প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না পেয়ে যুবককে অপহরণ

 

 

 

 

অনলাইন ডেস্ক  কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

জেরিন আক্তার। বয়স ৩০। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের এমএইচ শমরিতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের  সেবিকা। আর একই প্রতিষ্ঠানের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সিফাত। তার বয়স ২০ বছর। পড়ালেখার পাশাপাশি নার্স এসিস্ট্যান্ট হিসেবে  কাজও করতেন তিনি। এই সুবাদে দুজনের মধ্যে ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে সিফাতকে ভালো লাগতে শুরু করে জেরিনের। সেই ভালো লাগা থেকে ভালোবাসা। সাত-পাঁচ না ভেবে সিফাতকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে বসে জেরিন। কিন্তু সিফাত অসম এই প্রেম প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। এ ঘটনা মাস ছয়েক আগের। এরপর ওই হাসপাতাল থেকে চাকরি হারান জেরিন। কাজে যোগদান করেন মগবাজারের ওয়্যারলেস গেটের রাশমনো হাসপাতালে। কিন্তু এরপরও সিফাতের পিছু ছাড়েননি তিনি। বিষয়টি নিয়ে সিফাতের বাবার কাছেও যান জেরিন।  তাতেও কাজ হয়নি। এতে ক্ষুব্ধ হন জেরিন। যেকোনো উপায়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। সহযোগীদের নিয়ে অপহরণ করেন। কিন্তু তাতেও কাজ না হওয়ায় বেধড়ক মারপিট করেন। এতে সিফাতের এক হাত ও এক পা ভেঙে যায়। এই অবস্থায় পঙ্গু হাসপাতাল থেকে সিফাতকে উদ্ধার করে তার পরিবারের লোকজন। সিফাত বর্তমানে নরসিংদীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ব্যাপারে জেরিন ও তার ভাইসহ তিনজনকে আসামি করে একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেছেন সিফাতের পিতা মো. কামাল হোসেন। গত বুধবার রাতে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ৮ই জুন ক্লাস শেষে দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টায় সিফাত শমরিতা হাসপাতালে ডিউটি করেন। ডিউটি শেষে তার এক চাচার সঙ্গে নাখালপাড়ার বাসায় যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে মনু মিয়া স্কুলের সামনে পৌঁছালে জেরিন আক্তারের ভাই হাবিবুর রহমান শুভ তার সঙ্গে কথা আছে বলে ডাক দেন। এ সময় সিফাত তার কাছে গেলে কয়েকজন ধরে জোরপূর্বক সিএনজিতে তোলে। এরপর তাকে অপহরণ করে মগবাজারের ওয়্যারলেস গেটের রাশমনো হাসপাতালের লিফটের তিন তলার একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখে। এরপর তার চোখে-মুখে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারে। এতে তিনি রক্তাক্ত জখম হন। লাঠি ও লোহার রড দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় আঘাত করতে গেলে তা না লেগে ডান ও বাম চোখে লাগে। এছাড়া আঘাতে তার ডান হাত, ডান পা ও কোমর ভেঙে যায়। অবস্থা বেগতিক দেখে এক পর্যায়ে তারা সিফাতকে পঙ্গু হাসপাতালে ফেলে রেখে তার পিতা মো. কামাল হোসেনকে খবর দেয়। কামাল হোসেন জানান, এরপর পাশের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে অপারেশন করানো হয়। পরে নরসিংদী এনে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করি। তিনি জানান, জেরিন অনেক দিন থেকে আমার ছেলেকে প্রেম প্রস্তাব দিয়ে আসছিলো। কিন্তু আমার ছেলে ওই প্রস্তাবে রাজি হয়নি। ওই নারী আমার ছেলের চেয়ে বয়সে অনেক বড়। তার সঙ্গে ছেলের বিয়ে দেয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। আমার ছেলেকে বিয়েতে রাজি করাতে না পেরে হত্যা করতে চেয়েছিলো। কামাল হোসেন আরো বলেন, এই মেয়ের চরিত্র খারাপ। অনেক ছেলেকেই সে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে। এসব কারণে ওই হাসপাতাল থেকে তার চাকরিও গেছে। তিনি অভিযুক্তদের বিচার দাবি করেন।
এদিকে শমরিতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সিনিয়র ম্যানেজার জানান, মাস ছয়েক আগে তার চাকরি গেছে। শুনেছি, তৃতীয় বর্ষের একটা ছেলেকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিলো। তবে এ ব্যাপারে ওই ছেলে কখনো অভিযোগ করেনি। তিনি বলেন, যতটুকু জানি সে ঠিকমতো কাজ করতো না। এই কারণে তার চাকরি গেছে। এ ব্যাপারে তেজগাঁও থানা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান বলেন, এটি একটি প্রেমঘটিত ব্যাপার। মেয়েটি তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিলো। কিন্তু সিফাত প্রত্যাখ্যান করায় তাকে অপহরণ করে মারপিট করেছে। তিনি জানান, এ ঘটনায় তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে সিফাতের পিতা। মামলার দুই আসামি জেরিন আক্তার ও তার ভাই হাবিবুর রহমান শুভকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই মামলার অপর অজ্ঞাত আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. কামাল হোসেন আহত সিফাতের বরাত দিয়ে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন জেরিন। ওইদিন অপহরণ করার পরও তাকে বিয়ের জন্য চাপ দেয়। কিন্তু সিফাত অস্বীকার করায় তার ওপর নির্যাতন চালায়।
উল্লেখ্য, জেরিন আক্তারের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার দীর্ঘসাইর গ্রামে আর সিফাতের গ্রামের বাড়ি গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া থানার ঘাগুটিয়া পূর্বপাড়া গ্রামে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!