দেবীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নষ্ট যন্ত্রপাতি আর ডাক্তার সংকটে বিঘ্নিত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা

নাজমুস সাকিব মুন, পঞ্চগড় প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। উপজেলার ২ লাখ ২৪ হাজারেরও বেশি বাসিন্দার প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রাপ্তিতে একমাত্র ভরসা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি।

এই অধিক জন সংখ্যার জন্য রোগ নির্ণয়ে স্বভাবতই বাড়তি চাপ রয়েছে এখানে। কিন্তু রোগ নির্ণয়ে অতীব গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি অকেজো রয়েছে দীর্ঘ সময় ধরে। সাধারণ জনগণের জন্য গড়ে তোলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি তাই পুরোপুরি কাজে আসছে না।

আল্ট্রাসনোগ্রাম ও এক্সরে মেশিনঃ
আল্ট্রাসনোগ্রাম ও এক্সরে মেশিন বন্ধ। প্রায় দেড় মাস ধরে নষ্ট অবস্থায় রয়েছে আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনটি। আর এক্সরে মেশিনটি বন্ধ রয়েছে ২০১৪ সাল থেকে। ২০১৪ সালে এক্সরে মেশিনটি নষ্ট হওয়ার পর এর অপারেটরের বদলি হয় অন্যত্র। আলট্রাসনোগ্রাম ও এক্সরে মেশিন সচল না থাকায় বাধ্য হয়ে রোগীদের যেতে হচ্ছে ক্লিনিকগুলোতে। অর্থাভাবে অনেক রোগী ক্লিনিকগুলোতে সেবার মূল্য অধিক হওয়ায় রোগ নির্ণয় না করেই ফিরে যাচ্ছেন।

অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট পদ শূন্যঃ
এইদিকে চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট ডাঃ আবু সায়েম দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে বদলি হওয়ায় পদটি এখনো ফাঁকা রয়েছে। ফলে অন্ত:স্বত্ত্বা নারীদের সিজারিয়ান অপারেশনের প্রয়োজন হলে তাদের পাঠানো হচ্ছে জেলা হাসপাতালে। উপজেলা সদর থেকে ৪০ কি.মি. দূরত্বে অবস্থান জেলা সদর হাসপাতালের। অধিক দূরত্বের কারণে অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও স্বল্প আয়ের মানুষদের যেতে হচ্ছে ক্লিনিকে, গুণতে হচ্ছে মোটা অংকের টাকা।

ডাক্তার সংকটঃ
ডাঃ আবু সায়েমের বদলির পর বর্তমানে হাসপাতালে ডাক্তারের সংখ্যা ৫ জন। যদিও মোট পদ রয়েছে ৩১টি। এদের মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। বিশেষজ্ঞ কোন ডাক্তার না থাকায় ক্লিনিকগুলোর ব্যবসা চলছে জমজমাট।

চক্ষু, চর্ম, যৌন, গাইনী, হৃদরোগ, মেডিসিন, কনসালটেন্ট (সার্জারি) এর পদ থাকলেও নেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার।

এম্বুলেন্সঃ
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুইটি এম্বুলেন্সই বন্ধ থাকায় রোগীরা পড়েছেন বিপাকে। ২০১৮’র ফেব্রুয়ারিতে নতুন এম্বুলেন্সের উদ্বোধন করেন সাংসদ অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন। উদ্বোধনের পর থেকে পুরাতন এম্বুলেন্সটি ফেলে রাখা হয়। দীর্ঘদিন ফেলে রাখার কারণে যন্ত্রাংশে সমস্যা দেখা দিয়েছে। আর নতুনটির জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে তেলের মূল্য বরাদ্দ শেষ হওয়ায় সেটিও বন্ধ রয়েছে। এম্বুলেন্স চললেও এর চালকের স্থায়ী পদটি ফাঁকা রয়েছে। বর্তমানে আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে নেয়া চালক দিয়ে চলছে এম্বুলেন্স। আবার একজন মাত্র চালক থাকায় পুরনো এম্বুলেন্সটি অব্যবহৃত রয়েছে। অথচ দুটি এম্বুলেন্স চালু থাকলে রোগীদের বাইরের এম্বুলেন্স ভাড়া করার প্রয়োজন হোত না।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সার্বিক সমস্যা নিয়ে কথা হয় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ হাসিনুর রহমানের সাথে। প্রতিবেদকের সাথে কথা বলার সময়ও কক্ষের বাইরে অন্তত ১৫ জন রোগী অপেক্ষারত ছিলেন। প্রশাসনিক কাজের ফাঁকেই রোগী দেখছিলেন ডাঃ হাসিনুর।

ডাঃ হাসিনুর রহমান জানান, স্বল্প জনবল দিয়ে আমরা সাধ্যমত চিকিৎসা সেবা দেয়ার চেষ্ট করছি। প্রশাসনিক কাজের পাশাপাশি অফিস কক্ষেই প্রতিদিন গড়ে ২০-২৫ জন রোগীকে দেখার চেষ্টা করি। আলট্রাসনোগ্রাম ও এক্সরে মেশিন এর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এক্সরে মেশিন সাড়ে চার বছরের বেশি সময় ধরে নষ্ট রয়েছে। এবিষয়ে বারবার কর্তৃপক্ষকে অবগত করলেও সমাধান মিলে নি। অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট এর পদটি কবে নাগাদ পূরণ হবে বলতে পারেন নি তিনি।

তিনি জানান, যন্ত্রপাতি বিকল হওয়ার বিষয়টি উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক চিশতী এবং সাংসদ ও রেলপথ মন্ত্রী অ্যাড. নুরুল ইসলাম সুজনকে অবগত করা হয়েছে। মন্ত্রী মহোদয় দ্রুত পদক্ষেপ নিবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

এই ব্যাপারে জেলার সিভিল সার্জন ডাঃ নিজাম উদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট এর পদ ফাঁকা থাকার বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। এক্সরে ও আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন মেরামতের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আশ্বাস প্রদান করলেও এখনো তা বাস্তবায়িত হয় নি। পঞ্চগড় সদর হাসপাতালের এক্সরে আর আলট্রাসনোগ্রাম মেশিনটিও নষ্ট হয়ে আছে বলে তিনি জানান। আর নিয়োগ বন্ধ থাকায় এম্বুলেন্সের চালক পদে আপাতত স্থায়ী নিয়োগ সম্ভব নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!