মৃত্যুর আগে ভ্যাকসিন চেয়ে সাপেকাটা শিমুর ফেসবুক স্ট্যাটাস

অনলাইন ডেস্ক  কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

‘টাঙ্গাইলে সাপেকাটার ভ্যাকসিন কোথায় পাওয়া যায়’-ফেসবুকে এটা ছিল বিষধর সাপের কামড়ে আহত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী ও স্কুলশিক্ষিকা আয়েশা আক্তার শিমুর শেষ স্ট্যাটাস।

Shimu-2

স্ট্যাটাস দিয়ে বিষের যন্ত্রণায় ফেসবুক থেকে বের হয়ে যান শিমু। ততক্ষণে ফেসবুকে অনেকেই দিয়েছেন ভ্যাকসিনের সন্ধান। কিন্তু তখন আর সেই তথ্য কোনো কাজেই লাগলো না তার।

বিষের যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে ততক্ষণে শিমু সবাইকে কাঁদিয়ে চলে যান না ফেরার দেশে। তার অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না তার পরিবার ও সহপাঠীরা।

শিমুর স্বপ্ন ছিল বিসিএস ক্যাডার হওয়ার। স্বপ্নও ছিল পূরণের পথে। আর সেই মুহূর্তে তার চলে যাওয়াটা পরিবারের জন্য অতি কষ্টের। প্রতিষ্ঠিত হয়ে পরিবারের গর্ব হওয়ার আগে বিয়ের পিঁড়িতে বসবেন না এমন প্রত্যয় ছিল তার। সেটাও আর হলো না।

শিমু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় ব্যাচের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিনি ৩৬তম বিসিএসে মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন আর ৩৭তম বিসিএসে লিখিত পরীক্ষা দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন।

শিমু নিজ এলাকাতেই একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। সব সময় শিশুদের সঙ্গে মিশতেন। শিশুরাও তাকে খুব পছন্দ করতো। শিশুরা তাকে শিমু মিস বলেই ডাকতো। প্রিয় মিসকে হারিয়ে তারাও শোকাতুর।

আয়েশা আক্তার শিমু (২৭) বাসাইল উপজেলার কাঞ্চনপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামের নুরু মিয়া মেয়ে। শিমুকে গত ২০ সেপ্টেম্বর রাত ৮টার দিকে একটি বিষধর সাপ কামড় দেয়। শিমুর বাড়ির চারদিকে বর্ষার পানি থাকায় তাকে নৌকাযোগে বাড়ি থেকে বের করে রাস্তার ধারে নিয়ে যাওয়া হয়।

পরে গাড়িতে করে মির্জাপুর কুমুদিনী মেডিকেল কলেজ হাপপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান সাপে কাটার ভ্যাকসিন নেই।

সেখান থেকে রাত ১টার দিকে শিমুকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ততক্ষণে শিমু আর নেই। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পরদিন সকাল ৭টায় শিমুর মরদেহ বাড়িতে আনা হয়। মেয়ের অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারছিল না তার পরিবার। সাপেকাটা মানুষ নাকি কয়েকদিন বেঁচে থাকে এমন বিশ্বাসে ওইদিনই আবার শিমুকে ২টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু এমন অলৌকিক কিছুও আর হলো না।

নিহত শিমুর বাবা নুরু মিয়া ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, শিমুকে মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানকার চিকিৎসক জানান সাপেকাটার ভ্যাকসিন নেই। ওই হাসপাতালে ভ্যাকসিন থাকলে মেয়ের এমন মৃত্যু হতো না।

মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে সাপেকাটার ভ্যাকসিন আছে কিনা- কর্তব্যরত চিকিৎসক সিনিয়র কনসালটেন্ট অমিশেক ভৌমিকের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদোত্তর দিতে পারেননি। এব্যাপারে কর্তৃপক্ষ কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি।

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. পুতুল রায় বলেন, ‘সাপেকাটার ভ্যাকসিন সিভিল সার্জনের তত্ত্বাবধানে থাকে। চাহিদা দেওয়া মাত্রই ভ্যাকসিন পাওয়া যায়। প্রথমে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে আনা হলে হয়তো সাপেকাটা রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হতো।’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!