বিপুল পাঠক সৃষ্টির মধ্য দিয়ে আজ শেষ হচ্ছে-পাবনাবাসীর প্রাণের মাসব্যাপী বইমেলা
এসএম আলাউদ্দিন, স্টাফ রিপোর্টার, পাবনা । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মাসব্যাপি পাবনার বইমেলায় এবার বিপুল পাঠক সৃষ্টির মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে আজ। ভাষার মাসে বইমেলা যেন পাবনাবাসির প্রাণের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল। সকাল দশটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে জমজমাট ছিলো মেলা প্রাঙ্গণ। বিকেল হলেই বইপ্রেমিদের ভিড় ছিলো চোখে পড়ার মতো। জেলার ঐতিহ্যবাহী ১২৭ বছর বর্ষী অন্নদাগোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরীর উদ্যোগে এবং পাবনা বইমেলা উদযাপন পরিষদের ব্যবস্থাপনায় এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে পাবনার বীরমুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল পৌর মুক্তমঞ্চ চত্বরে এই মেলার আয়োজন করা হয়।
বই বিক্রেতা ও প্রকাশনী সংস্থাগুলোর এবারের মেলায় ৩৫টি স্টলছিলো। একাধিক বই বিক্রেতা আর প্রকাশনীর স্বত্তাধিকারী জানান , প্রতিদিন এবার প্রচুর বই ক্রয় করেছেন বইপ্রেমীরা। শিশুতোষ বই, গল্পের বই, বিভিন্ন ব্যক্তির জীবনী, উপন্যাস ও মুক্তিযুদ্ধের বই বিক্রি হয়েছে বেশী।
জাতীয় গ্রন্থাগার অর্থাৎ বাংলা একাডেমির পরে দ্বিতীয় বৃহত্তম হিসেবে পাবনায় মাসব্যাপি বইমেলা শুরু করা হয় ৯ বছর আগে। পাবনা বইমেলা উদযাপন পরিষদের ব্যবস্থাপনায় টানা পঞ্চম বছর মাসব্যাপি বইমেলার আয়োজন করা হয়।
পাবনার মাসব্যাপি এই বইমেলার ব্যতিক্রমধর্মী কিছু আকর্ষণের মধ্যে স্কুল শিক্ষক, কলেজ শিক্ষক, স্কুল ছাত্র, কলেজ ছাত্র, চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, সাংবাদিক, কবি, লেখক, প্রকাশক, শিল্পী, বিভিন্ন নৃগোষ্ঠী, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, স্কুল ও কলেজের লাইব্রেরিয়ান, মা-দের নিয়ে, বই ব্যবসায়ীদের জন্য ছিল প্রতিদিন আলাদা অলাদা বইপড়া নিয়ে ব্যতিক্রমী আলোচনা সভা। এছাড়াও মেলায় জেলার প্রত্যেক উপজেলার কমবেশি সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনা ছিল মনোঙ্গ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা। তন্মধ্যে, নৃত্যানুষ্ঠান, নাটক, বাউল-লালনসহ বিভিন্ন ধরণের গান পরিবেশনা, হাতের লেখা, চিত্রাঙ্কন, অভিনয় এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এছাড়া গণ শিল্পী সংস্থার আয়োজনে শিশুদের হাতে খড়ি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে তাদের হাতে জীবনের প্রথম আশির্বাদ সনদ তুলে দেয়া হয়।
গতকাল মঙ্গলবার হাতের লেখা, নৃত্য, সংগীত, আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন, নাটক, একক অভিনয়সহ নানা ইভেন্টে অংশগ্রহণকারী বিজয়ীদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে পুরস্কার ও সনদপত্র। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিযোগিতার বিচারক ও মেলা কমিটিদেরও পুরস্কৃত করা হয়েছে।
এসব পুরস্কার তুলেন দেন বইমেলা উদযাপন পরিষদের সভাপতি প্রফেসর শিবজিত নাগ ও সম্পাদক এ্যাড: আব্দুল হান্নান, অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরীর মহাসচিব সাংবাদিক আব্দুল মতীন খান, কৃষিবীদ অধ্যাপক জাফর সাদেক, ডা: রাম দুলাল ভৌমিক, বদরুন্নাহার, ড. হাবিবুল্লাহ ও এ্যাডভোকেট মুশফেকা জাহান কণিকা প্রমুখ।
২৭তম দিনেও মেলা মঞ্চে ডিষ্টিউন ব্যান্ড দলের ব্যান্ড সঙ্গীত, নৃত্য রং এর নৃত্য, একতারা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠির সঙ্গীত ও সাংস্কৃতিক সংঘ সঙ্গীত পরিবেশন করে।
মেলা মঞ্চে সপ্তাহের শেষ দিনে নবীন-প্রবীণ লেখকদের বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের ব্যবস্থা ছিল। এবারের মেলাতেও প্রায় একশ’ বিভিন্ন ধরণের নতুন নতুন বই প্রকাশ পেয়েছে। মাসব্যাপি এই বই মেলা প্রতিদিন দুপুরের পর থেকেই দর্শক, পাঠকসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষের আনাগোনায় পুরো ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। এতো পরিমান দর্শকের উপস্থিতি যেন আইন শৃংখলা বাহিনীসহ নিরাপত্তাকর্মিদের পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায় রাখতে হিমশিম খেতে হয়।
বইমেলা উদযাপন কমিটির সভাপতি প্রফেসর শিবজিত নাগ বলেন, মেলা মানেই মেলা নয়, এই মেলা মানে বইমেলা। শুধু বইয়ের স্টল ছাড়া অন্য কোন স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়নি। প্রত্যেকটি বইয়ের স্টলে ছিল দেশি বিদেশি খ্যাতিমানসহ নানা ধরণের লেখকদের বই। পাশাপাশি শিশুদের জন্য ছিল নতুন পুরাতন বইয়ের সমাহার। ঢাকার বাইরে একমাত্র আমরাই একটি সুন্দর মেলার আয়োজন করে থাকি। সবার সহযোগিতায় আগামীতে আরো ভাল বইমেলা উপহার দেয়া সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন।
কাগজটুয়েন্টিফোর বিডি ডটকম এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।