রাহুল গান্ধী গ্রেফতার, উত্তাল মধ্যপ্রদেশ

 

 

 

 

অনলাইন ডেস্ক  কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

কৃষক বিক্ষোভে উত্তাল মন্দসৌরে যাওয়ার জন্য মধ্যপ্রদেশে ঢুকতেই গ্রেফতার করা হল কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধীকে। গ্রেফতার করার পর পুলিশ তাকে কোনো অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গিয়েছে বলে খবর। মঙ্গলবার মন্দসৌরের পিপলিয়ামন্ডিতে কৃষক বিক্ষোভ ভাঙতে গুলি চালায় পুলিশ। তাতে ৫ বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়। তার পর থেকেই গোটা মধ্যপ্রদেশে বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র বিক্ষোভ হয়েছে। মৃত কৃষকদের পরিজনদের সঙ্গে দেখা করতেই আজ বৃহস্পতিবার মধ্যপ্রদেশে গিয়েছিলেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি। কিন্তু পুলিশ তাকে মন্দসৌর পৌঁছাতে দেয়নি।

মন্দসৌর যাওয়ার জন্য রাহুল এদিন সকালেই দিল্লি থেকে রওনা দেন। তিনি রাজস্থান হয়ে মধ্যপ্রদেশ ঢোকেন। পথে রাহুল টুইট করে জানান, তার মন্দসৌর পৌঁছনো আটকাতে রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশ সরকার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। রাহুলের মধ্যপ্রদেশ ঢোকা অবশ্য পুলিশ আটকাতে পারেনি। মধ্যপ্রদেশ ঢোকার পর তিনি বাইকে চড়ে মন্দসৌরের দিকে যাত্রা শুরু করেছিলেন। কিন্তু নিমচের কাছে রাস্তায় ব্যারিকেড করে রেখেছিল পুলিশ। সেখানেই রাহুলকে থামানো হয় এবং গ্রেফতার করে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। রাহুলকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তা পুলিশ জানায়নি।

কংগ্রেস সহ-সভাপতি এ দিন গ্রেফতার হওয়ার পর কেন্দ্রীয় সরকার এবং মধ্যপ্রদেশ সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি শুধু কৃষকদের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলাম। আমাকে যেতে দেওয়া হল না। কী কারণে আমাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তা পুলিশ জানাচ্ছে না।’

রাহুল বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদীর সরকার ধনীদের জন্য ১ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি রুপির ঋণ মওকুফ করে দিয়েছে। কিন্তু কৃষকদের ঋণ সরকার মওকুফ করবে না। কৃষকদের ফসলের ন্যায্য দাম পাবেন না, কৃষক ক্ষতিপূরণ পাবেন না, কৃষক শুধু গুলি খাবেন।’

মন্দসৌরের য়ে এলাকায় মঙ্গলবার গুলি চলেছিল, সেখানে আজ দুই কোম্পানি র‌্যাফ মোতায়েন করা হয়েছে। এলাকায় কার্ফু জারি হয়েছে। রতলাম রেঞ্জের ডিআইজি নিজে মন্দসৌরের পিপলিয়ামন্ডিতে রয়েছেন। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি যাতে না হয়, ডিআইজি নিজেই তার তদারকি করছেন। মন্দসৌরের পরিস্থিতি আজ শান্ত বলেও মধ্যপ্রদেশ প্রশাসনের দাবি। গত কয়েক দিন সেখানে টানা কৃষক বিক্ষোভ চলছিল। ফসলের ন্যায্য মূল্য, ঋণ মওকুফ-সহ নানা দাবি নিয়ে শুরু হয়েছিল বিক্ষোভ। অনেকগুলি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন বিক্ষোভকারীরা। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের খবর আসছিল। খবর আসছিল সরকারি কর্তাদের আক্রান্ত হওয়ার। বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ পুলিশ মঙ্গলবার গুলি চালায় বলে অভিযোগ। তাতেই ৫ কৃষকের মৃত্যু হয়।

পুলিশের গুলিতে কৃষকদের মৃত্যু হয়নি বলে বিজেপি দাবি করলেও মধ্যপ্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিন্তু পুলিশের গুলিচালনার কথা মেনে নিয়েছেন। পুলিশের গুলিতেই যে বিক্ষোভকারীদের মৃত্যু হয়েছে, তা তিনি স্বীকার করেছেন। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অবশ্য মধ্যপ্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই স্বীকারোক্তিতে খুশি নন। দলের জাতীয় মুখপাত্র সম্বিৎ পাত্রের মন্তব্য, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহ এ ধরনের মন্তব্য করে ঠিক করেননি। তদন্তের জন্য তার অপেক্ষা করা উচিত ছিল।

মন্দসৌরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন অংশ কিন্তু এদিন শিবরাজ সিংহ চৌহানের সরকারের বিরুদ্ধে কৃষক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। নিমচে পুলিশ রাহুল গান্ধীর পথ আটকেছে জেনেই সে এলাকায় পৌঁছনোর চেষ্টা করেন রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রবীণ কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহ, ছিন্দওয়াড়ার কংগ্রেস সাংসদ কমলনাথ, প্রবাণ জেডিইউ নেতা শরদ যাদব। পুলিশ তাদেরও নিমচে পৌঁছতে দেয়নি বলে খবর। রাহুলের সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছে রাজস্থানের কংগ্রেস সাংসদ তথা সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সচিন পাইলটকেও।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!