সাংসদ কারাগারে; ফাকা মাঠে এগুচ্ছে বিএনপি
এম.এস.এস.সৌরভ, ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
রানা নির্বাচিত হওয়ায় আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে চলে যায়। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, তার কাছ থেকে আসনটি সরানো সহজ কাজ হবে না। কিন্তু টাঙ্গাইলের আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহম্মেদ হত্যা মামলায় ফেঁসে গিয়ে তিনি এখন কারাগারে। আর তাতে অনেকটা ফাঁকা মাঠে এগোতে চাইছে বিএনপি।
সাংসদ রানার অনুপস্থিতিতে এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সংকট, তা নয়। অনন্ত সাতজন সম্ভাব্য প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন পেতে আগ্রহী। তবে তারা রাজনীতির মাঠে সাংসদ রানার মতো ততটা প্রভাবশালী নন। রানা মাঠে থাকলে আসনটি দখলে নেওয়া বিএনপির পক্ষে যেমন কষ্টকর, তার অনুপস্থিতিতে তেমনটাই সহজ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইতিমধ্যে নির্বাচনী আমেজে মেতে উঠেছেন টাঙ্গাইল-৩ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও অন্যান্য দলের প্রার্থীরা নানা কৌশলে আগাম নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, সেবামূলক বিভিন্ন কর্মকান্ডসহ ব্যানার-ফেস্টুন ও পোস্টারে নিজেদের প্রার্থিতা জানান দিচ্ছেন তারা।
এই আসনটি মূলত বিএনপির আসন হিসেবে পরিচিত। ১৯৮৮ সালের সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাইদুর রহমান খান মোহন এ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা তিনবার বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাবেক প্রতিমন্ত্রী লুৎফর রহমান খান আজাদ নির্বাচিত হন। দীর্ঘ ২১ বছর পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী লুৎফর রহমান খান আজাদকে পরাজিত করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডা. মতিউর রহমান এমপি নির্বাচিত হন।
ডা. মতিউর রহমান ২০১২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর মারা গেলে ওই শূন্য আসেন ১৮ নভেম্বর উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পান উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা শহিদুল ইসলাম লেবু। কিন্তু নাগরিক কমিটির ব্যানারে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আমানুর রহমান খান রানা। তিনি নৌকার প্রার্থী শহিদুল ইসলাম লেবুকে সহজে পরাজিত করে সাংসদ নির্বাচিত হন। এরপর রানা ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আবার নির্বাচিত হন।
রানা বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদ হত্যা মামলায় জেলে আছেন। তার অন্য তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাঁকন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পা ওই মামলায় অভিযুক্ত হয়ে আত্মগোপনে। সম্প্রতি মামলাটির চার্জ গঠন করেছেন আদালত।
ফলে আগামী নির্বাচনে কে পাবেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন এ নিয়ে এলাকায় আলোচনা এখন শীর্ষে। বর্তমান এমপি আমানুর রহমান খান রানা মনোনয়ন পাচ্ছেন না তা অনেকটাই নিশ্চিত বলে জানান দলের একাধিক নেতা। রানার কাছের মানুষজন অবশ্য বলছেন, তিনি এবারও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। রানা না এলে উপনির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাওয়া শহিদুল ইসলাম লেবু আবার আসতে পারেন নৌকার মাঝি হয়ে।
আওয়ামী লীগ থেকে কে মনোনয়ন পেতে পারেন, সেটি এখনই অনুমান করতে না পারলেও বিএনপি থেকে আবার আসছেন সাবেক মন্ত্রী লুৎফর রহমান খান আজাদ। রানার শূন্যতায় আসনটি পুনরুদ্ধারে মাঠে রয়েছেন আজাদসহ বিএনপির একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী।
ঘাটাইলে বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, সাংসদ রানার জনপ্রিয়তা এখনো শীর্ষে। কিন্তু তিনি কারাগারে থাকায় তার নির্বাচনে অংশগ্রহণ অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তবে রানার বিকল্প হিসেবে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন সম্ভাব্য প্রার্থী মাঠে রয়েছেন।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে অন্যান্যের মধ্যে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান, প্রয়াত সাংসদ ডা. মতিয়ার রহমানের ছেলে ঢাকা ভিক্টোরিয়া হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান তানভীর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম লেবু, জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক পিপি এস আকবর খান, তেজগাঁও কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক অধীর চন্দ্র সরকার, ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল মো. শহীদুল ইসলাম, আবু ইউসুফ আব্দুল্লাহ তুহিন।
দলীয় অন্তঃকোন্দল: আসনটিতে আওয়ামী লীগের অন্তঃকোন্দল প্রকাশ্য। এক পক্ষে বর্তমান সাংসাদ আমানুর রহমান খান রানার সমর্থকরা। অপরটি উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম লেবুর। বিগত দিনে দেখা গেছে একটি পক্ষ যখন সাংসদ রানার মুক্তির জন্য মিছিল-সমাবেশ করে, তখন অপর অংশ পাল্টা মিছিল-সমাবেশ করে তার বিচার চাইছে।
এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়নে সাবেক প্রতিমন্ত্রী লুৎফর রহমান খান আজাদ অনেকটাই নিশ্চিত বলে শোনা যাচ্ছে। মনোনয়নের আশায় মাঠে আছেন আরো দুজন- শিল্পপতি মাইনুল ইসলাম ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কামিটির সহ-সভাপতি খলিলুর রহমান। তারা ইতোমধ্যে নিজেদের পক্ষে প্রচারণায় মাঠে নেমে পড়েছেন।
এ আসনে বিএনপিতেও প্রকাশ্যে অন্তঃকোন্দল রয়েছে। সাবেক প্রতিমন্ত্রী আজাদের নেতৃত্বে উপজেলা বিএনপির কার্যক্রম থাকলেও প্রতিপক্ষ শিল্পপতি মাইনুল ইসলামের পক্ষেও নেতাকর্মীদের একটি অংশকে দেখা যায়।
এ আসনে দুই লাখ ৭২ হাজার ৫২৯ জন ভোটার রয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৩২ হাজার ৫৭৫ জন এবং নারী ভোটার এক লাখ ৩৯ হাজার ৯৫৪ জন। (সুত্রঃ ঢাকা টাইমস২৪)