সেলিনা জাহান প্রিয়া’র গল্প-মাঝ রাত্রির রহস্য মানব (প্রথম পর্ব)

 

 

 

 

মাঝ রাত্রির রহস্য মানব (প্রথম পর্ব)

———-সেলিনা জাহান প্রিয়া

 

রাত ১১.৩০ মিনিট সেল ফোনে কল বেজে যাচ্ছে।
রিসিভ করব কি করব না? অচেনা নাম্বার তার পর এক অদ্ভুত নাম্বার অনেক গুলো জিরো। মাথার কাছের বালিশ টা সরিয়ে হাতে নিলাম সেল ফোন। যা চার্জ আছে তাতে কি কথা বলা যাবে! না তার চেয়ে রিসিভ করি।
— হ্যালো কে।
— হাই আমাকে চিনবেন না। আমি একটা জরুরি কাজে আপনাকে ফোন করেছি।
—— কে আপনি? আর কি জরুরী কাজ। আমার সাথে তো কারো জুরুরি কাজ থাকতে পারে না। হা থাকতে পারে আপনার সাইড ব্যাগ টা খুলে দেখুন একটা পেন ড্রাইভ আছে।
——- কি বলেন? আমার ব্যাগে কোন প্যান ড্রাইভ থাকার কথা না।
—— আমি যেটা বলছি সেটা বিশ্বাস করুন।
—— দেখুন আমার ব্যাগে কি আছে না আছে সেটা আমি ভাল করে জানি। রাতের বেলা শুধু শুধু ফান করবেন না। মেয়ে মানুষদের ফোন করে জালাতে আপনাদের লজ্জা থাকা উচিৎ। কি মজা পান মেয়েদের কে টাকা খরচ করে ফোন করতে। টাকা বেশি হলে কিছু রাজনৈতিক নেতাদের দান করে দেন। তাতে দেশের মঙ্গল হবে।
———- দেখুন মেম আপনি রাজনীতি যারা করে তাঁদের পছন্দ করেন না। সেটা ভাল তবে একটা দুনিয়া তো আর কলা গাছ চালাতে পারে না। দুনিয়ায় একটা দেশ দেখান যে খানে যারা রাজনীতি করে তারা খুব ভাল মানুষ। আরব তো নিজেদের মধ্য মারা মারি করে শেষ। এশিয়া তো সমাজতন্ত্র আর গনতন্ত্র নামে পারিবারিক তন্ত্র চলছে । তাই দুনিয়ার মালিক যে সে ভাল করে জানে কোন জাতির জন্য কেমন নেতা দরকার।
—– দেখুন মিঃ আমি আপনার সাথে তর্ক করতে চাই না। নেদার ল্যান্ড দেখুন। তারা তো অনেক সভ্য জাতি। খারাপ মানুষ নাই বললেই চলে তারা তাঁদের জেল খানা বন্ধ করছে।
————মেম নেদার ল্যান্ড থেকে ভাল আছেন। আপনার মেয়ে বয় ফ্রেন্ড নিয়ে ঘরে আসার সাহস পায় না। তাঁদের জীবন তো রুটিন এর মতো একটা রোবট হয়ে গেছে।
——- আচ্চা মিঃ আমি রাখলাম।
——– মেম আমার কথা কিন্তু শেষ হয় নাই। আপনার ব্যাগে একটা পেন ড্রাইভ আছে ঐ টা আপনার পিসিতে দিয়ে অন করুন।
—— দেখুন আমার পিসি নষ্ট আজ এক মাস। মোবাইল থেকেই কাজ করে নেই। পিসি তেমন একটা লাগে না। আর আমার ব্যাগে কেন পেন ড্রাইভ আসবে।
———- মেম সব কেনর উত্তর হয় না। আপনার পিসি মেরামত করা হয়েছে।
———- দেখুন মিঃ আমার সাথে ফাজলামি করবেন না। আমি এই বাসায় চার বছর ধরে থাকি। আমার ফ্ল্যাটের চাবি আপনি কোথায় পাবেন। সিসি ক্যামেয়ার সিকিউরিটি রা কি ঘুমিয়ে ছিল। নাকি জিন পাঠিয়েছেন।
———- দেখুন ম্যাম আপনি শুরু বারান্দায় জান কি রকম কাপড় পড়ে আছেন তা বলে দিব। ইচ্ছা করলে আমি আপনি ঘরের ভিতরে কি করছেন তা বলে দিতে পারতাম। কিন্তু একটা মেয়ে মানুষের পার্সোনাল লাইফে প্রবেশ করতে চাই না।
———- দেখুন আমার মোবাইল এ চার্জ নাই। আমি রাখলাম।
———- মেম আপনার বালিশের নিচে একটা পাওয়ার ব্যাংক রাখা আছে! যেটা আপনি রাজলক্ষ্মী মার্কেটের সামনে দেখেছিলেন। মাত্র ২০ টাকার জন্য নেন নাই। ঠিক সেটাই।
——— দেখুন মিঃ আপনি কিন্তু লিমিট ছেড়ে ফান করছেন। আমি একটা মেয়ে মানুষ একা একটা ফ্ল্যাটে থাকি তাই আপনি মজা করছেন। হয়ত আপনি আমাকে চিনেন। ঐ দিন আমাকে দেখেছেন আর সেই মজাটা এখন নিচ্ছেন। আপনাদের মতো কিছু লাফাঙ্গা ছেলে টাইপের পুরুষ মানুষ আছে তারা মেয়ে মানুষের সাথে রহস্য করে মজা পায়।
————– দেখুন মেম আপনি ভুল করছেন আর আমার কথা বিশ্বাস করছেন না। আচ্ছা আজ সকালে আপনি বারান্দায় একটা তেলাপোকা মেরেছেন দেখুন সেই তেলাপোকা সেই খানেই পরে আছে। এখন তো বিশ্বাস হল আমি আপনার সাথে ফান করছি না।
কানের কাছে সেল ফোনটা নিয়ে কবিতা বারান্দায় যায়। ঘড়ির দিকে রাত ১২ টা এক মিনিট। লাইট জালিয়ে দেখে ঠিক তেলা পোকা যেটা মেরেছিল সেটা সেই খানে পরে আছে। ফোন কানের কাছে বলে উঠল হ্যালো মেম রাতে কিন্তু আপনার চুল বাঁধাটার মধ্য একটা আর্ট আছে। আর পিঙ্ক কালার আপনাকে দারুন মানিয়েছে। আজ মনে হয় পায়ে ন্যাল পলিস দিয়েছেন।
কবিতা চুপ হয়ে যায়। চার দিক ভাল করে দেখে। না কাউকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। তাহলে তাকে কোথা থেকে দেখা যাচ্ছে। ভয়ে চোখ মুখ লাল হয়ে যায়। খুব ধীরে বারন্দা থেকে ঘরের ভিতরে আসে। কানের কাছে ফোন টা ধরে রাখে। বালিশের নিচে ঠিকেই সেই পাওয়ার ব্যাংক টা ক্যাবল সহ রাখা। আলমারি থেকে ব্যাগটা বের করে। ব্যাগের মধ্য হাত দিতেই প্যান ড্রাইভ টা পেয়ে যায়। পিসি অন করে। বাহ পিসি চালু হয়ে গেল। কবিতা ভয়ে ভয়ে বলে হ্যালো আপনি কে?
———- আমি রহস্য মানব! আমার একটা কাজ আপনাকে করে দিতে হবে। কি কাজ পেন ড্রাইভে সব দেয়া আছে। শুধু একটা কথা মনে রাখবেন। মানুষের জিবনের কোন মুল্য নেই। তাই মূল্যহীন জীবন কে কোন ভাবে মূল্যহীন করে তুলতে চেষ্টা করবেন না। আমি চাই আপনি আমার প্রস্তাব ভাল করে স্টাডি করে আমাকে মেইল করবেন। আপনার পিসিতে একটা মডেম দেয়া আছে আর তাতে আন লিমিটেট জিবি আছে। কবিতা ভাল থাকুন কাল কথা হবে একেই সময়। আপনার ফ্রিজে রুপচাদা মাছ রাখা আছে ইচ্ছা করলে ভেজে খেতে পারেন। গত মাসে তো বলেছিলেন গুলসান ক্লাবে তারা মাছ ভাজতে জানে না। একটু ভেজে খান। শুভ রাত্রি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!