রাজনৈতিক সমঝোতায় খালেদার মুক্তি!
অনলাইন ডেক্স । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
কারান্তরীণ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি রাজনৈতিক সমঝোতাতেই হতে পারে। উন্নত চিকিৎসার জন্য প্যারোলে মুক্তি দিয়ে লন্ডনে পাঠানোর জন্য সরকারের সঙ্গে দরকষাকষি চললেও এ ব্যাপারে দেখে-শুনে-বুঝে নীতিতে এগোচ্ছে বিএনপির শীর্ষ নেতারা। ৭৩ বছর বয়সী খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিলেও দরকষাকষি ও সমঝোতার মাধ্যমে সর্বোচ্চ রাজনৈতিক অর্জন বের করে আনতে চান দলটির নীতি-নির্ধারকরা। সরকারের নীতি-নির্ধারকরাও খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি ও লন্ডনে তার চিকিৎসার ব্যাপারে ইতিবাচক। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে একাধিক বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিএনপির একজন শীর্ষ নেতা বলেন, খালেদা জিয়া এখনো বিদেশে চিকিৎসার ব্যাপারে রাজি নন। তিনি চান রাজধানীর একটি হাসপাতালে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের মাধ্যমে চিকিৎসা করাতে। তবে খালেদা জিয়ার পরিবার ও দলের বেশিরভাগ শীর্ষ নেতাই চান প্যারোলে হলেও খালেদা জিয়ার যেন মুক্তি হয়।
বিএনপির হাইকমান্ডের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আপসহীন যে ভাবমূর্তি সেটা যাতে অটুট থাকে সে বিবেচনা থেকেই এ বিষয়ে তড়িঘড়ি করছেন না তারা। সরকারের তরফ থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত ৬ জন সংসদ সদস্যের শপথ নেওয়ার শর্তে খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তির আভাস দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক সমঝোতার স্বার্থে সে বিষয়টিও ইতিবাচকভাবেই বিবেচনা করছেন তারা।
তারা মনে করছেন, খালেদা জিয়া কারাগারের বাইরে থাকা মানে দলের নেতাকর্মীদের মাঝে বাড়তি অনুপ্রেরণা। দেশের বাইরে চিকিৎসা চললেও দলের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের বিষয়ে তার সিদ্ধান্ত জানানো সহজ হবে। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে দলের মধ্যে যে হ-য-ব-র-ল অবস্থা সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোও সম্ভব হতে পারে।
বিএনপির ভেতরে ক্ষুদ্র হলেও আরেকটি অংশ আবার মনে করছে, দরকষাকষির মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তি হলে রাজনৈতিকভাবে যত সুবিধাই আদায় করা যাক না কেন সেটা শেষ পর্যন্ত আপস। খালেদা জিয়া দেশের মানুষের কাছে আপসহীন নেত্রী হিসেবেই পরিচিত। আইনগত ও রাজপথের লড়াইয়ের মাধ্যমে তার মুক্তিকে সম্মানজনক মনে করছেন তারা।
দলের মধ্যে বিরোধিতা থাকলেও খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা ও দলের শীর্ষ নেতারা চাইছেন প্যারোলে হলেও খালেদা জিয়ার মুক্তি হোক। এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে দরকষাকষিও এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখানো হচ্ছে। এর আগে, গত বছরের নভেম্বর মাসে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, বিএনপি চাইলে খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তি দেবে সরকার। তবে শর্ত হিসেবে বিএনপির নির্বাচিত ছয় সংসদ সদস্যের শপথ নেওয়ার শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার স্বার্থে সরকারের এই শর্তে সংসদে যেতে রাজি বিএনপি। তবে এর জন্য পাল্টা আরও কিছু শর্ত দিয়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দরকষাকষি চালিয়ে যাবেন তারা।
বিএনপির নেতারা, খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি ও তাদের নির্বাচিত ছয় জন সংসদ সদস্যের শপথের জন্য শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চায়। এর মধ্যে দরকষাকষি করে যতটা পারা যায় রাজনৈতিক সুবিধা তারা আদায় করে নেবে সরকারের কাছ থেকে। খালেদা জিয়ার মুক্তির পাশাপাশি ২৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে করা ৯০ হাজার মামলা প্রত্যাহার এবং স্বাভাবিক রাজনীতির সুযোগ চায় দলটি।
এ অবস্থায় দলের শীর্ষ নেতারা চাইছেন, দল গোছাতে হলে এ মুহূর্তে খালেদা জিয়ার বিকল্প নেই। আইনি প্রক্রিয়ায় তাকে মুক্ত করে আনা সুদূরপরাহত। কেননা বিচার বিভাগের ওপর সরকার নিয়ন্ত্রণ করছে। এ কারণে খালেদা জিয়ার জামিনে মুক্তির সব ধরনের আইনগত ভিত্তি থাকার পরও তার মুক্তি মিলছে না। আর মাঠে আন্দোলন গড়ে তোলারও কোনো বাস্তবতা নেই। সে কারণে প্যারোলে হলেও খালেদা জিয়ার মুক্তির মাধ্যমে একটা আশার আলো খুঁজছে তারা। তবে নিজেদের রাজনৈতিক স্বকীয়তা ও খালেদা জিয়ার আপসহীন ভাবমূর্তি অটুট রেখেই সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতার পথে এগোচ্ছে বিএনপি। প্যারোলে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্বাচিত ছয় সংসদ সদস্যের শপথ- রাজনৈতিক এ সমঝোতার জন্য শেষ মুহূর্তের জন্য দেখবে তারা। এরপরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।