকতা ও ভারত বিভাজনের বিরুদ্ধে থাকা সত্বেও। মুসলিম লীগ সামনে আনলো “টুনেশন থিওরী”। তাদের কথা হিন্দু ও মুসলমান এই দুই জাতরি দেশ ভারত। কিন্তু দুই জাতির পক্ষে একত্রে এক দেশে বাস করা সম্ভব নয়। তাই জনসংখ্যার ভিত্তিতে ভারতের ঐ পাঁচটি প্রদেশ যথা বাংলাদেশ, পাঞ্চাব, সিন্ধু, বেলুচিস্তান ও উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ (যাকে পাখতুনিস্তান বলা হয়) নিয়ে পাকিস্তান গঠিত হবে কারণ এই কয়টি প্রদেশে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। কংগ্রেস নেতৃত্বের দু একজন সাম্প্রদায়িক নেতাও এই দাবীর সপক্ষে গোপনে মত প্রকাশ করেন। তাতে মুসলীম লীগ ও ইংরেজদের ষড়যন্ত্র সফল করতে কিছুটা সুবিধা হয়।
কিন্তু অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক বাঙালি সাম্প্রদায়িংকতা ও দেশ বিভাজনের ঘোর বিরোধিতা করায় মুসলিম লীগ ও ধর্মান্ধ শক্তিগুলি ভারতের নানা স্থানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার উদ্ভব ঘটিয়ে অসংখ্য নর-নারী শিশুর জীবন হানি ঘটাতে থাকে। ভারতীয় জাতিকে (বহির্জগতে ইন্ডয়ান নেশন হিসেবেই পরিচিত) মুসলিম লীগ চিহ্নিত করতে শুরু করলো হিন্দু ও মুসলমান নামে পৃথক জাতি হিসেবে যদিও ঐ দুটি আদৌ কোন জাতি নয়-দুটি ধর্মীয় সম্প্রদায় মাত্র। যা হোক দফায় দফায় নানা স্থানে দাঙ্গা ঘটিয়ে হাজার হাজার মাসুষের মৃত্যু ঘটাতে ঘটাতে তারা এমনই পরিস্থিতির সৃষ্টি করলো যে গণতান্ত্রিক শক্তি শেষ পর্য্যন্ত মানুষের জীবন বাঁচানোর স্বার্থেই পাকিস্তান দাবী অনেকটা বাধ্য হয়েই মেনে নেন। ১৯৪৭ এর ১৪ আগষ্ট পাকিস্তান এবং ১৫ আগষ্ট ভারত নামে দুটি স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলো। কিন্তু সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে যে সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ করা যায় না ৪৭ পরবর্তী উভয় দেশের অভিজ্ঞতাই তা প্রতিমুহুর্তে প্রমাণ করে চলেছে। পৃথীবীতে শুধুমাত্র ধর্মীয় কারণে কোন দেশ বিভক্ত হয়েছে ধর্মের নামে মানুষ হত্যা যেন এই উপমহাদেশেই কলংকজনক ভাবে বিস্মৃতি লাভ করে।
অত:পর রাতারাতি আমরা ভারতীয়ত্ব ত্যাগ করে পাকিস্তানীর রণে গেলাম। নতুন দেশ কতই না আশা-কত-স্বল্প মানুষের বিশেষ করে বাঙালি জাতির কারণ এই অঞ্চলের মুসলমানরাই বিপুল সংখ্যায় পাকিস্তানের অনুকূলে ভোট দেন ১৯৪৬ সালে। বিন্দুমাত্র সময় লাগলো না বুঝতে যে আমরা পাকিস্তানী নই, হিন্দও নই, মুসলমানও নই-আমরা বাঙালি। তাই ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্র ভাষা আন্দোলনের উদ্ভব হলো “বাংলা ভাষা হিন্দুর ভাষা-মুসলমানের ভাষা নয়” ভাষা আন্দোলন কারীরা হিন্দু, ভারতের দালাল ইসলাম ও পাকিস্তানের দুশমন এহেন জঘণ্য প্রচারণাকে আদৌ আমলে না নিয়ে। তখন তো সদ্য পাকিস্তান হয়েছে মাত্র। মুসলিম লীগের দৌরাত্ম, রাজত্ব সবই তো ছিল অব্যাহত । যে মুসলমান জনগোষ্ঠি সেদিন খেয়ে-না-খেয়ে “লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান” জিগীরে সামিল হয়ে মিছিলে নেমেছিলেন যাঁরা ব্যাপক হারে চোখ-কান বুঁজে “ইসলাম কায়েমের” লক্ষ্যে পাকিস্তানের অনুকূলে ভোট দিয়ে পাকিস্তান দাবী প্রতিষ্ঠাকে সম্ভব করে তুলেছিলেন-সেই মুসলমানদের সন্তানেরাই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মাত্র কয়েক মাস পরেই ঐ সরকারের বিরুদ্ধে“রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে আন্দোল সুরু করেন। ঐ তরুণদের মা-বাপেরা পাকিস্তানের অনুকূলে মাত্র দেড় দু’বছর আগে ভোট দিলেও সন্তানদের সংগঠিত ঐ আন্দোলনের বিরোধিতা করেন নি।
তবে ডাঁহা মুসলিম লীগ, তাদের সমর্মিত আহলে হাদিস গোষ্ঠী ও গুপ্তারা কোথাও কোথাও ঐ ভাষা আন্দোলনের মিছিলকে আক্রমণ করেছে দেশী
অস্ত্র দিয়ে আর বাহান্নতে এসে জনগণ সক্রিয় সমর্থন দিয়ে মিছিলে সক্রিয় হয়েছেন। সরকারী নির্দেশে পুলিশ অবশ্য ঢাকার রাজপথে মিছিলরত
আন্দোলন কারীদের লক্ষ্য করে নির্মমভাবে গুলি ছুঁড়েছে-ফলে রফিক-সালাম-জব্বার প্রমুখ কয়েকজন শহীদ হয়েছেন-বহু সংখ্যক আহতও
হয়েছেন।
কিন্তু বাঙালিত্বের চেতনা? সকল বাধা-বিপত্তি , সকল রক্তচক্ষু, দেশী বিদেশী-সরকারী – বেসরকারী অস্ত্রের আঘাত সত্বেও তা যে দেশ জুড়ে ভাস্বর হয়ে উঠেছিল-দ্বিজাতিতত্ত্ব নামক মধ্যযুগীয় আদর্শিক চেতনাটি যে ভয়ে ভয়ে লেজ তুলে পালাচ্ছিল “মুসলমানের রাষ্ট্র পাকিস্তান” মুসলমানদের চেতনাতেই তখন “পরিত্যক্ত মাল” বা “Òabandoned property” তে কার্য্যত পরিণত হয়েছিল তাও বাঙালির জন্যে গর্বে ভরা এব অনন্য ইতিহাস। ক্ষণস্থায়ী আন্দোলন হলেও আটচল্লিশের ভাষা-আন্দোলনের আগুন কিন্তু ক্ষণস্থায়ী হয় নি। ধিকি ধিকি তা জ্বলছিলো আমাদের তরুণতরুণীদের বুকে। মাত্র চার বছরের মধ্যেই বাহান্ন সালে এসে তা যেন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়লো সমগ্র পূর্ববাংলায় তরুণ -তরুণীর,প্রৌঢ়-প্রৌঢ়া, যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা তথা সমগ্র বাঙালি জাতির বুকে – জনসংখ্যার গণনায় পাকিস্তানকামী মুসলমান বাঙালির মধ্যে।
রক্তদিয়ে লেখা হলো এক অনন্য ইতিহাস প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হলো প্রণের রাষ্ট্রভাষা বাংলা যা লিখিত হলো ১৯৫৬ সালের সংবিধানে। আর  সাম্প্রদায়িক দ্বিজাতিতত্ত্ব? যেটা না কি মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের আদর্শিক ভিত্তি? ছুটে পালালো দ্বিজাতিতত্ত্ব-সকল বাঙালি “হিন্দুর ভাষা-ইসলাম-বিরোধী ভাষা বাংলার দাবীতে গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ এবং আপোষহীন হতে দেখে। বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা নতুন করে দানা বাঁধতে থাকলো বহুলাংশে মেঘমুক্ত বাংলার আকাশে।
অত:পর বাহান্নোত্তর পূর্ববাংলার ধারাবাহিকতার সাথে একের পর এক লড়াই। সে লড়াই কখনও কখনও সামরিক আইনের কঠোর বিধি জারী করে সাময়িক ভাবে স্থগিত করা গেলেও-জনতার ফুঁসে উঠতে খুব একটা সময় লাগেনি। ইতোপূর্বে এসে যায় ১৯৫৪ সালের বাংলার রাজনীতির মোড় ঘুরানো এক গৌরবোজ্জ্বল নির্বাচন। ঐ ঐতিহাসিক নির্বাচনী ঐতিহাসিক বিজয় সূচিত করলেন পূর্ব বাংলার মানুষ। যে মুসলিম লীগ হয়ে দাঁড়িয়েছিল বাংলার মুসলমানদের “নয়নের মণি” সেই মুসলিম লীগ নেতা নূরুল আমিনের নেতৃত্বাধীন দল ও সরকারের সকল মন্ত্রীকে পরাজিত করে ( তাঁদের জামানতও বাজেয়াফত হয়েছিল) মাত্র ১০ টি আসন বাদে বাকী সকল আসনেরই হক-ভাসানী-সোহরাওয়র্দীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টকে বিপুল ভোটাধিক্যে বিজয়ী করে শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হকের নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রীসভা পর্য্যন্ত গঠন করতে সক্ষম হন। সেই একই মানুষ। এই নির্বাচনের অপর একটি বৈশিষ্ট হলো, ঐ যে মুসলিম লীগ নামক সাম্প্রদায়িক দলটির কোমর ভেঙ্গে দিলেন বাঙালিরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আজ দীর্ঘ ৬২ বছরেও মুসলিম লীগ আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে নি। আক্ষরিক অর্থেই দলটিকে কবরস্থ করা হয়েছিল যেন।
বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার অপর একটি লক্ষ্যনীয় দিক হলোঃ
১৯৫২ সালের জাতির হৃদয় ছোঁয়া খাষা আন্দোলনের পর থেকে এ দেশে ধর্মীয় নামে নতুন কোন সংগঠন বা দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে নি। বরং যে দলগুলির নামের সাথে ধর্মের সংশ্রব ছিল তাঁরাও তাঁদের নাম থেকে ধর্মের গন্ধটুকু পর্য্যন্ত পরিত্যাগ করে অসাম্প্রদায়িক দলে বা সংগঠনে পরিণত হতে থাকেন। জামায়াতে ইসলামী বাদে অপর ধর্মাশ্রীয় দলের বিপুপ্তি ঘটে। এ এক অসাধারণ বিজয় ভাষা আন্দোলনের – যে আন্দোলন বাঙালির মন থেকে তার বোধ থেকে, তার চেতনা থেকে সাম্প্রদায়িকতাকে পরিত্যগ করে নবতর চেতনা ও উপলব্ধিকে ধারণ করে বাঙালিত্বের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে থাকেন-যার বিশালতম অংশই ছিলেন মুসলিম সম্প্রদায়ভূক্ত।
এর কতিপয় উদাহরণ তুলে ধরি-
এক.ভাষা আন্দোলনের কয়েক মাস পরেই ধর্মনিরপেক্ষতা, সাম্রাজ্যবাদ সামন্তবাদ বিরোধীতা, শিক্ষার সম্প্রসারণ এবং এই ক’টি মৌলিক দাবীর সাথে সমাজতন্ত্রকে লক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা করে জন্ম নেয় পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (প্রথমে অবশ্য আত্মপ্রকাশ করেছিল পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন নামে)।
দুই. অত:পর জন্ম নিলো প্রায় একই আদর্শ ও লক্ষ্যকে ধারণ করে পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল“পাকিস্তান গণতন্ত্রী দল” নামে। এই দলটি ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে বেশ কয়েকটি আসনে বিজয়ী হয়ে মন্ত্রীত্বও পেয়েছিলেন। আজ অবশ্য এ দলটির আর অস্তিত্ব নেই।
তিন. আজ আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক দল হলেও ১৯৫১ সালে তার আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল“আওয়ামী মুসলিম লীগ” নামে। দলটির প্রথম এবং প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক। শেখ মুজিবর রহমান ছিলেন যুগ্ম-সম্পাদক। ভাষা আন্দোলন দেশে অসাম্প্রদায়িক চেতনার যে অপ্রতিরুদ্ধ ঝড় তুলেছিল তারই পরিণতি স্বরূপ ১৯৫৬ সালের ময়মসসিংহ কাউন্সিল অধিবেশনে (জয়পুরহাটেও হয়ে থাকতে পারে এই কাউন্সিল অধিবেশনটি সঠিক স্মরণে আনতে পারলাম না) দলের নাম থেকে “মুসলিম” শব্দটি তুলে দিয়ে “ধর্মনিরপেক্ষতাই” হবে দলের অন্যতম মৌলনীতি এমন ঘোষণা দেওয়া হয়।
চার. ১৯৫৫ সালে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগও তার নাম থেকে একই কারণে “মুসলিম” শব্দটি বাদ দিয়ে অসাম্প্রদায়িক ছাত্র সংগঠনে পরিণত হয়।
পাঁচ. ১৯৫৭ সালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করে নিখিল পাকিস্তান ভিত্তিক প্রথম অসাম্প্রদায়িক, সাম্রাজ্যবাদ সামন্তবাদ বিরোধী সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যাভিসারী বৃহৎ রাজনৈতিক দল “পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি” যা সংক্ষেপে ন্যাপ (NAP) নামে পরিচিতি অর্জন করে।
এখানে উল্লেখ করা ইতিহাসের অচিরেই প্রয়োজন যে পাকিস্তানোত্তর প্রথম অসাম্প্রদায়ি সংগঠন হিসেবে ১৯৪৮ সালে “পূর্ব পাকিস্তান যুব লীগ”  নামে। এই সংগঠনটি ভাষা আন্দোলনে ও ১৯৫৪ সালে মুসলিম লীগ বিরোধী যুক্তফ্রন্ট গঠনে তাৎপর্য্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। তাই ইতিহাস প্রমাণই করে যে বাঙালি শব্দটাই যেন ঐক্যের এবং স্মারক শব্দ।

প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। কাগজ২৪-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য কাগজ২৪ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!