অপমান সইতে না পেরে শরীয়তপুরে স্বামীর আত্মহত্যা, স্ত্রী বলছে অন্য কথা।

সৈয়দ মেহেদী হাসান, শরীয়তপুর প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার দারুল আমান ইউনিয়নের গুয়াখোলা গ্রামে স্ত্রীর অপমান সইতে না পেরে স্বামী আত্মহত্যা করেছে বলে যানা যায়।

গত সোমবার সকালে এই আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ডামুড্যা থানায় একটি অপমৃত্যু (ইউডি) মামলা হয়েছে। মান্নান বেপারী (৪৫) গুয়াখোলা গ্রামের লোকমান বেপারীর ছেলে।

স্থানীয় ও পরিবারিক সুত্রে জানা যায়, মান্নান বেপারী গুয়াখোলা গ্রামের নিজ বাড়িতে প্রায় ১ বছর যাবত মেয়ে নাদিয়াকে (৬) নিয়ে বসবাস করে আসছে। তার স্ত্রী সুমী বেগম ছেলে রিয়াজ (২২) কে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করেন।১ বছর আগে মান্নান বেপারী স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করতেন। পরবর্তীতে স্বামী-স্ত্রী বনিবনা না হওয়ায় সুমী বেগম তার স্বামী মান্নান বেপারীকে মেয়েসহ দেশের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। তারপর থেকে মান্নান দেশের বাড়িতেই মেয়েকে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন।গত রোববার সুমী বেগম ছেলে রিয়াজকে ঢাকায় একা রেখে গ্রামের বাড়িতে আসে। রোববার সকালে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বাধে। এক পর্যায়ে সুমি বেগম তার স্বামী মান্নান বেপারীকে শারীরিক ভাবে লাঞ্জিত করে বলে গুঞ্জন ওঠে।
এর কিছুক্ষণ পর মান্নান বেপারী ঘরের দরজা বন্ধ করে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। এ ব্যাপারে পুলিশ বাদি হয়ে ডামুড্যা থানায় একটি ইউডি মামলা দায়ের করেছে। গুঞ্জন রয়েছে সুমি বেগমের সাথে মাজারের এক ভক্তের প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। কিছুদিন আগে গোপনে তাকে নাকি বিয়েও করেছে।

নিহতের খালাতো বোন হাসেন ভানু বলেন, সুমি বেগম ফোনে যেন কার সাথে কথা বলতেছিলেন। সুমি কার সাথে কথা বলে এ বিষয়ে মান্নান বেপারী জানতে চাওয়ায় সুমি বেগম তার স্বামী মান্নান বেপারীকে থাপ্পর মারে। এ অপমান সইতে না পেরে মান্নান বেপারী আত্মহত্যা করেছে।

মান্নান বেপারীর ছেলে রিয়াজ বলেন, মা আমাকে ঢাকায় একা রেখে হঠাৎ বাড়ি চলে আসে। তার একদিন পরই বাবা আত্মাহত্যা করে। কিন্তু এ ঘটনা মা আমাকে জানায়নি। ঘটনার পরের দিন ফুফাত ভাই ফোনে আমাকে জানায়। খবর পেয়ে আমি বাড়ি এসে দেখি বাবার লাশ মাটি দিতে নিয়ে যাচ্ছে। মানুষের কাছে আমিও শুনেছি মা বাবার সাথে ঝগড়াঝাটি করায় বাবা আত্মাহত্যা করেছে।

সুমি বেগম জানান, মান্নান বেপারী ও সুমি বেগম দু’জনেই ছিলেন মাইজভান্ডার শরীফের মুরীদ। মান্নান বেপারী ছিল শরীরিকভাবে অসুস্থ এবং কোন কাজকর্ম করতেন না। এ কারণে মান্নান বেপারীকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সুমি বিভিন্ন মাজারে ঘুরে ভক্তদের সেবা দিতো।
রাজধানীর গোলাপারশাহ’র মাজারের খাদেম সুমি। সে মাজারের বিভিন্ন মুরিদদের খাবার রান্না করে পরিবেশন করতেন। এতে মোটা অংকের রোজগার আছে তার। সচল সুমি শ্বস কষ্টের রোগসহ বিভিন্ন রোগাক্রান্ত অচল স্বামীকে তিনি গ্রামের বাড়িতে একা রাখতেন।
গুঞ্জনের বিষয়ে জানতে চাইলে সুমি বেগম তা অস্বীকার করে বলেন, তার গায়ে হাত তোলা তো দূরের কথা আমার সাথে তার কোন ঝগড়াঝাটিও হয়নি। আরেকটি বিয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে সুমি বলেন, এক স্বামী থাকতে আরেকটি বিয়ে করা কি সম্ভব?অসুস্থ স্বামীকে একা গ্রামের বাড়িতে রাখার কারণ জানতে চাইলে সুমি বলেন, সে কোন কাজ কর্ম করতেন না আমার রোজগার থেকে গিলতেন। তাই গ্রামের বাড়িতে রাখা হয়েছে।

ডামুড্যা থানার এস আই আলমগীর হোসেন বলেন, মান্নান বেপারীর মরদেহ উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ময়না তদন্তের জন্য পাঠাই। লাশ ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পরিবারের পক্ষে কেই অভিযোগ করেনি তাই পুলিশ বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে।


  • কাগজটুয়েন্টিফোর বিডি ডটকম এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!