সেলিনা জাহান প্রিয়ার।। ছোট গল্প ।। হটাৎ পরিচয়
এই যে শুনছেন ? হ্যালো আনাকে বলছি ।
অবাক হয়ে পেছনে তাকালো অয়ন ।
অষ্টাদশী এক সুন্দরী রমনী তাঁকে উদ্দেশ্য করে সামনে এগিয়ে এলো । হকচকিয়ে গেল একটু অয়ন ।
—— একটু দেখবেন কয়টা বাজে । আমার ঘড়িটা কাজ করছে না । আর মোবাইল ে চার্জ নেই । এই বলে একটা মিষ্টি হাসি দিল । আর যাই হউক । মেয়েরা হাসি দিয়ে যে কাউকে কজে লাগাতে পাড়ে । হয়ত এটাই সৃষ্টি কর্তার একটা বিশাল যাদু নারীদের দিয়েছে । চোখ দুটি স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বড় করে অয়ন বলল
———-স্যরি, আমার কাছে ঘড়ি নেই।
———- মোবাইল তো আছে ? তাই নয় কি ?
———- হ্যাঁ তাই তো । সরি দেখে বলছি ।
———- দেখুন তো কয়টা বাজে ? বাংলাদেশে সময়ের কোন মুল্য নেই । আমি সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে , যার আসার কথা তার আসার খবর নেই ।
পকেট থেকে ফোনটা বের করে বলল নয়টা সাতাশ ।
———– অহ তাই ঠিক আছে বলে মেয়েটি তাচ্ছিল্য চোখে অয়নের দিকে তাকিয়ে হনহনিয়ে চলে গেল। মেয়েটির চলার পথের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইল অয়ন ।
কিছুটা সময় পড়ে মেয়েটা আবার আসলো । আচ্ছা কমলা পুর থেকে নারিন্দা কত দূর বলতে পারেন । অয়ন একটু বলল আপনি কি ঢাকায় নতুন । মেয়েটি বলল হ্যা আমি ঢাকায় নতুন । ট্রেন ফেল করেছি । নারিন্দা ফুফু বাসায় এসেছিলাম । সকালে ফুফা নামিয়ে দিয়ে অফিসে গেছে । কিন্তু আমি একটু এদিক সেদিক করে ট্রেন টা মিস করেছি । অয়ন বলল বাসার নাম্বার জানেন । হ্যা নাম্বার জানি কিন্তু আমি রিকসা ওলাদের বিশ্বাস করতে পাড়ি না। অয়ন বলল তাই বলুন আপনার মোবাইলের সিম বের করে দিন আমার মোবাইল ভরে কল করেন । দেখবেন কেউ নিতে আসবে । মেয়েটি বলল একবার বাহিরের দোকান থেকে কল করেছি বলল ভাইয়া আসবে কিন্তু এক ঘণ্টা হয়ে গেছে । এর মধ্যে পিছন থেকে একজন বল অহনা চল । আরে ভাইয়া তুমি এত দেরি করলে । আমি তো ভয় পাচ্ছিলাম । এবারো কিছু না বলে তাচ্ছিল্য চোখে অয়নের দিকে তাকিয়ে হনহনিয়ে চলে গেল তার ভাইয়ের সাথে । অয়ন মনে মনে বলে অ দিয়ে যাদের নাম হয় তারা মনে এমনি হয় ।
বেশ কিছু দিন পরের কথা……
নিউমার্কেটের ফুটওভার ব্রীজের উপর দাড়িয়ে অয়ন । আশেপাশে মানুষ কিলবিল করছিলো। ব্রীজের উপর নীচে তাকিয়ে ছিল অয়ন । হঠাৎ, চোখ পড়লো রাস্তার অপরদিকে একটি মেয়ের দিকে। মেয়েটির চেহারা অসম্ভব পরিচিত মনে হচ্ছিলো। অনেকক্ষণ চিন্তা করে মনে পরলো যে এটাই সেই সময় জিজ্ঞাসুকারী মেয়েটি।
ব্রীজের উপর থেকে দাড়িয়ে দাড়িয়ে মেয়েটির অদ্ভূত পায়াচারী দেখছিল ।
অয়ন রাস্তা পাড় হয়ে একটু পর মেয়েটি কে ডাক দিলো।
অয়নের দিকে তাকিয়ে বলল আমাকে বলছেন । .
——- জ্বী আপনাকে..
——— দেখুন আমি বিপদে আছি কথা বলতে পাড়ব না । একটু দেখবেন কয়টা বাজে…!!!!!!
অয়ন সুন্দরী মেয়েটির দিকে তাকিয়ে পকেট থেকে মোবাইল বের করে মেয়েটিকে সঠিক টাইম বলে দিলো।
—– মেয়েটি ছোট খাটো একটা হতাশার শব্দ সৃষ্টি করে কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো আমি শেষ।
——- অয়ন বলল আজ আবার কি ফেইল করেছেন ।
——- আরে আপনি তো সেই লোক । কেমন আছেন । আর বলবেন না। আপনার সাথে কত কথা বললাম আর বিদায় বেলায় আপনার সাথে একটু ভাল ব্যবহার করি নাই । কিছু মনে নিবেন না। ছোট ছোট বিষয় এই গরীব দেশে মনে রাখতে হয় না।
আর মুল কথা আসলে হয়েছে কি আমার কোচিং শুরু হয়ে গিয়েছে। আমি এখনো পৌছতে পারি নি।
—— কোচিং কোথায় আপনার..?
——- ফার্মগেটে.. আজকে প্রথম ক্লাস। আর আমি ফার্মগেট চিনি না।
——– অয়ন চোখে মৃদু মায়া দেখা যাচ্ছিলো মেয়েটির জন্য।
——-আপনি কোথায় যাচ্ছিলেন..?
——-আমিও মহা খালি দিকে । চলুন আমার সাথে আপনাকে ফার্ম গেইট নামিয়ে দিব ।
তা নারিন্দা থেকে নীলক্ষেত কেন ?
——- আরে নীলক্ষেত এই গাইড গুলো কিনলাম । কিছু টাকা বাঁচালাম । বাব যা হিসাব করে টাকা দেয় । খুব ইচ্ছা ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে পড়ার । অহন বলল বাবা রা ভাল চায় । তাই হিসাব করে দেয় , বেশী দিলে বেশী খরচ । চলুন রিক্সায় উঠি ।
অতঃপর, তারা এক সাথে রিকশায় যেতে লাগলো।
মেয়েটি বলল আপনার নাম জানা হল না। অয়ন একটু হেসে বলল আমি অয়ন ,অহনা । আরে আপনি দেখি আমার নাম জানেন । আমি তো নাম বলি নেই আপনাকে । কি করে জানলেন । অয়ন বলল ছোট দেশে অনেক ছোট ছোট কথা মনে রাখতে হয় ।
অহনা বলল হয়ত আমি মনের অজান্তে বলে ফেলেছি ।
এভাবেই পরিচয় হয়ে যায় । অহনা সুযোগ পায় ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে । অহন কিন্তু ইন্টার ফেল করে ব্যবসা করছে তার বাবার সাথে । একটা বাইক কিনেছে অহনার কে নিয়ে ঘুরে বেড়াতে । অহনা অহন কে বলে তুমি ব্যবসা করতে থাক আমি লিখা পড়া । দুই জনের এক জন শিক্ষিত হলেই চলবে । ছেলে মানুষের টাকা হলে আর লিখা পড়া লাগে না। এখন আর অহনার কোন কিছু নিয়েই চিন্তা নাই অয়ন আছে না ।।