স্থানান্তরযোগ্য সম্পদ জামানত রেখে ঋণ নেওয়ার নতুন আইন
অনলাইন ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
স্থানান্তরযোগ্য সম্পদ জামানত রেখে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ দিতে নতুন আইন হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় আইনের খসড়া তৈরির কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ আইন কার্যকর হলে জমি ও ভবনের পাশাপাশি মূলধনী যন্ত্রপাতিসহ স্থানান্তরযোগ্য সম্পদ বন্ধক রেখে ঋণ নেওয়া যাবে। এদিকে ভুয়া জামানতের বিপরীতে ঋণ নেওয়া ঠেকাতে ঋণ তথ্য ব্যুরোর (সিআইবি) মতো বন্ধকী সম্পত্তির একটি তথ্য ভাণ্ডার গড়ে তোলার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
স্থানান্তরযোগ্য সম্পদ বন্ধক রাখার বিষয়ে আইনটি করার জন্য আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংকের ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশ বা আইএফসি। সংস্থার পক্ষ থেকে এরই মধ্যে আইনের একটি খসড়া তৈরি করে বাংলাদেশ ব্যাংককে দেওয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে এখন ওই খসড়ার ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন বিভাগের মতামত নিচ্ছে। খসড়ার ওপর নেওয়া মতামতের ভিত্তিতে প্রতিবেদন অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এর আগে আগামী ৩০ আগস্ট আইএফসির সঙ্গে একটি বৈঠক করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
জানা গেছে, আইএফসির একটি প্রকল্পের আওতায় আইনটি করা হচ্ছে। কারিগরি সহায়তা ছাড়াও আইনটি কার্যকর পর্যন্ত নিতে যত খরচ হবে, তার ৬৫ শতাংশ বহন করবে এ সংস্থা। বাকি ৩৫ শতাংশ বহন করবে সরকার। এ ক্ষেত্রে আইন প্রণয়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকসহ যেসব সরকারি কর্মকর্তা কাজ করবেন, তাদের দেওয়া বেতনও সরকারি খরচের আওতায় পড়বে। আইনের খসড়া প্রণয়নে সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন বিভাগ। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি, এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস, ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ও আইন বিভাগের মতামত নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা জানান, বিশ্বব্যাংকের তৈরি খসড়ায় স্থানান্তরযোগ্য সম্পদের বিপরীতে দেওয়া ঋণ কোন উপায়ে নিরাপদ করা যায় তার বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, বিভিন্ন শিল্পকারখানাকে দেওয়া ঋণ ফেরত পাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন সক্ষমতার ওপর। তবে বাংলাদেশে জামানত হিসেবে শুধু স্থায়ী সম্পদ বিবেচনায় নেওয়ার ফলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন সক্ষমতার প্রকৃত চিত্র সম্পর্কে অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংক তথ্য সংগ্রহ করে না। এতে করে অনেক সময় ঋণটি ফেরত না এসে খেলাপিতে পরিণত হয়। এমন বাস্তবতায় স্থানান্তরযোগ্য সম্পদ বন্ধকীর আওতায় আনলে স্বচ্ছতা বাড়বে।
ঋণ তথ্য ব্যুরোর আদলে বন্ধকী সম্পত্তির একটি তথ্য ভাণ্ডার গড়ে তুলছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মাধ্যমে কোন ঋণের বিপরীতে কোন ধরনের সম্পদ বন্ধক রাখা হয়েছে তা জানা যাবে। এ ক্ষেত্রে জমি বন্ধক থাকলে তার দাগ, খতিয়ান নম্বরসহ উল্লেখ থাকবে। একইভাবে বন্ধকী ভবনের অবস্থানসহ বিভিন্ন ঠিকানা থাকবে। যে কোনো সম্পত্তি জামানত নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তথ্য নিয়ে এরপর বন্ধক নেবে। ফলে ওই সম্পত্তি যদি অন্য কোথাও বন্ধক থাকে ব্যাংক তা জানতে পারবে। মূলত ভুয়া জামানতের বিপরীতে ঋণ নেওয়া ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ উদ্যোগ নিয়েছে। কেন্দ্রীয় তথ্য ভাণ্ডার করতে গত বছর শুরু হওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের এ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এটি শেষ হলে ব্যাংকের জন্য জামানতের সঠিকতা যাচাই সহজ হবে। এতে স্বচ্ছতাও বাড়বে। বর্তমানে একই সম্পদের বিপরীতে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ঋণ নেওয়ার প্রচুর ঘটনা ঘটছে। এতে করে দেশের মোট যে ভূখণ্ড তার তুলনায় বন্ধকী জমির পরিমাণ বেশি বলে ধারণা করা হয়।
স্থায়ী বা স্থাবর সম্পদ বলতে মূলত জমি ও ভবনকে বোঝানো হয়। আর স্থানান্তরযোগ্য বা অস্থাবর সম্পদ বলতে সাধারণত একটি কারখানার মূলধনীসহ বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি, আসবাব, গুদামজাত পণ্যসহ বিভিন্ন সম্পদকে বোঝানো হয়। কম্পিউটার, চেয়ার-টেবিলের মতো স্থানান্তরযোগ্য দ্রব্য আসবাব হিসেবে বিবেচিত হয়।
বেসরকারি ব্যাংক এশিয়ার প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরফান আলী বলেন, বিশ্বের অনেক দেশে মূলধনী যন্ত্রপাতির মতো স্থানান্তরযোগ্য সম্পদ বন্ধক নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। অবশ্য স্থানান্তরযোগ্য সম্পদ বন্ধক রেখে এখনও কিছু ক্ষেত্রে ঋণ দেওয়া হয়। যেমন ভোগ্যপণ্য বা তুলা আমদানিতে দেওয়া ঋণের প্রধান জামানত থাকে ওই পণ্য। আবার জাহাজ নির্মাণে দেওয়া ঋণেরও প্রধান জামানত থাকে নির্মিত জাহাজটি। যদিও এসবের পাশাপাশি এসব ক্ষেত্রে অনেক সময় চেক বা স্থায়ী সম্পদ জামানত হিসেবে নেওয়া হয়।