মুঠোফোনের অ্যাপভিত্তিক সেবা দিতে পারবে পাঁচ ধরনের যান
অনলাইনডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
মোটর কার, জিপ, মাইক্রোবাস, অটোরিকশা, অ্যাম্বুলেন্স ও মোটরসাইকেল—এই পাঁচ ধরনের যান মুঠোফোনের অ্যাপ্লিকেশনভিত্তিক ট্যাক্সিসেবা হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এ-সংক্রান্ত নীতিমালার একটি খসড়া তৈরি করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। খসড়াটি সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
মন্ত্রণালয় অংশীজন ও অন্য মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে খসড়াটি অনুমোদন করলে তা সারা দেশের জন্য প্রযোজ্য হবে। সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় ও বিআরটিএর সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। সূত্র বলেছে, বিআরটিএ খসড়া এই নীতিমালা ২৪ জুন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘রাইডশেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা ২০১৭’। ঢাকায় ইতিমধ্যে উবার, পাঠাও, চলোসহ বিভিন্ন নামে স্মার্টফোনের অ্যাপের মাধ্যমে যাত্রীসেবা চালু করেছে।
নীতিমালা করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও সরকার এখন এসব সেবার ভাড়া নির্ধারণ করে দেবে না। তবে যাত্রী-অসন্তোষ সৃষ্টি হলে সরকার ভাড়া নির্ধারণ করতে পারবে বলে খসড়া নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, রাইডশেয়ারিং সেবায় চালককে সব আইন মেনে চলতে হবে। স্বল্প দূরত্বেও যেতে হবে। যাত্রীদের সঙ্গে সদাচরণ করতে হবে। মোটরযানের যাবতীয় হালনাগাদ দলিলাদি এবং চালকের লাইসেন্স থাকতে হবে। নীতিমালার কোনো শর্ত লঙ্ঘন হলে রাইডশেয়ারিং প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ও যানবাহনের মালিকের সনদ বাতিল এবং দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
বিআরটিএর হিসাবে, বর্তমানে বাংলাদেশে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ৩০ লাখের কিছু বেশি। এর অর্ধেকের বেশি মোটরসাইকেল। আর রাইডশেয়ারিং সার্ভিস হিসেবে পরিচালনা করা যাবে এমন যান ৮৬ শতাংশ।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকাসহ বড় শহরগুলোর গণপরিবহনে নৈরাজ্য চলছে। উবারসহ অ্যাপভিত্তিক সেবা সম্প্রসারণ হলে গণপরিবহনে সুস্থ প্রতিযোগিতা বাড়বে। ইতিমধ্যে অটোরিকশা চালক-মালিকদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। তবে নীতিমালাটা হতে হবে যাত্রীবান্ধব। এসব সেবাও যাতে ট্যাক্সিক্যাব ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মতো না হয়ে যায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
সেবা পরিচালনার শর্ত
খসড়া নীতিমালায় শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, এই সেবা চালু করার আগে রাইডশেয়ারিং প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ যারা অ্যাপ তৈরি করবে এবং যানবাহনের মালিককে বিআরটিএ থেকে সনদ নিতে হবে। এরপর রাইডশেয়ারিং প্রতিষ্ঠান, গাড়ির মালিক ও চালকের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই করতে হবে।
খসড়া অনুসারে, এ ধরনের সেবা চালু করতে হলে অবশ্যই কমপক্ষে ২০০ গাড়ির একটি ফ্লিট থাকতে হবে। কোম্পানিকে টিআইএন সনদধারী হতে হবে। ব্যক্তিমালিকানাধীন গাড়ি হলে একজন একটি এবং ভাড়ায় চালিত হিসেবে নিবন্ধন নেওয়া গাড়ি হলে একাধিক এই সেবায় দেওয়া যাবে। তবে ব্যক্তিমালিকানাধীন গাড়ি নিবন্ধনের কমপক্ষে এক বছর পর এই সেবায় নিয়োগ করা যাবে।
প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব
রাইডশেয়ারিং প্রযুক্তি কোম্পানি এই সেবা নিরাপদ, সুশৃঙ্খল, নির্বিঘ্ন ও সহজলভ্য করবে। একটি ভ্রমণের সম্ভাব্য ভাড়ার পরিমাণ যাত্রার শুরুতেই যাত্রীরা যাতে জানতে পারে, সেই ব্যবস্থা থাকতে হবে। ভাড়া ও দূরত্বসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য যাত্রী যাতে একটি ইলেকট্রনিক রেকর্ড এসএমএসের মাধ্যমে পেতে পারে, এ-সংক্রান্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে। এ-সংক্রান্ত তথ্য প্রতিষ্ঠানের সার্ভারে অন্তত তিন মাস সংরক্ষণ করতে হবে। যাত্রীরা যাতে চালক, গাড়ি ও তার ভ্রমণ বিষয়ে মতামত/অভিযোগ বিআরটিএ ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে জানাতে পারে, সে ব্যবস্থা থাকতে হবে।
খসড়া নীতিমালায় একই যাত্রায় একের অধিক যাত্রী বহনেরও সুযোগ রাখা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আসন ফাঁকা থাকলে যাত্রীরা ভ্রমণপথে নেটওয়ার্কের মধ্যে সর্বোচ্চ দুজনকে সহযাত্রী করতে পারবে। তবে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে।
এই সেবার যৌক্তিকতা
রাইডশেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা প্রণয়নের কারণ হিসেবে বিআরটিএ বলছে, মোটরকার, জিপ, মাইক্রোবাসের মতো ছোট যানের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে শহর ও মহাসড়কে যানজট হচ্ছে। ব্যক্তিগত মোটরযানকে এক ব্যক্তি বা এক পরিবারের একক ব্যবহারে সীমাবদ্ধ না রেখে বহু মানুষের ব্যবহারের সুযোগ করা গেলে ব্যক্তিগত গাড়ি বৃদ্ধির প্রবণতা কমবে, যা যানজট নিরসনে ভূমিকা রাখতে পারে। পৃথিবীর অনেক দেশে এর সুফল পাওয়া গেছে।
বিআরটিএর একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো বড় শহরগুলোতে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ট্যাক্সিক্যাব এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশা খাতে যাত্রীসেবা নিশ্চিত করা যায়নি। শুরুতেই অনিয়ম, চাহিদার তুলনায় সংখ্যায় কম হওয়া এবং আইনের প্রয়োগে দুর্বলতার কারণে অটোরিকশায় দৌরাত্ম্য চলছে। এ ছাড়া বাস-মিনিবাসে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ নৈমিত্তিক। সিটিং সার্ভিসের নামে চলছে নৈরাজ্য। নীতিমালার পর অ্যাপভিত্তিক সেবা বাড়লে গণপরিবহনে অনেক বিকল্প হবে এবং প্রতিযোগিতা বাড়বে।
উবার ঢাকায় চালুর ঘোষণা দেওয়া হয় গত ২২ নভেম্বর। তিন দিন পরই বিআরটিএ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে উবারকে বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করে। তবে এতে উবারের সেবা বন্ধ থাকেনি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিতর্ক চলে। বেশির ভাগ মন্তব্যই উবারের পক্ষে। যাঁরা এর মধ্যেই উবার ব্যবহার করেছেন তাঁরা বলছেন, ঢাকায় এ রকম ব্যবস্থা থাকা উচিত। কয়েকজন মন্ত্রীও উবারের পক্ষে বক্তব্য দেন। এরপরই অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবাদানকারী দুটি প্রতিষ্ঠান উবার এবং শেয়ার এ মোটরবাইককে (স্যাম) আলোচনার জন্য বিআরটিএতে ডাকা হয়। এখন নীতিমালা তৈরির জন্য খসড়া করল বিআরটিএ।
জানতে চাইলে বিআরটিএর পরিচালক (প্রকৌশল) নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মানুষের চাহিদার কথা বিবেচনা করে একটি খসড়া তাঁরা তৈরি করেছেন। এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার মন্ত্রণালয়ের।
উৎস-প্রথম আলো।