সেলিনা জাহান প্রিয়া’র গল্প-মাঝ রাত্রির রহস্য মানব (দ্বিতীয় পর্ব )
ধারাবাহিক গল্পঃ- মাঝ রাত্রির রহস্য মানব (দ্বিতীয় পর্ব )
রচনাঃ- সেলিনা জাহান প্রিয়া ।।
খুব চিন্তায় পরে গেল কবিতা। মাঝ রাত কিছুতেই ঘুম আসছে না। বারান্দায় জেতেও ভয় পাচ্ছে। সেক্টরের রাস্তা রাতের বেলা নীরব। মনে মনে ভাবছে লোকটা পাশের কোন ফ্ল্যাটে থেকে। কিন্তু আশপাশের কোন দালান থেকে কি আমার পা পর্যন্ত দেখা যায়। নাকি লোকটি কোন গোপন ক্যামেরা লাগিয়েছে। আর এত কিছু করার কি দরকার। আমাদের দালানের সিকিউরিটি চমৎকার। কি করে আমার ফ্ল্যাটে প্রবেশ করলো। চাবিই বা কোথায় পেল। সিকিউরিটি তাকে প্রবেশ করত দিল কি ভাবে?
না কিছুই আমার মাথায় আসছে না। প্যান ড্রাইভ এ কি আছে? না আমি এত রাতে কিছুই দেখতে চাই না। ঐ মানুষটি সব কিছুই কোন পরিকল্পনা ক্রেই করেছে।
কবিতা মনে মনে খুব ভয় পাচ্ছে। জানালা গুলো ভাল করে দেখে নিল। টি ভি ছেরে চিন্তা করতে লাগলো। আমি তো কারো খতি করি নাই। কে হতে পারে। আমার ঘর পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। প্যান ড্রাইভ টা হাতে নিয়ে তাকিয়ে আছে। ফ্রিজ টা খুলে দেখল বাহ বেশ বড় বড় রুপচাদা মাছ।
না এটা খাওয়া ঠিক হবে না। হয়ত কোন ক্যামিকেল থাকতে পারে।
আব্বুকে একটা ফোন দেয়া উচিৎ। মাকে বলা যাবে না। মা খুব ভিতু। ভাবিকে বললে মাঝ খান থেকে মজা নিবে। দুলা ভাইকে বললে হাসতে হাসতে বলবে ভাল গল্প বানিয়েছ শ্যালিকা তুমি। কি করি এত রাতে কি লিপু কে কল দিয়ে বলব। লিপু আবার ভাববে আমি হয়ত তাকে ভয় দেখাতে চাচ্ছি। যাতে সে তারাতারি বিয়ে করে। না কাউকে বলা যাবে না। আগে দেখি তার পেন ড্রাইভে কি আছে। আর সকালে দেখে নেব সিকিউরিটি কি করে। আমার বাসায় প্রবেশ করে আমার পিসি মেরামত করলো। আমার বালিশের নিচে পাওয়ার ব্যাংক রেখে গেল। আমার ফ্রিজে মাছ রেখে গেল। এটা কি ভাবে সম্বব। এই নয় তলা বাড়ি চার টা করে ইউনিট। ৩২ টা ফ্লাট। আমাদের কোন ফ্ল্যাটের মানুষ হতে পারে। কিন্তু সিড়িতে তো সিসি ক্যামেরা নেই।
নিজে নিজেই অনেক হিসাব মিলাতে লাগলো কবিতা। হাতে সেল ফোনটা নিয়ে দেখে একটা শূন্য শূন্য নাম্বার থেকে কল। না আমার ভয় পেলে চলবে না। কেউ পরিকল্পনা করে আমার পিছনে লেগেছে।
খুব ভাবতে লাগলো কে হতে পারে কি উদ্দেশ্য। যাই হউক আমি রাতের বেলায় পেন ড্রাইভ এ কি আছে দেখতে চাই না।
বারান্দায় যেতে সাহস পাচ্ছে না। মানুষের জীবনে কিছু সময় এমন হয় যে তার ছায়া দেখলেও সে ভয় পায়। আজ কবিতার অবস্তা ঠিক সেই রকম। অনেক কিছু ভাবতে ভাবতে ভয়ে ভয়ে এক সময় টি ভি চ্যানেলের খবর দেখতে লাগলো।
একটা খবর তাকে খুব বেশি ভয় পায়িয়ে দিল। ফ্ল্যাটে অজ্ঞাত মেয়ের লাশ। পুলিশ কোন কিছুই বের করতে পারছে না। কবিতা চিন্তা করলো বাংলাদেশে প্রতিটা নাগরিকের ডি এন এ সরকারি ভাবে রাখা উচিৎ। তাহলে কেউ মেরে ফেলে গেলে তার লাশ আপন জনরা। বিছনা থেকে উঠে ডয়ার খুলে একটা ঘুমের পিল খেয়ে নিল। এক সময় ঠিকই ঘুমিয়ে গেল। টিভি চলতে লাগলো। ফোন আর চার্জ দেয়া হল না।
বাহিরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। একটু একটু করে আকাশ ডাকছে।
যখন কবিতার ঘুম ভাংল তখন বেলা দুই টা। কবিতার ঘুমের পিল খাওয়ার কোন অব্যাস নাই। অনেক। তবু সে কিনে রাখে কিছু মেডিসিন। জ্বর ঠাণ্ডা ব্যাথা ইত্যাদি।
ঘুম থেকে উঠে ঘড়ি দেখে অবাক। কাজের বুয়ার কাছে চাবি আছে সে এসে ঘর মুছে দিয়ে যায়।
কাপড় গুলো কেঁচে দিয়ে যায়। কি কি কাজ কবিতা ফোনে বলে দেয়। আজ কাজের বুয়া আসে নাই। অহ আজ তো কাজের বুয়ার ছুটি। রবিবার বুয়ার ছুটি। কবিতা রাতের কথা কিছুটা ভুলে গেছে। আজ অফিসে যায় নাই। ব্যাংকের চাকুরী এক দিন না যাওয়া মানেই অনেকের সমস্যা। ফোনটা চালু করতে যেয়ে দেখে চার্জ দেয়া হয় না। এমনি সময় রাতের ফোনের কথা মনে পড়লো। সেল ফোনটা চার্জে দিয়ে ফোনটা অন করলো। ম্যাসেজ আর ম্যাসেজ। কবিতা ব্যাংকে ফোন করে ম্যানেজার কে বলল স্যার আমি একটা সমস্যায় আজ আসতে পারছি না। আর ফোনে চার্জ দেয়া ছিল না। রাতে ঘুমের মেডিসিন খেয়ে ছিলাম। ম্যানেজার একটু রাগের স্বরে বলল দেখুন কবিতা আপনি ক্রেডিটের চিপ। গত পাঁচ বছরে কোন দিন আপনি এমন কিছু করেন নাই। আপনার কাছে বেশ কিছু অতি জরুরী ফাইল। আপনার কাছে কি আমি এটা আশা করতে পারি? আপনি একটা মেইল করে দিন। আর ডাক্তারের একটা রিপোর্ট দিয়ে ছুটি চেয়ে নেন।
ব্যাংকের ম্যানেজার মিঃ ইকবাল সামস খুবেই দক্ষ ব্যাংকার। কিন্তু কবিতা কে এই ছোট ভুলের জন্য আজ তেমন কিছু না বলাতে কবিতা অবাক হয়েছে। কবিতা ফোনটা রেখে সেল ফোন থেকেই একটা মেইল করে দিল ছুটির জন্য।
বাথ রুমে গিয়ে ঝরনা টা ছেরে দিয়ে মনের মতো ভিজতে লাগলো। আয়নায় মুখটা দেখে নিল। ঝরনার পানি মাথায় পরতে পরতে চিন্তা করলো। না আমি কাউকে কিছুই বলব না। আমার বাসার চাবি কি করে পেল এটা আগে ভাবতে হবে। কারা আমার পিসি মেরামত করেছে টা দেখতে হবে। তার পর অন্য কিছু। সাওয়ার শেষ করেই মাথা মুছতে মুছতে বলল আমিও দেখে নিব এই লোক টা কি চায়? আমি আগে বের করি সে কি চায়। একটু কফি বানাতে বানাতে ব্যাগ থেকে পেন ড্রাইভ টা বের করে কম্পিউটার টা চালু করে পেন ড্রাইভ পিসিতে দিল।
চশমা টা ঠিক চোখ পরল। পিসির মনিটরে ভেসে এলো সেই ফাইল। ফাইল ওপেন করতেই কবিতা অবাক। একটা ভিডিও আর কিছু ডকুমেন্ট। ভিডিও চালু করতেই কবিতা একে বারে অবাক। একটা সাদা কালো মুখোশ পরে একটা মানুষের গভির কণ্ঠ ভেসে এলো।
———-স্বাগতম মিস কবিতা চৌধুরী। আমার বিশ্বাস আপনি এটা দেখছেন। আপনি আমার কথা গুলো মনের গভিরতা দিয়ে মুল্যায়ন করুন। আপনি একজন মানুষ কিন্তু রোবট না। আজকের প্রাইভেট কোম্পানি গুলো মানুষ কে কিন্তু রোবটের মতো ব্যবহার করছে। আপনি তেমনি একটা রোবট আপনার এই দুনিয়া এখন টাকার গোলামি করছে। টাকা না হলে আপনি যে মানুষ এটা প্রতিবেশীও ভুলে যায়।
কবিতা কফি খাচ্ছে আর দেখছে ভিডিও। মানুষটা বলে যাচ্ছে এই দুনিয়ায় সাহসীরা রাজার মতো ভোগ করে যদি সাহসের মধ্য তার পলিসি কে কাজে লাগায়। আপনার শিক্ষা আছে আপনি খুব ভাল করে সব কিছু বিশ্লেষণ করতে পারেন। আপনি চাইলে আমাদের সাহায্য করতে পারেন। তাতে আপনি আমি আর কিছু মানুষ হতে পারি রাজাদের রাজা। আমাদের সব আছে কিন্তু আরও দরকার। মনে রাখবেন টাকা ওয়ালার সব চেয়ে বেশি টাকা লাগে। আপনার নিরাপত্তা দিব আমরা। যেমন করে আপনাকে আমারা গত এক বছর ধরে রেকি করে পছন্দ করেছি। এখন আপনি চাইলে ও আমাদের কাছ থেকে আর বের হতে পারবেন না। হয়ত আমাদের সাথে থাকুন না হয় জাহান্নামি হউন। মনে রাখবেন যদি একশত টাকা চুরি করেন চর থাপ্পড় কেউ দিবে না। এক হাজার করলে কেউ হয়ত বাকা চোখে দেখবে এক লাখ চুরি করলে আপনার মতো মেয়ে কে একটা চর থাপ্পড় দিবে। আর যদি এক কোটি করেন মামলা হবে। আর এক শত কোটি টাকা করলে বিষয়টা কেউ হাল্কা ভাবে নিবে না। মামলা করতেও ভয় পাবে। আর এক হজার কোটি টাকা চুরি করলে দেশ আপনার সাহায্য করবে। কারন এটা একটা গেইম।
মনে রাখবেন বড় বড় দুর্ঘটনা গুলো অভিজ্ঞ লোকেরা করে। আমি চুরি করতে বলছি না। আমি একটা গেইমের অফার করছি। আমি চাই আপনার নামে যেন দেশে একটা মার্কেট হয়। যেই মার্কেট হবে কোটি পতি শিল্প পতি আর ব্যবসায়ীর অর্থের একটা ব্যাংক।
আমার কথা নাটকের মতো লাগছে। কিন্তু ঘটে গেলে হবে স্বপ্নের মতো। স্বর্গ আপনার পায়ের কাছে। লক্ষ্মী আপনার গোলামি করতে চায়। আপনি কি চান না যে এই শহরে আপনার গাড়িটা দেখে যেন বন্ধুরা বলে ইস ওর ভাগ্যটা যেন হিরার খনি।
কবিতা শান্ত হউন। যারা রেগে যায় আর তাঁদের রাগকে একটা নিদিষ্ট রাস্তায় চালিত করে তারা হয় সম্রাট। আপনার মনের রাগে পারমাণবিক জ্বালানি আছে। যেটা আমাদের কাজের জন্য জ্বালানি জোগাবে। ভাল থাকুন অন্য ফাইল গুলো পরতে থাকুন। রাতে ফোনের জন্য অপেক্ষা করুন।
আপনার সকল জবাব ফোনে পেয়ে যাবেন। ঘরের চাবি কি করে পেলাম। কম্পিউটার কি মেরামত করলাম। আপনাকে বারান্দায় আসলে কি ভাবে দেখা যায়। আর চাল কথা রুপচাদা কেমন ভাঁজলেন একটা ছবি কিন্তু আপনার ফেইস বুকে দিয়েন। আপনার ফেইস বুক আইডি পাস ওয়ার্ড খুব চমৎকার। বসের নাম সাথে হিটলারের নাম মিলিয়ে রেখেছেন।
কবিতা অবাক হয়ে গেল মাই গড আমার ফেইসবুক আইডি ও জানে তাহলে তো আমার ম্যাসেজ সব পরে ফেলেছে। আওহ আল্লাহ। যাই হউক এদের সাথে কোন ভুল সিদান্ত নেয়া যাবে না। মনে হয় কোন মাফিয়া।
কিন্তু আমার মাঝে তারা কি পেল?? আমি তো খুবেই সাধারন একটা মেয়ে। কবিতা আর কিছুই ভাবতে পারছে না। সেল ফোনটা হাতে নিয়ে ফেইস বুক চালু করলো। তার টাইম লাইনে লিখা ফ্রিজে রুপচাদা ভয়ে ভয়ে ভাজা হল না। তার বন্ধুদের কত লাইক কত কমেন্ট। একজন তার সাথের অফিসার লিখেছে ভালই অফিসে না এসে রূপচাঁদা ফ্রাই খান। একা একা খেতে চাইলে অফিস কামাই করে খান মেম।।
কবিতা চোখের চশমা খুলে মুখে হাত দিয়ে কম্পিউটারের মনিটরের সামনে বোকা হয়ে বসে রইল, হাতের কফি যেন আরও ভয়ে শীতল হয়ে গেল।।
মাঝ-রাত্রির-রহস্য-মানব(প্রথম পর্ব)