সেলিনা জাহান প্রিয়ার অনু গল্পঃ- বিশ্বাস
অনু গল্প- বিশ্বাস ।
রচনা- সেলিনা জাহান প্রিয়া ।।
—–বিশ্বাস কর ?
—– করি
—– প্রমান দাও ?
—– কিসের প্রমান
—– এই যে তুমি বিশ্বাস কর তার প্রমান ।
—- বিশ্বাস করলে কি প্রমান লাগে ?
—- প্রমান ছাড়া কি বিশ্বাসের কোন মুল্য আছে ।
—- দুনিয়ায় অনেক কিছু আছে যা শুধু বিশ্বাস কিন্তু প্রমান নেই ?
—– অহ আলেয়া ! তুমি যে আমাকে বিশ্বাস কর তার প্রমান দাও ?
—–কি প্রমান চাও বল বিশ্বাসের ? মিঃ জুরেক্স
—- সময় হলেই চাইব বিশ্বাসের প্রমান ।
—– এখন চাইলে দোষ কোথায় ?
আজ মন ভাল নাই ? তাই বিশ্বাসের প্রমান অন্য দিন নিব ? আমি দেখতে চাই বিশ্বাস কত শক্তিশালী আলো ।
জুরেক্স আমি তোমাকে বিশ্বাস করে ভালবাসি । কিন্তু এই বিশ্বাসের মানেই না যে তুমি চাইলে আমাকে তোমার স্ত্রীর মতো ব্যবহার করতে পাড়বে না। তবে আমি বিশ্বাস রাখি যে তুমি আমার একদিন স্বামী হবে সেই বিশ্বাসে আমি ভালবাসার স্বপ্ন দেখছি তোমাকে ।
এখন তোমার বিশ্বাস অন্য কিছুও হতে পাড়ে । প্রেম করলে তার পড় তোমার ইচ্ছা মতো ব্যবহার করলে । তার পড় ছুঁড়ে ফেললে ।।
——- ও তাহলে সেই বিশ্বাসে তুমি আমার সাথে কোথাও যেতে চাওনা টুরে ।
——- জুরেক্স বাঙ্গালি মেয়েরা প্রেম অন্তরে লালন করে । ইউরোপের অ্যামেরিকার মতো
বিছানা গরম করে না।
—— আলেয়া বিশ্বাস কর কি করে তাহলে ? যে আমি তোমার কোন খতি চিন্তা করি ।
—— জুরেক্স তুমি বিশ্বাসী বলেই আমি আমার চরিত্রের পরীক্ষা দিতে চাই না । বিশ্বাস তো আমার দারাও তোমার বিশ্বাস নষ্ট হতে পাড়ে । কারন প্রকৃতির নিয়ম শক্ত বিশ্বাসে ফাটল ধরাতে পাড়ে । তাই ভালবাসি বলেই দূরে থাকি বুঝলে ।
——— আলেয়া আমি তোমাকে একটা প্রশ্ন করব ?
——— হ্যা প্রশ্ন করার রাইট তোমার আছে । কারন ভালবাসায় তো শুধু প্রশ্ন ?
——— আলেয়া তুমি যাকে বাবা বলে ডাক সে তো তোমার বাবা না ।
——— জন্ম দিলেই কি বাবা হয় মানুষ । সেই মানুষটা তার মাথার ঘাম পায়ে ফেলে
আমাকে লালন পালন করেছে । যার খাবার খেয়ে বড় হয়েছি । এখন আমার শরীরে প্রতি কণা রক্ত তার দেয়া খাবারে সৃষ্টি হয়েছে । সেই আমার বাবা । এটাই আমার উত্তর । কে আমার মাকে প্রেমের নামে ধোঁকা দিয়েছে তার নাম লিখে আমি আমাকে ছোট করতে পারব না । যে আমাকে লালন করেছে সেই আমার পিতা ।
——– কিন্তু আলো সমাজ জানতে চায় ? আমি তো এই সমাজের মানুষ ।
——- জুরেক্স এই বিশ্বাসে আমাকে ভালবেসেছ । তাহলে শুন কে আমার জন্মদাতা সেটা
আমি জানি । কিন্তু একজন প্রতারকের নাম মুখে নিজের মুখ নষ্ট করতে চাই না।
——- বাহ ! আলেয়া সে তোমার জন্মদাতা । শুনেছি তোমার জন্য নাকি মামলা করবে । কারন সে তোমাকে এখন তার মেয়ের পরিচয় দিতে চায় ।
——- চাইবেই তো কারন তার তো আর কোন সন্তান নাই ।
——- হাজার হলেও আলেয়া এটা তোমার বিশ্বাস করতে হবেই সে তোমার বাবা ।
—— না সে আমার বাবা না শুধু জন্মদাতা ।
——- তাহলে তো তুমি তার মতোই সেই জেদি রাগি হলে ।
——- শুন জুরেক্স আমি যার ডি এন এ , আমি তো তার মতোই হব । এটাই স্বাভাবিক
তোমাকে একটা কথা বলি জুরেক্স তুমি কিন্তু তোমার জন্মদাতা বাপের মতো হও নাই ।
——- তুমি কি বলতে চাও ? আমি তোমার মতো ……………।।
——– জুরেক্স আমি যে জারজ এটা আমি জানি । আমাকে মনে করে দিতে হয় না ।
——– না কথাটা আমি এভাবে বলি নাই ।
——— জুরেক্স যে ভাবেই বলল সূর্য কিন্তু একটাই ।
——— আলেয়া আমার বাবা একটু সহজ সরল মানুষ । আমি না হয় একটু জটিল ।
তাই বলে তুমি আমাকে এভাবে বলতে পার না।
——– শুন জুরেক্স আমার মা সরল সুজা ছিল বলেই কিন্তু ঠকেছে । তাই বলছি
তোমার বাবাও তো সরল সুজা দেখ কোথায় ঠকেছে কি না?
——- আমার মাকে নিয়ে তোমার এভাবে কথা বলতে গায়ে লাগে না?
——- হবু শাশুড়ি একটু পরীক্ষা করে নেই । যে তার ছেলে টা সুযোগ পেলেই কেন
ডেটিং এ নিতে চায় । ডি এন এ ঠিক আছে কি না ?
আলেয়ার কথায় খুব কষ্ট পায় জুরেক্স । আলেয়া ও মনেমনে কষ্ট পায় জুরেক্সের কথায়
কিন্তু কেউ কাউকে বুঝতে দেয়না । দু জনেই একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বিদায় নেয় ।
জুরেক্সের মা কিছুতেই আলেয়ার মায়ের জন্য আলেয়ার নাম শুনতে পাড়ে না। সব সময় জুরেক্স কে বলে একটা নষ্ট মহিলার মেয়ের প্রেমে পড়েছিস । এমন নষ্ট মহিলার মেয়ে নষ্টই হয় । মেয়েটার কোন লজ্জা সরম নাই । কিন্তু জুরেক্স মনে প্রানে বিশ্বাস করে এতে
আলেয়ার কোন দুষ নাই । তার মায়ের কোন দুষ নাই । একটা বিশ্বাসের শুধু অবমুল্যায়ন হয়েছে । এমন ভুল সে করতে চায় না। এটাই বিশ্বাস ।
জুরেক্স মায়ের কথা ভাল ভাবে নেয় না। একদিন বিকালে জুরেক্স বাসার বারান্দায় মায়ের সাথে বিকালের চা খাচ্ছে । জুরেক্সের মা বলল
———— বাবা একটা কথা বলি তোর বাবার টাকা পয়সা ব্যবসা আমার নিজের টাকা পয়সা ব্যবসা সব মিলিয়ে আমাদের সামাজিক অবস্তার সাথে আলেয়ার পরিবার মিলে না। তা ছাড়া সমাজ বলে একটা কথা আছে । বাবা ঐ মেয়ের অন্য কোথাও বইয়ে হলে ১০ বা ২০ লাখ টাকা লাগলে আমি দিয়ে দিব ।
হাতের চা শেষ করে জুরেক্স বলল মা একটু বস আমি আসছি ঘর থেকে । জুরেক্স ঘরে যায় । ঘর থেকে একটা সাদা খাম এনে মাকে দিয়ে বলে মা এই খাম দেখার পড় আশা করি এতে যা লিখা আছে তা দেখে তুমি আর আমাকে আলেয়া কে বিয়ে করতে না করবে না । জুরেক্স মায়ের সামনে থেকে চলে যায় । জুরেক্সের মা খাম খুলে দেখে একটা মেডিক্যাল রিপোর্ট । তাতে একটা ডি এন এ রিপোর্ট । যাতে জুরেক্স এর পিতার সাথে কোন মিল নাই । একটা ছোট চিঠি লিখা জুরেক্সের হাঁতে । প্রিয় মা আমি জানতে চায় না কে আমার পিতা তবে যা কে আমি জন্মের পড় বাবা বলে জেনেছি তাকে আমি এটা বলে কষ্ট দিয়ে তার বিশ্বাস নষ্ট করতে পারব না। মা প্রতিটা মানুষের ভালবাসা তার বিশ্বাসে বেচে থাকুক । আজ আমি আলেয়া কে বিয়ে করব । আলেয়া জানে আমি ও তার মতো কোন ভালবাসার সৃষ্টি । মা আমাদের জন্য দোয়া কর । কারন আমারা আমাদের ভালবাসাকে প্রতারনা করতে চাই না। এটাই সু শিক্ষার বিশ্বাস ।।