ভুতের গল্পঃ- রাতের ছাদ
ভুতের গল্পঃ- রাতের ছাদ
সেলিনা জাহান প্রিয়া
রাত একটা বাজে বিদ্যুৎ নেই । খুবেই গরম । ইলিয়াস ছয়তলায় ফ্ল্যাটে থাকে । তাঁর পড়েই ছাদ । সব সময় ছাদে তালা দেয়া থাকে । কিন্তু আজ ছাদ থেকে কেন যেন মিষ্টি গানের গলায় রবি ঠাকুরের এসো হে বৈশাখ গান গাইছে । অন্ধকার ঘর থেকে সাদা টি সার্ট গায় দিয়ে ভাবল বিদ্যুৎ নেই হয়ত বাড়ির কেউ ছাদে গিয়েছে । তাই ইলিয়াস ছাদে গেল । আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ । হালকা কিছু মেঘ উড়ে যাচ্ছে । মেয়েটা ছাদের মধ্য থাকা একটা দুলনায় বসে গান গাইছে । ইলিয়াস এই বাড়ির প্রতিটা ফ্ল্যাটের নারীদের খুব ভাল করে চিনেন । কিন্তু এই মেয়েটা কে সে কিছুইতেই চিনতে পারছে না। সারা ছাদে অনেক গুলো ফুলের টব । মনে মনে ভাবতে লাগলো একটা সিগারেট খেলে ভাল হতো কিন্তু মেয়ে মানুষের সামনে সিগারেট খাওয়া হল একে বারে অভদ্র কাজ । মেয়েটা তাঁর দিকে মোটে খেয়াল করছে না। এত মিষ্টি করে একটার পর একটা রবি ঠাকুরের গান গেয়ে যাচ্ছে । যা খুবেই অপূর্ব । ছাদের গাছ গুলো থেকে একটা ফুলের গাছের গন্ধ তাঁর পরিচিত , সেই ফুলের গন্ধ পেয়ে খুবেই অবাক হয়ে গেল । কামিনি ফুল এই ছাদে আছে । মেয়েটা গান বন্ধ করে ছাদের কর্নারে গিয়ে চাদের দিকে তাকিয়ে রইল । তাঁর চুল গুলো বাতাসে উড়ছিল । ইলিয়াস বলতে লাগলো – আপনি কি এই বাড়িতে থাকেন । এত রাতে একা ছাদে আসলেন – ভয় লাগে না। মেয়েটা অদ্ভুত ভাবে ঘার বাকিয়ে বলল – একটু বাঙ্গা কণ্ঠে – কিসের ভয় । মেয়ে মানুষ দেখলে ভয় দেখাতে ইচ্ছা হয় । যান বলছি এই ছাদ থেকে । বাড়ি ভাড়া নেয়ার সময় বলে দেয় নাই যে ভুলেও ছাদে উঠবেন না । প্রথম বার মাপ করলাম কিন্ত দ্বিতীয় বার আসলে ছাদ থেকে ফেলে দিব । যান বলছি ছাদ থেকে ।
ইলিয়াস কোন কথা না বলে বরং ভয় পেয়ে ছাদ থেকে নেমে ঘরে চলে আসে । মেয়েটার কথা গুলো কেমন জানি অদ্ভুত মনে হচ্ছে । কিন্তু চেহারা টা ভাল করে দেখা গেল না। বাড়ি ভাড়ার সর্ত গুলো আবার জানে । যাই হউক ইলিয়াস ঘরে এসে ঘুমিয়ে গেল । সকালে ছাদের সিঁড়ি দিকে তাকিয়ে দেখে তালা দেয়া । বিকালে অফিস থেকে ফিরে মনে মনে ভাবতে লাগলো । এত রাতে মেয়েটা ছাদে একা গেল । বিষয়টা বাড়ি ওয়ালে বলা উচিৎ । বাড়ি ওয়ালা কে ইলিয়াস মিয়া দেখেই বলল আঙ্কেল সালাম । আপনার ছাদ টা অনেক সুন্দর । বাড়ি ওয়ালা বলল না ছাদ সুন্দর হবে কেন ? ছাদে কিছুই নাই । ইলিয়াস বলল কি বলেন আঙ্কেল কত ফুলের গাছ কি সুন্দর দোলনা সত্যি অনেক সুন্দর । বাড়ি ওয়ালা বলল ইলিয়াস মিয়া আপনি মনে স্বপন দেখছেন । ছাদ তো একে বারে ফাকা । এমন সময় বাড়ি ওয়ালী বলল ছাদ তো সারা বছর তালা দেয়া থাকে।
তুমি কি বলছ বাবা ?
ইলিয়াস বলতে লাগলো । কাল রাতে বিদ্যুৎ ছিল না । আমি দেখি চাঁদে কে জানি হাঁটছে আর গান গাইছে । পরে আমি সিঁড়ি দিয়ে ছাদে যাই । কি সুন্দর চাদের আলো । আর এক অপূর্ব মেয়ে রবীন্দ্রনাথের গান গাইছিল । বাড়ি ওয়ালী বলল কি জানি বাবা কি দেখেছ । তবে আজ থেকে ১২ বছর আগে ছাদে বাগান ছিল । আমার ছোট ছেলের বউ সেই বাগান করেছিল । কিন্তু কপাল সে ছাদ থেকে পড়ে আত্মহত্যা করেছিল । তাঁর পর থেকে কেউ ছাদে যায় না। বাগান দুলনা সবেই সরিয়ে ফেলা হয়েছে । এখন তো ছাদ একে বারে খালি । বিশ্বাস না করলে চল দিখিয়ে নিয়ে আসি। ইলিয়াস মিয়া কে নিয়ে ছাদে আসে বাড়ি ওয়ালা বাড়ি ওয়ালী । না ছাদে কিছুই নেই পানির ট্যাং ছাড়া । ইলিয়াস মিয়ার কাছে স্বপ্ন মনে হচ্ছে যা দেখেছে গত রাত । মনে মনে ভাবতে থাকে স্বপ্ন দেখেছে কি ? । রাতের খাবার খেয়ে টেলিভিশন দেখছিল আর ভবছিল গত রাতে তাহলে সে কি দেখেছিল । ঘড়ীতে রাত ১২ টা – আজও অন্য দিনের মতো হটাত বিদ্যুৎ চলে গেল । কিছু ক্ষণ পড়েই চাঁদে সেই শব্দ শুনতে পাচ্ছে । কে যেন হাঁটছে আর গান গাইছে । ইলিয়াস ভয়ে ভয়ে সিঁড়ি বেয়ে ছাদের উপরে উঠতে থাকে । ছাদের গেইট খোলা । ইলিয়াস ছাদে প্রবেশ করে । সেই বাগান সেই দোলনা সেই মেয়ে । ইলিয়া পিছনে যাইতে চাইলে ছাদের গেইট যেন নিজ থেকে লেগে যায় । মেয়েটা বলে ছাদে আসা নিষেধ জানা ছিল না । তুমি কি ভুলে গেছ ? তুমিও ভুলে গেলেও আমি ভুলে যাই নাই । কিউরেসিটি থাকা ভাল তবে বেশী থাকা ভাল না। একটা ধমকা হাওয়ার মতো ইলিয়াসের সামনে মেয়েটা চলে আসে । ইলিয়াস চেয়ে দেখে তাঁর মাথা নাখ মুখ থেকে রক্ত ঝরছে । ইলিয়াস একটা চিৎকার দিতে চায় এর আগেই ছাদ থেকে ধক্কা দিয়ে ইলিয়াস কে ছাদ থেকে ফেলে দেয় মেয়েটা । আর হাসতে থাকে ।