সখীপুরে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির বিরুদ্ধে ক্ষতি পূরণের টাকা না দেওয়ার অভিযোগ
আনোয়ার পাশা, সখীপুর(টাংগাইল) বিশেষপ্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
টাঙ্গাইলের সখীপুরে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের জমি ও কৃষিপণ্যের ক্ষতিপুরনের টাকা না দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে। ক্ষতি পূরণের টাকা চাইতে গেলে ওই কোম্পানির ম্যানেজার মামলা হামলার হুমকি দিচ্ছেন বলেও দাবি করেন ভূক্তভোগী কৃষক পরিবার। ক্ষতিপূরণের দাবিতে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির উর্দ্বতন কর্তৃপক্ষ ও সখীপুর থানায় অভিযোগ করেও কোন সুরাহা পায়নি বলেও তারা জানান ।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন উপজেলার কালমেঘা মৌজায় গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির গ্যাস পাইপ লাইনে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক সোহেল দেওয়ান তাঁর কলাবাগানের ক্ষতিগ্রস্ত চিত্র দেখাতে গিয়ে হাউ মাউ করে কেদে ফেলেন। তিনি বলেন- ২০১৬ সালে কালমেঘা মৌজার ২১৯ দাগের সাড়ে ৩ একর জমি ৪ বছরের জন্য লিজ নেন উপজেলার মোচারিয়া পাথার গ্রামের মৃত ছাত্তার দেওয়ানের ছেলে সোহেল দেওয়ান। তিনি ওই জমিতে ৮ হাজার উন্নত জাতের অমৃত সাগর কলা গাছ লাগান। ব্যাংক, বিভিন্ন এনজিও ও ধার-দেনা করে তিনি তার এ বাগানে ইতোমধ্যে প্রায় ২০ লাখ টাকা খরচ করে ফেলেছেন । আর কিছুদিন পরেই তার গাছে কলার ছড়ি ধরবে। বিক্রি করলে খরচ শেষে তার আরো ৫-১০ লাখ টাকা লাভ হবে। সে থেকে ব্যাংকসহ অন্যান্য দেনা পরিশোধ করে পরিবার পরিজনের ভরনপোষন করবে সে। কিন্তু তার সে স্বপ্ন বিলিন করে দিয়েছে গ্যাস ট্রান্সমিশন নামের একটি কোম্পানি। ওই জমির ওপর দিয়ে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির ২৬ ফিট জমির ওপর দিয়ে গ্যাস লাইনের পাইপ বসানো হবে এই মর্মে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ফসলের ক্ষতির তালিকা চায় কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ কিংবা কাগজপত্র প্রসেসিং না করেই গত ১৪ মে রাতের আধারে ওই কলাবাগানের প্রায় ৪ হাজার কলাগাছ ওপরে ফেলে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির গ্যাস পাইপ লাইনের কাজ শুরু করে দেন। বাঁধা দিতে গেলে প্রাণ নাশের হুমকি ও মামলার ভয় দেখানো হয় তাকে। ওই ৪ হাজার কলাগাছ ব্যতিত বাকী ৪ হাজার কলাগাছও মাটির বাঁধের কারণে পানি জমে মরে যাচ্ছে। ক্ষতি পূরণের টাকা চাইতে গেলে দেই দিচ্ছি বলেও তালবাহানা শুরু করে তারা। ওই কলাবাগানের ওপর দিয়ে গ্যাস পাইপ লাইনের কাজ প্রায় সমাপ্ত হলেও ক্ষয়ক্ষতির কোন টাকা পায়নি সোহেল দেওয়ান ও তার পরিবার। আদৌ পাবেন কিনা তারও কোন সঠিক জবাব পায়নি সে। ২০ লাখ টাকার দেনা মাথায় নিয়ে পাগল প্রায় কৃষক সোহেল দেওয়ান।
ক্ষতিগ্রস্ত কলাচাষী কৃষক সোহেল দেওয়ান বলেন- অনেক আশা নিয়ে কলার বাগান করেছিলাম। গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির গ্যাস পাইপ লাইন আমার সাজানো সে স্বপ্নকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। আমার ক্ষতি পূরণের টাকা না পেলে আমি কিভাবে আমার ধার-দেনা পরিশোধ করবো। গলায় ফাঁস লাগানো ছাড়া আমার আর কোন পথ নাই।
ধনুয়া-নলকা গ্যাস সঞ্চালন পাইপ লাইন প্রকল্পের এরিয়া ম্যানেজার মো. বাকি বিল্লাহ তাঁর বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন- গ্যাস পাইপ লাইনের আওতায় টাঙ্গাইল জেলার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের চাহিদা মোতাবেক টাকা আমরা জেলা প্রশাসক বরাবর জমা দিয়েছি। তিনি কাগজপত্র যাচাই-বাচাই করে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা পরিশোধ করবেন। এতে আমাদের কোন হাত নেই।
সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম তুহীন আলী বলেন- অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রজেক্ট ম্যানেজারকে ডেকে কলাচাষী সোহেল দেওয়ানের ক্ষতির টাকা পরিশোধের কথা বলা হয়েছে।