সেলিনা জাহান প্রিয়ার ছোট গল্প- শ্বশুরের উপহার
শ্বশুরের-উপহার
————– সেলিনা জাহান প্রিয়া
কাসেম সাহেবর তিন মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে কাকন খুবেই অবহেলিত । কাকন প্রেম করে বিয়ে করেছে । কাকনের স্বামী ইকবাল খুবেই সাধারন পরিবারের
ছেলে । কাসেম সাহেবর সামাজিক অবস্তা খুবেই ভাল । মেয়ে কে ফিরিয়ে আনার জন্য সকল ব্যবস্তা করে শেষ পর্যন্ত আর মেয়ে কে আনতে পারে নাই । সাত বছর গত হল বাবা আর মেয়ে মধ্যে কোন দেখা নাই । অন্য দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে
একজন ব্যাংক কর্মকর্তা স্বামী অন্য মেয়ের জামাই সরকারি চাকুরীজীবী । দুই জামাই কে নিয়ে তার খুব গর্ব । বড় মেয়ের জামাই কি করে । বড় মেয়ে কেমন আছে কোন দিন জানতে চায় না । কাকনের দুঃখ একটাই তার বোনেরা তার খোঁজ খবর নেয় না। শুধু মা মাঝে মধ্যে একটু খোঁজ খবর রাখে তাও গোপনে । কারন অন্য দুই মেয়ে এটা পছন্দ করে না। ইকবাল লিখা পড়া জানা একটা ছেলে মার্কেটিং
এ কাজ করে খুব সামান্য একটা ফার্মে । কাকনের সাথে তার মনের মিল একশতে একশ । কাসেম সাহেব হটাৎ একদিন খুব অসুস্থ হলেন । হাসপাতালে ভর্তি । পায়ে পানি চলে এসেছে । ডাঃ দেখল কিডনি ফেইল । সাত বছর পর আজ বড় মেয়ে এলো বাবা কে দেখতে । সবাই কিডনি যোগারে চেষ্টা করছে । বড় মেয়ের সাথে কিডনি ম্যাচ হয় নাই । অন্য দুই মেয়ের সাথে ম্যাচ হয়েছে । কিন্তু তাদের স্বামী বলছে
না কিডনি দেয়া যাবে না। তাদের একটা ফিউচার আছে । ইকবালের সাথে ম্যাচ করে নাই । বড় মেয়ে অ জামাই দিতে চাচ্ছে কিন্তু ম্যাচ করছে না। অন্য দুই মেয়ে
বলছে ম্যাচ করলে কিন্তু আপু দিত না। কাকন আপু এখন আব্বুর সাথে মিশার জন্য
ভাব ধরছে যে কিডনি ম্যাচ করলে দিত । ইকবালের সাথে অন্য দুই মেয়ের জামাই
খুব ভাব নিয়ে থাকে বড় বলে একটু সম্মান অ করে না। এটা নিয়ে ইকবাল কোন কিছু মনে নেয় না। শেষ পর্যন্ত কিডনি যোগার হল । কিন্তু কিডনি কে দিল এটা কেউ বলতে পারছে না । কারন কিডনি দাতা সর্তে এই কিডনি নেয়া হয়েছে । কাসেম সাহেব খুব রাগি মানুষ হলেও কারো দয়া সে নেয় না। কিন্তু এত বড় দয়া তাকে কে করল তার জানার খুব ইচ্ছা । এক বছরে সে বের করতে পারলো না। শেষ তার ডাক্তার বন্ধু বলতে বাধ্য হয় কে এই উপকার করেছে । কাসেম সাহেব
খুব অবাক হয়ে যায় । যেই লোক তাকে কিডনি দিল তাকে সে জেল খাটিয়েছে ।
বাসায় একটা সুন্দর পার্টি দিল । আজ তিন মেয়ে তিন মেয়ের জামাই এবং তিন মেয়ের শ্বশুর শাশুড়ি আর কাসেম সাহেবর পরিচিত তার ব্যবসার সকল বন্ধু তার অফিসের সকল অফিসারদের । কাসেম সাহেব সবার কাছে দোয়া চেয়ে বলল – আমার শরীর খুব ভাল না । আল্লাহর রহমতে আপনাদের দোয়া ও সহযোগিতায়
আপনাদের মাঝে সুস্থ হয়ে ফিরে এলাম । কিন্তু আমার এত বড় ব্যবসা আমার পক্ষে
এখন দেখা শুনা করা সম্ভব না। তাই আমি আমার দায়িত্ব অন্য কাউকে দিতে চাই ।
মেজ মেয়ের জামাই ভাবল সে পাবে । ছোট মেয়ের জামাই ভাবল সরকারি চাকুরী আর কত টাকা । এই ব্যবসায় আসলেই কোটি পতি । বড় মেয়ের জামাই এটা নিয়ে
কোন চিন্তা করছে না। বড় মেয়ে ভাবছে হয়ত ছোট বোন জামাইরা পেলেই ভাল ।
কাসেম সাহেব বলল – আমার বাড়ি ঘর যা আছে সব আমার তিন মেয়ে সমান ভাবে পাবে । আর আমার ব্যবসা ১০০% আমার বড় মেয়ের জামাই পাবে । কারন সে অনেক শান্ত ভদ্র ও সঠিক সিদান্ত নিতে পারে , তার মাঝে ব্যবসায়িক মানবিক গুনাবলী আছে । ইকবাল বলল বাবা আমার পক্ষে এটা অসম্ভব । কাসেম সাহেব বলে আমি আচ্ছি তোমার সাথে । কাসেম সাহেব দেখেছে যখন সে অসুস্থ ছিল তার বড় মেয়ে আর বড় মেয়ের জামাই কি নীবির পরিচর্যা করেছে । ইকাবাল শ্বশুরের সেবা করতে যেয়ে চাকুরী পর্যন্ত হারিয়েছে । ইকবাল কোন স্বার্থে সেবা করে নাই । যেন কাকন বলতে না পারে যে তুমি আমার বাবাকে অন্তর থেকে নাও নাই । অন্য দুই মেয়ের জামাই খুব হতাশ হল । আজ ইকবালের বাড়ি গাড়ি সব হল । কাসেম সাহেব জানতে পারলো ইকবালের বাবা খুব অসুস্থ । ডাঃ বলছে বাচার আশা নাই । কাসেম
সাহেব ইকবালের বাবার হাত ধরে বসে আছে । কাসেম সাহেব বলল – ভাই আপনি
আমার জন্য আপনার কিডনি দিয়েছেন এটা আমি জানি । ইকবালের বাবা বলল-
আপনার মেয়ে আমার ঘরের লক্ষ্মী । কোটে দাড়িয়ে আমার ছেলের আর আমার হাত ধরে সে চলে এসেছে । আপনার টাকা না বলে চলে এসেছে । আমি আমার বউ মায়ের জন্য আমার কিডনি দিয়েছি আপনাকে যাতে সে তার বাবার আদর পায় । বড় ভাল আপনার মেয়ে…………………।।