ঘাটাইলে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলীতে অনিয়ম
মোঃ সবুজ সরকার সৌরভ, ঘাটাইল(টাঙ্গাইল)প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নূরুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও বদলী বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ১৪মার্চ কামালপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা দিলোয়ারা সুলতানা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয় সচিব বরাবর এই অভিযোগ দায়ের করেছেন।
প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, ঘাটাইল উপজেলায় ১৭২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ঐসব বিদ্যালয় থেকে মোট ৬৪টি শূণ্য পদ সৃষ্টি হওয়ায় বদলীর কার্যক্রম শুরু হয়। নীতিমালার ৩(৯) ও ৩ (১০) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ঐসব শূণ্যপদে জেষ্ঠতার ভিত্তিতে বদলী করার কথা থাকলেও শিক্ষা অফিসার তা না করে বদলীর নামে ফাঁদ তৈরী করে যৌন হয়রানি ছাড়াও লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
লিখিত অভিযোগ ও ভূক্তভোগী শিক্ষকের কাছ থেকে জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নূরুল ইসলাম ২০১৮ সালের অক্টোবরে চট্টগ্রাম চন্দনাইস উপজেলা হতে বদলী হয়ে ঘাটাইলে যোগদানের পর হতে তিনি বদলী বাণিজ্য ছাড়াও শিক্ষা ব্যবস্থায় নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। তার এসব অনিয়মের প্রধান সহযোগী ঐ অফিসের প্রধান করনিক কাজিম উদ্দিন, অফিস সহকারী মাফিজ ও পেষনে নিয়োজিত সুষম দূর্গাপুরের ইউআরসি এর নাইট গার্ড আরিফ হোসেন সহ একাধিক শিক্ষক জড়িত রয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা যায় পৌর এলাকার চাঁন্দশী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি শূণ্য পদে মোট ১০ জন শিক্ষক আবেদন করেন। বিধি অনুযায়ী আবেদনকারী ১০ জন শিক্ষকের মধ্যে যিনি জেষ্ঠ্য ঐ শিক্ষককে বদলী করার কথা। কিন্তু শিক্ষা অফিসার আবেদনের তথ্য গোপন করে একজন শিক্ষকের আবেদন দেখাইয়া সবচেয়ে জুনিয়র শিক্ষককে ঐ বিদ্যালয়ে বদলী করেন।
উল্লেখ্য যে, কোন বিদ্যালয়ে শূণ্যপদে সৃষ্টি হলে ঐ পদের বিবরণ ৭দিন পূর্বে নোটিশ বোর্ডে টাঙ্গিয়ে ঘোষনা দেয়ার কথা। সে অনুযায়ী যারা আবেদন করবে তাদের মধ্যে যেই জেষ্ঠ্য থাকবে নীতিমালা অনুযায়ী তাকে বদলী করতে হবে। কিন্তু শিক্ষা অফিসার এইসব আইন কানুনের তোয়াক্কা না করে সহকারী শিক্ষক কামরুন নাহারকে শহরগোপিনপুর থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরত্ব ধলাপাড়া বদলী করা হয়েছে। একইদিনে শূণ্যপদে নোটিশবোর্ড ঘোষনা ছাড়াই শহরগোপীনপুর বিদ্যালয়ে বদলীর প্রস্তাব করা হয়েছে জোয়ালভাঙ্গা হেঙ্গারচালা বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল লতিফকে। এভাবে বীরখাগিয়ান থেকে আবিদাকে ১ কিলোমিটার দূরত্ব চানতারা বিদ্যালয়ে বদলী করে। ঐ শূণ্য পদে একাধিক আবেদন থাকা সত্বেও নোটিশ বোর্ডে ঘোষনা ছাড়াই তথ্য গোপন করে ঐ একই দিনে শালিয়াবহ থেকে শরীফা পারভীনকে বীরখাগিয়ান বিদ্যালয়ে বদলী করা হয়েছে।
জানা যায়, শিক্ষা অফিসার নূরুল ইসলাম ঘাটাইল যোগদানের পর থেকে দেশ স্বাধীনের ৪৭ বছরের সকল অনিয়মকে তিনি নিয়মে পরিণত করেছেন। আবেদনের তথ্য গোপন, নীতিমালা লক্ষন করে বদলী, অর্থ আদায় ছাড়াও যৌন হয়রানি অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। বিধিতে বলা আছে আন্ত: উপজেলার কোন বিদ্যালয়ে শূণ্যপদ সৃষ্টি হলে স্থানীয়ভাবে কেউ আবেদন করলে স্থানীয় ঐ শিক্ষককে বদলী করার কথা। কিন্তু শিক্ষা অফিসার স্থানীয়ভাবে আবেদন করার সুযোগ না দিয়ে আঠারদানা থেকে রোজিনা বেগমকে সখিপুুর উপজেলায় এবং একইদিন গোপালপুর থেকে আঠারদানায় বদলীর প্রস্তাব করেন মোটা অংকের টাকা নিয়ে। তার এসব অনিয়মের বিষয়ে ঝুনকাইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাজমা বলেন, আমি জেষ্ঠ্য থাকার পরেও টাকা দিতে পারি নাই বলে আবেদন করেও বদলী হয় নাই। অথচ জুনিয়রকে বদলী করা হয়েছে। জানা যায় শিক্ষা অফিসার নূরুল ইসলাম একজন আইন ভঙ্গকারী খামখেয়ালীপনা কর্মকর্তা। তিনি সরকারের বেতনভাতা সহ সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করলেও সরকারের আদেশ তিনি মানেন না। তিনি চট্টগ্রাম চন্দনাইস উপজেলায় দায়িত্ব পালনকালে নানা অনিয়মের ফলে তার নামে বিভাগীয় মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রধানমন্ত্রির নির্দেশ আছে কোন বিদ্যালয়ে ৪ জন শিক্ষক দায়িত্ব পালন থাকাকালে ঐ বিদ্যালয় থেকে কোন শিক্ষককে অন্যত্র বদলী করা যাবেনা। অথচ শিক্ষা অফিসার নূরুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রির নির্দেশের তোয়াক্কা না করে টাকার বিনিময়ে মনগড়া বদলী করায় কামালপুর বিদ্যালয়ে ৩ জন, গুপ্তবৃন্দাবন বিদ্যালয়ে ২ জন, করিমগঞ্জ ৩ ও দুলালিয়া বিদ্যালয়ে মাত্র ২ জন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান চলছে। এরকম আরো একাধিক বিদ্যালয় রয়েছে। তার মধ্যে দুলালিয়া বিদ্যালয়ে ৫জন শিক্ষকের মধ্যে বর্তমানে ২ জন শিক্ষক থাকলেও ২০১৯ সালের ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার কাজে নিয়োজিত থাকায় ঐ বিদ্যালয়ের লেখাপড়া পুরোটাই ব্যহত হচ্ছে। মুনির নগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শিরিনা আক্তার বলেন আমার বদলীর আবেদনে স্থানীয় এমপির সুপারিশ ও মৌখিক আদেশ থাকলেও শিক্ষা অফিসার সে আদেশ অমান্য করে বিধি বর্হিভূতভাবে শরিফা পারভীনকে বীরখাগিয়ান বিদ্যালয়ে বদলী করেন।
জানা যায়, শিক্ষা অফিসার নূরুল ইসলাম একজন নৈতিক খলনকারী নারী লোভী কর্মকর্তা। সে সুন্দরী শিক্ষিকাকে দেখলেই তাকে সুবিধাজনক স্থানে বদলীর প্রলোভন দেখাইয়া কু-প্রস্তাব দেয় বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কামালপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা দিলোয়ারা সুলতানা জানান, তার কু প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ২০ হাজার টাকা ঘুষ দেয়ার পরও তার আবেদনের প্রস্তাব না করে তার তিন বছরের জুনিয়ার শিক্ষিকা আনোয়ারা বেগমকে বদলী করা হয়েছে।
কাজলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, আমি টিও সাহেবকে ৫ হাজার টাকা হাতে দিয়ে একজন সহকারী শিক্ষকের বদলীর সুপারিশ করেছিলাম। টিও সাহেব সে টাকা ফিরিয়ে দিয়ে বলে টাকা নেই, তবে ভিক্ষা নেইনা।
বাংলাদেশ সরকারী প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ঘাটাইল শাখার সভাপতি আবু সাইদ ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, শিক্ষা অফিসার নীতিমালা ভঙ্গ করে মনগড়া বদলী করায় একদিকে শিক্ষকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। অন্যদিকে গোটা শিক্ষক সমাজের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।
এসব অনিয়মের বিষয়ে ঘাটাইল প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নূরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন টাকা নেয়ার প্রশ্নই উঠেনা। নীতিমালা অনুসরন করে এমপির নির্দেশনা মেনেই বদলী করা হয়েছে। যৌন হয়রানির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে গিয়ে বলেন আমার কি সেই বয়স আছে?
এ বিষয়ে ঘাটাইল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ কামরুল ইসলামের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি এ বিষয়ে অবগত নই তবে কেউ অভিযোগ করলে তদন্ত করে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।