র্যালি করতে পারল না শ্রমিক দল
অনলাইন ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
রাজধানীতে মে দিবসের র্যালি করতে পুলিশ না দেয়ায় ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিষয়টি আন্তর্জাতিক ট্রেড ইউনিয়নকে জানাবে বিএনপির শ্রমিক সংগঠন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল। আজ মঙ্গলবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম খান এই কথা জানান।
তিনি বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য। বাংলাদেশ আইএলও‘র সদস্য। আইএলও‘র সংবিধান অনুযায়ী এবং বাংলাদেশ আইএলও‘র কনভেশন-৮৭ বাস্তবায়ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যেখানে ফ্রিডম অব অ্যাসোসিয়েশন নিশ্চিত করার কথা সেখানে আজকে আমাদেরকে সেটা করতে দেয়া হলো না। আন্তর্জাতিক ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য হিসেবে নিশ্চয়ই আমরা কখন কোনো প্রোগ্রাম করি সেটা আমাদেরকে জানাতে হয়। এই যে আমরা প্রোগ্রাম করতে পারলাম না, কেনো পারলাম না সেটাও আমাদেরকে জানাতে হবে, আমরা জানাবো।
ঘোষণা অনুযায়ী আজ সকাল ১১টায় নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থেকে শ্রমিক দলের র্যালি বের হওয়া কথা ছিলো। কিন্তু গতকাল রাতে পল্টন মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম খান নাসিমসহ নেতৃবৃন্দকে ডেকে জানিয়ে দেন কোনো র্যালী করা যাবে না। এই পরিপ্রেক্ষিতে নয়া পল্টনে সকাল ১১টায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে করে শ্রমিক দলের নেতৃবৃন্দ।এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাফিজুল করিম মজুমদার, ফজলুল হক মোল্লা, মনজুরুল ইসলাম মন্জু সহ শ্রমিক দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সংগঠনের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি না পেয়ে র্যালী করার জন্য অনুমতি চেয়ে পুলিশের কাছে আবেদন করি। গতকাল বার বার আমরা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করেছি। সন্ধ্যা ৭টায় পল্টন মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমাদেরকে জানিয়ে দেন যে, কোনো র্যালী শ্রমিক দল করতে পারবে না শ্রমিক দল রেজিস্ট্রীকৃত সংগঠন হওয়া সত্ত্বেও আমাদেরকে অনুমতি না দেয়ায় এটা সুস্পষ্ট হলো যে, পুলিশ একদলীয় কর্তৃত্ববাদী সরকারের নির্দেশনা পালন করছে। আমাদেরকে এই কর্মসূচি পালন করতে না দেয়া শুধু অগণতান্ত্রিক আচরণ শুধু নয়, এটা দুর্বিনীত দুঃশাসনের আরেকটি দৃষ্টান্ত। আমরা পুলিশের এহেন অন্যায় আচরণের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম খান নাসিম বলেন, আজকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে হাজার হাজার শ্রমিক মিছিল মিটিং করতেছে। অথচ আমরা দেশের সবচেয়ে বড় শ্রমিক সংগঠন তাকে মিছিল করতে অনুমতি দেয়া হলো না। এই সরকারের পুলিশ বাহিনী ক্ষমতাসীন দলের নিজস্ব লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। এটা নিন্দনীয়। আগামীতে আমরা যারা বিজ্ঞ ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ আছেন, শ্রমিক ফেডারেশন ও শ্রমিক কর্মচারি ঐক্য পরিষদের সাথে আলোচনা করে আমরা আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আজকে শ্রমিক দলকে এরকম একটি আন্তজার্তিক শ্রমিক দিবসে র্যালী করতে দেয়া হলো না। আমাদের অফিসের সামনে (নয়া পল্টন) দিয়ে মিছিল যাচ্ছে ট্রাকে করে, বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল আসছে, মীরপুর এলাকা থেকে মিছিল আসছে, সায়েদাবাদ এলাকা থেকে মিছিল আসছে, পোস্তাগোলা থেকে মিছিল আসছে, বিভিন্ন জায়গা থেকে মিছিল আসছে প্রেস ক্লাবের সামনে। সেটা যদি সম্ভব হয়, সেটা যদি অন্যায় না হয়, যেটা যদি বেআইনি না হয়, তাহলে নয়া পল্টন থেকে মিছিল প্রেস ক্লাবে যেতে বাধা কিসের?
এখানে তো আইনিভাবে এখনো বাকশাল কায়েম করা হয় নাই, এখনো তো এদেশে ১৯৭৫ সালের মতো একদলীয় স্বৈরশাসন কায়েম করা হয় নাই। তাহলে প্রধান বিরোধী রাজণৈতিক দল কিংবা প্রধান বিরোধী শ্রমিক সংগঠনকে বাঁধা দেয়া হবে কেন?
তিনি বলেন, সরকার যদি এটাই করতে চায় বিএনপি বা তার সঙ্গে যুক্ত কোনো সংগঠনকে কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেয়া হবে না। তাহলে আইন করে দিক, সরকারের নির্দেশনা জারি হোক। সারা দুনিয়া জানুক যে এই সরকার কী চায়। কিন্তু তারা লিখিত কিছু বলছে না কাজে কর্মে করছে। এটা অসৎ রাজনীতি। গণমাধ্যমের প্রতি আমি বিনীতভাবে অনুরোধ জানাব, আপনার দেশবাসীকে জানান যে, সরকার এই ধরণের অন্যায় আচরণ করছে, বিমাতাসুলভ আচরণ করছে প্রতিপক্ষের সংগঠনের প্রতি।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল মে দিবসের অনুষ্ঠান সারাদেশে করছে, অনেক জায়গায় করতে পারছেও। কিছু কিছু জায়গা হয়ত বাঁধা দেয়া হচ্ছে।গতবছর এখান (নয়া পল্টন) থেকে আমরা মিছিল করেছি। এর আগের বছর আমরা সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে জনসভা করেছি। তার আগের বছর এখান থেকেই মিছিল করেছি। এবার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানেও জনসভা করতে দেয়া হলো না, নয়া পল্টনের অফিসের সামনে থেকে মিছিলও করতে দেয়া হলো না। অর্থাৎ দিনে দিনে সরকার আরো বেশি স্বৈরাচারি হয়ে পড়েছে। এই তথ্য যখন বিশ্ববাসী জানবে তখন জার্মানি সেই রিপোর্ট যে, বাংলাদেশ একটা স্বৈরাচারি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে এটা তাদের সেই রিপোর্টকে শক্তিশালী করবে। সেই রিপোর্ট যে সঠিক সেটার পক্ষে আরেকটা প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে সরকারের আজকে এই সিদ্ধান্ত।
তিনি বলেন, এই সরকার নির্বাচিত নয়, এই সরকার জনগনের বন্ধু প্রতীম নয়, এই সরকার শ্রমজীবী মানুষের বন্ধু প্রতিম না। তারপরেও সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন আমরাই করতে চাই জনগনকে নিয়ে। বিদেশের কেউ খবরদারি করুক আমরা চাই না। কিন্তু সরকার এমন সব আচরন করছে যেসব আচরণে আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি লঙ্ঘিত হচ্ছে। যার ফলে অনিবার্যভাবে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদের সম্মুখীন হতে হবে সরকারকে।
আমি মনে করি যে, দেশেই এর প্রতিবাদ হবে, শ্রমিক দলই এর প্রতিবাদ জানাবে। যেমন আজকে এই সংবাদ সম্মেলন করে আপনাদের মাধ্যমে জানাচ্ছে, আমরা সভা-সমাবেশ করে জানাবো। দেশের জনগন জানুক যে সরকার নিজস্ব প্রোগ্রাম তো দুরের কথা, আন্তর্জাতিক দিবসগুলো পালনে প্রতিপক্ষকে বাধা দিচ্ছে।