লিপু রহমান এর গল্প- যে অপেক্ষার শেষ নেই
কবি,
তুমি শুধু কবিতা লিখতেই পারো না, চরম ভাবে কবিতা আবৃত্তি করতেও পারো। সবাই জানে আমি তোমাকে ভুলে গেছি। আমিও বলি আমি তোমাকে ভুলে গেছি। কিন্তু তোমার কাছে যে আমি ঋণী। সে ঋণ শোধ করবার কোন সুযোগ তুমি আমাকে তখনো দাওনি আজও দিচ্ছো না। তোমার সাথে আমার যোগাযোগ নেই ঠিকই কিন্তু তোমার লেখা আজও খুঁজে খুঁজে পড়ি। তোমার অনুষ্ঠানে গিয়ে নিভৃতে দাঁড়িয়ে থাকি। জানি না তোমার মাঝে কি আছে? আমার স্বামী ভালোবাসা বলতে শুধু মিলিত হওয়া বোঝে। সে বলে- মেয়েদের গয়না-গাটি আর দামি দামি কাপড়-চোপড় দিলেই নাকি তারা সন্তষ্ট। এরপর তারা গদ গদ হয়ে ভালোবাসতে শুরু করে। তাই তো মেয়েরা টাকা ওয়ালা ব্যক্তিকে বেশি পছন্দ করে। আমার স্বামী টাকা ছাড়া আর কিছুকে ভালোবাসে কিনা আমার জানা নেই। কোন দিন সে আদর করে বলে নাই, আমি কেমন আছি? কবি, ভালোবাসতে হয় কিভাবে, তুমি যদি আমাকে না শেখাতে তবে কবেই আমি সংসার থেকে পালিয়ে যেতাম। ভালোবাসা কাকে বলে? কিভাবে ভালোবাসতে হয়? কিভাবে ভালোবাসা ধরে রাখা যায়? তুমি শিখিছো জন্যেই আজও আমার সংসার টিকে আছে। তাই তো আমি তোমার কাছে ঋণী। এ ঋণ শোধ করতে চাই কিন্তু কিভাবে শোধ করবো তা জানি না।
যখন তোমার সাথে আমার পরিচয় হয়, তখন জানতাম না তুমি বিবাহিত। যখন জানলাম, ততক্ষণে আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে। তোমার কথায়, কবিতা আবৃত্তিতে, তোমার গল্পে, আমি এতোটাই বিমোহিত হয়ে গিয়েছিলাম যে, মনে মনে আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। তোমার কণ্ঠ, তোমার গল্প, এতোটাই পৌরুষ দীপ্ত ছিল যে, আমাকে স্বপ্ন দেখতে তা উৎসাহিত করেছে। আমি একবারো ভাবিনি তোমার কথা। যা ভেবেছি সব আমার কথা, তোমাকে নিয়ে। আমার কন্ঠ তোমার খুব ভালো লেগেছিল। আমি এ থেকেই ভেবেছিলাম তুমি আমাকে পছন্দ করেছ। তারপর তাৎক্ষণিক কিছু কবিতা শুনিয়েছ- আমি কবিতাগুলোকে ভেবেছি আমাকে নিয়েই লেখা। তাই তো তোমার প্রেমে পড়েছিলাম। একবারো তোমার ব্যক্তিগত জীবন কিংবা অন্য কিছু ভাবিনি। যতই দিন যাচ্ছিল ততই আমি মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছিলাম। তোমাকে কতবার বলেছি-তোমার সামনে দাঁড়াবো। সে সুযোগও তুমি আমাকে দাওনি। শেষে তুমি আমাকে বললে- আমি একজন তোমার লেখার ভালো পাঠক তথা শুভাকাংখি। তুমি আরো বললে, আমাকে ভালোবাসার কথা কখনোই বলনি। কথা শুনে আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম। সেই সময় খুব জেদ চেপে গিয়েছিল। ভেবেছিলাম তোমাকে চরম শিক্ষা দিবো। প্রতিশোধ নিবো। তোমার বউকে আমাদের সম্পর্কের কথা বলবো। কিন্তু আমি কিছুই করতে পারিনি। আমি আবারো মুগ্ধ হয়ে গেছি তোমার দৃঢ়তার কাছে। জীবনে তুমি একজনকেই ভালোবেসেছ এবং তাকেই ঘরে এনেছ। তোমার জীবন সঙ্গিনীকে আমি কখনো দেখিনি। হিংসে করতে চাই না। তবুও করতে হয়। তোমার মতো মানুষকে স্বামী হিসেবে পেয়েছে! আচ্ছা- তুমি যতোটা তাকে ভালোবাসো, সে কি তা বোঝে? সেও কি তোমাকে সেরকম করে ভালোবাসে? জানি, এর উত্তর কখনো পাবো না। তবুও অপেক্ষায় থাকবো। কোন এক লেখার মধ্যে অথবা কোন অনুষ্ঠানে তুমি যদি এর উত্তর দাও!
উত্তর না দিলেই বোধ হয় ভালো হবে। আমি তোমার অনুষ্ঠানে যাবো উত্তরের আশায় কিন্তু উত্তর পাবো না। উত্তর তুমি দিও না। সেই উত্তর যদি আমার মনের মতো না হয় তবে অন্য কিছু ঘটে যেতে পারে। তোমার অচেনা থেকে, দূর থেকে, তোমার সব কিছু পড়বো; ওই একটি প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য। তা থেকে আমাকে বঞ্চিত করিও না।
ইতি
নিতি রহমান
বি.দ্র.
কবি, পত্রিকায় চিঠিটি পড়েছিলেন কিন্তু উত্তর দিতে পারেন নাই। ঢাকায় বই মেলায় যাওয়ার পথে বাসে পেট্রোল বোমার আঘাতে ঝলসে যান। তার একদিন পর এই ইয়াং প্রতিশ্রুতিশীল কবির মৃত্যু হয়।