সেলিনা জাহান প্রিয়ার গল্প: রাঙ্গামাটির অরন্য

 

 

রাঙ্গামাটির অরন্য

————— সেলিনা জাহান প্রিয়া

 

রাঙ্গামাটি স্বামীর সাথে বেড়াতে এসেছে পুস্প । পুষ্পের বিয়ে হয়েছে ১২ বছর । এক যুগ কতটা সময় । বাসে বসে পাহার আর মেঘের খেলা দেখছে । জুন মাস বৃষ্টি পাহার আর সবুজ রাঙ্গামাটি এ যেন বাংলাদেশের পাহাড়ি রাজ কন্যা । সবুজ আর সবুজ উঁচু নিচু পাহাড়ি রাস্তা । মন ছুঁয়ে যায় । কিছু দূর দূর সেনা আর পুলিশের টহল। বেতবুনিয়া থেকে পাহাড় আর আদি বাসি নারীদের দেখা যায় ।
পুষ্পের মন জুরিয়ে গেল পাহাড় দেখে । বনরুপা একটা আবাসিক হোটেল এ উঠেছে ।
পাশেই কাপ্তাই লেক । শীতল সচ্ছ জল । পুষ্পের স্বামী ব্যবসা করে । অনেক টাকা । তার সাথে দুই মেয়ে নিয়ে পুষ্পের সুখের সংসার । কোন কিছুতেই পুষ্পের আজ অভাব নেই । জিবনে যেন সুখ তার চার পাশে । পুস্প রাঙ্গামাটি সবাই কে নিয়ে ঘুরে বেরাচ্ছে । রিজাভ বাজার থেকে একটা নৌকা নিয়ে তারা সবাই কাপ্ততাই লেকে মনের সুখে হাসি খুশিভাগা করছে । আজ পুষ্পের স্বামীর যা কিছু সব পুষ্পের বাবা থেকে পেয়েছে । খুব বুদ্ধিমান ছেলে । পুষ্পের বাবার বন্ধুর ছেলে । পুস্প বিশ্ব বিদ্যালয়ে থেকে পাশ করা মেয়ে । খুবেই আধুনিকা বলা চলে । কাপ্তাই লেক চার দিক রাশি রাশি পানি । অনেক দূরে দূরে পাহাড় গুলো যেন মনে হয় ছায়া দিয়ে আছে । পুস্প শাড়ির আঁচল দিয়ে সান গ্লাস টা পরিষ্কার করে ভাল ভাবে দেখছে । মেয়েরা তো অনেক খুশি ।
বিকেলে তবল ছড়ি বাজারে একটা হোটেলে খেতে বসে সবাই । খাবার শেষ করে
আদি বাসি দোকান গুলো ঘুরে ঘুরে দেখছে । পুষ্পের মেয়ে বলল মা দেখ কি সুন্দর একটা ছাতা । বার্মার ছাতা এই খানের আদিবাসি মেয়েরা হয়ত বানাতে পারে ।
মেয়ে বলল এমন একটা ছাতা নানুর বাসায় দেখেছি মা।
এমন সময় পুষ্পের বলল তাই মা মনি । কই আমার তো মনে পড়ে না। আসলে পুস্পের
সব মনে আছে । জীবন থেকে চাইলে কি সব ভুলে যাওয়া যায় ।
স্বর্ণ টিলার পাশে এসেছে ছবি তুলতে । বেশ বড় একটা বট গাছ । বেশ কিছু মানুষ বড়শি দিয়ে মাছ ধরছে । পুষ্পের স্বামী পুস্প কে বলল মাছ ধরা একটা নেশা । জিবনে বড়শি দিয়ে মাছ ধরা হল না। পুস্প বলল যেই মাছ ধরেছ তাতে জীবন ধন্য। আর নতুন করে কোন মাছ ধরার দরকার নাই । পুষ্পের স্বামী বলল হা রাজ কন্যা রাজ্য আর দুইটা পারীর মত মেয়ে আর কি চাই বল । দুই মেয়ে তার বাবা কে বলে আব্বু
আম্মু কি রাজ কন্যা ? তাহলে আমরা কি রাজ কন্যার মেয়ে । পুস্প হেসে বলে হ্যা তোমার রাজ কন্যার মেয়ে । এমন সময় কাছে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে নদীর পাশে একটা ১৪ বছরের ছেলে একটু হেসে বলল তোমরা যদি রাজ কন্যা কন্যা হউ আমি রাজ পুত্র । পুস্প অবাক হয়ে দেখল একটা দারুন কিশোর ছেলে । হাতে কিছু খাবার নিয়ে যাচ্ছে হয়ত কারো জন্য । পুস্প বলল তা রাজপুত্র তুমি কি এই এলাকার এলাকার ছেলে বাবা ?
—- জি আমি এই এলাকার ? আপনারা কি বেড়াতে এসেছেন ।
—- হ্যা । আমাদের একটা ছবি তুলে দাও না।
—- ক্যামেরা দিন তুলে দিচ্ছে ।
—- তোমার দেরি হবে না তো বাবা ।
—- না দেরি হবে না আব্বুর জন্য নাস্তা নিয়ে যাচ্ছি । সময় পেলেই আব্বু
মাছ ধরতে চলে আসে ।
—- কি করে তোমার আব্বু ।
—- আমার আব্বু এখানে আদিবাসিদের জীবন মান উন্নায়নে কাজ করে ।
—- খুব ভাল কি নাম তোমার বাবা ।
—- অরন্য রায়হান
—- সুন্দর নাম ।
পুষ্প আর তার পরিবারের ছবি তুলে দিল অনেক গুলো । পুষ্পের স্বামী ছেলেটা কে কিছু টাকা দিতে চাইলে ছেলেটা একটু হেসে বলে দুনিয়ার সব কাজের আঙ্কেল পারিশ্রমিক নিতে হয় না। আমার জন্য দোয়া করবেন । তাতেই চলবে ।
—পুষ্প বলল বা খুব সুন্দর কথা ঠিক বলেছ । তা কি কর বাবা তুমি
— আমি পড়ি আর বাবার কাজে সাহায্য করি ।
—- তোমার মা কি করে ?
—- সরি ! আমার মা নেই ।
—- অহ ! সরি বাবা ।
— না সরি বলার কিছুই নেই । আব্বু বলে দুনিয়ায় সবার সব কিছু থাকে না।
আমার আব্বুর ও মা নেই আমার ও মা নেই ।
—- অহ ! ঠিক আছে বাবা । আমার কয়দিন রাঙ্গামাটি আছি ।বনরূপা তে ।
হোটেল হিল প্যালেস । তুমি এক সময় আসো বাবা ।
অরন্য যাওয়ার সময় বলে একটা কথা বলি । আমি আপনাকে আগে কোথায় জানি দেখেছি ঠিক মনে করতে পারছি না। আচ্ছা মনে হলে আমি বলব । এখন আসি ।
এরা দু জন আপনার মেয়ে তাই না।
—– হ্যা বাবা । ভাল থাকবেন ।
অরন্য তার বাবা কাছে আসতেই তার বাবা একটু হেসে বলল কি বাপ জান এত দেরি কেন । দেখ কয়টা মাছ ধরেছি ।
—- একটাও না ! বাহ ! আব্বু একটা ছিপ আমাকে দাও । দেরি হল কেন শুনলে তুমি হাসবে ।
—– আচ্ছা বল হাসব না।
—— বকা দিবে না তো ।
—– না।
—– তোমার মানি ব্যাগে যে ছবিটা আছে ঠিক সেই রকম একজন মহিলা কে
দেখলাম আজ ।
—– বাহ ! ভাল ! বাবার সাথে ফাজলামি !
—– আব্বু সত্য একটু একটু মিল আছে । সে তার স্বামী আর দুই মেয়ে নিয়ে বেড়াতে
এসেছে ।
—– তা আমার মানি ব্যাগের ছবির মহিলা তোমার কি হয় ।
—— কেন আমার মা হয় ।
—— তাহলে তুমি কেমন ছেলে মাকে চিনলে না। আর মা তোমাকে চিনল না।
—— আব্বু তুমি না সব সময় মজা কর । আর হাসতে থাক ।
—– যা আর হাসব না। মহিলার নাম কি জিজ্ঞাস করিস নাই ।
—– না তো আব্বু তা জিজ্ঞাস করি নাই ।
—– তা যেয়ে দেখ কি বলে । যদি ঐ মহিলা বলে তার নাম পুষ্প তাহলে কিন্তু
আমার কোন দোষ নেই । মেয়েদের মা ডাকলে তারা খুব মায়া করে ।
কিন্তু আবার আমার স্ত্রী মনে করিস না । হা হা হা
—– আচ্ছা আব্বু তুমি আম্মুর কথা শুনলে এত হাস কেন । আমার আম্মুর জন্য
তোমার কোন মায়া হয় না।
—– হা হয় । তাই তো হাসি । তোমার মত একজন রাজ পুত্র যে আমাকে উপহার দিল
—- আব্বু সব সময় তুমি ফান কর ।
—- আর তুমি আমার ছেলে হয়ে আমার সাথে কি করছ ।।
—– আব্বু সত্যি তোমার মানি ব্যাগের ছবির মতো ঐ ভদ্র মহিলা । আমাকে
বিশ্বাস কর ।
—- বিশ্বাস করতে বলছ । আচ্ছা করলাম । এখন যাও । চা টা খুব মজা হয়েছে ।
কিন্তু আজ একটাও মাছ পাই নাই ।
অরন্য একটু হেসে বলল তোমার কপাল আজ ভাল না। আমি যাই আব্বু । তারা তারি চলে আসো । আমি একটু পুলিশ লাইন হাসপাতালে যাব ।
—- পুলিশ হাসপাতালে কেন ।
—- তোমাকে না বললাম ঐ খানে আজ একটা হাতি পাহাড়ে নিচে পড়ে যাওয়া
গাড়ি তুলবে ।
—- আচ্ছা যাও ।
অরন্য আর তার বাবা খুব মজা করে । বাপ ছেলে কিন্তু চলে বন্ধুর মতো । অরন্য
রাঙ্গামাটি সরকারী স্কুলে পড়ে । যাবার পথে আবার পুলিশ লাইনের একটা মোড় আছে ঐ খানে অরণ্যের সাথে দেখা পুষ্পের ।
—– এই খোকা কোথায় যাও ।
—– আরে আপনারা । একটু সামনে যাব । হাতি দিয়ে পুলিশের গাড়ি তুলবে ।
তা দেখতে ।
—– এটা কোথায় ?
—- একটু সামনে গিয়ে হাতের ডানে দুই মিনিটের পথ । মানে পুলিশ হাসপাতালের
সাথে । গেলে চলেন ।
দুই মেয়ে বলল আম্মু হাতি দেখব । পুষ্পের স্বামী বলল চল যাই দেখি ।
—- পুষ্প বলল তোমার নাম জানি কি ?
—- আমি অরন্য রায়হান ।
—- আচ্ছা আপনাদের নাম জানা হল না।
—- পুষ্প একটু হেসে বলল আমার বড় মেয়ের নাম । ঝুমুর আর ছোট মেয়ের নাম
নুপুর । আর তাদের বাবার নাম মাহামুদ । আমি পুষ্প ।
অরন্য চুপ করে দাড়িয়ে গেল । পুষ্পের দিকে ভাল করে চেয়ে দেখল । কি নাম আপনার ? আর একবার বলুন ।
—- আরে বাবা তুমি চুপ হয়ে গেলে । আমি পুষ্প । এত চেয়ে কি দেখছ ।
—- সত্যি আপনি পুষ্প । আপনার নাম পুষ্প ।
—– হ্যা কেন ।
—- না। কিছু না। এমনেই বললাম । আমি যাই ।
—- হাতি দেখাবে না।
—- ঐ তো হাতি আপনারা দেখুন আমি যাই বলে অরন্য একটা দৌড় দেয় । আর দৌড়াতে থাকে । পুষ্প বোকার মত বলে নাম শুনে কেউ এমন করে । আজব ছেলে।
পুষ্প আর সবাই মিলে হাতি দেখছে । অন্য একটা ছেলে বলল অরন্য এত জুরে
দৌড় দিল কেন ? কিছু হয়েছে নাকি ?
— পুষ্প ঐ ছেলে কে বলল তুমি অরন্য কে চেন নাকি ?
— হ্যা কেন চিনব না। আমাদের কোয়াটারে পাশেই থাকে । ওর বাবার সাথে ।
—- ওর নাকি মা নাই ।
—- হ্যাঁ ওর মা নাই । ওর বাবা আর এক ফুফু ফুফা সাথে এই খানে থাকে ।
—– ও আচ্ছা । খুব ভাল ছেলে খুব সুন্দর করে কথা বলে । ও আসলে বল
যেন আমার সাথে দেখা করে ।
—- জি আচ্ছা বলব ।
পুষ্প হাতি দেখতে থাকে । অরন্য ততক্ষণে তার বাবার কাছে এসে হাপাতে থাকে ।
— কি রে আজ কি ফরেস্ট অফিসারের কুকুর পেল না কি তরে ।
—- আব্বু তা না ।
—- তবে কি ?
—- ঐ মহিলার নাম পুষ্প ।
—- যা তাই নাকি ! দাড়া দেখি মাছে বড়শি খাচ্ছে । একটা ছিপ টান দেই । অহ মাছ
তো পেয়ে গেলাম । মনে হয় অনেক বড় অরন্য ।
—– আব্বু তুমি কি আমাকে বিশ্বাস করছ না।
—– করছি বলেই তো মাছ টা ধরেছি । তা পুষ্প কে বললি না। আমি অরন্য ।
—- আব্বু তোমার ছবিটা দাও তো ।
—- আচ্ছা ছবি দেয়া লাগবে না। কোথায় উঠেছে । চল যেয়ে দেখি আসি ।
—- আব্বু জানি তুমি আমার সাথে ফান করছ ।
—- আরে পাগল তো মা হলে তকে চিনত না।
—- তুমি তো বলেছ মা হারিয়ে গেছে । আমার মায়ের নাম পুষ্প ।
—– হ্যাঁ ঠিক বলেছি ।
—- তোমার পকেটের ছবির সাথে তার চোখ খুব মিল ।।
—- আরে পাগল মানুষের মত মানুষ হয় । অনেক সময় নাম মিলে যায় । শুন
তার সাথে কে কে আছে ।
—- তার দুই মেয়ে ঝুমুর আর নুপুর । স্বামী মাহামুদ ।
—- তাহলে বাবা দেখ । সে অন্য মহিলা । তোর মা না। তোর মায়ের কাছে
তুই ছাড়া আর কেউ থাকার কথা না । চল বাড়ি যাই আজ আর মাছ ধরব না।
— না তুমি মাছ ধর । শুধু আমাকে ছবিটা দাও ।
—- আচ্ছা নে । কিন্তু বাবা ছবিটা হারাবে না। আমার কাছে আর নাই ।
সেই ঢাকা ছাড়া আর ছবি পাব না।
পাশ থেকে এক জন বলল আপনারা বাপ ছেলে পারেন মিঃ আদনান ।
আদনান একটু হেসে বলল । কি আর করব বলেন একটা ছেলে আমার । আল্লাহর তাকে কি ভাবে যে দিয়েছে তা একমাত্র আল্লাহ্‌ জানে চলেন বড়শি ফেলি দেখি
কি হয় আর একটা পাই কিনা।
পরের দিন পুষ্প বনরূপা মার্কেটের সামনে দাড়িয়ে আছে । এমন সময় আরন্য তার সামনে দাড়ায় ।
—– আরে অরন্য । কখন এলে । আমি খুব মিস করছিলাম তোমাকে বাবা । কাল
এভাবে চলে গেলে কেন ? আমার মেয়েরা তো হাতি দেখে খুব খুশি । ঐ যে ওরা
আসছে । তুমি কিন্তু বাবা কালকের মত আজো আমার দিকে তাকিয়ে । কিছু
বলবে ।
—- অরন্য মাথা নেরে বলল না। আবার বলল হ্যাঁ ।
—- কি বলবে বল
অরন্য পকেট থেকে একটা ছবি বের করে পুষ্পের হাতে দেয় । পুষ্প এটা কি বাব
অরন্য বলে দেখুন তো চিনতে পারেন কি না। পুষ্প ছবিটা হাতে নিয়ে বোকা হয়ে যায়
এটা তো তার ছবি । বাবা এই ছবি কোথায় পেলে । অরন্য এবার বলল আপনি
ছবিটা চিনতে পারলেন ।
—- হ্যাঁ কেন চিনব না। এটা আমার ছবি । আমি কেন চিনব না। এই ছবি কোথায়
পেলে ।
—- তাহলে আপনার নাম পুষ্প মানে ভাল নাম ফারহানা খানম ।
—- হ্যাঁ । আমার ভাল নাম ফারহানা খানম ।
—- বাবা তুমি কে । এই কথা বলে অরণ্যের মাথায় হাত দেয় । অরন্য মাথা থেকে
হাত টা সরিয়ে নিয়ে যায় ।
—– আমি অরন্য রায়হান । এটাই আমার পরিচয় ।
—- তুমি আমার সাথে হোটেল রুমে চল । অরন্য কে নিয়ে হোটেল রুমে যায় ।
পুষ্পের স্বামী আরে অরন্য বাবু যে । কি পুষ্প ওকে কোথায় পেলে ।
—- এই মার্কেটের সামনে । তুমি কি বাহিরে যাবে আমি একটা বিষয় নিয়ে ওর সাথে
কথা বলব ।
—- আচ্ছা তুমি কথা বল । আমি একটু বাহিরে যাচ্ছি । মেয়েদের দিকে খেয়াল রেখ
বিকালে রোদ কমলে ঘুরতে বের হব। বলে পুষ্পের স্বামী বাহিরে চলে যায় ।
পুষ্প বলতে লাগলো বাবা এখন বলত তুমি এই ছবি কোথায় পেলে ।।
আমার নাম কি করে জান ?
—- আমি আরও অনেক কিছু জানি ।
—- কি জান বাবা । আমাকে বলল ।
—- কেন আপনি কাউকে খুঁজছেন মনে হয় ।
—- না বাবা কাউকে খুঁজি না। তুমি বল কি করে তুমি আমার নাম জান ।
—- অরন্য একটু হেসে বলল । আপনি খুব বেহেলা বাজাতে পারনে । তাই না।
—- হ্যাঁ । পাড়ি ।
—- আমিও পাড়ি । তবে আপনি খুব ভাল রান্না পারেন ।
—- হ্যাঁ তা তো সব মেয়েদের পারতে হয় । তবে বেহেলার কথা কি করে জান ।
—- অরন্য বলল ভাল থাকেন । আমি যাই । এই ছবিটা আপনাকে দিয়ে গেলাম ।
এটা আমার এক বন্ধুর মায়ের ছবি । আমাকে দিয়ে গিয়েছিল । সেই বন্ধুর মা
খুব ভাল বেহেলা বাজাতে পারত । তাকে একটা ক্লিনিকে জন্ম দিয়ে ফেলে আসে।
একটা নার্সের কাছে ।
—- না বাবা এটা মিথ্যা ! আমি তাকে ফেলে আসি নাই । তার বাবা তাকে চুড়ি করে
নিয়ে পালিয়ে যায় ।
—- যেই মানুষটা জেলে থাকে সে বাচ্চা নিয়ে পালাই কি করে ।
—- তুমি কি বলতে চাও । আমাকে পরিষ্কার বল ।
—- যে মানুষটা কে আপনার বাবা অপমান করল । আর সেই দিন আপনি কিছুই
বলেন নাই । আপনি আপনার বাবার কাছে থেকে গেলেন । পড়ে মানুষটা
বেঁচে আছে কি না মরে গেছে জানতে চাইলেন না। আর বলছেন । বাচ্চা চুড়ি
করেছে । বাহ চমৎকার ।
—- তুমি কে ? কি করে জান সব আমাকে বলল ।
—- আমি অরন্য । আমার বন্ধু আমাকে সব বলে গেছে ।
—- ও এখন কোথায় ?
—- আপনাকে বলতে নিষেধ করে গেছে । বলে অরন্য রুম থেকে বের হয়ে যায় ।
পুষ্প তার পিছন পিছন আসে । অরন্য নেমেই তার সাইকেল নিয়ে চলে যায় ।
পুষ্প পাগলের মত কাদতে থাকে । কাদতে কাদতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে । হোটেল থেকে
পুষ্পের স্বামী কে ফোন করে আনা হয় । দুই মেয়ে বলে আব্বু ঐ ছেলেটা কি জানি বলেছে আর আম্মু কান্না করছে । আর কান্না করতে করতে অজ্ঞান হয়ে গেল ।
অরণ্যের বাবা ছেলে দিকে তাকিয়ে কি রে এত হাসছিস কেন অরন্য ।
—- না বাবা । হাসির কোন কারন নেই । বাবা কে জরিয়ে ধরে বলে বাবা তুমি
ঠিক বলেছ । মানুষের মত মানুষ হয় । অনেক সময় নামেও মিলে যায় । কিন্তু
আসলে সেই মানুষ কিন্তু আর এই মানুষ হয় না। আব্বু আমি পাশ করলে
ঢাকা ভর্তি হব না। আমি রাঙ্গামাটি তে ভর্তি হব ।
—- তাহলে তোমার পুষ্প মিশন শেষ । তা আমার ছবি বাপ জান ।।
— বিকালে দিব তোমাকে । আমি যাই । অরন্যের একটা প্রিয় জায়গা হল ডিসির বাংলা । সাইকেল নিয়ে সেই জায়গায় গিয়ে একা একা কান্যা করতে লাগলো । আর বলতে লাগলো । আম্মু সরি তোমাকে মা বলে ডাকতে পারলাম না। জিবনে তোমাকে
দেখতে পাব চিন্তাও করি নাই । আমি মিথ্যা বলেছি । আমাকে মাপ করে দিও । কাপ্তাই লেকের পারে বসে কান্না করছে আর কান্না করছে । সন্ধ্যার একটু আগে অরন্য তার প্রিয় সাইকেল নিয়ে বাসায় ফিরে আসে ।
মাগরিবের আজান হচ্ছে অরন্যের বাবা ছেলে কে দেখছে বার বার । ছেলের
কাছে গিয়ে বলল । কোন কিছু নিয়ে মন খারাপ করতে হয় না বাবা।
মানুষের জিবনে অনেক কিছু হয় । এটাই মানুষের জীবন । স্বাভাবিক ভাবে জীবন কে মেনে নিতে শিখ । জীবন হল একটা যুদ্ধ । কেউ জয় হয় কেউ পরাজয় হয় । তবে
সম্মানের জীবন অনেক বড় । তুমি কিছু হয় তো আজ আমার কাছ থেকে আড়াল করছ । তবে বাবা আল্লাহ্‌ মানুষকে পরীক্ষা করে । তুমি আল্লার প্রতি বিশ্বাস রাখ
কোন না কোন দিন তোমার মা তোমাকে খুঁজতে আসবে ।
পুষ্পের জ্ঞান ফিরে মাহামুদ বলে কি হয়েছে । পুষ্প কাদতে কাদতে বলে মাহামুদ তুমি
তো সবেই জান। ঐ অরন্য মনে হয় আমার ছেলে । সে আমার সাথে মিথ্যা বলেছে।
অরন্য আমাকে ঠিক চিনেছে । আমাকে আমার ছেলের কাছে নিয়ে যাও । ঐ কোয়াটারের পাশেই ওরা থাকে । মাহামুদ বলে তোমার শরীর তো খুব খারাপ । ডাক্তার বলল মানসিক সমস্যা আপনি নিয়ে যান । যা দেখতে চাইছে তা দেখলে ঠিক
হয়ে যাবে । পুষ্প কে নিয়ে মাহামুদ অরন্যের বাসায় আসে । পাহারের ঢালে একটা
বাসা একজন দেখিয়ে বলে এটা অরন্যের বাসা । পুষ্প ঢাল রাস্তা দিয়ে নেমে চুপ চাপ
অরন্যের ঘরে যায় । চেয়ে দেখে আদনান অরন্যের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে । অরন্য
তার পড়ার টেবিলে বসে পড়ছে ।

—পিছন থেকে পুষ্প অরন্যের বাবা কে বলে । আদনান তুমি পারলে আমাকে
এমন করে ফেলে আসতে । অরন্য বলে আব্বু উনাকে চলে যেত বল । আমার
কোন মা নেই । উনাকে আমি চিনি না।
— আদনাল সেই আগের মত পুস্পকে বলল । পুষ্প আমি অতীত সামনে আনতে চাই
না। শুধু বলব । আমি ভাল আছি তবে তোমার ছেলে তুমি চাইলে নিতে পার ।
— আমার ছেলে তো আমি নিব । কিন্তু আমি সত্য জানতে চাই । সত্য টা তোমার
বাবার কাছ থেকে জানলে ভাল হবে । আমি সত্য বলতে জানি আমার বিশ্বাস
আমাকে ঠকিয়েছে ।
— আমার বাবা আর তুমি কেউ কাউকে মেনে নাও নেই ।
—- হ্যাঁ তাই তোমার বাবা আমাকে জেলে দিয়েছে । তোমার সাথে যোগাযোগ করতে
দেয় নাই । তোমাকে হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়েছে । তোমার বাবা আমাকে তিন বছর জেলে রাখে । তিন বছর পড় আমি আমার সন্তান কে তোমার মায়ের প্রিয় বান্ধবি জেনেফার গমেজ থেকে আমার অরন্য কে পাই । জেনেফা একজন সত্য নারী ছিল । পুষ্প কাদতে লাগলো । আদনান তুমি আমার ভালবাসা । এটা আমি অস্বীকার করি না। আমি পাগল ছিলাম বাচ্চা বাচ্চা করে । চার বছর পড় বাবা আমাকে বিয়ে দেয় । আমি ধীরে ধীরে ভাল হই । একদিন বাবা বলে তুমি দেশের বাহির চলে গেছ । আমি অনেক চেষ্টা করে তোমাকে পাই না। তার পর আবার সংসার
। তবে সত্যি আমি তোমার কাছে হেরে গেছি । তুমি তোমার অরন্য কে দেখে রেখ । আমি এত বিশাল অরন্যের মা হতে পাড়ি না। যে তার বাবার কষ্ট হবে জেনে বিশাল
দুঃখ নিয়ে তার পরিচয় গোপন করে চলে আসে সে সত্যি বিশাল । তোমার মত বিশাল
যে আমার বাবার টাকা কে পা দেখাতে পারে তার ছেলে তার মত হবে এটাই আমার বিশ্বাস । আদনাল বলল সব আমাদের কপাল । তবে অরন্য তোমার কাছে যাবে আমি কথা দিলাম । আমি চাই অরন্য তার মায়ের স্নেহ পাক । আমি একটা পাগল মানুষ ।
পুষ্প বলল কিছু খুজতেছ মনে হয় । সিগারেট নাকি । আদনান একটু হেসে বলল
আমি এখন সিগারেট খাই না। এটা তোমার জন্য উৎসর্গ করেছি ।
—- মানে !! পুষ্প বলল বুঝতে পেরেছি মানে ঘৃণা করেছ আমার মত ।
— আদনাল বলল অনেক রাত এখন ৯ টা বাজে । তোমার জন্য কেউ দাড়িয়ে অপেক্ষা
করছে । যাও । চলে যাও । অরন্য ইনি তোমার মা । আমদের ভুলে তুমি তোমার মাকে অসম্মান কর না। আল্লাহ্‌ হয়ত তোমার মাকে মিলিয়ে দিয়েছে । তুমি তোমার মাকে বিদায় দিয়ে আসো ।অরন্য কে বুকে জরিয়ে পুষ্প বলে বাবা তুমি আমদের ভালবাসার সেতু বন্ধন । তোমার বাবা একজন সৎ মানুষ । তার টাকা না থাকতে পারে । ইমান আর সততা আমাকে নতুন করে বাচতে শিখিয়েছে । আমার বাবা মা যেই ভুল করেছে আমরা সেই ভুল থেকে মুক্তি চাই । আমরা মানুষ এটাই আমাদের পরিচয় । বংশ টাকা যেন কোন মানুষের পরিচয় না হয় ।।মা ছেলে একজন অন্য জন কে জরিয়ে কাদতে থাকে । পুষ্প যেন এক যুগ পড়ে ছেলে কে পেয়ে তার বুকের সব কষ্ট চোখের জলে ভেসে যাচ্ছে ।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!