পরিবর্তন আসছে সঞ্চয়পত্র নীতিমালায়

অনলাইন ডেস্ক  কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

আগামী অর্থবছরের (২০১৭-১৮) প্রস্তাবিত বাজেটকে কেন্দ্র করে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের নীতিমালায় ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। ইতোমধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ঘোষণা দিয়েছেন, সঞ্চয়পত্রের সুদ হার কমানো হবে। এর পরই সঞ্চয়পত্র কেনার হিড়িক পড়েছে বাড়তি সুদের আশায়।

সরকারি সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, শুধু সুদ হার কমানো নয়, এ ক্ষেত্রে অন্য নীতিমালায়ও ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে। খুব শিগগিরই এ মর্মে ঘোষণা আসবে বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে।

সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রমতে, সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ নীতিমালাতে পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা কমানো হবে। প্রতিষ্ঠান ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের কাছে আর সঞ্চয়পত্র বিক্রি করা হবে না। যুগ্ম নামেও সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ থাকছে না। পাশাপাশি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীর আয়ের উৎস জানাতে হবে সরকারকে।

এদিকে, নিম্ন-মধ্যবিত্তের মানুষ ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সঞ্চয়পত্র ও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে থাকে। বিশেষ করে বয়স্ক ও নির্ধারিত আয়ের মানুষ তাদের জমানো অর্থ এ সব জায়গায় বিনিয়োগ করে মাসিক খরচের একটি অংশ আয় করে থাকে। গত কয়েক বছর ধরে একমাত্র সঞ্চয়পত্র ছাড়া অন্য ক্ষেত্রগুলো থেকে আশানুরূপ মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে না। দীর্ঘ দিন ধরেই পুঁজিবাজারে মন্দাভাব যাচ্ছে। ব্যাংকগুলো সুদ হার কমাতে কমাতে মূল্যস্ফীতির নিচে নিয়ে এসেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সার্ভিস চার্জ ও আবগারি শুল্ক পরিশোধ করার পরে ব্যাংকের বিনিয়োগ থেকে কোনো লাভই পাচ্ছে না গ্রাহক। ফলে সাধারণ মানুষের বিনিয়োগের অন্যতম ক্ষেত্র হয়ে ওঠে সঞ্চয়পত্র।

মূলত সামাজিক ও আর্থিক সুরক্ষা দেওয়ার জন্য সরকার নিম্ন-মধ্যবিত্ত, সীমিত আয়ের মানুষ, বয়স্ক, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য এ প্রকল্প চালু করে। কিন্তু সঞ্চয়পত্রের এই মুনাফা অধিকাংশ ভোগ করছে সমাজের উচ্চবিত্ত ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এ কারণেই নীতিমালায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে নিম্নবিত্তের অনেকেই আশঙ্কা করছেন, নীতিমালায় পরিবর্তন আনলে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। সেদিকটি যেন সরকার বিবেচনায় রাখে।

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নীতিমালা সংশোধনের উদ্যোগ সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপ। সংশোধনগুলো করা হলে রাষ্ট্র ও প্রকৃত সুবিধাভোগীরা উপকৃত হবেন। তবে তারা সতর্ক করে বলেছেন, নিম্নবিত্তের মানুষ যেন এতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেটি অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে।

এ বিষয়ে জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা জানান, অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে এ প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। এ প্রস্তাব একদিকে রাষ্ট্রবান্ধব, অন্যদিকে দেশের সাধারণ মানুষের জন্যও ভালো হবে।

তবে সঞ্চয়পত্রের এ উদ্যোগে হতাশা প্রকাশ করেছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। একজন সাধারণ বিনিয়োগকারী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, গৃহিণীরা স্বামী-সন্তান ও বাবা-মা থেকে পাওয়া সামান্য অর্থ জমিয়ে সঞ্চয়পত্র কিনে তার থেকে যে মুনাফা পান তা সংসারের বিভিন্ন কাজে ব্যয় করেন। সরকার যদি এ ক্ষেত্রে মুনাফা কমিয়ে দেয় তাহলে সাধারণ পরিবারগুলো সমস্যায় পড়বে।

সূত্র: সমকাল

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!